ভূমিপুত্রদের চাকরির দাবিতে আন্দোলন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দিন দিন মাথা চাড়া দিচ্ছে । মহারাষ্ট্রে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর জানিয়েছে, তারা সেই রাজ্যে 80 শতাংশ চাকরি ভূমিপুত্রদের জন্য সংরক্ষিত করবে । প্রায় অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশও । সেখানে জগনমোহন রেড্ডির সরকার সম্প্রতি একটি বিল পাশ করেছে । বিলটির নাম ‘অন্ধ্রপ্রদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় স্থানীয় কর্মপ্রার্থীদের কর্মসংস্থান, 2019’ বা The Andhra Pradesh Employment of Local Candidates in the Industries বা Factories Bill, ২০১৯ । এই আইন অনুযায়ী অন্ধ্রপ্রদেশের ভূমিপুত্রদের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কারখানাগুলিতে 75 শতাংশ চাকরি সংরক্ষিত রাখতে হবে । এই আইন মানার জন্য সেই রাজ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকার তিন বছর সময় দিয়েছে । যদি নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রশিক্ষিত স্থানীয় কর্মী না পাওয়া যায় তবে স্থানীয়দের সেই প্রশিক্ষণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজের খরচায় দিতে হবে-এমনটাই বলা হয়েছে ওই আইনে ।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ও আইন আদপে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে । শিল্পোদ্যোগীদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগে নিরুৎসাহ করবে এবং তার জেরে শেষ পর্যন্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ কমবে । BREXIT- এর সময় ইংল্যান্ডে অনুরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল । এই ধরনের সিদ্ধান্তের জেরে ভারতের মতো দেশে আরও একটি সমস্যা হবে । এই সিদ্ধান্ত বা আইন প্রাথমিকভাবে দেশের আর্থিকভাবে উন্নত রাজ্যগুলিতে সুফল দেবে । কিন্তু পরবর্তীতে দেশের উন্নত ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলির রোজগার ও কর্মসংস্থানের সুযোগের মধ্যে ফারাকটা ক্রমেই তীব্র হবে । বিশেষ করে সমস্যায় পড়বে দেশের সেই চারটি আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া রাজ্য যা BIMARU নামে পরিচিত । একটা কথা এই প্রসঙ্গে অবশ্যই বলা প্রয়োজন, তা হল ভারতে কর্মক্ষেত্রে মোট শ্রমিক ও কর্মীদের প্রায় ২০ শতাংশ বা ১০ কোটি ভূমিপুত্র নয় । তারা ভিনরাজ্যের বাসিন্দা । তাই তাদের বাদ দিয়ে যদি প্রশিক্ষণ নেই এমন ভূমিপুত্রদের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় নিতে বাধ্য করা হয়, তবে তা আখেরে সংস্থার আর্থিক লাভের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ।
এই প্রসঙ্গে একটা বিষয়ের উল্লেখ করা যেতে পারে । 2008 সালে মহারাষ্ট্র সরকার সেই রাজ্যের ভূমিপুত্রদের জন্য চাকরিতে 80 শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । কিন্তু সেই রাজ্যের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত শ্রমিক ও কর্মী না পাওয়া যাওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি । আরও একধাপ এগিয়ে 2016 সালে কর্নাটক সরকার সেই রাজ্যের ভূমিপুত্রদের জন্য চাকরিতে 100 শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । কিন্তু এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক জানিয়ে তা আইন দপ্তর নাকচ করে দিয়েছিল ।
মধ্যপ্রদেশও অনুরূপ আইন পাশ করার চিন্তাভাবনা করছে । তারপর সম্ভবত গোয়া ও ওড়িশা এমন আইন আনবে । ভূমিপুত্রদের জন্য কর্মসংস্থানের দাবিতে মহারাষ্ট্র ও অসমে এর আগে কয়েক দশক ধরে আন্দোলন হয়েছে । আরও একটি উদ্বেগজনক বিষয় হল, কাজের খোঁজে কয়েক দশক ধরেই উত্তর ভারত থেকে প্রচুর লোক দক্ষিণ ভারতে পাড়ি দিচ্ছে । এর জেরে খুব ধীরে ধীরে হলেও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে উত্তর ভারতের লোকজনের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব বাড়ছে ।
