ভারতে COVID-19 আক্রান্তের সংখ্যা 200 পার করে গেছে(প্রতিবেদনটি লেখার সময় 206) এবং মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে 4 ৷ বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা 10 হাজারে পৌঁছেছে (শুক্রবার রাত পর্যন্ত), এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা 2 লাখ 10 হাজার ছুঁয়েছে । প্রতি ঘণ্টায় বদলাতে থাকা সংখ্যাটা রীতিমতো গতিশীল । ভারতে সংখ্যাটা তুলনামূলকভাবে কম হলেও তা নিয়ে কোনও সন্তুষ্টি বা প্রসন্নতার জায়গা নেই । কোরোনা উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তি যদি সেলফ কোয়ারান্টাইন এড়িয়ে চলেন এবং তার ফলে যদি সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পায়, তবে ভারতে একটা জনস্বাস্থ্য-সুনামি নেমে আসতে পারে । এজন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি জাতির উদ্দেশে তাঁর (19 মার্চ, বৃহস্পতিবার) ভাষণে 'আত্মশৃঙ্খলা' এবং দৃঢ়তা ও সংযম দেখানোর ডাক দিয়েছেন । একই সঙ্গে আরও কোয়ারান্টাইন সেন্টার তৈরি হচ্ছে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী এখানে নিশ্চুপভাবে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে । সম্প্রতি, COVID কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রটি তৈরি হয়েছে বিশাখাপটনম, ইস্টার্ন নেভাল কমান্ডের অধীনে, এবং এটা দেশজুড়ে সামগ্রিক উদ্যোগের সূচনা করবে । এর আগে চারটি কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র কাজ করছিল ৷ সেনাবাহিনীর অধীনে জয়সলমীর , মানেসরে (হরিয়ানা) এবং মুম্বই (নৌবাহিনী) , হিন্দনে (বায়ুসেনা) ।
প্রতিরক্ষামন্ত্রক ঘোষণা করেছে যে আরও কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে ৷ 48 থেকে 72 ঘণ্টার মধ্যে সেগুলি চালু হয়ে যেতে পারে । এগুলি তৈরি হচ্ছে যোধপুর, কলকাতা, চেন্নাই (সেনাবাহিনী), দুন্দিগাল, বেঙ্গালুরু, কানপুর, জোড়হাট, গোরখপুর (বিমানবাহিনী) এবং কোচিতে (নৌসেনা) । উল্লেখযোগ্য, যে এমন শহর বা অঞ্চলে সামরিক কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রগুলি তৈরি হচ্ছে , যেখানে বড়সড় সেনাঘাঁটি রয়েছে, এবং পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইন প্রোটোকল এবং সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকার প্রয়োগ সুনিশ্চিত করা যাবে । এর সঙ্গে, সেনা, নৌসেনা বা বায়ুসেনার চিকিৎসাকর্মীদের সেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা রয়েছে, যা দিতে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা যায় । চ্যালেঞ্জটা কঠিন, কারণ ভারত অতীতে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি, যেখানে বিরাট সংখ্যায় সাধারণ মানুষকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হয় কোয়ারেন্টাইনে, নয়ত নজরদারিতে রাখতে হয় । সংখ্যায় কম, অথচ অস্বস্তিকর কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন এমন কয়েকজন নাগরিক প্রোটোকল এড়িয়ে গিয়েছেন ৷ আর কয়েকটি ক্ষেত্রে, কিছু লোক কোয়ারেন্টাইনে না যেতে চাওয়ায় স্থানীয় পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে ভারতকে যখন এই প্যানডেমিকের তৃতীয় পর্যায়ের মুখোমুখি হতে হবে ( ইট্যালি, স্পেন, ইরানের মতো ), তখন দেশের বিপুল জনসংখ্যার চাপ এসে পড়বে বর্তমান রোগ প্রতিরোধ এবং পরীক্ষা ব্যবস্থায়, যা অসামরিক এবং সামরিক বাহিনী পরিচালিত ছোটো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ।
