ETV Bharat / bharat

সুপার স্প্রেডার্স–এর থেকে সাবধান ! - কোরোনাভাইরাস খবর

সংক্রমণ অতিদ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে । প্রথম কারণ হল মানুষের ভিড়ে ঠাসা এলাকা ।

Beware of Super Spreaders!
সুপার স্প্রেডার্স–এর থেকে সাবধান !
author img

By

Published : Apr 7, 2020, 12:17 PM IST

যখনই কোনও পেনডেমিক আসে, আমরা ‘সুপার স্প্রেডার্স’ কথাটা শুনতে পাই । এই শব্দ ব্যবহৃত হয় এমন মানুষকে বোঝাতে, যার দেহে কোনও রোগের সংক্রমণ ঘটে এবং তার পর তার মাধ্যমে সেই জীবাণু একটা বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । একক ব্যক্তিই কখনও কখনও হাজার হাজার মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে । এই সংক্রমণ ঠেকাতে ‘সুপার স্প্রেডার্স’–দের খোঁজ পাওয়া জরুরি । যদিও সব ‘সুপার স্প্রেডার্স’–দের উপসর্গ দেখা যায় না, তবু তারা ‘অ্যাসিমটোম্যাটিক’ তথা উপসর্গবিহীন বাহক হিসাবে কাজ করেন । বিশ্ব ইতিহাসে এমনই একজন ‘সুপার স্প্রেডার’ ছিলেন টাইফয়েড মেরি । 1869 সাল থেকে 1938 সাল পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন এবং কখনও তাঁর শরীরে টাইফয়েডের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি । এইভাবেই তিনি নিঃশব্দে রোগ বহন করে গিয়েছেন । তাঁর মাধ্যমে এই রোগ 51 জনের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল, যার মধ্যে অনেকের মৃত্যুও হয়েছিল । এই কারণে তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছিল । কোভিড–19 ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর হার SARS ভাইরাসের থেকেও দ্রুত । তবে ‘সুপার স্প্রেডার্স’–দের বিশাল সংখ্যার কারণে বিশ্বের ২০০টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে । নভেল কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে বেশিরভাগ দেশ বর্তমানে বড়ই অসহায় ।

এক মহিলা, যাকে অভিহিত করা হয়েছে ‘রোগী নম্বর 31’ হিসাবে, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় হাজার হাজার নভেল কোরেনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ি । তাঁর প্রাথমিক উপসর্গ দেখে চিকিৎসকরা তাকে আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন । কিন্তু নির্দেশ মেনে কোয়ারান্টাইনে থাকার পরিবর্তে সেই মহিলা স্থানীয় গির্জায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা পালনে অংশ নেন । তারপর স্থানীয় একটি রেস্তোরায় নৈশভোজও করেন । কিছু দিন তাঁর পরিক্ষার ফল পজ়িটিভ আসে । কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানাচ্ছে, ওই মহিলার মাধ্যমে ভাইরাস অন্তত 1,160 জন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে । দেয়েগু শহরের অন্তত 60 শতাংশ মানুষের কোভিড-19-এ আক্রান্ত হওয়ার পিছনে ওই মহিলাই দায়ী ৷ ব্রিটেনে স্টিভ ওয়ালশ নামে একজন ব্যবসায়ীকে কোরোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে । ওই ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুর ভ্রমণে গিয়ে নভেল কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন । দেশে ফিরে তাঁর মাধ্যমে অন্তত 11 জনের দেহে ভাইরাস সংক্রামিত হয় ।

বলদেব সিং, পঞ্জাবের পাথলায়া গ্রামের বাসিন্দা এবং গুরুদ্বারের পূজারী, জার্মানি, ইতালি ভ্রমণ করে গত 7 মার্চ ভারতে ফেরেন । সরকারের তরফে কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশ অমান্য করে তিনি স্থানীয় হলা মহল্লা অনুষ্ঠানে যোগ দেন । পরে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় । পরে পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি কোভিড–19 এ আক্রান্ত ছিলেন । পঞ্জাবের 33 জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে তিনি ছিলেন এক জন, এবং তাঁর মাধ্যমেই বাকিদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রামিত হয় । এই ঘটনার পর ওই গ্রাম ও তার আশপাশের গ্রাম মিলিয়ে অন্তত 40,000 মানুষকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয় । দিল্লির একটি মহল্লা ক্লিনিকের চিকিৎসক একজন কোভিড–19 আক্রান্তকে পরীক্ষা করতে গিয়ে নিজেকে সংক্রামিত করে ফেলেন । সেই চিকিৎসকের কাছে দেখাতে যাওয়া 900 জন বর্তমানে কোয়ারান্টাইনে আছেন । রাজস্থানের ভিলওয়ারায় একজন চিকিৎসকের বাড়িতে সৌদি আরব থেকে তাঁর এক আত্মীয় আসেন । এইভাবে সেই আত্মীয়র মাধ্যমে ওই চিকিৎসকের দেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে । রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই ওই চিকিৎসকের মাধ্যমে সংক্রমণ তাঁর হাসপাতালের আরও 16 জনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে । ফলে বর্তমানে অন্তত 8,000 মানুষ কোয়ারান্টাইনে আছেন ।

দিল্লিতে মার্চ মাসে তবলিঘি জামাতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল । অন্ধ্র প্রদেশ, তেলাঙ্গানাসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মানুষজন ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন । যদিও বেশিরভাগই পরে নিজ নিজ শহরে ফিরে যান, কিছু মানুষ অনুষ্ঠানস্থলেই থেকে যান । ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগেরই পরীক্ষায় কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তেলেঙ্গানায় গত 31মার্চ তাঁদের মধ্যে 6জনের মৃত্যুও হয়েছে । অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রত্যেককে এবং তাঁরা পরে যাদের যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদের প্রত্যেককে খোঁজা হচ্ছে, পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং কোয়ারান্টাইন করা হচ্ছে । মুম্বইয়ের প্রভাদেবী এলাকায় এক মহিলা ফল বিক্রেতা কোরোনা পজ়িটিভ সাব্যস্ত হয়েছিলেন । পরবর্তীকালে তাঁর পরিবারের সদস্য এবং তাঁর সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আসা শয়ে শয়ে মানুষকে কস্তুরবা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয় ।

শুধুমাত্র মানুষ নয় । জন্তু–জানোয়াররাও ‘সুপার স্প্রেডার্স’ হতে পারে । ইতালিতে ব্রুসেলোসিস জ্বরের উপর করা একটি সমীক্ষায় চাঞ্চল্যকর কিছু সত্য উঠে এসেছে । হিপোপটেমাসের দুধে নগণ্য পরিমাণে ওই জ্বরের ব্যাকটিরিয়া পাওয়া গিয়েছিল । তবে যাদেরই সংক্রমণ হবে, তারা প্রত্যেকেই যে ‘সুপার স্প্রেডার’ হবে, তা নয় । পাঁচ জনের মধ্যে শুধুমাত্র একজনের মাধ্যমেই সংক্রমণ অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে । যারা ইমিউনোসাপ্রেশন–এ ভুগছেন, উপসর্গ এখনও দেখা যায়নি কিংবা যাদের একাধিক ভাইরাল সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো, তারাই ‘সুপার স্প্রেডার’ হতে পারেন। 1995 সালে কঙ্গোয় দু’জন মানুষের মাধ্যমে ইবোলা 50 জনের দেহে ছড়িয়ে পড়েছিল । 1998 সালে হাই স্কুলের এক পড়ুয়ার মাধ্যমে তার 22জন সহপাঠীর দেহে হাম ছড়িয়ে পড়েছিল‌ । তাদের মধ্যে আট জনকে হামের টীকা দেওয়া হয়েছিল । 2002–2003 সালে সিঙ্গাপুরে SARS–এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর বিশেষজ্ঞরা কয়েক জন ‘সুপার স্প্রেডার’কে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন, যাদের প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে অন্তত দশ জনের দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিয়েছিলেন ।

সংক্রমণ অতিদ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে । প্রথম কারণ হল মানুষের ভিড়ে ঠাসা এলাকা । চিনে SARS–এর প্রকোপের নেপথ্যে ছিল তিনটি গণ অনুষ্ঠান । আর ওই অনুষ্ঠানগুলি থেকে অন্তত 24 জনের দেহে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল । দ্বিতীয় কারণ, ভুল পরীক্ষা । SARS–এর প্রাথমিক প্রকোপের সময় বেজিংয়ের হাসপাতালগুলি একে যক্ষা ভেবে ভুল করেছিল । যতক্ষণে চিকিৎসকরা আসল রোগ ধরতে পারলেন,ততক্ষণে রোগ শয়ে শয়ে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে । তৃতীয় কারণ, হাসপাতাল বদল । যে সব SARS রোগীদের ভুল পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভাল চিকিৎসার জন্য । এই করতে গিয়ে তারা যত্রতত্র সংক্রমণ ছড়িয়ে দিয়েছিল । চতুর্থ, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হংকংয়ের অ্যাময় গার্ডেনের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার জন্যই সে দেশে 187 জন মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল ।

যখনই কোনও পেনডেমিক আসে, আমরা ‘সুপার স্প্রেডার্স’ কথাটা শুনতে পাই । এই শব্দ ব্যবহৃত হয় এমন মানুষকে বোঝাতে, যার দেহে কোনও রোগের সংক্রমণ ঘটে এবং তার পর তার মাধ্যমে সেই জীবাণু একটা বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । একক ব্যক্তিই কখনও কখনও হাজার হাজার মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে । এই সংক্রমণ ঠেকাতে ‘সুপার স্প্রেডার্স’–দের খোঁজ পাওয়া জরুরি । যদিও সব ‘সুপার স্প্রেডার্স’–দের উপসর্গ দেখা যায় না, তবু তারা ‘অ্যাসিমটোম্যাটিক’ তথা উপসর্গবিহীন বাহক হিসাবে কাজ করেন । বিশ্ব ইতিহাসে এমনই একজন ‘সুপার স্প্রেডার’ ছিলেন টাইফয়েড মেরি । 1869 সাল থেকে 1938 সাল পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন এবং কখনও তাঁর শরীরে টাইফয়েডের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি । এইভাবেই তিনি নিঃশব্দে রোগ বহন করে গিয়েছেন । তাঁর মাধ্যমে এই রোগ 51 জনের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল, যার মধ্যে অনেকের মৃত্যুও হয়েছিল । এই কারণে তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছিল । কোভিড–19 ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর হার SARS ভাইরাসের থেকেও দ্রুত । তবে ‘সুপার স্প্রেডার্স’–দের বিশাল সংখ্যার কারণে বিশ্বের ২০০টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে । নভেল কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে বেশিরভাগ দেশ বর্তমানে বড়ই অসহায় ।

এক মহিলা, যাকে অভিহিত করা হয়েছে ‘রোগী নম্বর 31’ হিসাবে, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় হাজার হাজার নভেল কোরেনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ি । তাঁর প্রাথমিক উপসর্গ দেখে চিকিৎসকরা তাকে আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন । কিন্তু নির্দেশ মেনে কোয়ারান্টাইনে থাকার পরিবর্তে সেই মহিলা স্থানীয় গির্জায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা পালনে অংশ নেন । তারপর স্থানীয় একটি রেস্তোরায় নৈশভোজও করেন । কিছু দিন তাঁর পরিক্ষার ফল পজ়িটিভ আসে । কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানাচ্ছে, ওই মহিলার মাধ্যমে ভাইরাস অন্তত 1,160 জন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে । দেয়েগু শহরের অন্তত 60 শতাংশ মানুষের কোভিড-19-এ আক্রান্ত হওয়ার পিছনে ওই মহিলাই দায়ী ৷ ব্রিটেনে স্টিভ ওয়ালশ নামে একজন ব্যবসায়ীকে কোরোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে । ওই ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুর ভ্রমণে গিয়ে নভেল কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন । দেশে ফিরে তাঁর মাধ্যমে অন্তত 11 জনের দেহে ভাইরাস সংক্রামিত হয় ।

বলদেব সিং, পঞ্জাবের পাথলায়া গ্রামের বাসিন্দা এবং গুরুদ্বারের পূজারী, জার্মানি, ইতালি ভ্রমণ করে গত 7 মার্চ ভারতে ফেরেন । সরকারের তরফে কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশ অমান্য করে তিনি স্থানীয় হলা মহল্লা অনুষ্ঠানে যোগ দেন । পরে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় । পরে পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি কোভিড–19 এ আক্রান্ত ছিলেন । পঞ্জাবের 33 জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে তিনি ছিলেন এক জন, এবং তাঁর মাধ্যমেই বাকিদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রামিত হয় । এই ঘটনার পর ওই গ্রাম ও তার আশপাশের গ্রাম মিলিয়ে অন্তত 40,000 মানুষকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয় । দিল্লির একটি মহল্লা ক্লিনিকের চিকিৎসক একজন কোভিড–19 আক্রান্তকে পরীক্ষা করতে গিয়ে নিজেকে সংক্রামিত করে ফেলেন । সেই চিকিৎসকের কাছে দেখাতে যাওয়া 900 জন বর্তমানে কোয়ারান্টাইনে আছেন । রাজস্থানের ভিলওয়ারায় একজন চিকিৎসকের বাড়িতে সৌদি আরব থেকে তাঁর এক আত্মীয় আসেন । এইভাবে সেই আত্মীয়র মাধ্যমে ওই চিকিৎসকের দেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে । রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই ওই চিকিৎসকের মাধ্যমে সংক্রমণ তাঁর হাসপাতালের আরও 16 জনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে । ফলে বর্তমানে অন্তত 8,000 মানুষ কোয়ারান্টাইনে আছেন ।

