ETV Bharat / bharat

অ্যামেরিকার আসন্ন নির্বাচনে কমলা হ্যারিস এবং ইন্দো-অ্যামেরিকান ফ্যাক্টর কেন গুরুত্বপূর্ণ ?

ইন্দো-অ্যামেরিকান ফ্যাক্টর কতটা গুরুত্বপূর্ণ অ্যামেরিকার আসন্ন নির্বাচনে ৷ লিখছেন সাংবাদিক স্মিতা শর্মা ৷

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Aug 24, 2020, 5:30 PM IST

Updated : Aug 24, 2020, 9:20 PM IST

গত সপ্তাহে প্রথমবার ভার্চুয়ালি ডেমোক্রেটিক কনফারেন্স আয়োজন করা হয়েছিল । সেখানে আগামী নভেম্বরে অ্যামেরিকার নির্বাচনের জন্য বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের তরফে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসকে যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া হয় । প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসেবে, প্রথম ইন্দো-অ্যামেরিকান ও এশিয়ান-অ্যামেরিকান অভিবাসী হিসেবে তাঁকে কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে মনোনীত করা হল । কমলা হ্যারিসকে জো বাইডেনের সহকারী হিসেবে তুলে ধরায় তা অ্যামেরিকান ও ভারতের জন্য কী অর্থ বহন করছে ? ‘Battleground USA 2020’-এর বিভিন্ন দিককে মাথায় রেখে তৈরি হতে চলা একাধিক আলোচনার প্রথম পর্বে সিনিয়র সাংবাদিক স্মিতা শর্মা কথা বলেন অ্যামেরিকায় নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকর ও ওয়াশিংটন DC-তে বসবাসকারী দা হিন্দুর অ্যামেরিকার প্রতিনিধি শ্রীরাম লক্ষ্মণের সঙ্গে ।

জো বাইডেন, যিনি বরাক ওবামার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তাঁর তরফে হ্যারিসকে বেছে নেওয়া কেন ভালো সিদ্ধান্ত, সেই বিষয়ে কথা বলেছেন শ্রীরাম লক্ষ্মণ । শ্রীরাম লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘সরকারি পরিষেবা সংক্রান্ত তাঁর (কমলা হ্যারিস) অতীত অভিজ্ঞতা বেশ শক্তিশালী । ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনি সরকারি আইনজীবী হিসেবে কয়েক দশক কাজ করেছেন । তিনি প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হওয়ারও যোগ্য । একই সঙ্গে তাঁর অতীতের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বহু বর্ণের বিষয় । তিনি কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের কাছে আবেদন করতে পারবেন । তিনি এশীয় ভোটারদের কাছে আবেদন করতে পারবেন ৷ আবার তিনি একজন মহিলাও । তবে এটা বাধ্যতামূলক নয় যে এই কারণে এই ধরনের ভোটাররা তাঁকে ভোট দেবেন । তবে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য জো বাইডেনের তরফে তাঁকে বেছে নেওয়া খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত । তা ছাড়া তিনি জো বাইডেনের থেকে দুই দশকের ছোটো । তাঁরা অন্তত চার বা আট বছর এবং তার পরের ভবিষ্যত, সেই ছবিটা তাঁদের জুটির মাধ্যমে উঠে এসেছে ।’’ মীরা শংকর বলেন, ‘‘বর্ণ অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে । এর কারণ, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন । আর ঘটনা হল, অ্যামেরিকা এখন একটা বর্ণবিদ্বেষমূলক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । সুতরাং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ তার পরও এটা আদর্শ ও নীতির প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ।’’

ভারতীয়-অ্যামেরিকা সম্প্রদায়ের সংখ্যা খুব বড় নয় । তার পরও কেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, উভয় পক্ষই ভারতীয়-মার্কিনদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছে ? এটা জানতে চাওয়া হলে, অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন যে এই সম্প্রদায় এখন সক্রিয় ভাবে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে জড়়িয়ে পড়েছে ।

সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে বৈঠক মিরা শংকর ও শ্রীরাম লক্ষ্মণ

মীরা শংকর বলেন, ‘‘এটা খুব বড় ভোট ব্যাঙ্ক নয় । মোট নির্বাচকের মধ্যে এশীয়দের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৪.৭ শতাংশ । সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হল হিসপ্যানিক্স । তারা সব মিলিয়ে 13 শতাংশের মতো । আর কৃষ্ণাঙ্গদের হার 12 শতাংশের কিছু বেশি । সুতরাং সংখ্যার দিক থেকে এটা খুব বেশি নয় । কিন্তু যে প্রদেশগুলিতে ভোট স্যুইং করবে, সেগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ফলে প্রতিটি ভোটই মহা মূল্যবান । এর মধ্যে কয়েকটি প্রদেশ যেখানে ভোট স্যুইং করার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে ভোটকে এক দিক থেকে অন্যদিকে করে দেওয়ার জন্য ভারতীয়-মার্কিন সম্প্রদায়ের সংখ্যাই যথেষ্ট ।’’

প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এই সম্প্রদায় হল সম্পদশালী সম্প্রদায় । এবং তারা রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হতে চায় । সেই কারণে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে তাঁরা আরও বেশি করে সক্রিয় রাজনৈতিক দাতা হিসেবে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে । আর ডেমোক্র্যাট ও রিপাবিলিকান, উভয় পক্ষই যতটা বেশি সম্ভব অর্থ সংগ্রহ করতে চাইছে । কারণ, এই নির্বাচন খুবই কঠিন লড়াই হতে চলেছে । সেই কারণে সব পক্ষই ভারতীয়-মার্কিনদের মন রেখে চলার চেষ্টা করছে । এছাড়াও এর সঙ্গে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক জীবন, যেখানে বেশ কয়েকটি বড় সংস্থার মাথায় রয়েছেন ভারতীয়-মার্কিনীরাই । সেটা গুগল হোক, কিংবা মাইক্রোসফট, IBM, মাস্টারকার্ড । এর আগে এর সঙ্গে ছিল পেপসি কো-ও । এগুলি কিন্তু ছোট বা মাঝারি মাপের সংস্থা নয় । এগুলি কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংস্থা ।’’

দু'টি দলই ভোট স্যুইং হতে পারে এমন ৭ টি প্রদেশ থেকে ১.৩ মিলিয়ন সম্প্রদায় ভোটের মধ্যে অন্তত ১ মিলিয়ন ভোট সংগ্রহ করতে চাইছে । এই বিষয়টিকে উল্লেখ করে শ্রীরাম লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে সংখ্যা রয়েছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় যে ভারতীয় মার্কিন ভোটাররা সাধারণ ভাবে ডেমোক্র্যাটদেরই ভোট দেয় । প্রায় ৭৭ শতাংশ হিলারি ক্লিন্টনের জন্য ভোট দিয়েছিলেন । যে সমস্ত প্রদেশে ভোট স্যুইং করে, সেখানে যত ভারতীয় মার্কিন ভোটার থাকেন, 2016 সালে তার থেকেও কম ছিল ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিন্টনের মধ্যে ভোটের ব্যবধান । আর সেই কারণেই দুইটি দল এটা নিয়ে খেলছে ।’’

শ্রীরাম বিশেষ ভাবে এটাও উল্লেখ করলেন যে ভারতীয় মার্কিন ভোট বিভিন্ন ভাবে ভোটারদের বয়সের উপর নির্ভর করছে । আর বয়স্করা এখনও ট্রাম্পকেই ভোট দেওয়ার পক্ষপাতী । সে যতই কমলা হ্যারিস ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক হোন না কেন ? তিনি বলেন, ‘‘বয়স্ক ভারতীয় মার্কিন ভোটাররা, যাঁরা সম্ভবত ভারতেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা যে ভাবে ভোট দান করবেন, সে ভাবে ভোট দেবেন না তরুণ প্রজন্ম ও যাঁদের বয়স 45 এর আশপাশে । তাঁরা অন্য মার্কিনীদের মতোই ভোট দেবেন ।’’ তিনি এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কের কারণে কিছু মানুষ ট্রাম্পের দিকে চলে যাবেন । কিন্তু যদি তরুণ প্রজন্মের ভারতীয় মার্কিনীদের দিকে যাওয়া যায়, তাহলে তাঁরা চাকরির জন্য ভোট দেবেন । কীভাবে এই প্যানডেমিক থেকে উদ্ধার পাওয়া গেল, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ভোট দেবেন । আর থাকবে বর্ণবিদ্বেষের ইশু ।’’

