ETV Bharat / bharat

''উপত্যকায় সত্যিই যা ঘটছে, সেই ছবিটা স্বাভাবিক নয়'', মন্তব্য প্রাক্তন বিদেশ সচিবের - diplomatic relationship between India and neighbouring countries

রাজাপক্ষরা কলম্বোয় ক্ষমতায় ফিরেছেন ৷ প্রাক্তন বিদেশসচিব শ্যাম শরণ এই প্রসঙ্গে সতর্ক করেছেন, অতীতের কোনও ছায়া ভবিষ্যতে ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে যেন প্রভাব না ফেলে৷ এছাড়াও প্রাক্তন শীর্ষ কূটনীতিক মনে করিয়েছেন প্রতিবেশী দেশে চিনের প্রভাবের কথাও ৷ এটা সম্পূর্ণ বাস্তব আর ভারতের কাছে এটাই কিন্তু চ্যালেঞ্জ ৷ পাকিস্তান একটা সমস্যা ঠিকই, কারণ চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক, তবে ইসলামাবাদের কথা আন্তর্জাতিক স্তরে বারবার উল্লেখ করে অবস্থান স্পষ্ট করেছে দিল্লি ৷ অভিজ্ঞ সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে শরণ RCEP থেকে ভারতের সরে আসা নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন ৷ উল্লেখ করেছেন, নরসিমা রাও সরকারের কথা ৷ দেশের অভ্যন্তরে মতানৈক্যের কথা ৷ 1996 সালে উদার অর্থনীতির জেরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল, সেকথাও৷ তিনি বলেন, ভারত যদি RCEP থেকে সরে যায়, তবে অ্যামেরিকার মতো উন্নত দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (Free Trade Agreement)-এর ক্ষেত্রে সমস্যা হতেই পারে ৷

Interview of Shyam Saran
শ্যাম শরণ
author img

By

Published : Nov 26, 2019, 8:45 PM IST

Updated : Nov 26, 2019, 11:34 PM IST

প্রাক্তন বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠকে উঠে এসেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কথা ৷

প্রশ্ন : গোতাবায়া রাজাপক্ষ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৷ মাহিন্দা নতুন প্রধানমন্ত্রী ৷ ভারতের ভাষ্যে চিনের প্রভাব সংক্রান্ত যে আতঙ্ক, তা উঠে আসছে আবার ৷ দিল্লি কীভাবে সতর্ক থাকতে পারে বলে মনে হয় ?

উত্তর : কূটনীতির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল, অতীতের কোনও ভার ঘাড়ে না রাখা ৷ রাজাপক্ষের প্রত্যাবর্তনের পর ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক নিয়ে কিছু বিষয়ে চিন্তা থাকলেও, আমাদের মনে করতে হবে এখনও বেশ কিছু সুযোগ রয়েছে দু'দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ৷ এই সম্পর্কের অন্যতম শক্তিশালী দিক হল দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ৷ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির সঙ্গে শ্রীলঙ্কার একাত্মীকরণের কারণে উপকৃত হয়েছে সে দেশ ৷ যদি রাজাপক্ষরা বাস্তববাদী হন, আমার ধারণ ওঁরা বাস্তববাদীই, সেক্ষেত্রে তারাও ভারত-শ্রীলঙ্কা সুসম্পর্কের দিকটি বিবেচনা করবে ৷ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতেই চাইবে ৷ অতীতের কোনও প্রভাব পড়তে দেবে না সম্পর্কে ৷ চিন একটা বড় ফ্যাক্টর হলেও শ্রীলঙ্কাতেও কিন্তু একটা সতর্কতা রয়েছে এই সংক্রান্ত ৷ কারণ চিনের থেকে লগ্নি আসার ফলে ভরসার জায়গা তৈরি হচ্ছে ৷ সেটা অর্থনৈতিক দিক থেকে শ্রীলঙ্কার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ৷ তাই চিন-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও অনেকে বেশি ভারসাম্য আসাটা নিশ্চিত ৷

প্রশ্ন : ভারতের পক্ষে কি স্রেফ পিছনের আসনে বসে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরে কী ঘটছে, তার দিকে নজর রাখা সম্ভব ? নানা ক্ষেত্রে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিক্রমসিংহের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের সাক্ষী থেকেছে ভারত ৷

উত্তর : যদি প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি, তাহলে বলব প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেশি মাথা না গলানোই ভালো ৷ মাঝে মাঝে এড়িয়ে যাওয়া যায় না ঠিকই, তবে প্রতিবেশীর ঘরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তাতে গভীরভাবে সংযুক্ত না হওয়াই শ্রেয় ৷ প্রতিবেশী দেশের নেতাদের ক্ষেত্রে কে বন্ধু, আর কে বন্ধু নয়, এ জাতীয় তকমা তৈরি করলে আদতে দেশের লাভ হবে না ৷ বরং কমন ইন্টারেস্টের জায়গা থেকে, একধরনের পছন্দের জায়গা থেকে, এক কেন্দ্রাভিমুখিতা থেকে, এক ধরনের নীতির মাধ্যমে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে গেলে তা লাভজনক ৷ তাই শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ গতিপ্রক্রিয়া নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তিত নই ৷ অন্য প্রতিবেশী দেশগুলির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য ৷ কারণ অভ্যন্তরীণ সেই রাজনীতিকে চালনা করতে ক'টা সংস্থা সক্ষম? অভ্যন্তরীণ গতিপ্রক্রিয়ার দিকে সতর্কদৃষ্টি রাখতে হবে এবং দেখতে হবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে একধরনের পছন্দের বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই কতটা ভালোভাবে সেগুলি ব্যবহার করা যায় ৷

প্রশ্ন : কিন্তু মোদি সরকার অপটিক্সের রাজনীতির উপরে গভীর মনোনিবেশ করছে ৷ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর গোতাবায়ার শপথগ্রহণের পরই কলম্বো অবতরণ করেছেন ৷ সরকারি তরফে প্রথম বিদেশ সফর সেক্ষেত্রে ভারত ৷ এটা কী গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর : এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ এটা আমরা ভুলতে পারিনা যে বিদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অনেকটা জুড়ে থাকে অনুধাবন এবং অপটিক্স-এর রাজনীতি । এটাকে গুরুত্বহীন বলতে পারিনা ৷ এটা ভালো ব্যাপার যে জয়শংকর শ্রীলঙ্কা গিয়েছেন, নতুন সরকার শপথ নেওয়ার অব্যবহিত পরেই ৷ এর থেকে বোঝা যায়, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ৷ যদিও অপটিক্সটাই সব নয় ৷ সংক্ষিপ্ত পদক্ষেপগুলিকে অনুসরণ করতে হবে ৷ এটাই আমাদের ফোকাস হওয়া উচিত ৷ এটাও বেশ ভালো ব্যাপার যে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে গোতাবায়া ভারতেই আসছেন ৷ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্ব দিচ্ছেন ৷ কিছু বাস্তব ইশুকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সেটা আমাদের জন্য একটা অনুষ্ঠান হিসেবে ধরা যেতে পারে ৷ যেমন অর্থনৈতিক-অংশিদারিত্বের চুক্তির ক্ষেত্রে-কীভাবে দুই দেশের মধ্যে চুক্তির বিষয়টি আমরা তুলে ধরতে পারি ৷ আমি বিশ্বাস করি, শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎসংযোগ সরবরাহের জন্য ক্রস চ্যানেল কেবল সংক্রান্ত একটা বড়সড় পরিকল্পনা রয়েছে ৷ এই জাতীয় বিষয়গুলি দু দেশের চুক্তিকে আরও পোক্ত করবে ৷ যে সম্পর্ক ইতিমধ্যেই রয়েছে, সেগুলিকে কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে ৷ দু'দেশের মধ্যেই মারাত্মক পাচার চলে, কিন্তু সেদিকে নজর রাখা হয় না৷ যেমন এক সপ্তাহে 120টা উড়ান যাতায়াত করে দু' দেশের মধ্যে৷ এছাড়া নতুন উড়ান পরিষেবাও শুরু হচ্ছে৷ এই সব জিনিসগুলি নিয়ে কথা বলা যায়, সম্পর্ক তৈরি করা যায় ৷ এটা খুব স্পষ্ট যে প্রতিবেশী দেশে চিন প্রভাব বিস্তার করছে, এটাই বাস্তব৷ আমাদের ক্ষমতা, আমাদের কাছে যা যা প্রয়োজনীয় যা কিছু রয়েছে, তার মধ্যে যে ফাঁক রয়েছে, সেটা আমাদের জন্য অসুবিধার কারণ ৷ কিন্তু এই অসুবিধাগুলিকেই কীভাবে দূর করতে হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য, শ্রীলঙ্কা, নেপাল কিংবা বাংলাদেশ যেই হোক না কেন, সব প্রতিবেশীর ক্ষেত্রেই ৷ আমাদের কাছে বাস্তবিকভাবে কী সম্পদ রয়েছে, ওই দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক কীভাবে বজায় রাখতে পারব, সেই হিসেব কষে রাখতে হবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিদেশনীতির ক্ষেত্রে ৷

