চেন্নাই : দ্রাবিড় ভূমে এ যেন বিজেপির ‘বড়সড়’ ধাক্কা । অবশেষে তারা মেনে নিল তামিলনাড়ুতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করবে এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক এআইএডিএমকে । দিন কয়েক আগেও মনে করা হয়েছিল প্রার্থী একমাত্র বিজেপি-ই ঘোষণা করতে পারে । কিন্তু, সোমবার তামিলনাড়ুতে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সিটি রভি স্পষ্ট করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণার পূর্ণ অধিকার রয়েছে ক্ষমতাশীল এআইএডিএমকে দলের । তারাই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঠিক করবে ।
এআইএডিএমকে-এর সাধারণ পরিষদ ই কে পালানিস্বামীকে মুখ করে ভোটে লড়ার বিষয়ে সম্মতি দেওয়া এবং সুপারস্টার রজনীকান্ত রাজনীতিতে না আসার কথা ঘোষণা করার পরই বিজেপির এই ইউ-টার্ন । প্রসঙ্গত, শুধু সম্মতি দেওয়াই নয়, এআইএডিএমকে-এর 11 সদস্যের পরিষদ পালানিস্বামীকে গত অক্টোবর মাসেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরেছিল । এ বিষয়ে বলা উচিত, গেরুয়া শিবিরের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা, যেমন প্রকাশ জাওড়েকর ছিলেন এবারের তামিলনাড়ু নির্বাচনে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী পদের অন্যতম দাবিদার । রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের মুখ রভি বারবার এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ।
বিষয়টি নিয়ে এআইএডিএমকে এবং বিজেপির মধ্যে বেশ কয়েকমাস ধরে চাপানউতোর চলছিল । চলছিল একে অপরকে আক্রমণ করার পালাও । পালানিস্বামীকে মেনে নিতে না পারলে তামিলনাড়ুতে জোট হওয়া সম্ভব নয় বলেও বিজেপির দিকে হুঙ্কার ছুঁড়তে দেখা গিয়েছিল এআইএডিএমকে নেতাদের । দলের প্রবীণ নেতা তথা ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর কে পি মুনুস্বামী স্পষ্ট করে বলেছিলেন, তামিলনাড়ুতে জাতীয় দলগুলোর কোনও প্রভাব নেই । ডিএমকে এবং এআইএডিএমকে-র সমর্থন ছাড়া কোনও জাতীয় রাজনৈতিক দল তামিলভূমে দাঁত ফোটাতে পারবে না । দলীয় কর্মসমিতির বৈঠকে সরব হওয়া ছাড়াও মুনুস্বামী অভিযোগ করেছিলেন, ই ভি রামাস্বামী এবং সি এন আন্নাদুরাইয়ের স্বপ্নকে নষ্ট করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত চলছে ।
আরও পড়ুন : নয়া সংসদ ভবন নির্মাণে ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির ছাড়পত্র
ঠিক এই মুহূর্তে রভি স্পষ্ট করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নির্বাচন করবে এআইএডিএমকে । সম্প্রতি ষষ্ঠ শতকের বিখ্যাত রক ফোর্ট মন্দিরে গিয়েছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব । সেখার থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে রভি বলেন, মুনুস্বামী এবং অন্যরা নানা বিষয়ে সমালোচনা করলেও এনডিএ-তে বিজেপির সঙ্গে এআইএডিএমকে-র জোট অটুট আছে ।
যে সময় অভিনেতা রজনীকান্ত শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতিতে না আসার কথা ঘোষণা করেন, সে মুহূর্ত থেকে বিজেপি অনেকটাই ধাক্কা খায় । রজনীকান্ত একক লড়াই করলেও বিজেপির লাভ ছিল, আবার তাদের সঙ্গে জোট করলেও লাভ ছিল বিজেপির । কিন্তু, রজনী সরে যাওয়ার ফলে সেই আশায় ছেদ পড়ে বিজেপির । এক কঠিন বাস্তবের সামনে এসে উপস্থিত হয় তারা ।
রজনীকান্ত ছিলেন বিজেপির কাছে অনেকটা ট্রাম্প কার্ডের মতো । কিন্তু, এবার আর সেই সুযোগটা থাকল না । এআইএডিএমকে-কে সঙ্গে নিয়ে চলা ছাড়া বিজেপির সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না । একই সঙ্গে এআইএডিমকে যে তাদের উপর ছড়ি ঘোরাতে পারে, সে কথাও বুঝে গিয়েও এআইএডিএমকে-র সঙ্গে চলার কথা বলেছে তারা, কারণ এটাই স্বাভাবিক ছিল বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং জন-পরিচালন বিষয় অধ্যাপক রামু মানিভান্নান । একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, বিজেপির এই পরিবর্তন অত্যন্ত স্বাভাবিক ।
আরও পড়ুন : 'বন্ধু'র টুইটার ব্যানের পর ফলোয়ার সংখ্যায় শীর্ষ রাজনীতিক মোদি
মানিভান্নানের কথার সূত্র ধরে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক শ্রীনিবাসন রবিচন্দ্রণ মনে করেন, তামিলনাড়ুতে বিজেপির উপর একটা ভয়ঙ্কর চাপ তৈরি হয়েছে । রজনীকান্ত রাজনীতির পথ থেকে সরে যাওয়ার ফলে তাদের সামনে আর কোনও বিকল্প থাকল না । এই রাজ্যে বিজেপির মাত্র তিন শতাংশ ভোট রয়েছে । পূর্বের সব কথা গিলে যে কোনও মূল্যে জোট ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি, মনে করেন রবিচন্দ্রণ ।
বিজেপি সুর নরম করার পরই এআইএডিএমকে তাদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে । আশা করা যায়, এর ফলে তামিলনাড়ুতে আসন সমঝোতা অনেক সহজ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবেই হবে ।