কাশ্মীর, CAA ও NRC নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে কমলা হ্যারিসের অস্বস্তিকর সম্পর্ক রয়েছে । তাছাড়া মানবাধিকার ও সাম্যবাদ নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান বরাবরই খুব কড়া । এই বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে ভারতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে জনপ্রিয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা নির্ভর করবে উভয় দিক থেকে, এটাও আলোচনার মূল বিষয় ছিল ।

মীরা শংকর বলেন, ‘‘এর মধ্যে ভালো ও মন্দ, দুটোই আছে । সামগ্রিক ভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত ঐকমত্য রয়েছে । চিনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তার উপরই এই কৌশলগত সম্পর্ক নির্ভর করে রয়েছে । এশিয়ায় চিন হুমকি দেওয়ার কাজ করছে বলেই এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে । এটাই একমাত্র কারণ, যা দুই দেশকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে এবং সম্পর্ক আরও ভালো হচ্ছে । এটা শুধুমাত্র ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকানদের উপর নির্ভর করে নেই ।’’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন যে ডেমোক্র্যাটরা মানবাধিকারের বিষয়ে সব সময় খুব কড়া অবস্থান নেয় । কিন্তু অন্য দেশগুলির ‘এটা কখনও একেবারে মূল সম্পর্কের বিষয়গুলি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নয়’ এবং আর এই বিষয়গুলি নিয়েই ভারতকেও এগিয়ে চলতে হবে ।

যদিও ভারতকেও তার রুজি রুটির বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে । ট্রাম্প প্রশাসনের কতগুলি সিদ্ধান্ত, যেমন- GSP ও কম উন্নয়নশীল দেশের তকমা ভারতের থেকে সরিয়ে নেওয়া, অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিল আমদানির ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধি করা এবং এই বছরের শেষের মধ্যে H1B ভিসা বাতিল করে দেওয়া । এই সিদ্ধান্তগুলির ফলে ভারতের প্রতিযোগিতা ও ব্যবসা ধাক্কা খেয়েছে । এছাড়া কোনও কারণ ছাড়াই ট্রাম্পের রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত দেওয়ার বিষয়গুলি ভারতের জন্য খুবই স্পর্শকাতর ।

গত সপ্তাহে প্রথমবার ভার্চুয়ালি ডেমোক্রেটিক কনফারেন্স আয়োজন করা হয়েছিল । সেখানে আগামী নভেম্বরে অ্যামেরিকার নির্বাচনের জন্য বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের তরফে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসকে যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া হয় । প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসেবে, প্রথম ইন্দো-অ্যামেরিকান ও এশিয়ান-অ্যামেরিকান অভিবাসী হিসেবে তাঁকে কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে মনোনীত করা হল । কমলা হ্যারিসকে জো বাইডেনের সহকারী হিসেবে তুলে ধরায় তা অ্যামেরিকান ও ভারতের জন্য কী অর্থ বহন করছে ? ‘Battleground USA 2020’-এর বিভিন্ন দিককে মাথায় রেখে তৈরি হতে চলা একাধিক আলোচনার প্রথম পর্বে সিনিয়র সাংবাদিক স্মিতা শর্মা কথা বলেন অ্যামেরিকায় নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকর ও ওয়াশিংটন DC-তে বসবাসকারী দা হিন্দুর অ্যামেরিকার প্রতিনিধি শ্রীরাম লক্ষ্মণের সঙ্গে ।

