হায়দরাবাদ, 30 জুন : বর্ষার আগমন এবং কৃষির মরশুম শুরু হওয়ার আগে, বীজ বপন হওয়ার পর, কৃষকরা সব সময়ই এটা ভেবে অনিশ্চয়তায় ভোগেন যে আদৌ তাদের পরিশ্রম লাভের মুখ দেখবে না কি বিপর্যয় ডেকে আনবে। ভারতের মতো কৃষি প্রধান দেশে প্রতি বছর এরকমই ঘটে । এই অবিন্যস্ত ক্ষেত্রটিতে এমনিতেই নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে । কিন্তু বিমার আওতায় সব কিছু আনার অপর্যাপ্ততা এই আগুনে ঘি ঢেলেছে । 1979সালে অধ্যাপক ডান্ডেকর প্রাথমিকভাবে সুপারিশ করেছিলেন যে, বিপর্যয়ের সময় একজন কৃষককে পর্যাপ্ত আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করা জরুরি । কিন্তু তার পর ফসল বিমা প্রকল্পে অনেক রকম বদল এসেছে । ফসল নিরাপত্তার ধারণা এবং "প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা" যা চার বছর আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, এতদিনে নানা ধরনের পরিবর্তনের মধ্য গিয়েছে । কিন্তু তা-ও এখনও সামগ্রিকভাবে ফসল বিমা দূরের স্বপ্ন হয়েই রয়ে গিয়েছে ।
কৃষিমন্ত্রক, যারা কয়েক দশক ধরে ফসল বিমার আওতায় 23 শতাংশই রেখে এসেছে, এবার ঘোষণা করেছে যে মোদি যোজনায় দু’থেকে তিন বছরের মধে্য অর্ধেক সংখ্যক কৃষককে নিয়ে আসা হবে । অথচ বাস্তবে দু’দুটো কৃষি মরশুম বাদ পড়লেও হাজার হাজার কোটি টাকার বেতন বকেয়া রাখার প্রবণতা আদপে প্রকল্পের উদ্দেশ্যকেই লঘু করে দিচ্ছে । প্রিমিয়াম সময়ে দেওয়া হলেও বিপর্যয়ের সময়ে নূ্নতম ক্ষতিপূরণের পরিশোধে অতিরিক্ত বিলম্ব কৃষকদের বিরক্ত করছে । গত বছর পর্যন্তও ব্যাঙ্ক থেকে বন্টিত ফসল ঋণ থেকে প্রিমিয়ামের অঙ্ক অবিচ্ছিন্নভাবে কেটে নেওয়া হয়েছিল । যে দিন থেকে নিয়মনীতি শিথিল করা হয়েছে এবং কৃষকদের বিকল্প পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছে, তবে থেকে ফসল বমা যোজনার সদস্য সংখ্যা কমে আসেছে । ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হলে, সংকটের সময় কৃষকদের নিরাপত্তা কে দেবে? অন্তত চার দশক ধরে ফসল বিমাকে যে যে বিষয়গুলি তামাশা বানিয়ে রেখেছিল, বর্তমানে তা খোলা রহস্য । যুক্তিতে যার বর্ণনা করা যায় না, তেমন কিছু শর্ত যেমন ঋণগ্রহণকারীদেরই শুধুমাত্র বিমার আওতায় আনা, গড় বার্ষিক উৎপাদন নির্ণয় করা প্রভৃতি আরোপ করার ফলে লক্ষ লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধালাভ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ।
CAG রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে ব্যাঙ্ক থেকে যারা ঋণ নিয়েছেন, শুধুমাত্র তাদেরই বিমার আওতায় রাখার ফলে ক্ষুদ্র এবং দরিদ্র কৃষকদের মধে্য তিন চতুর্থাংশেরও বেশি এই সুবিধা লাভে বঞ্চিত হয়েছেন। ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক এবং মধ্যপ্রদেশে যে সব কৃষকরা প্রকল্পে যোগদান করেছিলেন, তাঁরা এখনও এক টাকা ক্ষতিপূরণ পাননি । আর এই বিষয়গুলি কৃষকদের মনে অবসাদ তৈরি করছে। ত্রুটি খুঁজে তা সংশোধন করার পরিবর্তে যেভাবে সরকার দায়িত্ব
এড়ানোর জন্য প্রকল্পটিকে ঐচ্ছিক এবং স্বেচ্ছাধীন ঘোষণা করেছে, তা জাপান, সাইপ্রাস, কানাডার মতো দেশে নেওয়া কঠোর পদক্ষেপের অনেকটাই বিপরীত । কারণ এই দেশগুলিতে ফসল বিমা প্রকল্পগুলি সুবিন্যস্তভাবে পরিচালিত হয়।
গুরুতর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ও কৃষকদের দ্রুত সাহাযে্যর আশ্বাস দেওয়া হয়। খরা এবং বন্যার বিরুদ্ধে ফসল রক্ষা করার জন্য সবচেয়ে আদর্শ প্রথা পালিত হয় ব্রাজিলে। এখনও পর্যন্ত স্বামীনাথনকে দেশের সর্বত্র ফসল বিমা সুনিশ্চিত করতে সুপারিশ করা হলেও কার্যকর করা হয়নি । কৃষকদের ফসলের ক্ষতি সংক্রান্ত ঘাটতি হ্রাস করতে এবং তাঁরা যাতে লাভজনক কৃষিপদ্ধতি অনুসরণ করেন, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের উচিত, রাজ্যগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সুবিস্তৃত কর্মসূচি গঠনের কাজ শুরু করা।
দেশের চাহিদা মেটানোর পরও কিছু কিছু বিষয়ের দিকে চোখ রাখা উচিত যেমন, দেশে মাটির প্রকৃতি নির্ধারণ করা, কোন ফসল কোন মাটিতে ভালো হবে, তা অনুধাবন করা এবং রপ্তানির ক্ষমতা যাচাই করা । যে সব কৃষকরা কৃষি সংক্রান্ত এই সব পরিকল্পনার মধে্য থাকবেন, ফসল বিমার পাশাপাশি তাঁরা যাতে সব ধরনের ভর্তুকি এবং ইনসেনটিভ পান, তাও নিশ্চিত করতে হবে । এভাবেই দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বহুলাংশে সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে।