কোরোনা ভাইরাস প্যানডেমিকের জেরে জনস্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে দেশের 10 টি রাজ্যে পাখিদের মধ্যে অ্যাভিয়ান ফ্লু ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে । যা যথেষ্ট চিন্তার । আর এই ঘটনা এমন একটা সময় ঘটছে, যখন দেশ কোভিড 19 প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তি সংগ্রহ করতে শুরু করেছে । রাজস্থানে অ্যাভিয়ান ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর সংখ্যায় কাক ও ঈগল মারা যাচ্ছে । আর এই ভাইরাস এসেছে পরিযায়ী পাখিদের থেকে । ভোপালের জাতীয় পশু গবেষণাগারে কিছু মৃত পাখির নমুনা পাঠানো হয়েছিল । তা পরীক্ষার পর দেখা যায় যে তাতে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জ়া ভাইরাস রয়েছে । 2020 সালের 31 ডিসেম্বর এই কথা জানিয়ে দেয় তারা । মুহূর্তের মধ্যে ইন্দোর, গুজরাত, দিল্লি, কেরল, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ ও হরিয়ানায় বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে ।
অ্যাভিয়ান ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করতে শুরু করেছে । যে এলাকা থেকে অ্যাভিয়ান ফ্লু-এর খবর আসছে, সেখানে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পাখিদের মেরে ফেলা হচ্ছে এবং বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সেগুলিকে মাটিতে কবরস্থ করা হচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সব মুখ্যমন্ত্রীদের এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন । তিনি জানিয়েছেন, যে সমস্ত রাজ্যগুলিতে এখনও বার্ড ফ্লু ধরা পড়েনি, সেখানেও এই পদ্ধতি সতর্কতার সঙ্গে অবলম্বন করা উচিত । 2006 সাল ও 2016 সালের মধ্যে প্রায় 83 লাখ পোলট্রি-জাত পাখিকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং কবরস্থ করা হয়েছে এই অ্যাভিয়ান ফ্লু-এর জেরে । রাজ্যগুলিতে এবারও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে । তবে, তাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে পোলট্রি সেক্টরে খুব কম ক্ষতি হয় । কোভিড-19 এর জেরে উৎপাদন ও পরিষেবা, উভয় ক্ষেত্রেই ধাক্কা লেগেছে । এই ভয়ংকর প্যানডেমিক সত্ত্বেও একমাত্র কৃষিক্ষেত্র বাধাহীন ভাবে এগিয়ে যেতে পেরেছে । কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে এই অ্যাভিয়ান ফ্লু-এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে । কৃষি মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, সারা দেশে 73 কোটি পোলট্রি জাত পাখি রয়েছে । সেই পাখিদের এই মারাত্মক ভাইরাস থেকে রক্ষা করা আসলে গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ।
অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জ়া ভাইরাসের 128 রকমের ধরন রয়েছে । যা ইতিমধ্যে বহু দেশে মারাত্মক ভাবে ছড়িয়েছে । গত বছরের ডিসেম্বরের 4 তারিখ থেকে 24 তারিখ পর্যন্ত 14 টি দেশের 74 টি জায়গায় অ্যাভিয়ান ফ্লু আঘাত হেনেছে । সম্প্রতি এই তথ্য দেয় বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা ।
যদিও বার্ড ফ্লু মানুষের শরীরে আঘাত হানতে পারবে না । কিন্তু এইচ5এন1 ভ্যারিয়েন্ট মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নিজের মিউটেশন ঘটাতে পারবে । আর তা থেকে মানুষের শরীরে সংক্রামক রোগ হতে পারে । বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এমনটাই জানিয়েছে । বার্ড ফ্লু-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে মরা মুরগি ও অনান্য সংক্রামক পাখিদের খালি হাতে ছোঁয়া যাবে না । হাত দিতে গেলে আগে গ্লাভস পরে নিতে হবে । যখন পাখি রহস্যজনক কারণে মারা যাচ্ছে, তখন তা প্রশাসনকে অবিলম্বে জানাতে হবে । যদি এই রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে হয়, তাহলে সুরক্ষাবিধি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে হবে । কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে যে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জ়া নিয়ন্ত্রণ ও দমন করতে জাতীয় অ্যাকশন প্ল্যান অবশ্যেই মেনে চলতে হবে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, 2003 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত 17 টি দেশে 862 জন মানুষের বার্ড ফ্লু থেকে সংক্রমণ হয়েছে । এখনও পর্যন্ত প্রায় 455 জন মানুষ মারা গিয়েছেন ।
কোভিড 19 সংক্রান্ত সতর্কতামূলক কর্মসূচির সঙ্গেই মানুষকে বার্ড ফ্লু-এর বিষয়ে সতর্ক করতে হবে রাজ্য সরকারগুলিকে । এই কাজ করার মাধ্যমে তারা এই ভাইরাসকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মিউটেশন তৈরি আটকাতে পারবে । এতে মানুষের জীবন বাঁচবে । আর পোলট্রি সেক্টরকেও বাঁচানো যাবে । এই সেক্টরে প্রায় 80 কোটি টাকার ব্যবসা হয় ।
এর আগে গুজব ছড়িয়েছিল যে কোভিড 19 পোলট্রির মাংস খেলে ছড়িয়ে পড়ছিল । এই গুজবের ফলে ওই সেক্টরে 7 হাজার 500 কোটি টাকার ক্ষতি হয় । পোলট্রি সেক্টর এই ক্ষতি এখনও সামলে উঠতে পারেনি । ভারতীয় খাবার, যা প্রায় 70 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি তাপমাত্রায় রান্না করা হয়, সেখানে ওই ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে না । এই বিষয়টি নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে ।
সুরক্ষিত ভাবে আমিষ খাবার খেতে হবে । এর ফলে এই রোগ প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে মানুষ । আর এই ভাবেই মানুষকে বার্ড ফ্লু তাড়ানোর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে ।