ETV Bharat / bharat

বাবরি ধ্বংস মামলা : রায় ঘোষণা CBI-এর বিশেষ আদালতে - কল্যাণ সিং

1992-এর 6 ডিসেম্বর থেকে 2020-এর 30 সেপ্টেম্বর ৷ একনজরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলা ৷

Babri Demolition Case
Babri Demolition Case
author img

By

Published : Sep 30, 2020, 5:00 PM IST

লখনউ, 30 সেপ্টেম্বর : 28 বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘোষণা হল বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সেই ঐতিহাসিক রায় । লখনউয়ের বিশেষ CBI আদালতের বিচারক সুরেন্দ্র যাদব রায়দান আজ রায়দান করেন । সকাল থেকেই সেই দিকে তাকিয়ে ছিল দেশবাসী । ভারতের সবচেয়ে বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় 28 বছর পর প্রদান করল আদালত । আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়েছিল রায় ঘোষণা করা হবে সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ । সেই মতো লখনউয়ের CBI বিশেষ আদালতের বিচারক সুরেন্দ্র যাদব সকাল 11টার পর রায় ঘোষণা করেন ।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় মোট অভিযুক্ত ছিলেন 49 জন । তাঁদের মধ্যে ইতিমধ্যেই 17 জনের মৃত্যু হয়েছে । সুরেন্দ্র যাদব আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন রায়দানের সময় 32 জন অভিযুক্তেই আদালতে উপস্থিত থাকতে । অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম বর্ষীয়ান BJP নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতী ও অন্যান্যরা । বয়স ও কোরোনা পরিস্থিতির কারণে রায়দানের সময় অনেক অভিযুক্তের আদালতে উপস্থিত থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল আগেই থেকেই । আজ উমা ভারতী , লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলী মনোহর যোশী-সহ অনেকেই উপস্থিত থাকতে পারেননি । উমা ভারতী কোরোনায় আক্রান্ত । হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন । আর আদবানি , যোশী বয়সজনিত কারণে ও শারীরিক সমস্যার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি । তবে ভিডিয়োর মাধ্য়মে তাঁরা রায় দানের সময় উপস্থিত ছিলেন ।

মোট 49 জন অভিযুক্তদের মধ্যে যে সমস্ত অভিযুক্ত এখনও বেঁচে আছেন তারা হলেন, লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, সুধীর কক্কর, সতীশ প্রধান, রামচন্দ্র ক্ষেত্রী, সন্তোষ দুবে, কল্যাণ সিং, উমা ভারতী, রামবিলাস ভেদান্তি, বিনয় কাটিয়ার, প্রকাশ শর্মা, গান্ধি যাদব, জয় ভান সিং, লালু সিং, কমলেশ ত্রিপাঠি, ব্রিজ ভূষণ সিং, রামজি গুপ্তা, মহন্ত নৃত্য গোপাল দাস, চম্পত রাই, সাক্ষী মহারাজ, বিনয়কুমার রাই, নবীনভাই শুক্লা, ধর্মদাস, জয়ভগবান গোয়েল, অমরনাথ গোয়েল, সাধ্বী ঋতম্ভরা, পবন পাণ্ডে, বিজয় বাহাদুর সিং, আর এম শ্রীবাস্তব, ধর্মেন্দ্র সিং গুজ্জর, ওমপ্রকাশ পান্ডে এবং আচার্য ধর্মেন্দ্র ।

আর যারা ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন তাঁরা হলেন, পরমহংস রামচন্দ্র দাস, বিনোদকুমার ভাটস, রামনারায়ণ দাস, ডি বি রাই, লক্ষ্মীনারায়ণ দাস, হরগোবিন্দ সিং, রমেশপ্রতাপ সিং, দেবেন্দ্র বাহাদুর, অশোক সিংহল, গিরিরাজ কিশোর, বিষ্ণুহরি ডালমিয়া, মোরেশ্বর সহায়, মহন্ত আদিত্যনাথ মহামণ্ডলেশ্বর জগদীশ মুনি মহারাজ, বৈকুণ্ঠলাল শর্মা, সতীশ কুমার নগর ও বালাসাহেব ঠাকরে ।

1992 সালের 6 ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলা

1992 সালের 6 ডিসেম্বর পবিত্র "করসেবা"র দিন হিসেবে নির্ধারিত ছিল । উচ্চ আদালত সেই দিন দেশের সমস্ত জায়গায় করসেবার অনুমতি দিয়েছিল । অযোধ্যায় কতজন "করসেবক" যেতে পারবেন, সেই সংখ্যা আদালত নির্ধারিত করে দেয়নি । কিছু অসাধু ও সমাজ বিরোধী এর মধ্যে ঢুকে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং বাবরি মসজিদ ধ্বসং হয়ে যায় । ওই দিন প্রথম FIR দায়ের করা হয় 6টা 15 মিনিটে । রাম জন্মভূমি পুলিশ স্টেশনে দায়ের করা ওই অভিযোগে করসেবকদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল । কিন্তু কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি । প্রথম FIR দায়েরের ঠিক দশ মিনিট পর, 6 টা 25 মিনিটে রাম জন্মভূমি পুলিশ পোস্টের তৎকালীন ইনচার্জ গঙ্গাপ্রসাদ তিওয়ারি আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন । দ্বিতীয় FIR-এ রাজনীতির উপাদান অবসম্ভাবী ভাবে বেশিই ছিল ।

দ্বিতীয় FIR স্থানীয় পুলিশের হাতে তদন্তের জন্য তুলে দেওয়া হয় । তবে দ্বিতীয় দিন এই মামলা CBI এর কাছে হস্তান্তরিত করা হয় । তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং পদত্যাগ করেন । রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয় । CB, CID এই মামলার তদন্ত করে এবং চার্জশিট পেশ করে । এর পর পুরো মামলাটাই কেন্দ্রীয় তদন্তাকারী ব্যুরো (CBI) এর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । CBI এর পর ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং আদালতে 39 জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে । এই মামলায় শুনানি ও বিচার প্রক্রিয়া দুই দশক ধরে দীর্ঘায়িত হয়েছে । শুনানি দুইটি জায়গায় করা হয় । তার মধ্যে একটি রায়বরেলি ও দ্বিতীয়টি লখনউ । মামলায় যে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নাম অভিযুক্ত হিসেবে ছিল, সেটির শুনানি রায়বরেলিতে হয় । অন্যান্য অভিযুক্তদের মামলার শুনানি হয় লখনউয়ে । দুই দশক ধরে শুনানিতে সওয়াল জবাব হওয়ার পর লখনউতে শুনানি শেষ হয় । আর এদিকে সুপ্রিম কোর্ট রায়বরেলির মামলাকে লখনউতে পাঠিয়ে দেয় । এখন 2020 সালের 30 সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আজ রায় ঘোষণা হয় ।

একনজরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলা

1992 সালের 6 ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ফৈজাবাদে দুই মামলা দায়ের হয়েছিল । প্রথম FIR-এ অভিযুক্ত করা হয়েছিল লাখ লাখ করসেবককে । আর দ্বিতীয়টিতে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলি মনোহর যোশী, বাল ঠাকরে, উমা ভারতী ও অন্যান্যরা মিলিয়ে মোট 49 জনকে অভিযুক্ত করা হয় । তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ করা হয় । যার জেরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয় ।

1993 সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলা CBI এর কাছে হস্তান্তরিত করা হয় । যে মামলায় BJP ও RSS এর নেতারা অভিযুক্ত, তার শুনানি রায়বরেলি আদালতে হয়েছে । অন্য মামলাটির লখনউ আদালতে শুনানি হয় । সেই মামলায় করসেবকরা অভিযুক্ত । অক্টোবরে CBI দুটো মামলাকেই মিলিয়ে দেয় । আর চার্জশিট পেশ করে । ওই চার্জশিটে CBI লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ নিয়ে আসে ।

1996 সালে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই দুই মামলার বিচার এক সঙ্গে চালানো নিয়ে একটি নির্দেশ জারি করে । এর পর লখনউয়ের CBI-এর বিশেষ আদালত ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মামলায়জুড়ে দেয় ।

যদিও আদালতে আডবাণী ও অন্য অনেক অভিযুক্ত এই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করেন ।

2001 সালের 4 মে CBI এর বিশেষ আদালত আডবাণী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করে দেয় ।

2003 সালে CBI চার্জশিট পেশ করে । রায়বরেলি আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল যে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই । উচ্চ আদালত পরে এই বিষয়টিতে ঢোকে এবং তাঁর ও অন্যদের

বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয় । আর প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ বহাল রাখা হয় ।

2010 সালের 23 মে ইলাহাবাদ উচ্চ আদালত লালকৃষ্ণ আডবাণী ও অন্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করে দেয় । 2012 সালে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে CBI । আদালত শুধু

ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রেখেই দেয়নি । একই সঙ্গে দ্রুত মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেয় ।

2017 সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট তার একটি রায়ে CBI এর বিশেষ আদালতকে দুই বছরের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেয়। মামলার রায়বরেলি ও লখনউতে শুনানি হচ্ছিল । শীর্ষ আদালত দুইটি মামলা মিশিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে লখনউতে শুনানির কথা বলে দেয় ।

2017 সালের 21 মে থেকে এই মামলার রোজ শুনানি শুরু হয় । সমস্ত অভিযুক্তের বয়ান আদালতে নথিভুক্ত করা হয় । কোরোনা প্যানডেমিকের জন্য লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলী মনোহর যোশী-সহ

অনেক অভিযুক্ত ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বয়ান নথিভুক্ত করান ।

2020 সালের 8 মে সুপ্রিম কোর্ট 31 অগস্টের মধ্যে শুনানি শেষ করার নির্দেশ দেয় । পরে কোরোনা প্যানডেমিকের জন্য তা বৃদ্ধি করে সেপ্টেম্বরের 30 তারিখ করা হয় ।

2020 সালের সেপ্টেম্বরের 1 তারিখ CBI এর বিশেষ আদালতের বিচারক সুরেন্দ্র যাদব বাবরি মসজিদ মামলার শুনানি শেষ করেন । তার আগে তিনি সব পক্ষ, সাক্ষী ও সওয়াল জবাব শোনেন । সেপ্টেম্বরের 2 তারিখ থেকে তিনি রায় লেখার কাজ শুরু করেন । গত 16 সেপ্টেম্বর তিনি জানান যে এই ঐতিহাসিক মামলার রায়দান হবে আগামী 30 সেপ্টেম্বর । সেই মতো আজ রায়দান করে CBI-এর বিশেষ আদালত ৷

লখনউ, 30 সেপ্টেম্বর : 28 বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘোষণা হল বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সেই ঐতিহাসিক রায় । লখনউয়ের বিশেষ CBI আদালতের বিচারক সুরেন্দ্র যাদব রায়দান আজ রায়দান করেন । সকাল থেকেই সেই দিকে তাকিয়ে ছিল দেশবাসী । ভারতের সবচেয়ে বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় 28 বছর পর প্রদান করল আদালত । আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়েছিল রায় ঘোষণা করা হবে সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ । সেই মতো লখনউয়ের CBI বিশেষ আদালতের বিচারক সুরেন্দ্র যাদব সকাল 11টার পর রায় ঘোষণা করেন ।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় মোট অভিযুক্ত ছিলেন 49 জন । তাঁদের মধ্যে ইতিমধ্যেই 17 জনের মৃত্যু হয়েছে । সুরেন্দ্র যাদব আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন রায়দানের সময় 32 জন অভিযুক্তেই আদালতে উপস্থিত থাকতে । অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম বর্ষীয়ান BJP নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতী ও অন্যান্যরা । বয়স ও কোরোনা পরিস্থিতির কারণে রায়দানের সময় অনেক অভিযুক্তের আদালতে উপস্থিত থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল আগেই থেকেই । আজ উমা ভারতী , লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলী মনোহর যোশী-সহ অনেকেই উপস্থিত থাকতে পারেননি । উমা ভারতী কোরোনায় আক্রান্ত । হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন । আর আদবানি , যোশী বয়সজনিত কারণে ও শারীরিক সমস্যার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি । তবে ভিডিয়োর মাধ্য়মে তাঁরা রায় দানের সময় উপস্থিত ছিলেন ।

মোট 49 জন অভিযুক্তদের মধ্যে যে সমস্ত অভিযুক্ত এখনও বেঁচে আছেন তারা হলেন, লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, সুধীর কক্কর, সতীশ প্রধান, রামচন্দ্র ক্ষেত্রী, সন্তোষ দুবে, কল্যাণ সিং, উমা ভারতী, রামবিলাস ভেদান্তি, বিনয় কাটিয়ার, প্রকাশ শর্মা, গান্ধি যাদব, জয় ভান সিং, লালু সিং, কমলেশ ত্রিপাঠি, ব্রিজ ভূষণ সিং, রামজি গুপ্তা, মহন্ত নৃত্য গোপাল দাস, চম্পত রাই, সাক্ষী মহারাজ, বিনয়কুমার রাই, নবীনভাই শুক্লা, ধর্মদাস, জয়ভগবান গোয়েল, অমরনাথ গোয়েল, সাধ্বী ঋতম্ভরা, পবন পাণ্ডে, বিজয় বাহাদুর সিং, আর এম শ্রীবাস্তব, ধর্মেন্দ্র সিং গুজ্জর, ওমপ্রকাশ পান্ডে এবং আচার্য ধর্মেন্দ্র ।

আর যারা ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন তাঁরা হলেন, পরমহংস রামচন্দ্র দাস, বিনোদকুমার ভাটস, রামনারায়ণ দাস, ডি বি রাই, লক্ষ্মীনারায়ণ দাস, হরগোবিন্দ সিং, রমেশপ্রতাপ সিং, দেবেন্দ্র বাহাদুর, অশোক সিংহল, গিরিরাজ কিশোর, বিষ্ণুহরি ডালমিয়া, মোরেশ্বর সহায়, মহন্ত আদিত্যনাথ মহামণ্ডলেশ্বর জগদীশ মুনি মহারাজ, বৈকুণ্ঠলাল শর্মা, সতীশ কুমার নগর ও বালাসাহেব ঠাকরে ।

1992 সালের 6 ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলা

1992 সালের 6 ডিসেম্বর পবিত্র "করসেবা"র দিন হিসেবে নির্ধারিত ছিল । উচ্চ আদালত সেই দিন দেশের সমস্ত জায়গায় করসেবার অনুমতি দিয়েছিল । অযোধ্যায় কতজন "করসেবক" যেতে পারবেন, সেই সংখ্যা আদালত নির্ধারিত করে দেয়নি । কিছু অসাধু ও সমাজ বিরোধী এর মধ্যে ঢুকে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং বাবরি মসজিদ ধ্বসং হয়ে যায় । ওই দিন প্রথম FIR দায়ের করা হয় 6টা 15 মিনিটে । রাম জন্মভূমি পুলিশ স্টেশনে দায়ের করা ওই অভিযোগে করসেবকদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল । কিন্তু কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি । প্রথম FIR দায়েরের ঠিক দশ মিনিট পর, 6 টা 25 মিনিটে রাম জন্মভূমি পুলিশ পোস্টের তৎকালীন ইনচার্জ গঙ্গাপ্রসাদ তিওয়ারি আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন । দ্বিতীয় FIR-এ রাজনীতির উপাদান অবসম্ভাবী ভাবে বেশিই ছিল ।

দ্বিতীয় FIR স্থানীয় পুলিশের হাতে তদন্তের জন্য তুলে দেওয়া হয় । তবে দ্বিতীয় দিন এই মামলা CBI এর কাছে হস্তান্তরিত করা হয় । তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং পদত্যাগ করেন । রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয় । CB, CID এই মামলার তদন্ত করে এবং চার্জশিট পেশ করে । এর পর পুরো মামলাটাই কেন্দ্রীয় তদন্তাকারী ব্যুরো (CBI) এর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । CBI এর পর ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং আদালতে 39 জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে । এই মামলায় শুনানি ও বিচার প্রক্রিয়া দুই দশক ধরে দীর্ঘায়িত হয়েছে । শুনানি দুইটি জায়গায় করা হয় । তার মধ্যে একটি রায়বরেলি ও দ্বিতীয়টি লখনউ । মামলায় যে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নাম অভিযুক্ত হিসেবে ছিল, সেটির শুনানি রায়বরেলিতে হয় । অন্যান্য অভিযুক্তদের মামলার শুনানি হয় লখনউয়ে । দুই দশক ধরে শুনানিতে সওয়াল জবাব হওয়ার পর লখনউতে শুনানি শেষ হয় । আর এদিকে সুপ্রিম কোর্ট রায়বরেলির মামলাকে লখনউতে পাঠিয়ে দেয় । এখন 2020 সালের 30 সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আজ রায় ঘোষণা হয় ।

একনজরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলা

1992 সালের 6 ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ফৈজাবাদে দুই মামলা দায়ের হয়েছিল । প্রথম FIR-এ অভিযুক্ত করা হয়েছিল লাখ লাখ করসেবককে । আর দ্বিতীয়টিতে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলি মনোহর যোশী, বাল ঠাকরে, উমা ভারতী ও অন্যান্যরা মিলিয়ে মোট 49 জনকে অভিযুক্ত করা হয় । তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ করা হয় । যার জেরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয় ।

1993 সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলা CBI এর কাছে হস্তান্তরিত করা হয় । যে মামলায় BJP ও RSS এর নেতারা অভিযুক্ত, তার শুনানি রায়বরেলি আদালতে হয়েছে । অন্য মামলাটির লখনউ আদালতে শুনানি হয় । সেই মামলায় করসেবকরা অভিযুক্ত । অক্টোবরে CBI দুটো মামলাকেই মিলিয়ে দেয় । আর চার্জশিট পেশ করে । ওই চার্জশিটে CBI লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ নিয়ে আসে ।

1996 সালে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই দুই মামলার বিচার এক সঙ্গে চালানো নিয়ে একটি নির্দেশ জারি করে । এর পর লখনউয়ের CBI-এর বিশেষ আদালত ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মামলায়জুড়ে দেয় ।

যদিও আদালতে আডবাণী ও অন্য অনেক অভিযুক্ত এই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করেন ।

2001 সালের 4 মে CBI এর বিশেষ আদালত আডবাণী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করে দেয় ।

2003 সালে CBI চার্জশিট পেশ করে । রায়বরেলি আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল যে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই । উচ্চ আদালত পরে এই বিষয়টিতে ঢোকে এবং তাঁর ও অন্যদের

বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয় । আর প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ বহাল রাখা হয় ।

2010 সালের 23 মে ইলাহাবাদ উচ্চ আদালত লালকৃষ্ণ আডবাণী ও অন্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করে দেয় । 2012 সালে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে CBI । আদালত শুধু

ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রেখেই দেয়নি । একই সঙ্গে দ্রুত মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেয় ।

2017 সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট তার একটি রায়ে CBI এর বিশেষ আদালতকে দুই বছরের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেয়। মামলার রায়বরেলি ও লখনউতে শুনানি হচ্ছিল । শীর্ষ আদালত দুইটি মামলা মিশিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে লখনউতে শুনানির কথা বলে দেয় ।

2017 সালের 21 মে থেকে এই মামলার রোজ শুনানি শুরু হয় । সমস্ত অভিযুক্তের বয়ান আদালতে নথিভুক্ত করা হয় । কোরোনা প্যানডেমিকের জন্য লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলী মনোহর যোশী-সহ

অনেক অভিযুক্ত ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বয়ান নথিভুক্ত করান ।

2020 সালের 8 মে সুপ্রিম কোর্ট 31 অগস্টের মধ্যে শুনানি শেষ করার নির্দেশ দেয় । পরে কোরোনা প্যানডেমিকের জন্য তা বৃদ্ধি করে সেপ্টেম্বরের 30 তারিখ করা হয় ।

2020 সালের সেপ্টেম্বরের 1 তারিখ CBI এর বিশেষ আদালতের বিচারক সুরেন্দ্র যাদব বাবরি মসজিদ মামলার শুনানি শেষ করেন । তার আগে তিনি সব পক্ষ, সাক্ষী ও সওয়াল জবাব শোনেন । সেপ্টেম্বরের 2 তারিখ থেকে তিনি রায় লেখার কাজ শুরু করেন । গত 16 সেপ্টেম্বর তিনি জানান যে এই ঐতিহাসিক মামলার রায়দান হবে আগামী 30 সেপ্টেম্বর । সেই মতো আজ রায়দান করে CBI-এর বিশেষ আদালত ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.