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের কথা মাথায় রেখে, প্রতিটি সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে ৷ রাজ্য সরকার, জেলা, তালুকা, পঞ্চায়েত, গ্রাম, মহল্লা, জনকল্যাণ সংগঠন, কর্পোরেট সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও এধরণের সমস্ত সংস্থাকে নিয়ে । এমনও সম্ভাবনা আছে, যে অল্প সময়ের মধ্যে বহু কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রের প্রয়োজন হওয়ায় সঠিক জায়গায় চিহ্নিত করার দরকার হল (তা হোটেল, হস্টেল, স্কুল ইত্যাদি হতে পারে) যেগুলিতে অত সংখ্যক মানুষকে রাখা যাবে ৷ সংখ্যাটা কয়েক হাজার না হলেও, কয়েকশোয় পৌঁছে যেতে পারে । এইখানেই বদলাতে থাকা কর্মপদ্ধতির মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াতে পারে বর্তমান সামরিক কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রগুলি (MQF), যে কর্মপদ্ধতি শুরু হবে কোয়ারান্টাইনের প্রয়োজন রয়েছে এমন নাগরিকদের জায়গা দেওয়ার মাধ্যমে ৷ তারপর তাদের খাইয়ে পরিয়ে সুস্থভাবে 14 দিন নজরদারিতে রাখার কাজ (কাজটা কঠিন কারণ তাদের বেশিরভাগই ফ্রি ওয়াইফাই চাইবে) ৷ শেষপর্যন্ত যাদের সংক্রমণ ধরা পড়েনি, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে ৷ যাদের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠাতে হবে । খুব তাড়াতাড়িই দেশজুড়ে মানবসম্পদ এবং সামগ্রীর চাহিদা বাড়বে ৷ তখন প্রশিক্ষিত চিকিৎসাকর্মী, যাঁরা এর মধ্যেই প্রবল চাপে রয়েছেন, তাঁদের পাশাপাশি স্বেচ্ছ্বাসেবকদেরও প্রয়োজন হবে । এই স্বেচ্ছ্বাসেবকদের ছোটো দলে ভাগ করে 'কোয়ারান্টাইন শেরপা' নাম দেওয়া যেতে পারে, এবং নিকটবর্তী সামরিক কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে তাঁদের ন্যূনতম কর্মপদ্ধতির প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে । টিম লিডারদের বেছে নিতে হবে এবং মহড়াও দিতে হবে, যাঁতে তারা সহজ হন । যদি কোয়ারান্টাইনের রাখতে হবে এমন সংখ্যাটা হু হু করে বাড়তে থাকে, তাহলে কয়েকঘণ্টার মধ্যে MQF - এর ধাঁচে আরও কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়োজন পড়বে । এখানে চিনা মডেল প্রাসঙ্গিক ।
দেশের রাজ্য সরকারগুলি এবং জেলা আধিকারিকদের সেইসব অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ নাগরিক ও সেনাকর্মীদের চিহ্নিত করতে হবে, যাঁদের মধ্যে স্বল্প সময়ের নোটিসে স্বেচ্ছ্বাসেবী মানসিকতা গড়ে তোলার মতো যোগ্যতা ও উদ্যম রয়েছে । সচেতনতার প্রসার এবং নূন্যতম উপকরণ ও জায়গার জন্য অনুদান সংগ্রহ করতে সোশাল মিডিয়াকে পুরোদমে ব্যবহার করা যেতে পারে । ন্যূনতম উপকরণের মধ্যে রয়েছে বিছানা, তোয়ালে, হাসপাতালের পোশাক ইত্যাদি । আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল - ব্যবহৃত পোশাক, গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদি নিরাপদে নষ্ট করে ফেলার ব্যবস্থা । যেহেতু স্কুল-কলেজগুলো আগামী কয়েক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে, তাই শিক্ষক ও ছাত্রদেরও এই উদ্যোগে শামিল করা যায় ৷ সহমর্মী শেরপা হিসেবে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, যাঁদের খুব তাড়াতাড়ি প্রয়োজন পড়বে । তারকা সঞ্চালক, সোশাল মিডিয়ার প্রচারক এবং শিক্ষাবিদদের কাছেও তাঁদের মতো করে যোগদানের অনুরোধ জানানো যেতে পারে । এইভাবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে কার্যকর করা সম্ভব ।
ভারত এখন যুদ্ধে নেমেছে । কোয়ারেন্টাইন শেরপা হয়ে ওঠা নাগরিক-জওয়ানরাই একমাত্র কোরোনা ভাইরাসকে প্রতিহত করতে পারে ।