প্রশ্ন : প্রাক্তন NSA এবং বিদেশসচিব এস এস মেনন ETV ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কলম্বো বন্দরের কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন, চিনা BRI (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ)-এর ক্ষেত্রে ভারতের আপত্তি জানানো উচিত নয় ৷ আপনার মত ৷

উত্তর : যে কোনও প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হলে, যে এটি তৈরি করেছে, সে ওই বিষয়টি নিয়ে কোনওরকম একাধিপত্যের দাবি না জানানো পর্যন্ত, আমরা কেন তাকে ব্যবহার করব না? যদি সেটা আমাদেরও পছন্দের বিষয় হয় ৷ কলম্বো বন্দরকে রেখে যদি চিন কয়েকটি নয়া টার্মিনাল তৈরি করে দেয় ৷ যদি আন্তর্জাতিক স্তরেও সেটি ব্যবহারের সুযোগ থাকে? তাই এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলা উচিত না ৷ শুধুমাত্র চিন নির্মাণ করেছে বলেই, এ নিয়ে আমাদের কিছু করাও উচিত না ৷ এটা তো চিনের ব্যাপার, আর যে দেশে প্ল্যাটফর্মটা তৈরি হচ্ছে তাদের ৷

সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে শ্যাম শরণ

প্রশ্ন : কিন্তু পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC) নিয়ে, BRI নিয়ে ভারতের বিরোধিতার কারণ

উত্তর : সম্পর্কের নানা স্তর রয়েছে ৷ এটাও একটা সতর্কবাণী৷ আপনি AIIB (এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাঙ্ক)-এর পার্থক্য দেখুন ৷ BRICS উন্নয়ন ব্লক দেখুন ৷ উভয় ক্ষেত্রেই ভারত উৎসাহী অংশীদার ৷ কিন্তু বিষয়টা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে চিন ৷ AIIB-এর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারগ্রহীতা কিন্তু ভারত ৷ দুটি প্রতিষ্ঠানই গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারতের বড় ভূমিকা ছিল ৷ কীভাবে নির্মাণ হল এটা, কী কী নীতি নেওয়া হবে, একটা প্রকল্পের ক্ষেত্রে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, একটা প্রকল্পের কার্যকারিতা কেমন হতে পারে, সবকিছুতেই অগ্রণী ভূমিকা ছিল ভারতের ৷ AIIB-র ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ভারত অন্যতম ৷ কিন্তু BRI আলাদা কেন? কারণ বহুস্তরীয় প্রকল্প এটি নয় ৷ এটির নকশা চিনের তৈরি ৷ চিনই উদ্যোগ নিয়েছিল এবিষয়ে ৷ আমরা এর অংশও নয় ৷ আমাদের এবিষয়ে ধারণাও তাই ভাসা ভাসা৷ কীভাবে এটা বিশ্বজুড়ে উদ্যোগ হতে পারে, কোনওরকম আলোচনাও হয়নি এ নিয়ে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, চিন-ভারতের কোনও একটা প্রকল্পে তৃতীয় কোনও দেশ যদি সহায়তা করতে চায়, তাতে যদি প্রত্যেকেরই উপকার হয়, এমনকি তৃতীয় দেশটিরও, তাহলে আমাদের কোনও সমস্যা নেই ৷ BRI নিয়ে আদর্শগত অবস্থান নিচ্ছি না আমরা ৷

প্রশ্ন : BRI সংক্রান্ত সহায়তা কি চিনের সঙ্গে সম্পর্কের উত্থানপতন কিংবা অন্য সংঘাতের জায়গা হতে পারে?

উত্তর : আমি এই উপদেশ দেব না ৷ BRI নিয়ে আমাদের অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত একটা সংশয়ের জায়গা রয়েছে ৷ আমি আশা ছেড়ে দিচ্ছি না, কারণ কিছু একটা তো রয়েছে৷ BRI নিয়ে আমাদের গোঁড়ামিকে সরিয়ে, আমি বলব চিনের সঙ্গে কাজ বন্ধ করা একেবারেই অনুচিত ৷ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক দিক থেকে হোক, কিংবা দুটি দেশ ছাড়াও তৃতীয় কোনও অংশীদার দেশের একধরনের পছন্দের জায়গা হোক, চিনের সঙ্গে কাজ থেকে বিরত হওয়ার কোনও অর্থ নেই ৷

প্রশ্ন : RCEP থেকে সরে আসা কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর : আমি বেশ হতাশ৷ ভারত RCEP-তে যুক্ত হল না ৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সমগ্র বিশ্বের নিরিখে অন্যতম শক্তি হিসেবে প্রতিপন্ন হওয়াই ভারতের লক্ষ্য ৷ সেক্ষেত্রে এটা করা ঠিক হয়নি ৷ এটা আত্মরক্ষামূলক অবস্থান ৷ এর নিশ্চয়তা নেই ৷

প্রশ্ন : ভারত সেক্ষেত্রে চিনা দ্রব্যের আস্তাকুঁড় হিসেবে এদেশকে দেখা সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ চিন্তার বিষয়গুলি উল্লেখ করেছে ৷

উত্তর : আমি নরসিমা রাওয়ের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিলাম ৷ সেই সংকটজনক পরিস্থিতিতে তর্ক করছিলাম আমরা, অর্থনীতিকে খুলে দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে ৷ সংস্কার ও উদারীকরণ নিয়েও দ্বিধা ছিল ৷ আমার ভয় লাগছে, এখন যা যা নিয়ে তর্ক চলছে, সেই সময়ও একই রকম তর্ক চলছিল ৷ কিন্তু হ্যাঁ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেইসময় একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৷ সরকারের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে খানিকটা ঝুঁকিপূর্ণও ছিল সেটা৷ কিন্তু আগামী 20 বছরে ফলটা আমরা দেখতে পেয়েছি ৷ ভারতীয় অর্থনীতি তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশের অর্থনীতি থেকে আট থেকে নয় শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ এমন একটা সময়ে এসেছে, নির্দিষ্ট অঞ্চলের নেতা হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে আপনার, আপনিই চালিকাশক্তি ৷ এর কারণ গত 20 বছর ধরে পুঁজি সঞ্চয় করে 8 থেকে 9 শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি৷ তাহলে একটা প্রমাণিত রেকর্ড রয়েছে ৷ অভিজ্ঞতা বলছে, সংস্কারকে গ্রহণ করে, ভারতীয় অর্থনীতিকে মুক্ত করে, বিশ্বায়নকে আপন করে, আসলে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে ৷ নিরাপত্তার অন্যতম শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে দেশ ৷ সেই অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও একইরকম তর্কের পুনরাবৃত্তি কেন? কেন ব্যর্থ আমদানিকৃত বিকল্প অর্থনীতিতে ফিরে যাব?

প্রশ্ন : সম্প্রতি যে বিধানসভা নির্বাচন হল, তা কি রাজনৈতিক হিসেবনিকেশের প্রতিফলন?

