একটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার জন্য আমাদের পুষ্টিকর ও ভারসাম্য-যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত । সার্বিকভাবে ভালো থাকার বিষয়ে নতুন করে আগ্রহের জন্ম দিয়েছে কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক । এটা স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকাকেই জোরদার করছে । অন্যদিকে, ভেজাল ও ভারী প্রক্রিয়াজাত খাবার সারা বিশ্বে ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে । একদিকে যখন পুষ্টিকর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, তখন অন্যদিকে জাঙ্ক ফুড শরীরকে তাড়াতাড়ি খারাপ করে দেয় । কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে একটি নীতি নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে । তাতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে গ্রাহকদের বিশ্বাস যাতে বজায় থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে ওই নীতি নির্দেশিকায় । প্রতিটি ধাপে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তৈরি ও বিপণনের সময় খাদ্য সংক্রান্ত এই শিল্পকে ভালো করে পরিষ্কার করা, সাফাই করা ও নিকাশির ব্যবস্থা ঠিক করে রাখতে হবে । কিন্তু দেশীয় শিল্পগুলির কেউই কি এই নির্দেশিকা মেনে চলছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে ।
বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা সূচক (জিএফএসআই) 2019 অনুযায়ী, একেবারে শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর । তাদের পয়েন্ট 87.4 । দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আয়ারল্যান্ড (84) ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে অ্যামেরিকা (83.7) । ওই সূচকে ভারতের অবস্থান 72 তম স্থানে । ভারতের পয়েন্ট 58.9 । আর এটাই এই দেশের খারাপ অবস্থার চিত্রটা তুলে ধরছে । বাজারে খাবারের উৎস, গুণমান ও শুদ্ধতাকে খতিয়ে দেখলেই ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য সামনে আনছে । মধুতে ভেজাল দেওয়া হচ্ছে কি না, এই নিয়ে সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভাওরেনমেন্ট (সিএসই) একটি পরীক্ষা করে । তাতে সমস্ত বড় সংস্থাই অকৃতকার্য হয়েছে । পরে একাধিক প্রোডাক্ট ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই) র পরীক্ষা এ়ড়িয়ে গিয়েছে । হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, চিনি, গুড়, মরিচ ও রান্নার তেলে এক ধরনের দূষিত পদার্থ দেওয়া থাকে। যা থেকে রোগ হচ্ছে ।
পুষ্টিকর খাবারের উপর সরকারের অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে, তাকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরতে ভারতকে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা । ফুড ব্রোন ডিজ়িজ বার্ডেন এপিডেমিওলজি রেফারেন্স গ্রুপ একটি সমীক্ষা করে । তাতে দেখা গিয়েছে যে 2011 সালে 10 কোটি ভারতীয় ভেজাল খাবার গ্রহণ করেছেন । ওই একই সমীক্ষা দেখা যাচ্ছে যে, এই সংখ্যাটা 2030 সালের মধ্যে 17 কোটিতে পৌঁছে যেতে পারে । খাবার থেকে সংক্রমণের জেরে নয় জনের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়বেন । ওই সমীক্ষার মানে তাই দাঁড়াচ্ছে । এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিব ও পিছিয়ে পড়া মানুষেরা । সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশে কয়েকশো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । তার কারণ খাবার ও জলের খারাপ মান বলেই মনে করা হচ্ছে । কোভিড-১৯ সংকটের সময় সরকারের তরফেও সাফাই বিশেষজ্ঞরা সচেতনতামূলক কাজ করার পরেও অনেক হোটেল এবং টিফিন সেন্টারগুলিতে অসুরক্ষিতভাবে কাজ করা হচ্ছে । একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ডাক্তার দেখাতে যে রোগীরা যান, তাঁদের 20 শতাংশই ভেজাল খাবার খাওয়ার জন্য অসুস্থ হয়েছেন ।
আরও পড়ুন, কোরোনার পরিস্থিতিতে জরুরি হয়ে পড়েছে যৌন শিক্ষাদানকে মত আদানপ্রদানে সহায়ক এবং সার্বিক করে তোলা
দ্রুত লাভ করার জন্যই ভেজাল জিনিস বিক্রি করা হয় । দুধের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় । কৃত্রিম হরমোন দিয়ে সময়ের আগেই পাকিয়ে দেওয়া হয় ফলকে । খারাপ খাবার থেকে প্রতি বছর গোটা বিশ্বে পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় । যদিও রাজনৈতিক নেতারা ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার কথা বলেন । কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা । গ্রাহকের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে ও খাদ্য সংক্রান্ত শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে 2006 সালে কেন্দ্র খাদ্য সুরক্ষা ও তার মান সংক্রান্ত আইন এনেছিল । কিন্তু এর প্রয়োগ সন্তোষজনক পরিস্থিতির থেকে অনেক দূরেই রয়েছে । খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছিল, তাদের মধ্য মাত্র 16 শতাংশের সাজা হয়েছে ।
এদিকে দেশে ভেজাল খাবার তৈরির সংস্থা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে অবশ্যই খাবারের মানের বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে হবে । দেশে খাবারের মান বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করতে হবে । খাবার ভেজাল দেওয়ার বিষয়টি বন্ধ করতে হলে গ্রাহককে সচেতন করতে হবে এবং কড়া আইন আনতে হবে ।