জো বাইডেন, যিনি বরাক ওবামার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তাঁর তরফে হ্যারিসকে বেছে নেওয়া কেন ভালো সিদ্ধান্ত, সেই বিষয়ে কথা বলেছেন শ্রীরাম লক্ষ্মণ । শ্রীরাম লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘সরকারি পরিষেবা সংক্রান্ত তাঁর (কমলা হ্যারিস) অতীত অভিজ্ঞতা বেশ শক্তিশালী । ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনি সরকারি আইনজীবী হিসেবে কয়েক দশক কাজ করেছেন । তিনি প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হওয়ারও যোগ্য । একই সঙ্গে তাঁর অতীতের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বহু বর্ণের বিষয় । তিনি কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের কাছে আবেদন করতে পারবেন । তিনি এশীয় ভোটারদের কাছে আবেদন করতে পারবেন ৷ আবার তিনি একজন মহিলাও । তবে এটা বাধ্যতামূলক নয় যে এই কারণে এই ধরনের ভোটাররা তাঁকে ভোট দেবেন । তবে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য জো বাইডেনের তরফে তাঁকে বেছে নেওয়া খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত । তা ছাড়া তিনি জো বাইডেনের থেকে দুই দশকের ছোটো । তাঁরা অন্তত চার বা আট বছর এবং তার পরের ভবিষ্যত, সেই ছবিটা তাঁদের জুটির মাধ্যমে উঠে এসেছে ।’’ মীরা শংকর বলেন, ‘‘বর্ণ অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে । এর কারণ, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন । আর ঘটনা হল, অ্যামেরিকা এখন একটা বর্ণবিদ্বেষমূলক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । সুতরাং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ তার পরও এটা আদর্শ ও নীতির প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ।’’

ভারতীয়-অ্যামেরিকা সম্প্রদায়ের সংখ্যা খুব বড় নয় । তার পরও কেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, উভয় পক্ষই ভারতীয়-মার্কিনদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছে ? এটা জানতে চাওয়া হলে, অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন যে এই সম্প্রদায় এখন সক্রিয় ভাবে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে জড়়িয়ে পড়েছে ।

সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে বৈঠক মিরা শংকর ও শ্রীরাম লক্ষ্মণ

মীরা শংকর বলেন, ‘‘এটা খুব বড় ভোট ব্যাঙ্ক নয় । মোট নির্বাচকের মধ্যে এশীয়দের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৪.৭ শতাংশ । সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হল হিসপ্যানিক্স । তারা সব মিলিয়ে 13 শতাংশের মতো । আর কৃষ্ণাঙ্গদের হার 12 শতাংশের কিছু বেশি । সুতরাং সংখ্যার দিক থেকে এটা খুব বেশি নয় । কিন্তু যে প্রদেশগুলিতে ভোট স্যুইং করবে, সেগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ফলে প্রতিটি ভোটই মহা মূল্যবান । এর মধ্যে কয়েকটি প্রদেশ যেখানে ভোট স্যুইং করার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে ভোটকে এক দিক থেকে অন্যদিকে করে দেওয়ার জন্য ভারতীয়-মার্কিন সম্প্রদায়ের সংখ্যাই যথেষ্ট ।’’

প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘এই সম্প্রদায় হল সম্পদশালী সম্প্রদায় । এবং তারা রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হতে চায় । সেই কারণে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে তাঁরা আরও বেশি করে সক্রিয় রাজনৈতিক দাতা হিসেবে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে । আর ডেমোক্র্যাট ও রিপাবিলিকান, উভয় পক্ষই যতটা বেশি সম্ভব অর্থ সংগ্রহ করতে চাইছে । কারণ, এই নির্বাচন খুবই কঠিন লড়াই হতে চলেছে । সেই কারণে সব পক্ষই ভারতীয়-মার্কিনদের মন রেখে চলার চেষ্টা করছে । এছাড়াও এর সঙ্গে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক জীবন, যেখানে বেশ কয়েকটি বড় সংস্থার মাথায় রয়েছেন ভারতীয়-মার্কিনীরাই । সেটা গুগল হোক, কিংবা মাইক্রোসফট, IBM, মাস্টারকার্ড । এর আগে এর সঙ্গে ছিল পেপসি কো-ও । এগুলি কিন্তু ছোট বা মাঝারি মাপের সংস্থা নয় । এগুলি কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংস্থা ।’’

