হায়দরাবাদ, 4 এপ্রিল : Covid-19 এর আক্রমণে ষাটোর্ধ্বদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাই সবচেয়ে বেশি । এই বয়সের মানুষদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবয়সীদের মতো ততটা শক্তিশালী হয় না । সেই সঙ্গে যুক্ত হয় ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট, ফুসফুসের সমস্যা । এই সব রোগের ফলে ষাটোর্ধ্বদের মানুষের শরীরিক জটিলতা অনেকটাই বেশি থাকে । বিভিন্ন দেশ থেকে Covid-19-এ আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের যে তালিকা পাওয়া গিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, এই বয়সী মানুষদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি এবং কখনও তা মৃত্যুর কারণও হয়ে ওঠে ।
যাঁরা প্রবীণদের খেয়াল রাখছেন তাঁদের জন্য একটু বেশি করে প্রয়োজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা । তাঁদের অবশ্যই বার বার হাত ধোওয়া উচিত । বাথরুম ব্যবহার, তাঁদের জন্য খাবার তৈরি ইত্যাদি কাজ করার আগে অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজ়ার দিয়ে অন্তত 20 সেকেন্ড ধরে হাত ধোওয়া উচিত । কাশি বা হাঁচির সময় তাঁদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিশু ব্যবহার করা উচিত বা কনুই ব্যবহার করা উচিত । বাড়ির যে সব জায়গায় বার বার হাত দেওয়া হয় সে সব জায়গা সাবান জল বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত । এই প্রক্রিয়া প্রবীণদের ব্যবহার করা সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ।
চলাফেরার সমস্যার জন্য প্রবীণরা বাইরের জগতের সঙ্গে মেলামেশা কম করতে পারেন । এক্ষেত্রে তাঁদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার জন্য সামাজিক সম্পর্কগুলি বজায় রাখা খুব জরুরি । তবে কোনও বন্ধু বা আত্মীয়ের মাধ্যমে যাতে তিনি সংক্রামিত না হয়ে পড়েন, সে দিকে খেয়াল রেখে এই জাতীয় দেখা সাক্ষাৎ যতটা সম্ভব কম করতে হবে । এমনকি দেখা সাক্ষাৎ যে করতেই হবে, তারও কোনও বাধ্যবাধকতা নেই । প্রবীণ মানুষরা এক্ষেত্রে ফোনের ব্যবহার করতেই পারেন । প্রতিবেশী, বাড়ির পরিচারক, পোস্টম্যান এবং অন্যান্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বললে তাঁরা আর একা বোধ করবেন না এবং বাইরের খবর পেলে মানসিক ভাবে চাঙ্গাও থাকবেন ।
প্রবীণরা সব সময়ই শিশু ও বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসেন । এর ফলে তাঁরা মানসিকভাবে সুস্থ এবং উৎফুল্ল থাকেন । কিন্তু এক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, শিশু ও বাচ্চারা কোভিড-১৯ এর ক্যারিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারে । তাই, দেখতে হবে যেন তারা প্রবীণদের থেকে সব সময়ই 1-2 মিটার দূরত্ব বজায় রাখে । কোনও শিশু যদি অসুস্থ থাকে, তা হলে প্রবীণদের থেকে তাঁদের আলাদা রাখা উচিত যত দিন না তারা একেবারে সুস্থ হয়ে ওঠে । প্রবীণরা তাঁদের বন্ধু, পরিবার তথা আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পরযুক্তির ব্যবহার করতে পারেন । এক্ষেত্রে ফোন, কম্পিউটার বা ভিডিয়ো কল ভাল কাজে দিতে পারবে । যাঁদের শ্রবণযন্ত্রের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য এই সব যন্ত্রে বিশেষ সুবিধা থাকে । পরিবার, পরিজন, বন্ধুদের উচিত তাঁদের প্রতি নিয়ত ফোন করা বা মেসেজ পাঠানো বা চিঠি দেওয়া । অর্থাৎ, যে কোনও ভাবে তাঁদের স্বাস্থ্যের খবর নেওয়া এবং তাঁদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখা ।
