দিল্লি, 27 জুলাই : অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার কোরোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ও অন্তিম পর্যায়ে মানবদেহে প্রয়োগের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত দেশের পাঁচটি সাইট । আজ একথা জানান ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজির সেক্রেটারি রেণু স্বরূপ।
তিনি জানান, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কারণ ভারতীয়দের দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে প্রয়োজনীয় তথ্য থাকা প্রয়োজন । তিনি বলেন, ভারতে কোরোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির একটি অংশ হল DBT তা সে মূলধন জোগানেই হোক কিংবা অনুমতিপত্র পেতে সাহায্য, সবেতেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজি।
রেণু স্বরূপ জানান, "DBT তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য সাইট তৈরি করছে। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং পাঁচটি সাইট তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রস্তুতকারকরা ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল প্রয়োগের যাবতীয় তথ্যের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। "
বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াকে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য নির্বাচিত করেছে অক্সফোর্ড এবং তার অংশীদার আস্ট্রাজেনেকা। ইতিমধ্যেই প্রথম দুই ধাপের ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশিত করা হয়েছে। অন্যদিকে পুনেতে অবস্থিত SII -ও ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনেরাল অফ ইন্ডিয়া (DCGI) থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের মানবদেহে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল প্রয়োগের জন্য ছাড়পত্র পেয়েছে। এই সংস্থার তরফে জানানো হয়, সম্ভাব্য ভ্যাকসিন যাবতীয় অনুমতি পাওয়ার আগে থেকেই ভ্যাকসিনটি প্রস্তুত করা শুরু হবে যাতে অন্তিম ছাড়পত্র পেলে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ভ্যাকসিন আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে।
20 জুলাই গবেষকরা জানান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি কোরোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনটি সুরক্ষিত এবং প্রথম পর্যায়ে দেহে প্রয়োগের পর শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম। ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে বলা হয়, মানবদেহে প্রথম পর্যায়ে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ইংল্যান্ডের পাঁচটি হাসপাতালে এপ্রিল ও মে মাসে 18 থেকে 55 বছর বয়সি মোট 1,077 জনের উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছিল। প্রয়োগের পর দেখা যায়, ভ্যাকসিন গ্রহণকারী ব্যক্তিদের দেহে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে ও প্রয়োগের 56 দিন পরও T- সেল ইমিউনিটি উপস্থিত থাকছে। এই T- সেল ভাইরাসের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম একটি অংশ।
প্রথম পর্যায়ে সফলতা মিললেও গবেষকদের মতে, এখনই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয় । এর জন্য প্রয়োজন আরও বড় ট্রায়ালের । তাদের মতে, দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়ার পর ভাইরাসের বিরুদ্ধে দেহের প্রতিক্রিয়া আরও ভালো হতে পারে।
প্রথম পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়ালে অতি স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তির উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োগের পর পরীক্ষা করে দেখা হয় ভ্যাকসিনের প্রভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে কি না । দ্বিতীয় পর্যায়ে শিশু থেকে বয়স্ক-বিভিন্ন বয়সিদের কয়েকটি বিভাগে ভাগ করে নিয়ে শতাধিক মানুষের উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এই দুই ধাপে প্রধান লক্ষ্য থাকে মানবদেহের সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। তৃতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন হাজার হাজার মানুষের উপর প্রয়োগ করে পরীক্ষা করা হয়।
ভারতে মোট দুটি ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের প্রথম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে একটি হল জাইডাস ক্যাডিলা ও অপরটি ভারত বায়োটেকের প্রস্তুত করা কোভ্যাকসিন।