ETV Bharat / bharat

কোরোনার পরিস্থিতিতে জরুরি হয়ে পড়েছে যৌন শিক্ষাদানকে মত আদানপ্রদানে সহায়ক এবং সার্বিক করে তোলা

সামাজিক এবং সংস্কৃতিগত দায়বদ্ধতার বদল আসা সত্ত্বেও, এখন ‘সেক্স’ তথা ‘যৌন সম্পর্ক’ এবং ‘যৌনতা’ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ছুৎমার্গ রয়েছে । এই বিষয়ে সৎ, যুক্তিশীল, স্বাস্থ্যকর এবং খোলামেলা চর্চার অভাবেই এখনও একে অস্বস্তি এবং চর্চার অযোগ্য বিষয় হিসাবেই দেখা হয় । এর জন্য একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি ।

Coronavirus
ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Dec 22, 2020, 10:31 AM IST

গত কয়েক দশকে ভারতে যেখানে বড় ধরনের সামাজিক পরিবর্তন এসেছে, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার প্রবণতা বেড়েছে, সামাজিক স্তরে পরিবেশ আরও উদার হয়েছে এবং কাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আরও পরিণত হয়েছে, সেখানেই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনও অনেক কিছুই কিন্তু করা বাকি ।

কোরোনা প্যানডেমিকের জেরে স্কুল বন্ধ থাকার বিরূপ প্রভাব লক্ষিত হয়েছে যৌন শিক্ষা প্রদানের সব ধরনের মাধ্যমেই। শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে পড়ুয়ার পারস্পরিক বার্তা আদানপ্রদান এবং শ্রেণিকক্ষে সঙ্ঘবন্ধ বার্তা আদানপ্রদান প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে এবং পড়ুয়ারা বাড়িতে আটকে পড়েছে এবং যে কোনও শিক্ষামূলক পাঠ গ্রহণের জন্য একভাবে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মানসিক চাপ আর দুশ্চিন্তার কবলে পড়েছে । সহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাতের অভাব এবং নতুন কিছু জানার উদ্যমের ঘাটতি বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। আরও একটি সমস্যা হল, পড়ুয়ারা বর্তমানে অনলাইনেই বেশি সময় কাটাচ্ছে, যেখানে সাইবার নিগ্রহ তথা অনলাইন নিগ্রহের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে । এর ফলে যৌন শিক্ষাদানের যথাযথ পরিকাঠামো ছাড়া এটি পরবর্তীতে আরও খারাপ দশার দিকে এগোবে ।

অতি সক্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ এবং প্যানডেমিকের জেরে বাড়িতেই পড়াশোনার এই সময়ে যৌন শিক্ষাদানের দৃষ্টিভঙ্গী এবং প্রক্রিয়ায় বদল আনা অত্যন্ত জরুরি । প্রথাগত শিক্ষাদানের প্রক্রিয়ায় যে ত্রুটিগুলি রয়ে গিয়েছে, তা মেটাতেই হবে । কারণ তার ফলেই যৌন শিক্ষাদান বাস্তবিক অর্থেই সর্বব্যপী, উন্নয়নশীল, লিঙ্গ-বৈষম্যহীণ হবে এবং বর্তমান পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্নও থাকবে না ।

যৌন শিক্ষাদানের উদ্যোগের দুর্ভাগ্যজনক অভাবের কারণেই দেশের বেশিরভাগ স্থানে যৌন নিগ্রহ তথা শারীরিক নিগ্রহের সংজ্ঞা নিয়ে খুব কমই সচেতনতার প্রসার ঘটেছে । সম্মতি, নিয়ম লঙ্ঘন এবং ধর্ষণের অর্থের মাঝে থাকা সূক্ষ্ম ব্যবধান অনেকেই বুঝতে পারে না এবং কালিমালিপ্ত করার ভয়ে কেবল একের পর এক ঘটনা গোপন করার প্রচেষ্টাই দেখা যায় । যার ফলে দোষীরা বেঁচে যায় । ভারতের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের উদ্যোগে ইউনিসেফ এবং প্রয়াস নামে একটি এনজিও-র করা সমীক্ষা অনুসারে, 5 থেকে 12 বছরের মধ্যে থাকা শিশুরা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে । আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে, এই ধরনের ঘটনায় দোষীরা, নিপীড়িত বা নিপীড়িতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় । কাজেই অর্ধেকেরও বেশি ঘটনায় অভিযোগই দায়ের করা হয়নি ।

একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভারতে যৌন শিক্ষাদানকে কৈশোরকালে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়া এবং এইচআইভি বা এইডসের সঙ্গে সমতুল হিসাবে দেখা হয় । এমনকী, রজঃস্বলা হওয়ার বিষয়টিকেও খুব কমই চর্চা করা হয় । এই বিষয়গুলি নিয়ে আরও বৃহত্তর স্তরে বোঝাপড়া দরকার এবং লিঙ্গভিত্তিক পরিচিতি, উৎপত্তি এবং বৈচিত্র্যের প্রেক্ষিতে পরিমার্জনা করে এই নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করা দরকার ।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হল, সূদূরপ্রসারী ঐকমত এবং বিষয় হিসাবে এর অত্যাবশকীয়তা থাকা সত্ত্বেও এখনও অনেক স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানকার পাঠ্যসূচিতে যৌন শিক্ষাদানের কোনও উল্লেখই নেই । ‘ইউথ কোয়ালিশন ফর সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ রাইটস’-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, বেশিরভাগ স্কুল, বেসরকারি এবং জন অনুমোদিত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টেট বোর্ডগুলির পাঠ্যসূচিতে যৌন শিক্ষাপ্রদানের কোনওরকম উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

ভারত সরকার 2007 সালে ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (এনএসিও) এবং ইউনাইটেড নেশনস চিলড্রেনস ফান্ড (ইউনিসেফ)-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘অ্যাডোলেসেন্ট এডুকেশন প্রোগাম’ (এইপি) চালু করেছিল । সেই বছরেই সমস্ত রাজ্যে এর সূচনাও হয়ে গিয়েছিল । মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের তরফে এই উদ্যোগকে ‘তরুণ প্রজন্ম’-কে যথাযথ, বয়সোপযোগী এবং সংস্কৃতিগতভাবে প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান করে স্বাস্থ্যকর স্বভাব,দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের ‘ইতিবাচক দিক’ দিয়ে বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলির সদর্থক সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রে জরুরি বলে গণ্য করা হয়েছিল । কিন্তু আখেরে তা কার্যকর হয়নি এবং পরবর্তীকালে এর বিষয়বস্তুকে ‘যথাযথ নয়’ বলে তকমা দিয়ে 12টিরও বেশি রাজ্যে একে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় ।

সামাজিক এবং সংস্কৃতিগত দায়বদ্ধতার বদল আসা সত্ত্বেও, এখন ‘সেক্স’ তথা ‘যৌন সম্পর্ক’ এবং ‘যৌনতা’ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ছুৎমার্গ রয়েছে । এই বিষয়ে সৎ, যুক্তিশীল, স্বাস্থ্যকর এবং খোলামেলা চর্চার অভাবেই এখনও একে অস্বস্তি এবং চর্চার অযোগ্য বিষয় হিসাবেই দেখা হয় ।

আরও পড়ুন, আইপিএস ডেপুটেশন ইশুতে মমতার পাশে এনসিপি, রাজ্যে আসতে পারেন পাওয়ার

যথার্থ অর্থেই সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি

জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মসূচি 2020-তে কৈশোরকালে যৌন শিক্ষাপ্রদানের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে । যদিও এতে উল্লেখ রয়েছে শারীরিক স্বাস্থ্যগঠন এবং লিঙ্গভিত্তিক সংবেদনশীলতার গুরুত্বের কথা ।

একাধিক প্রশিক্ষক তৈরির দরকারও চোখে পড়ছে । কারণ এই সমস্ত প্রশিক্ষকরাই অনায়াসে প্রতিরোধমূলক শিক্ষাবিজ্ঞানভিত্তিক চর্চা থেকে শুরু করে যৌন শিক্ষাপ্রদানে অধিকারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে এতটাই সার্বিকভাবে এবং এমন সহজ ভাষায় যৌন শিক্ষাপ্রদান করতে পারেন, যা সাধারণ মানুষ বুঝবে । বিশেষ করে সবচেয়ে সংবেদনশীল কিশোর-কিশোরীরা যারা প্রথাগত শিক্ষা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত ।