উত্তর : ভারতে সবসময় নির্বাচন হয় ৷ যখন আমরা ভারত-অ্যামেরিকা পরমাণু চুক্তি নিয়ে কথা বলছিলাম, তখনও আমরা উন্নত কিছু করার কথাই ভাবছিলাম ৷ কেউ একজন এসে বলল, কিছুক্ষণ সময় নাও ৷ কিন্তু নির্বাচন চলছে ৷ রাজনীতি থাকলে নির্বাচন থাকবেই ৷ আমি ভেবেছিলাম, দেশে এমন একটা সরকার রয়েছে, যারা গতবারের তুলনায় এ বার আরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, যা এর আগে কখনও ঘটেনি৷ এমন একজন প্রধানমন্ত্রী যাঁর শুধু ক্যারিশমা রয়েছে, তাই নয়, দেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দুই ক্ষেত্রেই যাঁর একটা নির্দিষ্ট ভূমিকা-গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে৷ রাজনৈতিকভাবে এটাকে ঝুঁকি মনে হলেও ঠিক তা নয় ৷

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের উন্নয়নের যে গুরুত্ব, আজকের দিনে কতটা প্রাসঙ্গিক তা? 2024 সালে 5 ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিই আমাদের লক্ষ্য ৷ কিন্তু আমাদের অর্থনীতি যদি ধূসর হয়, যদি বৃদ্ধির হার নামতে থাকে, আমাদের বিদেশনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে ?

উত্তর : আজকের রিপোর্ট বলছে, NITI আয়োগ সতর্ক করেছে ৷ যদি বৃদ্ধির পথ সুগম না হয়, তাহলে 2024 সালের অঙ্কটা বড়রকমের অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়াবে৷ অবশ্যই, এটা বুঝতে পেরেছি যে অর্থনীতির দিক থেকে খুব একটা ভালো জায়গায় নেই আমরা ৷ আমাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির বিষয়টিকে ভিত্তি করেই বিদেশী নীতি বা প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ এটা সবকিছুর ভিত্তি ৷ এর ফলেই অন্যতম শক্তি হিসেবে ভারতের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে ৷ আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতার কারণও এটাই ৷ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সক্ষমতার দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে, ফলে অন্যান্য বড় শক্তিগুলির সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্কও অর্থবহ হচ্ছে ৷ কূটনৈতিক জায়গা পাচ্ছে ভারত ৷ এই ভাবনার কারণেই অ্যামেরিকার সঙ্গে পরমাণু বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল ৷ ভারত ও চিনের মধ্যে উন্নয়নের দিক থেকে একটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভারত ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে ৷ এর কারণ হল অর্থনীতি ও বাণিজ্যের সুযোগসুবিধার দিক থেকে দেখলে ভারত হয়তো ভবিষ্যতের চিন হয়ে উঠতে পারে ৷ 2004 সালের সুনামিতে আমাদের অবস্থানটা দেখুন ৷ আমরা বোধহয় প্রথম দেশ যারা, অ্যামেরিকা বা অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলির আগেই সবরকম সাহায্য পাঠিয়েছিল নৌ বাহিনীকে ব্যবহার করেই ৷ একটা বড় প্রভাব পড়েছিল৷ এমন একটা দেশ যার বড়সড় কার্যক্ষমতা রয়েছে ৷ জনসাধারণের ব্যবহৃত জিনিস পাঠাতে সক্ষম ৷ পাকিস্তানের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হল৷ ভারতের জন্য পরমাণু চুক্তি সম্ভব হল ৷ কিন্তু পাকিস্তানের সাপেক্ষে নয় ৷

প্রশ্ন : কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কি সত্যিই ঘুচল? বিশেষ করে কাশ্মীরে 370 ধারা প্রত্যাহার করা এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এ নিয়ে যা যা ঘটল.

উত্তর : আমাদের এ বিষয়ে সৎ থাকতে হবে যে সংযোগ (পাকিস্তানের) ফিরছে ৷

প্রশ্ন : এটা কি দিল্লির জন্যই?

উত্তর : অন্যরা সম্পর্ককে কীভাবে দেখে, সেই বুঝেই কি গুরুত্ব নির্ধারণ হয়? আমাদের চ্যালেঞ্জ হল চিন ৷ যদি পাকিস্তানকে হুমকি হিসেবে দেখি ৷ তার কারণ হল চিন ৷ পাকিস্তানের জন্য নয় ৷ সন্ত্রাসবাদ ভারতের সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় ৷ সীমান্তে প্রায় 30 বছর ধরে যে সন্ত্রাস চলছে ৷ কিন্তু ভারতের অর্থনীতিতে তার কি কোনও প্রভাব পড়েছে? ভারতের আর্থিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলেছে? না ৷ বরং, পাকিস্তান নিজের সম্মান খুইয়েছে ৷ নিজের জন্য আরও সংকট তৈরি করেছে ৷ তাই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সতর্ক থাকা ভাল ৷ কিন্তু সবদিকটাই বিবেচনা করা উচিত ৷

প্রশ্ন : তাহলে ভারত ও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক স্তরে যে সন্ত্রাস প্রসঙ্গ নিয়ে আসছে, তা পরস্পরবিরোধী?

উত্তর : পাকিস্তানের সম্পর্কে যত কথা বলবেন, অন্যদের তত বেশি ওই বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে ৷ কীভাবে বেরোনো যাবে এ থেকে?

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক স্তরে আজ কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার বিষয়টিতে কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ভারতের কাছে কী? জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল, ফিনল্যান্ড সরকার কিছু কাটা কাটা মন্তব্যও করেছেন ৷ অ্যামেরিকার কংগ্রেসে দুটি শুনানিও হয়েছে এ নিয়ে, সপ্তাহদুয়েক আগে ৷

উত্তর : স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলতে মানুষ যা বোঝে, সেই হিসেবের নিরিখে যদি কাশ্মীর স্বাভাবিক না হয়, তাহলে এটা আরও বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে ৷ আমি জানি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ৷ আমার মনে হয়, উপত্যকায় সত্যিই যা ঘটছে, সেই ছবিটা স্বাভাবিক নয় ৷ 100 দিনের পরেও যদি ইন্টারনেট পরিষেবা না থাকে, মোবাইল ফোনে যদি নিয়ন্ত্রণ থাকে এখনও, প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা গৃহবন্দী থাকেন, রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ রাখতে বলা হয়, অন্য রাজ্যের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের এই পরিস্থিতির যদি তুলনা করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলাটা ঠিক হবে না ৷ আগামী কয়েক মাসে যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়, স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলতে আমরা যা বুঝি তা হয়তো লক্ষ্য করা যাবে ৷ জার্মানি কিংবা অ্যামেরিকায় আমাদের বন্ধুদের মধ্যে যে উদ্বেগ লক্ষ্য করেছি,তা দূর হবে ৷ যদি আগামী কয়েক মাসে পরিস্থিতি উন্নতি না হয়, তাহলে ভারতের বন্ধু রাষ্ট্রগুলি যদি এরপর এ নিয়ে কিছু বলে , তাহলে তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই ৷

প্রশ্ন : ভারত-অ্যামেরিকা বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে দুর্বলতার জায়গাগুলি কী? দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে কতটা প্রভাব পড়বে?

উত্তর : ভারত-অ্যামেরিকা বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হল অর্থনৈতিক স্তম্ভ৷ রাজনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা ভালো কাজ করছি ৷ একাধিক ইশুতে দ্বিপাক্ষিত ঐক্যমতের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আরও গুরুত্ব আরোপ করছে অ্যামেরিকা ৷ চেষ্টা করার বিষয়টিকে আমি স্বাগত জানাই ৷ বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত সংঘাত আমরা কীভাবে সামলাতে পারি তা দেখি, FTA-র বিষয়টিও দেখি ৷ যদি RCEP হজম করতে না পারি, তাহলে FTA ও অ্যামেরিকার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি নিয়ে সংশয় রয়েছে ৷

প্রশ্ন : সেটা এবং অন্য যে সব FTA রয়েছে, সেগুলিকে কি বাতিল করা হবে না পর্যালোচনা করা হবে?

