হায়দরাবাদ, 16 জুলাই : মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা বলেন, রাজ্যসভা নির্বাচন সফলভাবে হয়েছে তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে বিহার বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনা করা কর্তৃপক্ষের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ । ETV ভারত-এর সাংবাদিক অর্শদীপ কাউরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে 65 বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের পোস্টাল ব্যালট ব্যবহারের অনুমতি, নির্বাচনের ওপর প্যানডেমিকের প্রভাব, পদক্ষেপ গ্রহণ ও ডিজিটাল প্রচারের সময়ে নির্বাচনী আচরণবিধি (MCC) কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা ।
প্রশ্ন : পরিস্থিতিতেই জুন মাসে রাজ্যসভা নির্বাচন করেছে কমিশন, কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল ?
সুনীল আরোরা : আটটি রাজ্যে 19টি আসনে 19.06.2020 তারিখে ভোটপ্রক্রিয়া সফলভাবে সংঘটিত করেছে নির্বাচন কমিশন । COVID-19 নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গেই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় । কমিশনের নির্দেশে, সমস্ত রাজ্য সরকার প্রতিটি COVID-19 কনটাইনমেন্ট কমপ্লায়েন্সের জন্য একজন করে নোডাল অফিসারকে মনোনীত করে ।
সেইমতো, ভোটের দিন সমস্ত ভোটাদের ভোট দেওয়ার পরেই প্রায় 1000 ভোটারের মধ্যে, মধ্যপ্রদেশে একটিই নিশ্চিত COVID-19 পজ়িটিভের খবর পাওয়া গেছে । রাজস্থান থেকে কোরোনা সন্দেহে আরও এক ভোটারকে সকলের ভোটদানের পর ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় । যদিও ভোটারদের মধ্যে হাসপাতালে ভরতি এমন কেউ ছিল না, তবে কমিশন এ'ধরনের পরিস্থিতির জন্যেও বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছিল ।
প্রশ্ন : দেশে কোরোনা সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে । এই পরিস্থিতিতে বিহার বিধানসভা নির্বাচন এবং মধ্যপ্রদেশে উপনির্বাচন কি হবে ? ভোটারদের নিরাপত্তা এবং ভোটপ্রক্রিয়ার ব্যাপারে কী প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন ?
সুনীল আরোরা : নির্বাচন কমিশন, বিহারের CEO এবং জেলাস্তরে বিহার বিধানসভা নির্বাচন যথাসময়ে পরিচালনার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে ।
সমস্ত বিষয় এবং কোরোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করেই নির্বাচনের সূচি নির্ধারণ করা হবে ।
সামাজিক দূরত্ব এবং স্যানিটাইজ়েশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সমস্ত নির্দেশ যথাযথভাবে সংশোধন করা হবে ।
রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রচারের সময় সম্মিলিতভাবে প্রাসঙ্গিক সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে ।
ভোটপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ভোটার, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের জন্য কমিশনের নির্দেশিকাগুলি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে । বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছেন কমিশনের আধিকারিকরা ।
ডিজিটাল এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির সঙ্গে SMS এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমকে আরও বেশি করে ব্যবহার করতে চলেছে কমিশন । আপডেট করা হবে ভোটার গাইডও ।
কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, প্রতি ভোটকেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা সর্বাধিক এক হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে ।
সহায়ক পোলিং স্টেশন তৈরি করা হবে - উদাহরণস্বরূপ, বিহারের জন্য 33797টি অতিরিক্ত পোলিং স্টেশনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে ।
প্রবীণ নাগরিক (বর্তমানে 65 বছরের বেশি বয়সীদের জন্য), প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি COVID পজ়িটিভ ভোটার যারা বাড়িতে বা কোয়ারানটিনে রয়েছেন তাঁদের সহায়তা করতে এবং ঝুঁকি এড়াতে পোস্টাল ব্যালটের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে ।
প্রশ্ন : স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিধানসভা নির্বাচনের আগে জনসভায় ভিড় এড়াতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন ? ভার্চুয়াল র্যালির ক্ষেত্রে কীভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি (MCC) কার্যকর হবে ?