দিল্লিতে মার্চ মাসে তবলিঘি জামাতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল । অন্ধ্র প্রদেশ, তেলাঙ্গানাসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মানুষজন ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন । যদিও বেশিরভাগই পরে নিজ নিজ শহরে ফিরে যান, কিছু মানুষ অনুষ্ঠানস্থলেই থেকে যান । ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগেরই পরীক্ষায় কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তেলেঙ্গানায় গত 31মার্চ তাঁদের মধ্যে 6জনের মৃত্যুও হয়েছে । অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রত্যেককে এবং তাঁরা পরে যাদের যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদের প্রত্যেককে খোঁজা হচ্ছে, পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং কোয়ারান্টাইন করা হচ্ছে । মুম্বইয়ের প্রভাদেবী এলাকায় এক মহিলা ফল বিক্রেতা কোরোনা পজ়িটিভ সাব্যস্ত হয়েছিলেন । পরবর্তীকালে তাঁর পরিবারের সদস্য এবং তাঁর সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আসা শয়ে শয়ে মানুষকে কস্তুরবা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয় ।

শুধুমাত্র মানুষ নয় । জন্তু–জানোয়াররাও ‘সুপার স্প্রেডার্স’ হতে পারে । ইতালিতে ব্রুসেলোসিস জ্বরের উপর করা একটি সমীক্ষায় চাঞ্চল্যকর কিছু সত্য উঠে এসেছে । হিপোপটেমাসের দুধে নগণ্য পরিমাণে ওই জ্বরের ব্যাকটিরিয়া পাওয়া গিয়েছিল । তবে যাদেরই সংক্রমণ হবে, তারা প্রত্যেকেই যে ‘সুপার স্প্রেডার’ হবে, তা নয় । পাঁচ জনের মধ্যে শুধুমাত্র একজনের মাধ্যমেই সংক্রমণ অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে । যারা ইমিউনোসাপ্রেশন–এ ভুগছেন, উপসর্গ এখনও দেখা যায়নি কিংবা যাদের একাধিক ভাইরাল সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো, তারাই ‘সুপার স্প্রেডার’ হতে পারেন। 1995 সালে কঙ্গোয় দু’জন মানুষের মাধ্যমে ইবোলা 50 জনের দেহে ছড়িয়ে পড়েছিল । 1998 সালে হাই স্কুলের এক পড়ুয়ার মাধ্যমে তার 22জন সহপাঠীর দেহে হাম ছড়িয়ে পড়েছিল‌ । তাদের মধ্যে আট জনকে হামের টীকা দেওয়া হয়েছিল । 2002–2003 সালে সিঙ্গাপুরে SARS–এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর বিশেষজ্ঞরা কয়েক জন ‘সুপার স্প্রেডার’কে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন, যাদের প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে অন্তত দশ জনের দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিয়েছিলেন ।

সংক্রমণ অতিদ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে । প্রথম কারণ হল মানুষের ভিড়ে ঠাসা এলাকা । চিনে SARS–এর প্রকোপের নেপথ্যে ছিল তিনটি গণ অনুষ্ঠান । আর ওই অনুষ্ঠানগুলি থেকে অন্তত 24 জনের দেহে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল । দ্বিতীয় কারণ, ভুল পরীক্ষা । SARS–এর প্রাথমিক প্রকোপের সময় বেজিংয়ের হাসপাতালগুলি একে যক্ষা ভেবে ভুল করেছিল । যতক্ষণে চিকিৎসকরা আসল রোগ ধরতে পারলেন,ততক্ষণে রোগ শয়ে শয়ে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে । তৃতীয় কারণ, হাসপাতাল বদল । যে সব SARS রোগীদের ভুল পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভাল চিকিৎসার জন্য । এই করতে গিয়ে তারা যত্রতত্র সংক্রমণ ছড়িয়ে দিয়েছিল । চতুর্থ, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হংকংয়ের অ্যাময় গার্ডেনের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার জন্যই সে দেশে 187 জন মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.