উত্তর : সেই FTA বাতিল করা হয়নি, তবে সেই FTA-গুলি নিয়ে আপত্তি রয়েছে৷ যদি বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তির দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে RCEP আসলে নিম্ন মানের FTA (অংশীদারি দেশগুলির থেকে চাহিদার নিরিখে)৷ শুধুমাত্র শুল্ক কমানো কিংবা পরিবেশ বা স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে দেখলেও এটা তাই ৷ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কের চেয়েও বেশি জরুরি মান ৷ নিজেদের মান বাড়িয়ে বিনিয়োগ করতে চাই না আমরা ৷ RCEP-তে তুলনামূলক কম মানেও যদি তা করা সম্ভব না হয়, তাহলে অ্যামেরিকার মতো উন্নত দেশের সঙ্গে FTA-র ক্ষেত্রে কি তা সম্ভব হবে? সেখানে তো মান আরও উচ্চপর্যায়ের ৷ কিছু ইশু নিয়ে ভেবে দেখতে হবে ৷ যদি আপনি ভাবেন, RCEP-তে ছাড় না পেলেও, অ্যামেরিকা থেকে আরও ছাড় নিয়ে আসব ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি করব বা এর চেয়ে ভালো কোনও চুক্তি ৷ কিন্তু না, আপনি তা পাবেন না ৷ চাহিদার নিরিখে, বাজারের প্রেক্ষিতে RCEP-এর থেকেও অ্যামেরিকা বা ইউরোপীয় বাজারের মান অনেকটাই বেশি৷ শুল্ক নিয়ে বেশি ভাবছি আমরা, বাকি পৃথিবী ভাবছে গুণগত মান নিয়ে ৷ প্রতিযোগিতাও সেভাবেই হচ্ছে ৷ আমরা একটা বড় বাজার, এটা আমরা ধরেই নিয়েছি ৷ ওরা আর কোথায় যাবে? ওদের কাছে কোনও বিকল্প নেই ৷ কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল অনুমান ৷ চিন থেকে সরে যচ্ছে বস্ত্র বাণিজ্য ৷ এর একটা বড় কারণ বেশি মজুরি৷ আর কিছু বিদেশি সংস্থার প্রভাব ৷ কিন্তু কোথায় যাচ্ছে ? ভারতে আসছে? ভিয়েতনামে যাচ্ছে প্রথমে ৷ নইলে বেশিরভাগই যাচ্ছে বাংলাদেশে ৷ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে বিকল্প নেই, এটা ভাবা সম্পূর্ণ নির্বুদ্ধিতা ৷ তৎপর হতে হবে ৷ আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে৷ নিজের আকারের কারণেই তা সম্পন্ন করার ক্ষমতাও থাকতে হবে ৷ যদি 20 থেকে 30 বছরে নিজেকে আরও বেশি করে প্রসারিত করতে পারার বিষয়টা মানতে না পারা যায়, যদি বৃদ্ধি দ্রুততর না হয়, 8 থেকে 10 শতাংশ প্রতি বছরে বৃদ্ধি না হলে তবে ভৌগোলিক সুবিধাও তো নিতে পারা যাবে না ৷ অর্থনীতির দ্বার বন্ধ রেখে তা করা সম্ভব নয় ৷

প্রশ্ন : NRC নিয়ে দেশের রাজনীতি কি ঢাকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে? বাংলাদেশ হাই কমিশনার ভারতের সম্পর্কে কিছু সমালোচনামূলক মন্তব্য করে গিয়েছেন৷

উত্তর : এখনও পর্যন্ত ঢাকাকে এই বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হবে, তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে, এ জাতীয় চিন্তার কোনও কারণ নেই সে দেশের ৷ যদিও এটাকে আমরা আদ্যোপান্ত ঘরোয়া ইশু হিসেবেই উপস্থাপনা করছি, যার প্রভাব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উপর পড়বে না বলা হচ্ছে,কিন্তু প্রভাব পড়বে ৷ এখানে ভাবনার যে তত্ত্ব রয়েছে, তা অনুযায়ী অন্য পক্ষ প্রভাবিত হওয়ার কথা নয়৷ কিন্তু এটা বাস্তবসম্মত নয় ৷ চলে যাওয়ার সময় যে রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছেন, কিংবা বাংলাদেশের যা মন্তব্য, তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ ৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ সতর্ক থাকতে হবে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির ফলে আমাদের যা যা লাভ হয়েছে তা মনে রাখতে হবে ৷ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার কথা ৷ ভাবনাচিন্তাহীন কোনও তত্ত্বের মাধ্যমে হাসিনা কিংবা বাংলাদেশের কোনও নেতার সম্মানহানির কোনও অর্থ নেই ৷

প্রশ্ন : জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার পর ভারতের নয়া ভৌগোলিক মানচিত্রের প্রকাশ, কালাপানি ইশুতে নেপালের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করেছে ৷ কয়েক বছর আগে 'অর্থনৈতিক অবরোধ'-এর কথা নেপালিরা এখনও বলে৷ আপনি কীভাবে দেখছেন বিষয়টি ?

উত্তর : নেপালের তরফে কেন এমন বলা হল, তা বোঝা বেশ কঠিন ৷ জম্মু-কাশ্মীরের যে পরিবর্তন হয়েছে, সেই প্রতিফলন বোঝাতেই মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছিল ৷ এর সঙ্গে নেপালের কোনও সম্পর্ক নেই ৷ নেপাল-ভারত সীমানার কথা ধরলে, আগের মানচিত্রের তুলনায় কোনওরকম পরিবর্তন নেই ৷ মানচিত্রে কোনওরকম আগ্রাসনের প্রশ্নই নেই ৷ কোনও পরিবর্তনই যেখানে নেই, সেখানে এত চিন্তার কারণ কী? আগের অনেকগুলি মানচিত্র ছিল ৷ কোনও তফাত নেই ৷ কীসে এত বিরক্ত হলেন ওঁরা? কালাপানি প্রসঙ্গে বলতে গেলে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে এই মানচিত্র আঁকা হয়৷ ম্যাকমোহন রেখায়, পূর্ব সীমানার ক্ষেত্রে আমরা এটা দেখেছি ৷ মোটা কলমের নিব দিয়ে আঁকা হয়েছিল ৷ উপর আর নিচের অংশের মধ্যে ছোট স্কেলের ভিত্তিতে 20 কিলোমিটার মতো তফাত রয়েছে ৷ কিছু কিছু রেখার ক্ষেত্রে এটা তো আনুমানিক৷ আগে তো কোনও পুরোনো রেখাই থাকত না ৷

প্রশ্ন : মানচিত্রে বিন্দুমাত্র বদল যদি নাই থাকে, তাহলে ভারতীয় আগ্রাসনের ছবি তুলে ধরা হচ্ছে কেন?

উত্তর : জনমতকে নিজের দিকে টানতে কী পন্থা নেওয়া যায় ৷ কারা এটা শুরু করেছে-বামপন্থীরা ৷ মাওবাদীদেরই সংগঠন থেকে ভেঙে বেরিয়ে আসা দল৷ অন্য দল তখন কী ভাবছে, এক্ষেত্রে যদি সমর্থন না করি, তাহলে নিজেকে দেশপ্রেমী হিসেবে দেখানো যাবে না ৷ এভাবেই বল গড়িয়েছে ৷ আগেও এমন হয়েছে ৷ বাস্তব হল ভারত-নেপাল সীমানায় কোনওরকম পরিবর্তন হয়নি ৷ আগেও যখন এমন বলা হয়েছিল, তখন আমরা একটা পদ্ধতি বের করেছিলাম এটা সামলাতে ৷ বিদেশসচিবের একটা ফোরাম ছিল ৷ কিন্তু কোনও কারণে তা হয়নি ৷ ভারতের দিক থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল৷ 2000 সালে ভারত-নেপাল বন্ধুত্ব চুক্তি প্রধানমন্ত্রীস্তরে এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়েছিল যে নেপালের একটা অংশ বলেছিলেন, এটা অসম বন্ধুত্ব৷ এটাকে খতিয়ে দেখতে হবে ৷ তার জন্যও চুক্তি হয় ৷ আবারও বিদেশসচিব পর্যায়ের পদ্ধতি তৈরি করা হয় ৷ সেই বৈঠকে আমরা বলেছিলাম, আমাদের মধ্যে যদি পারস্পরিক আরও চুক্তি হয় ৷ তাহলে বর্তমানে যে সমস্ত সুযোগসুবিধা মিলছে, সেগুলি নাও মিলতে পারে৷ প্রথমটির পর আর বৈঠক হয়নি ৷ আমরা বসে এ নিয়ে আলোচনায় রাজি, কিন্তু ওঁরা নন৷ ভারত-নেপাল সীমানার 98 শতাংশের সমস্যা আসলে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে ৷ 98 শতাংশটা আপনারা দেখছেন না, আপনাদের কাছে দুই শতাংশই জরুরি ৷ সুস্তার ক্ষেত্রে এটা তো নদীর গতিপথের পরিবর্তন ৷ তাহলে আপনাকে প্রথমে ঠিক করতে হবে, নদী তীরবর্তী সীমানায় রাজি, নাকি নদীর গতিপথ যেমনভাবে পাল্টাবে সেভাবে দেখবেন৷ একমত হতে হবে বিষয়টি নিয়ে ৷ ভারত-নেপাল সীমানায় এটা কোনও বড় ইশু বলে আমার মনে হয় না ৷ যদি কোনও বিশেষ কারণে, নেপালের কোনও রাজনৈতিক শক্তি চায় এটা বড় ইশু হিসেবে দেখাতে, তাহলে এটা প্রথম বার নয় ৷

( সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক স্মিতা শর্মা, টুইটার @smita_sharma)

প্রাক্তন বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠকে উঠে এসেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কথা ৷

প্রশ্ন : গোতাবায়া রাজাপক্ষ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৷ মাহিন্দা নতুন প্রধানমন্ত্রী ৷ ভারতের ভাষ্যে চিনের প্রভাব সংক্রান্ত যে আতঙ্ক, তা উঠে আসছে আবার ৷ দিল্লি কীভাবে সতর্ক থাকতে পারে বলে মনে হয় ?

উত্তর : কূটনীতির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল, অতীতের কোনও ভার ঘাড়ে না রাখা ৷ রাজাপক্ষের প্রত্যাবর্তনের পর ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক নিয়ে কিছু বিষয়ে চিন্তা থাকলেও, আমাদের মনে করতে হবে এখনও বেশ কিছু সুযোগ রয়েছে দু'দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ৷ এই সম্পর্কের অন্যতম শক্তিশালী দিক হল দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ৷ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির সঙ্গে শ্রীলঙ্কার একাত্মীকরণের কারণে উপকৃত হয়েছে সে দেশ ৷ যদি রাজাপক্ষরা বাস্তববাদী হন, আমার ধারণ ওঁরা বাস্তববাদীই, সেক্ষেত্রে তারাও ভারত-শ্রীলঙ্কা সুসম্পর্কের দিকটি বিবেচনা করবে ৷ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতেই চাইবে ৷ অতীতের কোনও প্রভাব পড়তে দেবে না সম্পর্কে ৷ চিন একটা বড় ফ্যাক্টর হলেও শ্রীলঙ্কাতেও কিন্তু একটা সতর্কতা রয়েছে এই সংক্রান্ত ৷ কারণ চিনের থেকে লগ্নি আসার ফলে ভরসার জায়গা তৈরি হচ্ছে ৷ সেটা অর্থনৈতিক দিক থেকে শ্রীলঙ্কার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ৷ তাই চিন-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও অনেকে বেশি ভারসাম্য আসাটা নিশ্চিত ৷

প্রশ্ন : ভারতের পক্ষে কি স্রেফ পিছনের আসনে বসে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরে কী ঘটছে, তার দিকে নজর রাখা সম্ভব ? নানা ক্ষেত্রে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিক্রমসিংহের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের সাক্ষী থেকেছে ভারত ৷

উত্তর : যদি প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি, তাহলে বলব প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেশি মাথা না গলানোই ভালো ৷ মাঝে মাঝে এড়িয়ে যাওয়া যায় না ঠিকই, তবে প্রতিবেশীর ঘরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তাতে গভীরভাবে সংযুক্ত না হওয়াই শ্রেয় ৷ প্রতিবেশী দেশের নেতাদের ক্ষেত্রে কে বন্ধু, আর কে বন্ধু নয়, এ জাতীয় তকমা তৈরি করলে আদতে দেশের লাভ হবে না ৷ বরং কমন ইন্টারেস্টের জায়গা থেকে, একধরনের পছন্দের জায়গা থেকে, এক কেন্দ্রাভিমুখিতা থেকে, এক ধরনের নীতির মাধ্যমে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে গেলে তা লাভজনক ৷ তাই শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ গতিপ্রক্রিয়া নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তিত নই ৷ অন্য প্রতিবেশী দেশগুলির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য ৷ কারণ অভ্যন্তরীণ সেই রাজনীতিকে চালনা করতে ক'টা সংস্থা সক্ষম? অভ্যন্তরীণ গতিপ্রক্রিয়ার দিকে সতর্কদৃষ্টি রাখতে হবে এবং দেখতে হবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে একধরনের পছন্দের বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই কতটা ভালোভাবে সেগুলি ব্যবহার করা যায় ৷

প্রশ্ন : কিন্তু মোদি সরকার অপটিক্সের রাজনীতির উপরে গভীর মনোনিবেশ করছে ৷ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর গোতাবায়ার শপথগ্রহণের পরই কলম্বো অবতরণ করেছেন ৷ সরকারি তরফে প্রথম বিদেশ সফর সেক্ষেত্রে ভারত ৷ এটা কী গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর : এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ এটা আমরা ভুলতে পারিনা যে বিদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অনেকটা জুড়ে থাকে অনুধাবন এবং অপটিক্স-এর রাজনীতি । এটাকে গুরুত্বহীন বলতে পারিনা ৷ এটা ভালো ব্যাপার যে জয়শংকর শ্রীলঙ্কা গিয়েছেন, নতুন সরকার শপথ নেওয়ার অব্যবহিত পরেই ৷ এর থেকে বোঝা যায়, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ৷ যদিও অপটিক্সটাই সব নয় ৷ সংক্ষিপ্ত পদক্ষেপগুলিকে অনুসরণ করতে হবে ৷ এটাই আমাদের ফোকাস হওয়া উচিত ৷ এটাও বেশ ভালো ব্যাপার যে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে গোতাবায়া ভারতেই আসছেন ৷ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্ব দিচ্ছেন ৷ কিছু বাস্তব ইশুকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সেটা আমাদের জন্য একটা অনুষ্ঠান হিসেবে ধরা যেতে পারে ৷ যেমন অর্থনৈতিক-অংশিদারিত্বের চুক্তির ক্ষেত্রে-কীভাবে দুই দেশের মধ্যে চুক্তির বিষয়টি আমরা তুলে ধরতে পারি ৷ আমি বিশ্বাস করি, শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎসংযোগ সরবরাহের জন্য ক্রস চ্যানেল কেবল সংক্রান্ত একটা বড়সড় পরিকল্পনা রয়েছে ৷ এই জাতীয় বিষয়গুলি দু দেশের চুক্তিকে আরও পোক্ত করবে ৷ যে সম্পর্ক ইতিমধ্যেই রয়েছে, সেগুলিকে কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে ৷ দু'দেশের মধ্যেই মারাত্মক পাচার চলে, কিন্তু সেদিকে নজর রাখা হয় না৷ যেমন এক সপ্তাহে 120টা উড়ান যাতায়াত করে দু' দেশের মধ্যে৷ এছাড়া নতুন উড়ান পরিষেবাও শুরু হচ্ছে৷ এই সব জিনিসগুলি নিয়ে কথা বলা যায়, সম্পর্ক তৈরি করা যায় ৷ এটা খুব স্পষ্ট যে প্রতিবেশী দেশে চিন প্রভাব বিস্তার করছে, এটাই বাস্তব৷ আমাদের ক্ষমতা, আমাদের কাছে যা যা প্রয়োজনীয় যা কিছু রয়েছে, তার মধ্যে যে ফাঁক রয়েছে, সেটা আমাদের জন্য অসুবিধার কারণ ৷ কিন্তু এই অসুবিধাগুলিকেই কীভাবে দূর করতে হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য, শ্রীলঙ্কা, নেপাল কিংবা বাংলাদেশ যেই হোক না কেন, সব প্রতিবেশীর ক্ষেত্রেই ৷ আমাদের কাছে বাস্তবিকভাবে কী সম্পদ রয়েছে, ওই দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক কীভাবে বজায় রাখতে পারব, সেই হিসেব কষে রাখতে হবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিদেশনীতির ক্ষেত্রে ৷

প্রশ্ন : প্রাক্তন NSA এবং বিদেশসচিব এস এস মেনন ETV ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কলম্বো বন্দরের কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন, চিনা BRI (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ)-এর ক্ষেত্রে ভারতের আপত্তি জানানো উচিত নয় ৷ আপনার মত ৷