দু'টি দলই ভোট স্যুইং হতে পারে এমন ৭ টি প্রদেশ থেকে ১.৩ মিলিয়ন সম্প্রদায় ভোটের মধ্যে অন্তত ১ মিলিয়ন ভোট সংগ্রহ করতে চাইছে । এই বিষয়টিকে উল্লেখ করে শ্রীরাম লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে সংখ্যা রয়েছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় যে ভারতীয় মার্কিন ভোটাররা সাধারণ ভাবে ডেমোক্র্যাটদেরই ভোট দেয় । প্রায় ৭৭ শতাংশ হিলারি ক্লিন্টনের জন্য ভোট দিয়েছিলেন । যে সমস্ত প্রদেশে ভোট স্যুইং করে, সেখানে যত ভারতীয় মার্কিন ভোটার থাকেন, 2016 সালে তার থেকেও কম ছিল ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিন্টনের মধ্যে ভোটের ব্যবধান । আর সেই কারণেই দুইটি দল এটা নিয়ে খেলছে ।’’

শ্রীরাম বিশেষ ভাবে এটাও উল্লেখ করলেন যে ভারতীয় মার্কিন ভোট বিভিন্ন ভাবে ভোটারদের বয়সের উপর নির্ভর করছে । আর বয়স্করা এখনও ট্রাম্পকেই ভোট দেওয়ার পক্ষপাতী । সে যতই কমলা হ্যারিস ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক হোন না কেন ? তিনি বলেন, ‘‘বয়স্ক ভারতীয় মার্কিন ভোটাররা, যাঁরা সম্ভবত ভারতেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা যে ভাবে ভোট দান করবেন, সে ভাবে ভোট দেবেন না তরুণ প্রজন্ম ও যাঁদের বয়স 45 এর আশপাশে । তাঁরা অন্য মার্কিনীদের মতোই ভোট দেবেন ।’’ তিনি এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কের কারণে কিছু মানুষ ট্রাম্পের দিকে চলে যাবেন । কিন্তু যদি তরুণ প্রজন্মের ভারতীয় মার্কিনীদের দিকে যাওয়া যায়, তাহলে তাঁরা চাকরির জন্য ভোট দেবেন । কীভাবে এই প্যানডেমিক থেকে উদ্ধার পাওয়া গেল, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ভোট দেবেন । আর থাকবে বর্ণবিদ্বেষের ইশু ।’’

কাশ্মীর, CAA ও NRC নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে কমলা হ্যারিসের অস্বস্তিকর সম্পর্ক রয়েছে । তাছাড়া মানবাধিকার ও সাম্যবাদ নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান বরাবরই খুব কড়া । এই বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে ভারতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে জনপ্রিয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা নির্ভর করবে উভয় দিক থেকে, এটাও আলোচনার মূল বিষয় ছিল ।

মীরা শংকর বলেন, ‘‘এর মধ্যে ভালো ও মন্দ, দুটোই আছে । সামগ্রিক ভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত ঐকমত্য রয়েছে । চিনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তার উপরই এই কৌশলগত সম্পর্ক নির্ভর করে রয়েছে । এশিয়ায় চিন হুমকি দেওয়ার কাজ করছে বলেই এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে । এটাই একমাত্র কারণ, যা দুই দেশকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে এবং সম্পর্ক আরও ভালো হচ্ছে । এটা শুধুমাত্র ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকানদের উপর নির্ভর করে নেই ।’’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন যে ডেমোক্র্যাটরা মানবাধিকারের বিষয়ে সব সময় খুব কড়া অবস্থান নেয় । কিন্তু অন্য দেশগুলির ‘এটা কখনও একেবারে মূল সম্পর্কের বিষয়গুলি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নয়’ এবং আর এই বিষয়গুলি নিয়েই ভারতকেও এগিয়ে চলতে হবে ।

যদিও ভারতকেও তার রুজি রুটির বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে । ট্রাম্প প্রশাসনের কতগুলি সিদ্ধান্ত, যেমন- GSP ও কম উন্নয়নশীল দেশের তকমা ভারতের থেকে সরিয়ে নেওয়া, অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিল আমদানির ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধি করা এবং এই বছরের শেষের মধ্যে H1B ভিসা বাতিল করে দেওয়া । এই সিদ্ধান্তগুলির ফলে ভারতের প্রতিযোগিতা ও ব্যবসা ধাক্কা খেয়েছে । এছাড়া কোনও কারণ ছাড়াই ট্রাম্পের রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত দেওয়ার বিষয়গুলি ভারতের জন্য খুবই স্পর্শকাতর ।

Last Updated : Aug 24, 2020, 9:20 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.