বেশির ভাগ ধর্মীয়স্থান এবং উপাসনাস্থান এখন বন্ধ । ফলে প্রবীণদের অন্য কোনও ভাবে তাঁদের ধর্মীয় আচারের ব্যবস্থা করতে হবে । এর জন্য অনলাইন সেশন, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বা কোনও ধর্মীয় সংস্থার অন্য সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলা যেতে পারে । হালকা শরীরচর্চা, যোগা, শ্বাস সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যায়াম, ধ্যান এবং উপাসনা করে আধ্যত্মিক ভাবে চাঙ্গা থাকা যেতে পারে । প্রবীণ মানুষরা TV দেখতে খুবই পছন্দ করেন । কিন্তু এই TV দেখা যেন খুব বেশি পরিমাণে না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে । এখন TV-তে সব সময়ই Covid-19 সংক্রন্ত খবর চলছে । বেশি ক্ষণ সে সব দেখলে তাঁদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে যা তাঁদের শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয় । প্রয়োজনে তাঁদের TV দেখার সময় বেঁধে দিতে হবে । বরং এটাকে একটা ভাল সুযোগ হিসাবে দেখা যেতে পারে যেখানে প্রবীণরা তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে নানা গল্প সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবেন । তাঁদের পারিবারিক অ্যালবাম তৈরিতে উৎসাহিত করা যেতে পারে । এমনকি তাঁরা রান্নাতেও নানা পরামর্শ দিতে পারেন ।
অসুখের এই আবহে সব সময় চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য যেন পাওয়া যায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে । প্রবীণদের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং ওষুধের দোকান সম্পর্কে খবর রাখতে হবে । জেনে নিতে হবে, কখন ক্লিনিক বা ওষুধের দোকান খোলা থাকে । প্রয়োজনে দুই থেকে তিন মাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ কিনে রাখতে হবে, যেন প্রয়োজনে ওষুধ থাকে । যিনি প্রবীণদের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি অসুস্থ হলে আত্মীয়দের মধ্যে এক জনকে তৈরি থাকতে হবে তাঁর শূন্যস্থান পূরণের জন্য ।
উদাহরণ স্বরূপ, আমার মায়ের 92 বছর বয়স । তিনি একেবারেই বেশি হাঁটাচলা করতে পারেন না এবং প্রায় সব সময়ই কোনও না কোনও অসুস্থতায় ভুগছেন । তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখেন রান্নায় পরামর্শ দিয়ে, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে মূল্যবান মতামত দিয়ে এবং আমাদের ছোটবেলার বিভিন্ন গল্প শুনিয়ে । আমরা তাঁকে পরিবারের বাচ্চাদের একেবারে সরাসরি সংস্পর্শে আসতে দিই না, কিন্তু বাচ্চাদের তাঁর সঙ্গে গান করতে বা বিভিন্ন খেলা, যেমন ক্যারম বোর্ড খেলতে উৎসাহিত করি। এই ধরনের কাজের ফলে সামাজিক দূরত্বও বজায় থাকে এবং আমার মা-কে খুশিও রাখা যায় ।
Covid-19 প্রচণ্ড কষ্টকর হওয়ার অন্যতম কারণ হল এই দীর্ঘ লকডাউন এবং শারীরিক ভাবে দীর্ঘ দিন সবার থেকে আলাদা থাকা । কিন্তু এই শারীরিক দূরত্ব যেন কখনই মানসিক দূরত্বে পরিণত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদেরই । পরিবার, বিশেষ করে প্রবীণদের জন্য আমাদের নতুন ধরনের কিছু বিনোদন বা অন্য কার্যকলাপের খোঁজ করতেই হবে যাতে তাঁরা এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানসিক ভাবে চাঙ্গা থাকতে পারেন ।