উত্তর : যে কোনও প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হলে, যে এটি তৈরি করেছে, সে ওই বিষয়টি নিয়ে কোনওরকম একাধিপত্যের দাবি না জানানো পর্যন্ত, আমরা কেন তাকে ব্যবহার করব না? যদি সেটা আমাদেরও পছন্দের বিষয় হয় ৷ কলম্বো বন্দরকে রেখে যদি চিন কয়েকটি নয়া টার্মিনাল তৈরি করে দেয় ৷ যদি আন্তর্জাতিক স্তরেও সেটি ব্যবহারের সুযোগ থাকে? তাই এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলা উচিত না ৷ শুধুমাত্র চিন নির্মাণ করেছে বলেই, এ নিয়ে আমাদের কিছু করাও উচিত না ৷ এটা তো চিনের ব্যাপার, আর যে দেশে প্ল্যাটফর্মটা তৈরি হচ্ছে তাদের ৷

সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে শ্যাম শরণ

প্রশ্ন : কিন্তু পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC) নিয়ে, BRI নিয়ে ভারতের বিরোধিতার কারণ

উত্তর : সম্পর্কের নানা স্তর রয়েছে ৷ এটাও একটা সতর্কবাণী৷ আপনি AIIB (এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাঙ্ক)-এর পার্থক্য দেখুন ৷ BRICS উন্নয়ন ব্লক দেখুন ৷ উভয় ক্ষেত্রেই ভারত উৎসাহী অংশীদার ৷ কিন্তু বিষয়টা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে চিন ৷ AIIB-এর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারগ্রহীতা কিন্তু ভারত ৷ দুটি প্রতিষ্ঠানই গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারতের বড় ভূমিকা ছিল ৷ কীভাবে নির্মাণ হল এটা, কী কী নীতি নেওয়া হবে, একটা প্রকল্পের ক্ষেত্রে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, একটা প্রকল্পের কার্যকারিতা কেমন হতে পারে, সবকিছুতেই অগ্রণী ভূমিকা ছিল ভারতের ৷ AIIB-র ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ভারত অন্যতম ৷ কিন্তু BRI আলাদা কেন? কারণ বহুস্তরীয় প্রকল্প এটি নয় ৷ এটির নকশা চিনের তৈরি ৷ চিনই উদ্যোগ নিয়েছিল এবিষয়ে ৷ আমরা এর অংশও নয় ৷ আমাদের এবিষয়ে ধারণাও তাই ভাসা ভাসা৷ কীভাবে এটা বিশ্বজুড়ে উদ্যোগ হতে পারে, কোনওরকম আলোচনাও হয়নি এ নিয়ে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, চিন-ভারতের কোনও একটা প্রকল্পে তৃতীয় কোনও দেশ যদি সহায়তা করতে চায়, তাতে যদি প্রত্যেকেরই উপকার হয়, এমনকি তৃতীয় দেশটিরও, তাহলে আমাদের কোনও সমস্যা নেই ৷ BRI নিয়ে আদর্শগত অবস্থান নিচ্ছি না আমরা ৷

প্রশ্ন : BRI সংক্রান্ত সহায়তা কি চিনের সঙ্গে সম্পর্কের উত্থানপতন কিংবা অন্য সংঘাতের জায়গা হতে পারে?

উত্তর : আমি এই উপদেশ দেব না ৷ BRI নিয়ে আমাদের অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত একটা সংশয়ের জায়গা রয়েছে ৷ আমি আশা ছেড়ে দিচ্ছি না, কারণ কিছু একটা তো রয়েছে৷ BRI নিয়ে আমাদের গোঁড়ামিকে সরিয়ে, আমি বলব চিনের সঙ্গে কাজ বন্ধ করা একেবারেই অনুচিত ৷ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক দিক থেকে হোক, কিংবা দুটি দেশ ছাড়াও তৃতীয় কোনও অংশীদার দেশের একধরনের পছন্দের জায়গা হোক, চিনের সঙ্গে কাজ থেকে বিরত হওয়ার কোনও অর্থ নেই ৷

প্রশ্ন : RCEP থেকে সরে আসা কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর : আমি বেশ হতাশ৷ ভারত RCEP-তে যুক্ত হল না ৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সমগ্র বিশ্বের নিরিখে অন্যতম শক্তি হিসেবে প্রতিপন্ন হওয়াই ভারতের লক্ষ্য ৷ সেক্ষেত্রে এটা করা ঠিক হয়নি ৷ এটা আত্মরক্ষামূলক অবস্থান ৷ এর নিশ্চয়তা নেই ৷

প্রশ্ন : ভারত সেক্ষেত্রে চিনা দ্রব্যের আস্তাকুঁড় হিসেবে এদেশকে দেখা সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ চিন্তার বিষয়গুলি উল্লেখ করেছে ৷

উত্তর : আমি নরসিমা রাওয়ের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিলাম ৷ সেই সংকটজনক পরিস্থিতিতে তর্ক করছিলাম আমরা, অর্থনীতিকে খুলে দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে ৷ সংস্কার ও উদারীকরণ নিয়েও দ্বিধা ছিল ৷ আমার ভয় লাগছে, এখন যা যা নিয়ে তর্ক চলছে, সেই সময়ও একই রকম তর্ক চলছিল ৷ কিন্তু হ্যাঁ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেইসময় একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৷ সরকারের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে খানিকটা ঝুঁকিপূর্ণও ছিল সেটা৷ কিন্তু আগামী 20 বছরে ফলটা আমরা দেখতে পেয়েছি ৷ ভারতীয় অর্থনীতি তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশের অর্থনীতি থেকে আট থেকে নয় শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ এমন একটা সময়ে এসেছে, নির্দিষ্ট অঞ্চলের নেতা হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে আপনার, আপনিই চালিকাশক্তি ৷ এর কারণ গত 20 বছর ধরে পুঁজি সঞ্চয় করে 8 থেকে 9 শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি৷ তাহলে একটা প্রমাণিত রেকর্ড রয়েছে ৷ অভিজ্ঞতা বলছে, সংস্কারকে গ্রহণ করে, ভারতীয় অর্থনীতিকে মুক্ত করে, বিশ্বায়নকে আপন করে, আসলে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে ৷ নিরাপত্তার অন্যতম শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে দেশ ৷ সেই অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও একইরকম তর্কের পুনরাবৃত্তি কেন? কেন ব্যর্থ আমদানিকৃত বিকল্প অর্থনীতিতে ফিরে যাব?

প্রশ্ন : সম্প্রতি যে বিধানসভা নির্বাচন হল, তা কি রাজনৈতিক হিসেবনিকেশের প্রতিফলন?

উত্তর : ভারতে সবসময় নির্বাচন হয় ৷ যখন আমরা ভারত-অ্যামেরিকা পরমাণু চুক্তি নিয়ে কথা বলছিলাম, তখনও আমরা উন্নত কিছু করার কথাই ভাবছিলাম ৷ কেউ একজন এসে বলল, কিছুক্ষণ সময় নাও ৷ কিন্তু নির্বাচন চলছে ৷ রাজনীতি থাকলে নির্বাচন থাকবেই ৷ আমি ভেবেছিলাম, দেশে এমন একটা সরকার রয়েছে, যারা গতবারের তুলনায় এ বার আরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, যা এর আগে কখনও ঘটেনি৷ এমন একজন প্রধানমন্ত্রী যাঁর শুধু ক্যারিশমা রয়েছে, তাই নয়, দেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দুই ক্ষেত্রেই যাঁর একটা নির্দিষ্ট ভূমিকা-গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে৷ রাজনৈতিকভাবে এটাকে ঝুঁকি মনে হলেও ঠিক তা নয় ৷

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের উন্নয়নের যে গুরুত্ব, আজকের দিনে কতটা প্রাসঙ্গিক তা? 2024 সালে 5 ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিই আমাদের লক্ষ্য ৷ কিন্তু আমাদের অর্থনীতি যদি ধূসর হয়, যদি বৃদ্ধির হার নামতে থাকে, আমাদের বিদেশনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে ?

উত্তর : আজকের রিপোর্ট বলছে, NITI আয়োগ সতর্ক করেছে ৷ যদি বৃদ্ধির পথ সুগম না হয়, তাহলে 2024 সালের অঙ্কটা বড়রকমের অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়াবে৷ অবশ্যই, এটা বুঝতে পেরেছি যে অর্থনীতির দিক থেকে খুব একটা ভালো জায়গায় নেই আমরা ৷ আমাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির বিষয়টিকে ভিত্তি করেই বিদেশী নীতি বা প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ এটা সবকিছুর ভিত্তি ৷ এর ফলেই অন্যতম শক্তি হিসেবে ভারতের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে ৷ আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতার কারণও এটাই ৷ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সক্ষমতার দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে, ফলে অন্যান্য বড় শক্তিগুলির সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্কও অর্থবহ হচ্ছে ৷ কূটনৈতিক জায়গা পাচ্ছে ভারত ৷ এই ভাবনার কারণেই অ্যামেরিকার সঙ্গে পরমাণু বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল ৷ ভারত ও চিনের মধ্যে উন্নয়নের দিক থেকে একটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভারত ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে ৷ এর কারণ হল অর্থনীতি ও বাণিজ্যের সুযোগসুবিধার দিক থেকে দেখলে ভারত হয়তো ভবিষ্যতের চিন হয়ে উঠতে পারে ৷ 2004 সালের সুনামিতে আমাদের অবস্থানটা দেখুন ৷ আমরা বোধহয় প্রথম দেশ যারা, অ্যামেরিকা বা অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলির আগেই সবরকম সাহায্য পাঠিয়েছিল নৌ বাহিনীকে ব্যবহার করেই ৷ একটা বড় প্রভাব পড়েছিল৷ এমন একটা দেশ যার বড়সড় কার্যক্ষমতা রয়েছে ৷ জনসাধারণের ব্যবহৃত জিনিস পাঠাতে সক্ষম ৷ পাকিস্তানের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হল৷ ভারতের জন্য পরমাণু চুক্তি সম্ভব হল ৷ কিন্তু পাকিস্তানের সাপেক্ষে নয় ৷

প্রশ্ন : কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কি সত্যিই ঘুচল? বিশেষ করে কাশ্মীরে 370 ধারা প্রত্যাহার করা এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এ নিয়ে যা যা ঘটল.

উত্তর : আমাদের এ বিষয়ে সৎ থাকতে হবে যে সংযোগ (পাকিস্তানের) ফিরছে ৷

প্রশ্ন : এটা কি দিল্লির জন্যই?

উত্তর : অন্যরা সম্পর্ককে কীভাবে দেখে, সেই বুঝেই কি গুরুত্ব নির্ধারণ হয়? আমাদের চ্যালেঞ্জ হল চিন ৷ যদি পাকিস্তানকে হুমকি হিসেবে দেখি ৷ তার কারণ হল চিন ৷ পাকিস্তানের জন্য নয় ৷ সন্ত্রাসবাদ ভারতের সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় ৷ সীমান্তে প্রায় 30 বছর ধরে যে সন্ত্রাস চলছে ৷ কিন্তু ভারতের অর্থনীতিতে তার কি কোনও প্রভাব পড়েছে? ভারতের আর্থিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলেছে? না ৷ বরং, পাকিস্তান নিজের সম্মান খুইয়েছে ৷ নিজের জন্য আরও সংকট তৈরি করেছে ৷ তাই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সতর্ক থাকা ভাল ৷ কিন্তু সবদিকটাই বিবেচনা করা উচিত ৷

প্রশ্ন : তাহলে ভারত ও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক স্তরে যে সন্ত্রাস প্রসঙ্গ নিয়ে আসছে, তা পরস্পরবিরোধী?

উত্তর : পাকিস্তানের সম্পর্কে যত কথা বলবেন, অন্যদের তত বেশি ওই বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে ৷ কীভাবে বেরোনো যাবে এ থেকে?

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক স্তরে আজ কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার বিষয়টিতে কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ভারতের কাছে কী? জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল, ফিনল্যান্ড সরকার কিছু কাটা কাটা মন্তব্যও করেছেন ৷ অ্যামেরিকার কংগ্রেসে দুটি শুনানিও হয়েছে এ নিয়ে, সপ্তাহদুয়েক আগে ৷

উত্তর : স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলতে মানুষ যা বোঝে, সেই হিসেবের নিরিখে যদি কাশ্মীর স্বাভাবিক না হয়, তাহলে এটা আরও বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে ৷ আমি জানি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ৷ আমার মনে হয়, উপত্যকায় সত্যিই যা ঘটছে, সেই ছবিটা স্বাভাবিক নয় ৷ 100 দিনের পরেও যদি ইন্টারনেট পরিষেবা না থাকে, মোবাইল ফোনে যদি নিয়ন্ত্রণ থাকে এখনও, প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা গৃহবন্দী থাকেন, রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ রাখতে বলা হয়, অন্য রাজ্যের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের এই পরিস্থিতির যদি তুলনা করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলাটা ঠিক হবে না ৷ আগামী কয়েক মাসে যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়, স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলতে আমরা যা বুঝি তা হয়তো লক্ষ্য করা যাবে ৷ জার্মানি কিংবা অ্যামেরিকায় আমাদের বন্ধুদের মধ্যে যে উদ্বেগ লক্ষ্য করেছি,তা দূর হবে ৷ যদি আগামী কয়েক মাসে পরিস্থিতি উন্নতি না হয়, তাহলে ভারতের বন্ধু রাষ্ট্রগুলি যদি এরপর এ নিয়ে কিছু বলে , তাহলে তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই ৷

প্রশ্ন : ভারত-অ্যামেরিকা বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে দুর্বলতার জায়গাগুলি কী? দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে কতটা প্রভাব পড়বে?

উত্তর : ভারত-অ্যামেরিকা বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হল অর্থনৈতিক স্তম্ভ৷ রাজনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা ভালো কাজ করছি ৷ একাধিক ইশুতে দ্বিপাক্ষিত ঐক্যমতের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আরও গুরুত্ব আরোপ করছে অ্যামেরিকা ৷ চেষ্টা করার বিষয়টিকে আমি স্বাগত জানাই ৷ বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত সংঘাত আমরা কীভাবে সামলাতে পারি তা দেখি, FTA-র বিষয়টিও দেখি ৷ যদি RCEP হজম করতে না পারি, তাহলে FTA ও অ্যামেরিকার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি নিয়ে সংশয় রয়েছে ৷

প্রশ্ন : সেটা এবং অন্য যে সব FTA রয়েছে, সেগুলিকে কি বাতিল করা হবে না পর্যালোচনা করা হবে?

উত্তর : সেই FTA বাতিল করা হয়নি, তবে সেই FTA-গুলি নিয়ে আপত্তি রয়েছে৷ যদি বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তির দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে RCEP আসলে নিম্ন মানের FTA (অংশীদারি দেশগুলির থেকে চাহিদার নিরিখে)৷ শুধুমাত্র শুল্ক কমানো কিংবা পরিবেশ বা স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে দেখলেও এটা তাই ৷ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কের চেয়েও বেশি জরুরি মান ৷ নিজেদের মান বাড়িয়ে বিনিয়োগ করতে চাই না আমরা ৷ RCEP-তে তুলনামূলক কম মানেও যদি তা করা সম্ভব না হয়, তাহলে অ্যামেরিকার মতো উন্নত দেশের সঙ্গে FTA-র ক্ষেত্রে কি তা সম্ভব হবে? সেখানে তো মান আরও উচ্চপর্যায়ের ৷ কিছু ইশু নিয়ে ভেবে দেখতে হবে ৷ যদি আপনি ভাবেন, RCEP-তে ছাড় না পেলেও, অ্যামেরিকা থেকে আরও ছাড় নিয়ে আসব ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি করব বা এর চেয়ে ভালো কোনও চুক্তি ৷ কিন্তু না, আপনি তা পাবেন না ৷ চাহিদার নিরিখে, বাজারের প্রেক্ষিতে RCEP-এর থেকেও অ্যামেরিকা বা ইউরোপীয় বাজারের মান অনেকটাই বেশি৷ শুল্ক নিয়ে বেশি ভাবছি আমরা, বাকি পৃথিবী ভাবছে গুণগত মান নিয়ে ৷ প্রতিযোগিতাও সেভাবেই হচ্ছে ৷ আমরা একটা বড় বাজার, এটা আমরা ধরেই নিয়েছি ৷ ওরা আর কোথায় যাবে? ওদের কাছে কোনও বিকল্প নেই ৷ কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল অনুমান ৷ চিন থেকে সরে যচ্ছে বস্ত্র বাণিজ্য ৷ এর একটা বড় কারণ বেশি মজুরি৷ আর কিছু বিদেশি সংস্থার প্রভাব ৷ কিন্তু কোথায় যাচ্ছে ? ভারতে আসছে? ভিয়েতনামে যাচ্ছে প্রথমে ৷ নইলে বেশিরভাগই যাচ্ছে বাংলাদেশে ৷ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে বিকল্প নেই, এটা ভাবা সম্পূর্ণ নির্বুদ্ধিতা ৷ তৎপর হতে হবে ৷ আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে৷ নিজের আকারের কারণেই তা সম্পন্ন করার ক্ষমতাও থাকতে হবে ৷ যদি 20 থেকে 30 বছরে নিজেকে আরও বেশি করে প্রসারিত করতে পারার বিষয়টা মানতে না পারা যায়, যদি বৃদ্ধি দ্রুততর না হয়, 8 থেকে 10 শতাংশ প্রতি বছরে বৃদ্ধি না হলে তবে ভৌগোলিক সুবিধাও তো নিতে পারা যাবে না ৷ অর্থনীতির দ্বার বন্ধ রেখে তা করা সম্ভব নয় ৷

প্রশ্ন : NRC নিয়ে দেশের রাজনীতি কি ঢাকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে? বাংলাদেশ হাই কমিশনার ভারতের সম্পর্কে কিছু সমালোচনামূলক মন্তব্য করে গিয়েছেন৷

উত্তর : এখনও পর্যন্ত ঢাকাকে এই বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হবে, তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে, এ জাতীয় চিন্তার কোনও কারণ নেই সে দেশের ৷ যদিও এটাকে আমরা আদ্যোপান্ত ঘরোয়া ইশু হিসেবেই উপস্থাপনা করছি, যার প্রভাব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উপর পড়বে না বলা হচ্ছে,কিন্তু প্রভাব পড়বে ৷ এখানে ভাবনার যে তত্ত্ব রয়েছে, তা অনুযায়ী অন্য পক্ষ প্রভাবিত হওয়ার কথা নয়৷ কিন্তু এটা বাস্তবসম্মত নয় ৷ চলে যাওয়ার সময় যে রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছেন, কিংবা বাংলাদেশের যা মন্তব্য, তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ ৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ সতর্ক থাকতে হবে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির ফলে আমাদের যা যা লাভ হয়েছে তা মনে রাখতে হবে ৷ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার কথা ৷ ভাবনাচিন্তাহীন কোনও তত্ত্বের মাধ্যমে হাসিনা কিংবা বাংলাদেশের কোনও নেতার সম্মানহানির কোনও অর্থ নেই ৷

প্রশ্ন : জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার পর ভারতের নয়া ভৌগোলিক মানচিত্রের প্রকাশ, কালাপানি ইশুতে নেপালের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করেছে ৷ কয়েক বছর আগে 'অর্থনৈতিক অবরোধ'-এর কথা নেপালিরা এখনও বলে৷ আপনি কীভাবে দেখছেন বিষয়টি ?

উত্তর : নেপালের তরফে কেন এমন বলা হল, তা বোঝা বেশ কঠিন ৷ জম্মু-কাশ্মীরের যে পরিবর্তন হয়েছে, সেই প্রতিফলন বোঝাতেই মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছিল ৷ এর সঙ্গে নেপালের কোনও সম্পর্ক নেই ৷ নেপাল-ভারত সীমানার কথা ধরলে, আগের মানচিত্রের তুলনায় কোনওরকম পরিবর্তন নেই ৷ মানচিত্রে কোনওরকম আগ্রাসনের প্রশ্নই নেই ৷ কোনও পরিবর্তনই যেখানে নেই, সেখানে এত চিন্তার কারণ কী? আগের অনেকগুলি মানচিত্র ছিল ৷ কোনও তফাত নেই ৷ কীসে এত বিরক্ত হলেন ওঁরা? কালাপানি প্রসঙ্গে বলতে গেলে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে এই মানচিত্র আঁকা হয়৷ ম্যাকমোহন রেখায়, পূর্ব সীমানার ক্ষেত্রে আমরা এটা দেখেছি ৷ মোটা কলমের নিব দিয়ে আঁকা হয়েছিল ৷ উপর আর নিচের অংশের মধ্যে ছোট স্কেলের ভিত্তিতে 20 কিলোমিটার মতো তফাত রয়েছে ৷ কিছু কিছু রেখার ক্ষেত্রে এটা তো আনুমানিক৷ আগে তো কোনও পুরোনো রেখাই থাকত না ৷

প্রশ্ন : মানচিত্রে বিন্দুমাত্র বদল যদি নাই থাকে, তাহলে ভারতীয় আগ্রাসনের ছবি তুলে ধরা হচ্ছে কেন?

উত্তর : জনমতকে নিজের দিকে টানতে কী পন্থা নেওয়া যায় ৷ কারা এটা শুরু করেছে-বামপন্থীরা ৷ মাওবাদীদেরই সংগঠন থেকে ভেঙে বেরিয়ে আসা দল৷ অন্য দল তখন কী ভাবছে, এক্ষেত্রে যদি সমর্থন না করি, তাহলে নিজেকে দেশপ্রেমী হিসেবে দেখানো যাবে না ৷ এভাবেই বল গড়িয়েছে ৷ আগেও এমন হয়েছে ৷ বাস্তব হল ভারত-নেপাল সীমানায় কোনওরকম পরিবর্তন হয়নি ৷ আগেও যখন এমন বলা হয়েছিল, তখন আমরা একটা পদ্ধতি বের করেছিলাম এটা সামলাতে ৷ বিদেশসচিবের একটা ফোরাম ছিল ৷ কিন্তু কোনও কারণে তা হয়নি ৷ ভারতের দিক থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল৷ 2000 সালে ভারত-নেপাল বন্ধুত্ব চুক্তি প্রধানমন্ত্রীস্তরে এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়েছিল যে নেপালের একটা অংশ বলেছিলেন, এটা অসম বন্ধুত্ব৷ এটাকে খতিয়ে দেখতে হবে ৷ তার জন্যও চুক্তি হয় ৷ আবারও বিদেশসচিব পর্যায়ের পদ্ধতি তৈরি করা হয় ৷ সেই বৈঠকে আমরা বলেছিলাম, আমাদের মধ্যে যদি পারস্পরিক আরও চুক্তি হয় ৷ তাহলে বর্তমানে যে সমস্ত সুযোগসুবিধা মিলছে, সেগুলি নাও মিলতে পারে৷ প্রথমটির পর আর বৈঠক হয়নি ৷ আমরা বসে এ নিয়ে আলোচনায় রাজি, কিন্তু ওঁরা নন৷ ভারত-নেপাল সীমানার 98 শতাংশের সমস্যা আসলে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে ৷ 98 শতাংশটা আপনারা দেখছেন না, আপনাদের কাছে দুই শতাংশই জরুরি ৷ সুস্তার ক্ষেত্রে এটা তো নদীর গতিপথের পরিবর্তন ৷ তাহলে আপনাকে প্রথমে ঠিক করতে হবে, নদী তীরবর্তী সীমানায় রাজি, নাকি নদীর গতিপথ যেমনভাবে পাল্টাবে সেভাবে দেখবেন৷ একমত হতে হবে বিষয়টি নিয়ে ৷ ভারত-নেপাল সীমানায় এটা কোনও বড় ইশু বলে আমার মনে হয় না ৷ যদি কোনও বিশেষ কারণে, নেপালের কোনও রাজনৈতিক শক্তি চায় এটা বড় ইশু হিসেবে দেখাতে, তাহলে এটা প্রথম বার নয় ৷

( সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক স্মিতা শর্মা, টুইটার @smita_sharma)

Anantnag (J-K), Nov 26 (ANI): The two civilians, who got injured in a grenade blast in Anantnag, succumbed to their injuries on November 26. The dreadful blast took place at Panchayat Ghar Hakura in Jammu and Kashmir's Anantnag district. Security forces cordoned the area after the blast. Further investigation is underway.

Last Updated : Nov 26, 2019, 11:34 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.