একেবারে প্রান্তিকতম এলাকার মানুষ তাঁদের পছন্দের জিনিসটি এক ক্লিকেই এখন কিনে নিতে পারছেন ৷ এর জন্য ই-কমার্সকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে ৷ ঘটনাচক্রে অনলাইন খুচরো ব্যবসায় ভারতের বাজার সবচেয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে ৷ আকর্ষণীয় ছাড় , বিভিন্ন রকমের অফার এবং ক্যাশব্যাকই ই-স্টোরগুলির সাফল্যে অনেক বেশি অবদান রেখেছে ৷ দেশের জনসংখ্যার প্রায় 25 শতাংশ অনলাইন থেকে কেনাকাটা করেন ৷ তার পরও এই ধরনের কেনাকাটার সময় তৈরি হওয়া সমস্যা মেটাতে কোনও ব্যবস্থা ও নিয়মনীতি ছিল না ৷ সম্প্রতি কেন্দ্র গ্রাহক সুরক্ষা আইনে পুনর্বিন্যাস করেছে এবং ই-কমার্সের জন্য বেশ কয়েকটি নিয়মের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ৷ ফলে ই-কমার্স সংক্রান্ত নিয়ম এখন কনজ়িউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট 2019-এর মধ্যেই পড়ছে ৷ 2019 সালের 6 অগাস্ট সংসদে নতুন কনজ়িউমার প্রোটেকশন 2019 বিল পাস হয় ৷ তা 2020 সালের 27 জুলাই থেকে প্রয়োগ করা হয় ৷ এটা ই-কমার্স গ্রাহকদের জন্য একটা বড় স্বস্তির খবর ৷
আমাজ়নের মতো অনলাইনে খুচরো ব্যবসায় অন্যতম সবচেয়ে বড় সংস্থা শুধুমাত্র ভারতেই কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থিত খুচরো ব্যবসা সংস্থা ওয়ালমার্ট ফিল্পকার্টের 81 শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়ে ওই সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে ৷ দেশীয় হিসেবে 19 হাজার ই-কমার্স সংস্থা রয়েছে ৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র 70 শতাংশই পুরোদমে কাজ করছে ৷ বাজারের সিংহভাগ অংশই তাদের দখলে৷ জুতো থেকে জামা হয়ে জীবনদায়ী ওষুধ, সবই পাওয়া যায় এই ডিজ়িটাল দোকানে ৷ 2018 সালে 22.4 শতাংশ ই-গ্রাহক ছিল এই দেশে ৷ 2020 সালের শেষে গিয়ে এই গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে 32 কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে ৷ ভারতের ই-কমার্স ব্যবসা গতি পেয়েছিল 2017 সালে ৷ সেই সময় ব্যবসার পরিমাণ ছিল 1.79 লাখ কোটি টাকা ৷ 2021 সালের মধ্যে এই পরিমাণ 6.28 লাখ কোটি টাকায় পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ প্যানডেমিক আসার পর ডিজ়িটাল মাধ্যমে বিক্রির পরিমাণ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ প্রাথমিকভাবে কোনও নিয়ম না থাকায় ই-কমার্স সংস্থাগুলির বৃদ্ধি ঘটেছে ৷ ডেলিভারি দেওয়া না হলে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সামগ্রী দেওয়া হলে, গ্রাহকরা সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারত না ৷ অতীতে অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন যে তাঁরা আই ফোনের অর্ডার দিয়ে বদলে সাবানের বাক্স এবং বাক্সে ভরা ইট পেয়েছেন ৷ যখন কোনও গ্রাহক কোনও নকল বা নিম্নমানের সামগ্রী ফেরত দেয়, তখন ই-কমার্স সাইটগুলি টাকা ফেরত দিতে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সময় নেয় ৷
নতুন কনজ়িউমার প্রোটেকশন রুলস , 2020-এর অধীনে ই-কমার্স সংক্রান্ত নীতি সেই সমস্ত ডিজ়িটাল খুচরো ব্যবসীদের উপর আরোপ করা হল , যাঁরা ভারতীয় গ্রাহকদের বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ করেন ৷ নতুন নিয়মে গ্রাহকদের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়া হল এবং নকল সামগ্রী ও প্রতারণার ক্ষেত্রে ই-টেলার্সরা দায়বদ্ধ থাকবে৷ ই-কমার্স সংস্থার দ্বারা অনুরূপ চার্জ বহন না করা হলে কোনও জিনিস কেনার পর তা বাতিল করলে , তার জন্য কোনও টাকা নেওয়া যাবে না ৷ অনলাইন খুচরো ব্যবসায়ীদের অবশ্যই কেনা সামগ্রী ফেরত দেওয়া, বদল করা, ওয়ারেন্টি ও গ্যারেন্টি , সরবরাহ , টাকা দেওয়ার পদ্ধতি , অভিযোগ সংক্রান্ত ব্যবস্থা এবং কোনও দেশের সামগ্রী , তা সাইটে রাখতে হবে ৷ বর্তমানে চিনের সামগ্রীর উপর নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে এই নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে ৷ কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ান প্রতিটি রাজ্য সরকারকে এই নীতি কড়া ভাবে প্রয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷
গ্রাহক অধিকার ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে দ্য সেন্ট্রাল কনজ়িউমার প্রোটেকশন অথরিটি (CCPA)-কে । এর নেতৃত্বে একজন মুখ্য কমিশনার থাকবেন ৷ যিনি উপভোক্তা অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করে গ্রাহক সুরক্ষা আইন কার্যকর করবেন । নতুন এই নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাকে স্ন্যাপডিলের মতো দেশীয় ই-কমার্স সংস্থাগুলি স্বাগত জানিয়েছে । তবে একটি ই-কমার্স সংস্থার একজন আধিকারিক জানিয়েছেন যে, প্রতিটি কেনাকাটার অভিযোগ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য আধিকারিকদের দেওয়া বেশ কঠিন হবে । এখন এটাই দেখার যে এই নতুন ই-কমার্স বিধি ডিজ়িটাল একচেটিয়ার অবসান ঘটায় কি না ।