হায়দরাবাদ, 16 জুন : কোথাও ঘুরতে গিয়ে আপনি কি রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড কিংবা বিমানবন্দরের চার্জিং পয়েন্ট থেকে ফোন চার্জ করেন? তাহলে এখনই সাবধান হোন, কারণ আপনি নিজের অজান্তেই 'জুস জ্যাকিং'-র মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারেন। পাবলিক প্লেসে চার্জিং পোর্টের মাধ্যমে আপনার ফোনের ম্যালওয়ার ও যাবতীয় গোপন তথ্য চুরি করে নিচ্ছে জালিয়াতরা।
কীভাবে চার্জিং পয়েন্টগুলিকে লক্ষ্য বানাচ্ছে জালিয়াতরা?
বহু ধরনেরই সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জনগণ এখন সতর্ক। তবে পিছিয়ে নেই জালিয়াতরাও, প্রতিদিনই তারা নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করছে সাধারণ মানুষদের ঠকানোর জন্য। বর্তমানে পাবলিক প্লেসে চার্জিং পয়েন্টগুলিকেই হাতিয়ার বানিয়েছে তারা।
কীভাবে অসুরক্ষিত জায়গাগুলি জালিয়াতদের লক্ষ্য হয়ে উঠছে?
বেঙ্গালুরু শহরের পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও ইতিমধ্যেই জনগণকে এই বিষয়ে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করেছেন। যাত্রীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চার্জিং পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কতটা সুরক্ষিত এই জায়গাগুলি, তার কোন উত্তর নেই। রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, বিমানবন্দর, হোটেল, রেস্তরাঁ এবং পার্কে চার্জিং পয়েন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা এই চার্জিং পয়েন্টগুলিতে নিজেদের ফোন চার্জ করেন, তাঁরা আশেপাশের মানুষজন বা কে তাঁদের উপর নজর রাখছে, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখেন না। বর্তমানে জালিয়াতরা চার্জারের মাধ্যমেও যাবতীয় তথ্য চুরি করতে সক্ষম।
সুরক্ষিত স্থানে থাকলেও সতর্ক থাকুন
বাস স্ট্যান্ড, হোটেল এবং পার্ক ফোন চার্জ দেওয়ার জন্য একদমই সুরক্ষিত স্থান নয়। তবে সুরক্ষিত স্থানগুলিও সাইবার হ্যাকারদের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। যেমন বিমানবন্দরে প্রচুর চার্জার পয়েন্ট রয়েছে, তবে বিমানবন্দর কর্মীরা সেই পয়েন্ট গুলির অবস্থা কীরকম, তা পরীক্ষা করেন না।
বিমানবন্দরে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা ফোন ব্যবহার করেন। উড়ান দেরিতে হলে অত্যাধিক ফোন ব্যবহারে তার শেষ হয়ে যায়, ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা কাছের কোনও চার্জিং পয়েন্ট খুঁজে নেন ফোন চার্জ দেওয়ার জন্য। বিপদ এখানেই, সকলের ব্যবহারের জন্য চার্জিং পয়েন্টগুলির মাধ্যমেই হ্যাকাররা সমস্ত তথ্য এবং টাকা চুরি করতে সফল হচ্ছে।
সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটও হ্যাকারদের লক্ষ্য
আগে জালিয়াতরা ATM কার্ডের মাধ্যমে টাকা চুরি করত। কিন্তু এখন তারা সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির সাহায্যে টাকা চুরি করছে। পাবলিক প্লেসের চার্জিং পয়েন্ট ব্যবহার করার সময় হ্যাকাররা আপনার ফোনে ঢুকে বিভিন্ন প্রোফাইল থেকে ছবি চুরি করছে।
সেই ছবিকে বিকৃত করে তারা টাকার জন্য ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল থেকে আপনার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবের তথ্যও চুরি করে তাদেরও ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নেয়। বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার সাধারণ মানুষদের সতর্ক করে পাবলিক প্লেসের চার্জিং পয়েন্ট গুলি ব্যবহার না করার অনুরোধ করেছেন।
কীভাবে হ্যাক হচ্ছে?
কেবলমাত্র চার্জার দিয়েই কীভাবে হ্যাক করা সম্ভব ফোন, সাইবার এক্সপার্টরা খুঁজে বের করেছেন। চার্জারের তারের মাধ্যমে জুস জ্যাকিং ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে হ্যাকাররা ফোনের সমস্ত তথ্য চুরি করে নেয়। ফোনে কী কী অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার হচ্ছে, তার উপরও নজর রাখে তারা। ফোন ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গেই পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা, পাসওয়ার্ড পেয়ে গেলে বাকি কাজটুকু করা খুব একটা কঠিন নয় তাদের জন্য।
সুরক্ষিত নয় চার্জিং পয়েন্টগুলি
USB তার ছাড়াও চার্জিং পয়েন্টের মাধ্যমেও ফোনের যাবতীয় ডেটা রেকর্ড করা যায়। পাবলিক প্লেসে চার্জিং পয়েন্ট ব্যবহার করলে ব্যাক এন্ডে যাবতীয় তথ্য সংগৃহীত হয়ে যায়। আপনি চার্জ দিতে দিতে ফোনে যাই করুন না কেন, তা হ্যাকারদের সিস্টেমে প্রতিফলিত হবে। এই ভাবেই হ্যাকারদের জালে জড়িয়ে পড়তে পারেন আপনি।
হ্যাকারদের কাছে আপনার তথ্য রয়েছে, তা জানতেও পারবেন না আপনি
পাবলিক চার্জিং পয়েন্টে ফোন চার্জ দেওয়ার সময় আপনি যদি কোনও অ্যাকাউন্ট বা QR কোড ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন করেন, তাহলে হ্যাকারদের কাছে আপনার যাবতীয় ব্যাংকের তথ্য পৌঁছে যাবে। যদি আপনি ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন, সেখান থেকেই গুগল পে, ফোন পে, পেটিএম পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের কাছে সংগৃহীত হয়ে যায়।
কীভাবে নিজেকে হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচাবেন?
- বাইরে গেলে কিংবা ঘুরতে গেলে নিজের চার্জার এবং পাওয়ার ব্যাঙ্ক সঙ্গে রাখুন।
- নিজের ফোন থেকে অন্য ফোনে ইজ়ি ডাটা ট্রান্সফার করবেন না।
- অন্য কোনও ডিভাইসের সঙ্গে আপনার ফোন সংযুক্ত রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে নিন।
- একান্তই যদি পাবলিক প্লেসে ফোন চার্জ দিতে হয়, তবে চার্জে বসানোর আগেই ফোন সুইচ অফ করে দিন।
- চার্জ হওয়াকালীন ফোনে প্যাটার্ন লক, পিন কোড, থাম্ব লক এবং পাসওয়ার্ড দেবেন না।
এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনি জালিয়াতদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।