যে কোনও কর্মসূচিকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যা সার্বিক হয়, আত্মবিকাশের সুযোগ প্রদান করে এবং এতে মজা করা এবং একইসঙ্গে শিক্ষালাভের মতো আদানপ্রদানভিত্তিক কার্যকলাপের বিচক্ষণ সংমিশ্রণ থাকে । তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, সমাজনেতা এবং অভিভাবকদের তরফেও এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারার অধিকার থাকা উচিত যাতে তারা এর বাস্তবায়নে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারেন এবং নজর রাখতে পারেন যাতে তা ইতিবাচক, বিচারহীন এবং সহায়ক হয় কিশোর-কিশোরীদের যথাযথ পথ দেখাতে পারে এবং একইসঙ্গে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে যৌন শিক্ষা প্রদানের প্রশিক্ষক হিসাবেও গড়ে তুলতে পারেন । এনজিও বা সিবিওগুলিকেও এক্ষেত্রে ডেকে আনা যেতে পারে ।

বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, ডিজিটাল মিডিয়া এবং ওয়েব নির্ভর উদ্যোগগুলিকেও যৌন শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে ।

ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল মিডিয়া যৌনতা এবং বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে পড়ে, এমন ধরনের সম্পর্ক নিয়ে করা কঠিন প্রশ্নের ব্যক্তিগত, ‘পার্সোনালাইজ়ড’ এবং সহজেই মেলে এমন উত্তর দেওয়ার কাজ করতে পারে । এই ধরনের মাধ্যমগুলি যৌন শিক্ষাদানকারী হিসাবেও কাজ করতে পারে । যার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আধুনিক প্রযুক্তি, ওয়েবসাইট, ম্যাসেজিং অ্যাপস এবং সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে সরাসরি তথ্য় পেতে পারে ।

তথ্যসূত্র

‘পলিসিজ অ্যান্ড প্রোগামস অন অ্যাডোলেসেন্ট এডুকেশন’, শোধগঙ্গা

‘সেক্সুয়্যালিটি ইন স্কুল : দ্য লিমিটস অফ এডুকেশন’ —জেন গিলবার্ট

‘অ্যাডোলেসেন্ট সেক্স এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া : কারেন্ট পার্সপেক্টিভ এনসিবিআই এনআইএইচ (2015)’

প্রেস ইনফর্মেশন বিউরো গর্ভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার

হোয়াই ইজ় সেক্স এডুকেশন ইর্ম্পট্যান্ট ইন ইন্ডিয়া- আর্থ্রেয়ী ভিজি

জিওআই, ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি 2019-2020

হোয়াই ইজ় সেক্স অর সেক্সুয়ালিটি এডুকেশন স্টিল এ ট্যাবু ইন ইন্ডিয়া—জয়তী চৌধুরি

গত কয়েক দশকে ভারতে যেখানে বড় ধরনের সামাজিক পরিবর্তন এসেছে, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার প্রবণতা বেড়েছে, সামাজিক স্তরে পরিবেশ আরও উদার হয়েছে এবং কাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আরও পরিণত হয়েছে, সেখানেই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনও অনেক কিছুই কিন্তু করা বাকি ।

কোরোনা প্যানডেমিকের জেরে স্কুল বন্ধ থাকার বিরূপ প্রভাব লক্ষিত হয়েছে যৌন শিক্ষা প্রদানের সব ধরনের মাধ্যমেই। শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে পড়ুয়ার পারস্পরিক বার্তা আদানপ্রদান এবং শ্রেণিকক্ষে সঙ্ঘবন্ধ বার্তা আদানপ্রদান প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে এবং পড়ুয়ারা বাড়িতে আটকে পড়েছে এবং যে কোনও শিক্ষামূলক পাঠ গ্রহণের জন্য একভাবে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মানসিক চাপ আর দুশ্চিন্তার কবলে পড়েছে । সহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাতের অভাব এবং নতুন কিছু জানার উদ্যমের ঘাটতি বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। আরও একটি সমস্যা হল, পড়ুয়ারা বর্তমানে অনলাইনেই বেশি সময় কাটাচ্ছে, যেখানে সাইবার নিগ্রহ তথা অনলাইন নিগ্রহের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে । এর ফলে যৌন শিক্ষাদানের যথাযথ পরিকাঠামো ছাড়া এটি পরবর্তীতে আরও খারাপ দশার দিকে এগোবে ।

অতি সক্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ এবং প্যানডেমিকের জেরে বাড়িতেই পড়াশোনার এই সময়ে যৌন শিক্ষাদানের দৃষ্টিভঙ্গী এবং প্রক্রিয়ায় বদল আনা অত্যন্ত জরুরি । প্রথাগত শিক্ষাদানের প্রক্রিয়ায় যে ত্রুটিগুলি রয়ে গিয়েছে, তা মেটাতেই হবে । কারণ তার ফলেই যৌন শিক্ষাদান বাস্তবিক অর্থেই সর্বব্যপী, উন্নয়নশীল, লিঙ্গ-বৈষম্যহীণ হবে এবং বর্তমান পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্নও থাকবে না ।

যৌন শিক্ষাদানের উদ্যোগের দুর্ভাগ্যজনক অভাবের কারণেই দেশের বেশিরভাগ স্থানে যৌন নিগ্রহ তথা শারীরিক নিগ্রহের সংজ্ঞা নিয়ে খুব কমই সচেতনতার প্রসার ঘটেছে । সম্মতি, নিয়ম লঙ্ঘন এবং ধর্ষণের অর্থের মাঝে থাকা সূক্ষ্ম ব্যবধান অনেকেই বুঝতে পারে না এবং কালিমালিপ্ত করার ভয়ে কেবল একের পর এক ঘটনা গোপন করার প্রচেষ্টাই দেখা যায় । যার ফলে দোষীরা বেঁচে যায় । ভারতের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের উদ্যোগে ইউনিসেফ এবং প্রয়াস নামে একটি এনজিও-র করা সমীক্ষা অনুসারে, 5 থেকে 12 বছরের মধ্যে থাকা শিশুরা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে । আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে, এই ধরনের ঘটনায় দোষীরা, নিপীড়িত বা নিপীড়িতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় । কাজেই অর্ধেকেরও বেশি ঘটনায় অভিযোগই দায়ের করা হয়নি ।

একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভারতে যৌন শিক্ষাদানকে কৈশোরকালে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়া এবং এইচআইভি বা এইডসের সঙ্গে সমতুল হিসাবে দেখা হয় । এমনকী, রজঃস্বলা হওয়ার বিষয়টিকেও খুব কমই চর্চা করা হয় । এই বিষয়গুলি নিয়ে আরও বৃহত্তর স্তরে বোঝাপড়া দরকার এবং লিঙ্গভিত্তিক পরিচিতি, উৎপত্তি এবং বৈচিত্র্যের প্রেক্ষিতে পরিমার্জনা করে এই নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করা দরকার ।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হল, সূদূরপ্রসারী ঐকমত এবং বিষয় হিসাবে এর অত্যাবশকীয়তা থাকা সত্ত্বেও এখনও অনেক স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানকার পাঠ্যসূচিতে যৌন শিক্ষাদানের কোনও উল্লেখই নেই । ‘ইউথ কোয়ালিশন ফর সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ রাইটস’-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, বেশিরভাগ স্কুল, বেসরকারি এবং জন অনুমোদিত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টেট বোর্ডগুলির পাঠ্যসূচিতে যৌন শিক্ষাপ্রদানের কোনওরকম উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

ভারত সরকার 2007 সালে ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (এনএসিও) এবং ইউনাইটেড নেশনস চিলড্রেনস ফান্ড (ইউনিসেফ)-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘অ্যাডোলেসেন্ট এডুকেশন প্রোগাম’ (এইপি) চালু করেছিল । সেই বছরেই সমস্ত রাজ্যে এর সূচনাও হয়ে গিয়েছিল । মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের তরফে এই উদ্যোগকে ‘তরুণ প্রজন্ম’-কে যথাযথ, বয়সোপযোগী এবং সংস্কৃতিগতভাবে প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান করে স্বাস্থ্যকর স্বভাব,দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের ‘ইতিবাচক দিক’ দিয়ে বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলির সদর্থক সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রে জরুরি বলে গণ্য করা হয়েছিল । কিন্তু আখেরে তা কার্যকর হয়নি এবং পরবর্তীকালে এর বিষয়বস্তুকে ‘যথাযথ নয়’ বলে তকমা দিয়ে 12টিরও বেশি রাজ্যে একে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় ।

সামাজিক এবং সংস্কৃতিগত দায়বদ্ধতার বদল আসা সত্ত্বেও, এখন ‘সেক্স’ তথা ‘যৌন সম্পর্ক’ এবং ‘যৌনতা’ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ছুৎমার্গ রয়েছে । এই বিষয়ে সৎ, যুক্তিশীল, স্বাস্থ্যকর এবং খোলামেলা চর্চার অভাবেই এখনও একে অস্বস্তি এবং চর্চার অযোগ্য বিষয় হিসাবেই দেখা হয় ।

আরও পড়ুন, আইপিএস ডেপুটেশন ইশুতে মমতার পাশে এনসিপি, রাজ্যে আসতে পারেন পাওয়ার

যথার্থ অর্থেই সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি

জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মসূচি 2020-তে কৈশোরকালে যৌন শিক্ষাপ্রদানের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে । যদিও এতে উল্লেখ রয়েছে শারীরিক স্বাস্থ্যগঠন এবং লিঙ্গভিত্তিক সংবেদনশীলতার গুরুত্বের কথা ।

একাধিক প্রশিক্ষক তৈরির দরকারও চোখে পড়ছে । কারণ এই সমস্ত প্রশিক্ষকরাই অনায়াসে প্রতিরোধমূলক শিক্ষাবিজ্ঞানভিত্তিক চর্চা থেকে শুরু করে যৌন শিক্ষাপ্রদানে অধিকারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে এতটাই সার্বিকভাবে এবং এমন সহজ ভাষায় যৌন শিক্ষাপ্রদান করতে পারেন, যা সাধারণ মানুষ বুঝবে । বিশেষ করে সবচেয়ে সংবেদনশীল কিশোর-কিশোরীরা যারা প্রথাগত শিক্ষা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত ।

যে কোনও কর্মসূচিকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যা সার্বিক হয়, আত্মবিকাশের সুযোগ প্রদান করে এবং এতে মজা করা এবং একইসঙ্গে শিক্ষালাভের মতো আদানপ্রদানভিত্তিক কার্যকলাপের বিচক্ষণ সংমিশ্রণ থাকে । তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, সমাজনেতা এবং অভিভাবকদের তরফেও এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারার অধিকার থাকা উচিত যাতে তারা এর বাস্তবায়নে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারেন এবং নজর রাখতে পারেন যাতে তা ইতিবাচক, বিচারহীন এবং সহায়ক হয় কিশোর-কিশোরীদের যথাযথ পথ দেখাতে পারে এবং একইসঙ্গে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে যৌন শিক্ষা প্রদানের প্রশিক্ষক হিসাবেও গড়ে তুলতে পারেন । এনজিও বা সিবিওগুলিকেও এক্ষেত্রে ডেকে আনা যেতে পারে ।

বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, ডিজিটাল মিডিয়া এবং ওয়েব নির্ভর উদ্যোগগুলিকেও যৌন শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে ।

ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল মিডিয়া যৌনতা এবং বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে পড়ে, এমন ধরনের সম্পর্ক নিয়ে করা কঠিন প্রশ্নের ব্যক্তিগত, ‘পার্সোনালাইজ়ড’ এবং সহজেই মেলে এমন উত্তর দেওয়ার কাজ করতে পারে । এই ধরনের মাধ্যমগুলি যৌন শিক্ষাদানকারী হিসাবেও কাজ করতে পারে । যার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আধুনিক প্রযুক্তি, ওয়েবসাইট, ম্যাসেজিং অ্যাপস এবং সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে সরাসরি তথ্য় পেতে পারে ।

তথ্যসূত্র

‘পলিসিজ অ্যান্ড প্রোগামস অন অ্যাডোলেসেন্ট এডুকেশন’, শোধগঙ্গা

‘সেক্সুয়্যালিটি ইন স্কুল : দ্য লিমিটস অফ এডুকেশন’ —জেন গিলবার্ট

‘অ্যাডোলেসেন্ট সেক্স এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া : কারেন্ট পার্সপেক্টিভ এনসিবিআই এনআইএইচ (2015)’

প্রেস ইনফর্মেশন বিউরো গর্ভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার

হোয়াই ইজ় সেক্স এডুকেশন ইর্ম্পট্যান্ট ইন ইন্ডিয়া- আর্থ্রেয়ী ভিজি

জিওআই, ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি 2019-2020

হোয়াই ইজ় সেক্স অর সেক্সুয়ালিটি এডুকেশন স্টিল এ ট্যাবু ইন ইন্ডিয়া—জয়তী চৌধুরি

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.