তামিলনাড়ুর আকাশে বাতাসে এখন ‘হিন্দি হটাও, তামিল বাঁচাও’ স্লোগান । এমনটা নয় যে, এই স্লোগান গত জুলাই মাসের শেষের দিক থেকে শোনা যাচ্ছে, বরং সেই 1965 সালে যখন কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই সময় থেকে এই স্লোগানে তামিলনাড়ুর আকাশ-বাতাস মুখরিত হতে শুরু করে । পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষা সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে, তামিলনাড়ুতে ক্ষমতায় আসে DMK (দ্রাবিড় মুনেত্রা কাঝাগাম) । বিষয়টি তখন কেন্দ্রীয় সরকারকে নাড়িয়ে দিয়েছিল । সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের বার্তা সঠিক ও অভিনব পদ্ধতিতে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে দল হিসেবে তামিলনাড়ুতে DMK-এর ইতিহাস বিশেষ উল্লেখযোগ্য । শুধু নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়াই নয়, পাশাপাশি DMK এটাও নিশ্চিত করে যে, তাদের যে সমস্ত নেতাকে সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসায়, তাঁরা যেন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন । দল হিসেবে DMK-এর রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ । তারা সাধারণ মানুষের স্বার্থে সরব হতে ও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সংগঠিত করতে কখনও পিছ-পা হয়নি । এর অন্যতম উদাহরণ হল ‘কারুনচাট্টাই পাডাই’ আন্দোলন । সাধারণ মানুষের স্বার্থে DMK এই আন্দোলন সংগঠিত করেছিল কোনও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় না থেকেই ।
শুধু তাই নয়, DMK সম্ভবত একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা একাধিক সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা যেমন, পুরাটচি, সঙ্গনাথম, কুমারান ও মুরাসোলি প্রকাশ করে । এই সমস্ত পত্রিকা শুধু DMK-এর রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করার জন্যই প্রকাশিত হয় না, একই সঙ্গে এই সমস্ত পত্রিকার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করা হয় ।
বর্তমানে DMK-এর প্রধান হলেন এম কে স্ট্যালিন । যে আদর্শ নিয়ে DMK-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই আদর্শ অত্যন্ত সচেতনভাবে পালন করে চলেছেন এম কে স্ট্যালিন । আর তাই তিনি জনসংযোগে বিশেষ গুরুত্ব দেন । এজন্য তিনি গোটা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের অভাব অভিযোগ শুনেছেন । এই জনসংযোগের কাজের জন্য এম কে স্ট্যালিন ইতিমধ্যে প্রায় 11 হাজার কিলোমিটার ঘুরেছেন । যদি গত কয়েক মাস ধরে কোরোনা মহামারীর জন্য স্বাভাবিক কাজকর্ম যথেষ্ট বিঘ্নিত হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এম কে স্ট্যালিনের নেতৃত্বে DMK জনসংযোগ ও জনসেবার কাজে ভাটা পড়তে দেয়নি । আর এজন্য DMK – এর তরফে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং তার যথেষ্ট সুফলও মিলেছে । যদিও দুর্ভাগ্যবশত তামিলনাড়ু সরকারের তরফে এই মহামারীর সময় সাধারণ মানুষের স্বার্থে এই প্রযুক্তির সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি ।
করোনা কালে সাধারণ মানুষের স্বার্থে DMK যেভাবে কাজ করেছে তা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে । দলের তরফে ‘ওনদ্রিনাইভম ভা’ (চলো একজোট হই) নামে এক বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । এর মাধ্যমে DMK ইতিমধ্যে তামিলনাড়ুর ঘরে ঘরে 76 লাখ অত্যাবশকীয় কিট সরবরাহ করেছে । শুধু তাই নয়, 239টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও 36,100 জন স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে DMK ইতিমধ্যে রাজ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে 26 লাখ খাবারের প্যাকেট বিলি করেছে । এইভাবে DMK এক দায়িত্বশীল দলের ভূমিকা পালন করে চলেছে । শুধু তাই নয়, DMK ইতিমধ্যে রাজ্যের প্রায় 7 লাখ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেছে । সেই সমস্ত অভিযোগের দ্রুত সমাধানের আর্জি জানিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে । এই সমস্ত সমাজসেবামূলক কাজ ছাড়াও দলের তরফে হেল্পলাইন নাম্বারও চালু করা হয়েছে । যে নাম্বারে ফোন করে সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বা অন্য যে কোনও সাহায্যের জন্য আবেদন করতে পারে । সাধারণ মানুষের আবেদন মেনে সেই সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয় DMK-এর কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা । মহামারীর এই ঘোরতর সংকট কালে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত । তারা জানে না যে কোথায় গেলে বা কার কাছে আবেদন করলে তাদের সমস্যা মিটবে । ভিডিয়ো কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে DMK-এর নেতা এম কে স্ট্যালিন সাধারণ মানুষের সেই সমস্ত অভাব-অভিযোগ ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং সেগুলির সমাধানের চেষ্টা করেন । যদিও এটা ঘটনা যে, এই কাজগুলো যা এম কে স্ট্যালিন করছেন, সেগুলি আদতে করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর । এইভাবে DMK দল হিসেবে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সক্ষম হয়েছে । তারা তামিলনাড়ুর জনগণের সেবা করে চলেছে । তামিলনাড়ুর প্রায় 4 কোটি মানুষকে এভাবে DMK সাহায্যে করেছে । আমরা আনন্দিত যে, DMK-এর এই কাজের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে করোনা মোকাবিলায় ও মানুষকে এই সংকটকালে কীভাবে সাহায্য করা সম্ভব, তা নিয়ে রাজ্য সরকার জেলাস্তরের আধিকারিকদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছে ।
এটা কোনও গোপন বিষয় নয় যে, করোনা মহামারীর জেরে দেশ যে সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে, তার ফয়দা তুলেছে কেন্দ্রীয় সরকার । তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিল এই সুযোগে পাশ করিয়ে নিয়েছে যার মধ্যে অন্যতম জাতীয় শিক্ষা নীতি এবং আবহাওয়ার প্রভাব ও তার মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিল । মহামারীর এই সংকটের সময় যখন রাস্তায় নেমে সেভাবে সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ সম্ভব নয়, তখনও DMK কেন্দ্রীয় সরকারের এই সমস্ত ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চুপ করে বসে থাকেনি । দল হিসেবে DMK প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে । কারণ এটাই DMK-এর ঐতিহ্য । সেই প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তারা সাধারণ মানুষের স্বার্থে যে কোনও ধরনের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সামনে থেকে আন্দোলন করেছে । যে মাস্ক করোনা মোকাবিলায় ও জীবন বাঁচানোর কাজে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই মাস্ককে DMK তাদের প্রতিবাদের অস্ত্র করে তুলেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত নীতির বিরদ্ধে ।
সম্প্রতি DMK-এর তরফে সদস্য সংগ্রহের জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হয় যার নাম ‘ইল্লোরাম নাম্মুদান’ । ‘মুপ্পারাম ভিজ়া’ উপলক্ষে (DMK-এর প্রতিষ্ঠা এবং পেরিয়ার ও আন্নার জন্মদিন –এই তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনা উপলক্ষে যে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়) এই সদস্য সংগ্রহের অভিযান চালানো হয়েছিল । DMK-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এমন একটি দল হিসেবে, যা সাধারণ মানুষের দ্বারা গঠিত এবং সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে DMK তার সাংগঠনিক কাজকর্মেও পরিবর্তন এনেছে । এটা করা হয়েছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আর এর অন্যতম উদাহরণ হল অনলাইনে ‘ইল্লোরাম নাম্মুদান’ অর্থাৎ সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালানো । রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতেও DMK-এর এই উদ্যোগ যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে । DMK-এর অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের এই উদ্যোগ যথেষ্ট সফল হয়েছে । মাত্র একমাসের মধ্যে তারা 13,77,987 জন সদস্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে । শুধু তাই নয়, এই নতুন সদস্যদের মধ্যে 55 শতাংশই তরুণ প্রজন্মের অর্থাৎ 18 থেকে 35 বছরের মধ্যে ।
DMK প্রথম থেকেই তামিলদের অধিকার, সংস্কৃতি ও গর্বকে প্রাধান্য দিয়েছে, কারণ দল হিসেবে তাদের উদ্দেশ্য তামিল জনগণের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করা । যাঁরা তামিলনাড়ুর জনগণের কথা চিন্তা করেন, যাঁরা রাজ্যবাসীর জন্য ভালো কাজ করতে চান ও রাজ্যের উন্নতি করতে চান, তাঁদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে দল হিসেবে DMK সফল । দল হিসেবে DMK জানে তার ক্ষমতা কতটা । সেই ক্ষমতা তারা শুধু প্রতিবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে রাজ্যবাসীর স্বার্থে এমনভাবে কাজ করে চলেছে যাতে রাজ্যে আইনের শাসন বলবৎ হয় এবং করোনা মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় । যদিও সময় পরিবর্তিত হচ্ছে কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থে DMK-এর আন্দোলন কখনও থেমে থাকবে না । সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য দল হিসেবে DMK-এর নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করছে । আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছিলেন , ‘দল সাধারণের, সাধারণের দ্বারা এবং সাধারণের জন্য ।’ বর্তমানে যাবতীয় বিরোধিতা সত্ত্বেও আমাদের দলই প্রকৃত সরকার যারা মানুষের মনজুড়ে রয়েছে । আগামী 7 মাসে আমাদের দল দায়িত্বশীল সরকার হিসেবে উন্নয়নের পথে মানুষকে নেতৃত্ব দেবে ।
* মতামত সম্পূর্ণভাবে লেখকের ।