সুনীল আরোরা : নির্বাচনী প্রচারের বিষয়ে COVID-19 সংক্রান্ত নির্দেশিকাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় এবং স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির মতামত চাইছে কমিশন । আমরা বিহারের CEO-র পাঠানো রাজনৈতিক দলগুলির মতামতও যাচাই করে দেখছি । যতদূর জনসমাবেশের ক্ষেত্রে COVID-19-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্বের নির্দিষ্ট নিয়ম লঙ্ঘন করলে NDMA,2005-এর আওতায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে । নির্বাচনী প্রচারকার্য পর্যবেক্ষণের জন্য কমিশনের ব্যবস্থা রয়েছে ।
প্রত্যেক প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় নিজেদের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে ।
নির্বাচনের প্রচার এখনও শুরু না হওয়ায় 'রাজনৈতিক দলগুলি এখন ডিজিটাল প্রচার এবং ভার্চুয়াল সমাবেশ করছে' ।
যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলির প্রচার কোনও ব্যয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাই ভার্চুয়াল প্রচারের ক্ষেত্রে খরচ কতটা বাড়বে তা দেখতে হবে ।
প্রশ্ন : গোপনীয়তা লঙ্ঘন হতে পারে এই আশঙ্কায় 65 বছরের বেশি, কোরোনা সন্দেহ এবং আক্রান্তদের ভোটদানের অনুমতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অনেক রাজনৈতিক দল । এ'বিষয়ে আপনার কী মন্তব্য ?
সুনীল আরোরা : বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, 2005-এর আওতায় ন্যাশনাল এক্জ়িকিউটিভ কমিটির জারি করা নির্দেশিকায়, দুর্বল ব্যক্তি যেমন 65 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, কো-মরবিড, গর্ভবতী মহিলা এবং দশ বছরের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে ।
বর্তমান কোরোনা পরিস্থিতির কথা বিচার করে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি এড়াতে এবং ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত না করার জন্য (ক) প্রবীণ নাগরিক (বর্তমানে 65 বছরের বেশি বয়সীদের জন্য) এবং (খ) COVID-19 সন্দেহ বা পজ়িটিভ ভোটার যারা বাড়িতে বা কোয়ারানটিনে রয়েছেন তাঁদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন ।
পোস্টাল ব্যালটের ক্ষেত্রে পুরো ভোটপ্রক্রিয়াটি দায়িত্বপ্রাপ্ত পোলিং কর্মীদের তত্ত্বাবধানে থাকবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিয়ো-গ্রাফড প্রার্থীদের অবহিত করা হবে । যাতে প্রতিটি পোস্টাল ব্যালটের ভোট নিরাপদ এবং স্বচ্ছ থাকে ।
এই বিষয়ে কমিশন প্রবীণ নাগরিক ফেডারেশনগুলির তরফে ভোটগ্রহণের স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে প্রশংসাও পেয়েছে কমিশন ।
প্রশ্ন : সর্বোপরি, এই প্যানডেমিকে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এই পরিবর্তনকে আপনি কীভাবে দেখছেন ?
সুনীল আরোরা : COVID-19 নির্বাচন-সহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে । এটি আমাদের সবার কাছেই নতুন চ্যালেঞ্জ । এই পরিস্থিতিতে, নির্বাচন পরিচালনা সহজ হবে না । অগ্রিম পরিকল্পনাই এ'ক্ষেত্রে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ।
যদিও সম্প্রতি রাজ্যসভা নির্বাচনের স্কেল কম ছিল, তবে আমাদের নতুন SOP-গুলি পরীক্ষা করা হয়ে গিয়েছে এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে ।
কমিশন সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করেছে যে, বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনীগুলি বাড়ানো হতে পারে ।
প্রশ্ন : পরিববনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আপনার কী অভিজ্ঞতা এবং অ্যামেরিকা থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করে?
সুনীল অরোরা : 7 মার্চ মিচিগানের উদ্দেশে রওনা হয়ে বিমানে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ ছিল তা আগে থেকে বোঝা যায়নি । সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রতিকূলতার পরেও, কমিশনের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি ।
প্রযুক্তি আজকাল অনেক প্রতিবন্ধকতারই সমাধান করে এবং এমনকী জলপথে যোগাযোগের বাধা সমাধানেও সহায়তা করে । টাইম জ়োন আলাদা হওয়ার পরেও আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছি ।
আমি নিয়মিত বিষয়গুলি বাদ দিয়ে, এমনকী ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে মহারাষ্ট্র বিধানসভার দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের সময়সূচি তৈরি করতে আমি 1 মে অ্যামেরিকা থেকে কমিশনের সম্পূর্ণ সভা পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি ।