দিল্লি, 19 জুন : সর্বদলীয় বৈঠকে বেশিরভাগ দলই কেন্দ্রের পাশে দাঁড়াল । বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় থেকে শুরু করে কে চন্দ্রশেখর রাও, সকলেই ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক ইশুতে কেন্দ্রের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন । তবে এর মধ্যেও কেন্দ্রকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি কংগ্রেস । শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশকে ধোঁয়াশায় রাখার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হলেন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি । তাঁর মতে, "এই সর্বদলীয় বৈঠক আরও আগে হওয়া উচিত ছিল । 5 মে যখন চিনের অনুপ্রবেশের খবর সামনে আসে, তখনই কেন্দ্রের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল ।"
লাদাখে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠক অংশগ্রহণ করেছিলেন 20 টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা । ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক হয় । বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, সোনিয়া গান্ধি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে সহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব । কেন্দ্রের তরফে বৈঠকে ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ।
ভিডিয়ো কনফারেন্সের শুরুতেই 15 জুন রাতে সংঘর্ষে শহিদ হওয়া জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী ও বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্যরা । সূত্রের খবর, লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর ভারত - চিন দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একমত হতেই আজকের সর্বদলীয় বৈঠক ।
সূত্র মারফত জানা গেছে, রাজনৈতিক দূরত্ব ভুলে দেশের স্বার্থে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । দেশের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে রাজ্য সবসময় কেন্দ্রের পাশে আছে । কিন্তু কেন্দ্রেরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । অন্যদিকে শরদ পাওয়ারের মতে, এই ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের সামরিক ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে । আমাদের জওয়ানরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অস্ত্রের ব্যবহার করবে কি করবে না, তা ভারত-চিন আন্তর্জাতিক চুক্তির উপর নির্ভর করে । এ-বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে ।
ভারত-চিন আন্তর্জাতিক সীমান্তের দিক থেকে সিকিম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য । আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং । ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের উপরই পুরোপুরি ভরসা রাখছে সিকিম । প্রেম সিং তামাং জানিয়েছেন, " প্রধানমন্ত্রীর উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে । অতীতেও যখনই জাতীয় নিরাপত্তার উপর প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিবারই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ।"
বৈঠকে ছিলেন CPI-এর নেতা ডি রাজাও । ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা শুরু হওয়ার পর থেকেই একাধিকবার দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বিপাক্ষিক ইশুতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে অ্যামেরিকা । সেই দিকটিকেই আরও একবার মনে করিয়ে দেন ডি রাজা ও সীতারাম ইয়েচুরি । ডি রাজা বলেন, "অ্যামেরিকা যাতে আমাদেরকে নিজেদের দলে না ভিড়িয়ে নিতে পারে, সেইদিকেও আমাদের নজর রাখতে হবে ।"
তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতে, "কাশ্মীর ইশুতে প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের পদক্ষেপ করেছেন, তাতে চিনের অসন্তোষ বেড়েছে । এরপর আত্মনির্ভর ভারত নিয়ে কেন্দ্রের যে অবস্থান, তাতে চিনের এই অসন্তোষ আরও দ্বিগুণ হয়েছে ।" পাশাপাশি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষে এক কর্নেলসহ যে 20 জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে পরিবারপিছু এককালীন 10 লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী ।
তবে আজকের ভিডিয়ো কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন না কেজরিওয়াল বা লালুপ্রসাদ যাদব । আম আদমি পার্টি বা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না বৈঠকে । জানা গেছে, গতরাতেই সর্বদলীয় বৈঠকে যোগদান করার জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সমস্ত রাজনৈতিক দলের সভাপতিকে টেলিফোনে আহ্বান জানিয়েছিলেন । রাষ্ট্রীয় জনতা দল যে আজকের সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নিচ্ছে না, তার কিছুটা আভাস গতকালই পাওয়া গেছিল । গতরাতে 11 টা 20 মিনিটে তেজস্বী যাদব একটি টুইট করেন । প্রতিরক্ষামন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে ট্যাগও করেন সেই টুইট ।