তিরুবনন্তপুরম, 24 ফেব্রুয়ারি : চিন থেকে ফেরার সময়ও সে ভাবেনি। আতঙ্কে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে আসার ২দিনের মাথায় সে জানতে পারে, শরীরে দানা বেঁধেছে মারণ কোরোনা ভাইরাস। তার পরের লড়াইটা ছিল আরও কঠিন। টানা ২৪ দিন ভর্তি থাকতে হয়েছে কেরালার থ্রিশুর মেডিকেল কলেজে। দীর্ঘ চিকিৎসায় সেরে ওঠার পর চিকিৎসা পেশার উপর তার সম্মান বহুগুণ বেড়ে গেছে বলে জানাল ভারতের প্রথম কোরোনা আক্রান্ত যুবতি।
কেরালার বাসিন্দা তথা ওই যুবতি চিনে পড়াশোনা করে। সেদেশে কোরোনো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে চায়নি সে। তড়িঘড়ি দেশে ফিরে আসার উদ্যোগ নেয়। কারণ, কেরালার বাড়িতে চিন্তা করছিলেন তার বাবা-মা। ২২ জানুয়ারি কলকাতা হয়ে ফেরার টিকিটের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয় সে। কিন্তু, টিকিট পাওয়ার দিনেই ইউহানে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় চিনের প্রশাসন । থমকে যায় গোটা শহর । যদিও কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ওই রাতেই শেষ ট্রেনে চেপে বিমানবন্দরের কাছে পৌঁছে যায় সে ।
যাত্রাপথে যথেষ্ট প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছিল বলে জানায় ওই যুবতি। কিন্তু, কোরোনার ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি। কেরালার বাড়িতে ফেরার ২দিন পর জ্বর ও গলায় ইনফেকশনের উপস্বর্গ দেখা দেয়। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে সে মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে সব জানায়। তাকে ভরতি করা হয় থ্রিশুর মেডিকেল কলেজে। ২৭ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই হাসপাতালের আইলসোলেশন ওয়ার্ডে তার চিকিৎসা চলে। এই সময়টাই সে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়েছে।
ওই যুবতি বলে, "হাসপাতালের যেসব চিকিৎসক ও কর্মী আমার চিকিৎসায় নিযুক্ত ছিলেন, তাঁরা অধিকাংশ সময়ই হাসপাতালে থেকে যেতেন। ওঁদের নিষ্ঠা এবং উদ্বেগ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমাকে ফোন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ফলে, অনেকটাই চাপমুক্ত ছিলাম। এমনকী চিকিৎসা চলাকালীন পরিবারের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। হাসপাতালের কর্মীরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন। যখন আমাকে ছেড়ে দেওয়ার সময় হল, ওঁরাই সবথেকে বেশি আনন্দিত হয়েছিলেন।"
এই কঠিন সময়ে একবারের জন্যও আশা ছাড়েনি সে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এমনটাই বলছে সে। আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে আরও বলে, "আমি এখন পজ়িটিভ এনার্জিতে ভরপুর। আইসোলেশন ওয়ার্ডে কখনোই নিজেকে একা মনে হয়নি। অনেকেই আমার জন্য প্রার্থনা করেছে। চিকিৎসা পেশাটার উপর আমার সম্মান বহুগুণ বেড়ে গেছে।"
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজারও প্রশংসা করে সে।