গত বছরের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সেই রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যাতে তথ্যপ্রযুক্তির চাকরির সুযোগ বেশি পায় সেজন্য তাদের কর্মদক্ষতা বাড়ানো হবে ।
রাজনৈতিক উগ্রতা সাধারণত তথ্য নির্ভর হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে যে সমস্ত নেতারা তথ্যনির্ভর রাজনীতি করেন বা মতামত দেন, তাঁদের কাছেও গত মাস পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য নেই যার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে, বাইরের রাজ্যের লোকজন এসে ভূমিপুত্রদের চাকরির সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে । 2011 সালের জনগণনার রিপোর্ট অনুসারে দেখা গেছে, 2000 সাল পর্যন্ত ভারতে কাজের খোঁজে কর্মী ও শ্রমিকদের স্থানান্তর সাধারণত রাজ্যের সীমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল । 2001 থেকে 2011 সালের মধ্যে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজের খোঁজে যাতায়াত কিছুটা বাড়ে কিন্তু তা খুব বড় কিছু নয় ।
তবে জনগণনার রিপোর্ট থেকে একটি বিষয় উঠে এসেছে, তা হল কাজের খোঁজে এতদিন হিন্দি বলয় থেকে শ্রমিকরা মূলত মুম্বই বা গুজরাতে পাড়ি দিত । কিন্তু এখন সেই ধারার পরিবর্তন হয়েছে । হিন্দি বলয় থেকে শ্রমিকদের একটা বড় অংশ এখন দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে । শুধু কাজের খোঁজেই নয়, উত্তর ভারতের ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বড় অংশ এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আসছে । কিন্তু তা সত্ত্বেও তথ্য বলছে, কাজের খোঁজে বা উচ্চ শিক্ষার জন্য এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়ার সংখ্যাটা শহরাঞ্চলে প্রতি 10 জনে 1 জন বা শতকরা 10 জন । এমনকী মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্য যেখানে ভূমিপুত্রদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানেও অন্য রাজ্যের শ্রমিকদের পরিমাণ মোট শ্রমিকদের মাত্র ৫ শতাংশ ।
ভারতের সংবিধান বিভিন্ন ধারায় তার নাগরিকদের দেশের যে কোনও জায়গায় যাওয়ার ও সেখানে কাজ করার অধিকার দেয় । সংবিধানের 19 নম্বর ধারা ভারতের নাগরিকদের দেশের যে কোনও জায়গায় যাওয়ার অধিকার দেয় । সংবিধানের 16 নম্বর ধারা বলে যে, জন্মস্থানের ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কারও প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করা যাবে না । সংবিধানের 15 নম্বর ধারা অনুসারে ভারতের কোনও নাগরিকের প্রতি জন্মস্থানের ভিত্তিতে পক্ষপাতমূলক বা বিদ্বেষমূলক আচরণ করা যাবে না । এছাড়া 14 নম্বর ধারা অনুযায়ী, জন্ম ও স্থান যাই হোক না কেন, ভারতের প্রতিটি নাগরিক আইনের চোখে সমান । 2014 সালে চারু খুরানা বনাম ভারত সরকার মামলায় সংবিধানের ওই সমস্ত ধারাগুলির উল্লেখ করা হয়েছিল । চারু খুরানা একজন মেক আপ আর্টিস্ট । তিনি ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করলেও ইউনিয়ন তাঁকে সদস্য পদ দিতে অস্বীকার করে । কারণ ইউনিয়নের নিয়ম অনুসারে সদস্যপদ পেতে হলে মহারাষ্ট্রে কমপক্ষে পাঁচ বছর থাকতে হবে । বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে চারু আদালতে মামলা করেন । সেই মামলায় জেতেন তিনি । সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার চাকরিতে ভূমিপুত্রদের জন্য সংরক্ষণের যে আইন এনেছে সেটাকেও সম্ভবত সংবিধানের ওই সমস্ত ধারার উল্লেখ করে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হবে ।
তবে সংবিধানে যতই এই সমস্ত ধারা থাকুক না কেন, ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের জন্য স্থানীয়রা কাজের সুযোগ হারাচ্ছেন – এই বিতর্ক থামার কোনও লক্ষণ নেই । আর এটাও ঘটনা যে, জনগণনার রিপোর্ট পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা সবসময় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না ।
জনগণনার রিপোর্ট বলছে, উত্তর ভারতে থেকে কাজের খোঁজে দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে । যদি আমরা দু'টো কাল্পনিক ব্লক ধরে নিই, যাদের মধ্যে একটা ব্লকে রয়েছে উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্য ব্লকে রয়েছে কর্নাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানা । তাহলে দেখা যায় যে, উত্তরের ব্লক থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের 85 শতাংশ দক্ষিণের ব্লকে যাচ্ছে । 2011 সাল থেকেই এই প্রবণতা বেড়েছে । এই 10 বছরে সেই সংখ্যাটা বেড়ে কত হয়েছে তার মোটামুটি একটি ছবি পাওয়া যাবে 2021 সালের জনগণনায় ।
2001 ও 2011 সালের সময়সীমার মধ্যে কাজের খোঁজে এক রাজ্যে থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকদের সংখ্যা 11.6 মিলিয়ন থেকে বেড়ে হয়েছিল 13 মিলিয়ন । এই শ্রমিকদের মধ্যে শহুরে জনসংখ্যার মাত্র্ 8 শতাংশ ছিল । অর্থাৎ ওই সময়সীমার মধ্যে রাজ্যের শহর অঞ্চলগুলির কর্মক্ষম জনগণের শতকরা ৮ জন ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে গিয়েছিল ।
ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিসের (NSSO) রিপোর্ট বলছে, 2017-18 অর্থ বর্ষে দেশে বেকার ছিল 6.1 শতাংশ যা গত 45 বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি । রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, 2017-18 অর্থ বর্ষে দেশের 11টি রাজ্যে (যা মোট রাজ্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশ) বেকারের হার জাতীয় গড় হারের থেকে বেশি ।
2017 সালের আর্থিক সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, 2011- 2016 সময়সীমার মধ্যে প্রায় 9 মিলিয়ন শ্রমিক কাজের খোঁজে দেশের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে । হিন্দিভাষী রাজ্যগুলি যথা, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও মধ্য প্রদেশ থেকে বেশি শ্রমিক গিয়েছে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও গুজরাতে । 2011 সালের জনগণনা রিপোর্টও বলছে, 1991-2001 এবং 2001-2011 সময়সীমার মধ্যে কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া শ্রমিক 30 শতাংশ থেকে বেড়ে 58 শতাংশ হয়েছে ।
তবে এক্ষেত্রে কেরালার বিষয়টি বেশ মজার । এই রাজ্যে স্বাক্ষরতার হার দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় 93.91 শতাংশ । কিন্তু এই রাজ্যে বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । সংখ্যাটা প্রায় 11.4 শতাংশ । পাশাপাশি এই রাজ্য থেকে কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার সংখ্যাটাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে । 2017 সালের আর্থিক সমীক্ষার রিপোর্ট সেই কথাই বলছে ।
এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, আইন কখনও কাজের সুযোগ বাড়ায় না । কাজের সুযোগ বাড়ায় শিল্প । তাই কাজে সংরক্ষণ বা ভরতুকি আখেরে কর্মসংস্থান বাড়াতে কোনও সাহায্য করে না । কর্মসংস্থান বাড়াতে যা সাহায্য করে তা হল শিল্পবান্ধব পরিবেশ ও সেই সংক্রান্ত সরকারি নীতি এবং দক্ষ শ্রমিক ।
আইন পাশ করা ও তা কার্যকরী করা এক বিষয় নয় । এমনকী অন্ধ্র প্রদেশ সরকার ভূমিপুত্রদের চাকরিতে সংরক্ষণের জন্য যে আইন পাশ করেছে, তার আওতা থেকে সার, কয়লা, ওষুধ, পেট্রোলিয়াম ও সিমেন্ট শিল্পকে বাইরে রাখা হয়েছে । তা ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেও এর আওতার বাইরে রাখা হবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে ।
প্রায় রাজ্যের সমগোত্রীয় শহর (যেমন দিল্লি) ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলসমূহ যেমন, দমন, চণ্ডীগড় ইত্যাদি এলাকায় মোট শ্রমিকদের প্রায় ৪০ শতাংশই পরিযায়ী বা ভিন রাজ্যের শ্রমিক । মুম্বইতে এই সংখ্যাটা প্রায় ২৪ শতাংশ । বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও হায়দরাবাদে সংখ্যাটি প্রায় 15 শতাংশ ।
