ভোপাল, 22 জুন : প্রায় 40 বছর আগে পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন পঞ্চুবাই । তখন তাঁর বয়স 53 । মৌমাছির আক্রমণ থেকে তাঁকে বাঁচিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের একটি গ্রামের বাসিন্দারা । তারপর কেটে গিয়েছে চারটে দশক । গত সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে আবার মিলিত হলেন 93 বছরের এই বৃদ্ধা । যখন গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তখন উপচে পড়েছে ভিড় । সবার মনে তখন স্মৃতির আনাগোনা । চোখে জল ।
মহারাষ্ট্রে ছিল পঞ্চুভাইয়ের পরিবার । তাঁর মাতৃভাষা মারাঠি । মধ্যপ্রদেশের ওই গ্রামের বাসিন্দারা তাঁর ভাষা বুঝতেন না । তবু 40 বছর ধরে আপন হয়েছিলেন একে অন্যের । এই ক্ষেত্রে দুটো ভাষাই হয়ত কাজ করেছিল, আত্মীয়তা এবং ভালোবাসার ।
ডামোহ জেলার কোটা তালা গ্রামের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে । সেখানে দেখা যাচ্ছে, ওই গ্রামের মহিলারা 93 বছরের বৃদ্ধাকে বিদায় জানাচ্ছেন । সবার চোখে জল । তাঁদের ‘মাসি’ (পঞ্চুবাই) বসে রয়েছেন লাল গাড়ির ভিতর । পঞ্চুভাইয়ের নাতি পৃথিবীকুমার শিঙ্গল নাগপুর থেকে আসবেন জেনেই ভেঙে পড়েছিলেন গ্রামবাসীরা । লকডাউনেও গাড়ি চালিয়ে আসেন বৃদ্ধার নাতি । বৃহস্পতিবার তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান ।
40 বছর আগে পঞ্চুবাইকে বাঁচিয়েছিলেন নুর খান নামে এক ব্যক্তি । সেইসময় মারাঠিতে কিছু কথা অস্পষ্টভাবে বলেছিলেন তিনি । সেইসময় তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসেন নুর খান , এইসবই আটের দশকের কথা । নুর খান হয়ে ওঠেন ওই বৃদ্ধার বড় ছেলে । এবং নুরের পরিবারের এক সদস্য হয়ে ওঠেন পঞ্চুবাই । ভাষা বুঝতেন না, জানা ছিল না পরিচয়ও । অথচ, একটা টান ছিল । হয়ত আত্মার টান । 2007 সালে মৃত্যু হয় নুরের । কিন্তু নুরের পরিবার পঞ্চুবাইয়ের সঙ্গে জুড়ে যায় । সবার প্রিয় ‘ঠাকুমা’ হয়ে ওঠেন তিনি । নাতি-নাতনিদের সঙ্গে এইভাবেই কেটে গিয়েছে সময় ।
3মে নুর খানের ছেলে ইসরার মোবাইলে ইন্টারনেট ব্রাউসিং-এর সময় পঞ্চুভাইকে তাঁর অতীতের কথা জিজ্ঞাসা করেন । প্রশ্ন করেন, কোথায় তাঁর বাড়ি ছিল । কী তাঁর গ্রামের নাম । একইভাবে অস্পষ্টভাবে ‘খঞ্জনামা’ ‘পাথরোট’-র নাম উচ্চারণ করেন তিনি । ইসরার সেই শব্দগুলিই গুগলে টাইপ করেন । খুঁজে পেয়ে যান তাঁর গ্রামের নাম । এক গ্রামবাসীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেন । হোয়াটসঅ্যাপে পঞ্চুবাইয়ের ছবি পাঠান । কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হদিস মেলে তাঁর পরিবারের । পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়ে যায় ।
ইসরার বলেন, “গ্রামবাসীরা কাঁদছিলেন । পঞ্চুভাইকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাইছিলেন না । কিন্তু তাঁর পরিবার তাঁর খোঁজ পেয়েছে । তাঁরাও পঞ্চুভাইকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় । এবং তাঁর নাতি নাতনিদের সঙ্গে এবার তাঁর দেখাও হবে ।”
পঞ্চুবাইয়ের উপর গ্রামবাসীদের ভালোবাসা দেখে বিস্মিত পৃথিবীকুমার । তাঁর ঠাকুমার হারিয়ে যাওয়ার সময় জন্মও হয়নি তাঁর । তিনি বলেন, “আমি ওঁকে নিয়ে ফিরছি । আমি খুব খুশি । সবাই ঠাকুমার খুব ষত্ন নিয়েছেন ।”
নাগপুরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল পঞ্চুবাইকে, আজ থেকে প্রায় 40 বছর আগে । সেখানেই হারিয়ে যান তিনি । তারপর কীভাবে ডামোহ পৌঁছালেন সেই বিষয়টিও স্পষ্ট নয় ।
পঞ্চুভাইকে বিদায় জানানো সহজ ছিল না গ্রামবাসীদের পক্ষে । তাঁকে নতুন শাড়ি পরানো হয় । বৃহস্পতিবার লাল গাড়িতে উঠে বসেন বৃদ্ধা । একজন মহিলা তাঁকে জড়িয়ে ধরেন । আর একজন “মাসি” বলে কেঁদে ওঠেন । চার দশক ধরে এই গ্রামবাসীদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিলেন পঞ্চুবাই, সেইদিন নতুন যাত্রা শুরু করলেন । সবার সঙ্গে রয়ে গেল শুধুই স্মৃতি ।