640টির মধ্যে দেশের 410টি জেলায়, বিশেষত দক্ষিণ ভারতের জেলাগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাটা প্রায় 5 শতাংশ । তামিলনাড়ুতে পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ কাজ করে ত্রিপুর জেলায় । সেখানে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকাংশই তামিলনাড়ুর অন্য জেলার । জনগণনার রিপোর্ট অনুসারে দেশের শহর অঞ্চলগুলিতে যে শ্রমিকরা কাজ করে, তার প্রায় 10 শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক । যদি আমরা তর্কের খাতিতে ধরেও নিই যে, বাস্তবে এই সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ প্রায় 20 শতাংশ, তবু বলা যেতে পারে তা এমন কিছু বড় সংখ্যা নয়, যার জন্য চাকরিতে ভূমিপুত্রদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার মতো চূড়ান্ত কোনও পদক্ষেপ নিতে হবে ।
তাই ভূমিপুত্রদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে, রাজ্য সরকারগুলির উচিত বিভিন্ন রাজ্যের দক্ষ শ্রমিকরা যেন সহজে অন্য রাজ্যে কাজ পায় । তবেই শিল্পের উন্নতি হবে ও কাজের সুযোগ আরও বাড়বে এবং দেশের আর্থিক উন্নতি হবে ।
অন্ধপ্রদেশ ভূমিপুত্রদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ আইন পাশ করেছে । যদি তেলাঙ্গানা একই পথে যায়, তবে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে কিন্তু পড়বে অন্ধপ্রদেশ । কারণ সেক্ষেত্রে অন্ধ্রপ্রদেশ হায়দরাবাদের আর্থিক উন্নতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে । জনগণনা রিপোর্ট বলছে, অন্ধ্রপ্রদেশে যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করে তাদের অধিকাংশই সেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার । সেই রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের সামান্য অংশ অন্য রাজ্য থেকে এসেছে । এই পরিস্থিতিতে কেন অন্ধ্রপ্রদেশ ভূমিপুত্রদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের জন্য এমন আইন পাশ করল তা বোধগম্য নয় । কিন্তু এই আইন পাশ করে অন্ধ্র প্রদেশ এক অত্যন্ত বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি করল । অন্য রাজ্যগুলিও যদি অন্ধ্রপ্রদেশকে অনুসরণ করতে শুরু করে, তবে পরিস্থিতি এক ভয়াবহ আকার নেবে ।
যদিও ভূমিপুত্রদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের দাবি ভারতে নতুন কিছু নয় । যখনই দেশ আর্থিক ডামাডোলের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন এই ধরনের আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । তাই এই ধরনের আন্দোলন দূর করতে একমাত্র উপায় হল দেশের আর্থিক হাল ফেরানো ।
২০১৭ সালের আর্থিক সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ভারতে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে কাজের খোঁজে পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতায়াত ক্রমশ বাড়ছে । কিন্তু সেই সংখ্যাটা এখনও এতটা বেশি নয় যে, তার জন্য ভূমিপুত্রদের কাজের সমস্যা হবে । কিন্তু ভোটের রাজনীতির কথা মাথায় রেখে শিব সেনার মতো দলগুলি এবং গুজরাত, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী ও সংসদরা বিষয়টিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেন । কিন্তু এটা ঘটনা যে, দক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির লাভ হয় এবং তার জেরে দেশের আর্থিক উন্নতি হয় ।
যেমন জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (NRC) এর কথাই ধরা যাক । ওই এলাকাটি নির্মাণের কাজ যখন চলছিল, তখন মধ্যপ্রদেশ সহ বিভিন্ন হিন্দিভাষী রাজ্যগুলি থেকে প্রচুর শ্রমিক এসেছিল কাজ করতে । কারণ স্থানীয় শ্রমিকরা ওই কাজ করতে চাইত না । একইভাবে পঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষিকাজে দিনমজুরি করার জন্য বাইরের রাজ্যগুলি থেকে অনেক শ্রমিক আসে কারণ স্থানীয়রা সেই কাজ করতে চায় না। একইভাবে শহর অঞ্চলে ঘরের কাজ করার জন্য যাদের রাখা হয় তাদের একটা বড় অংশই শহরের বাইরের বা ভিন রাজ্যের ।
যে কোনও দেশের আর্থিক উন্নতির ইতিহাস যদি আমরা অধ্যয়ন করি, তাহলে জানতে পারব, কীভাবে পরিযায়ী শ্রমিকরা সেই উন্নতিতে নিজেদের শ্রম দিয়েছে । তাই দক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই শিল্পের লাভ আর তার জেরে কাজের সুযোগও বাড়বে ।