ETV Bharat / bharat

কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে প্রয়োজন গুরুত্বপূর্ণ খোলামেলা ও সঠিক তথ্য

প্রতিবেদনটি লিখেছেন স্মিতা শর্মা ৷

coronavirus in india
coronavirus in india
author img

By

Published : Mar 31, 2020, 10:09 PM IST

Updated : Mar 31, 2020, 11:05 PM IST

দিল্লি, 31 মার্চ : কোরোনা ভাইরাসের জেরে যে অর্থনৈতিক সংকটের দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তার প্রস্তাবে গুরুত্ব দিচ্ছে ইউরোপের 27 টি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট-ইউরোপীয় ইউনিয়ন । COVID-19-এ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছিল চিনে ৷ এবার সেই চিনকে মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ছাপিয়েগেছে ইট্যালি ৷ ইট্যালি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেছে, যাতে তারা বিশেষ তহবিল ব্যবহার করে, এই কোরোনার জেরে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করে ।

দিল্লিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত উগো অ্যাস্তুতো মনে করেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক লকডাউন । সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত জানিয়েছেন, COVID-19 এর ভ্যাকসিন দ্রুত খুঁজে পাওয়াটা জরুরি ৷ এই মুহূর্তে একসঙ্গে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে প্রয়োজন সঠিক তথ্য ও স্বচ্ছ্বতার । যাঁরা নিজের নিজের দেশে ফিরতে পারেনি, তাঁদের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলি নমনীয়ভাবে কাজ করছে বলেও আশ্বাস দেন তিনি । কোরোনার প্রেক্ষিতে কয়েকজনের উপর বর্ণবিদ্বেষী হামলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মানুষকে এই মুহূর্তে সহমর্মিতা বজায় রাখতেই হবে । উগো অ্যাস্তুতো জানান করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল খোলামেলা এবং সঠিক তথ্য ৷

প্রশ্ন - ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই মুহূর্তে কতটা ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে?

COVID-19 ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে, এর মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক স্তরে একজোট হয়ে লড়ার দরকার । জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং আরও মৃত্যু এড়াতে, আমাদের দৃঢ়বদ্ধ হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে । ইউরোপে আমরা বেশ কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছি । সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া, লকডাউন সবই বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে করেছি । আমরা সমস্ত সদস্য দেশের মধ্যে COVID 19-এর সহযোগিতা বাড়িয়েছি, এবং শুরু করেছি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি দিয়ে । এই সংকটের জেরে অর্থনীতিতে যে সম্ভাব্য প্রভাব পড়বে, তার কথাও ভেবেছি আমরা । সমাজের উপর এই ভাইরাসের প্রভাব কমাতে এবং এর বিরুদ্ধে লড়তে আমরা পুরোদমে তৈরি । আমরা এই লড়াইে জিততে পারি । ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিজ্ঞানীরাও সেই চেষ্টা করছেন । সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমরা ভ্যাকসিন তৈরি রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য 140 মিলিয়ন ইউরো দিয়েছি । যত দ্রুত সম্ভব এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন খুঁজে পাওয়া জরুরি । আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ্বতা বজায় রেখে চলছি । ইউরোপিয়ান কমিশন-সহ বহু ওয়েবসাইটে সমস্ত সংখ্যা এবং সাম্প্রতিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে । আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যে খোলামেলা ও সঠিক তথ্য এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । স্থানীয় ও জাতীয় স্তর পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের কাজ করতে হবে, কারণ ভাইরাস কোনও সীমানা মানে না । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থ্যাগুলির সঙ্গে আমাদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে ।

প্রশ্ন : এই সময় সীমান্ত দিয়ে যে বাধাহীন যাতায়াত হয়েছে, তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কতটা ঝুঁকির মুখে? আগেই যে COVID-19 আক্রান্ত রোগীরা ঢুকেছেন, তাঁদের কি খুঁজে বার করে সনাক্ত করা সম্ভব?

উত্তর : আমরা এটা খতিয়ে দেখছি । লকডাউন আরও প্রভাবশালী হচ্ছে । আমরা সবাই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি । জনস্বাস্থ্যে এই আতঙ্ক কাটাতে আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তৈরি । আমরা এরমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ বিশদে মেনে চলছি । স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে । আমরা যথেষ্ট কঠিন সিদ্ধান্তগুলি নিচ্ছি, যা এইসময় প্রয়োজন । একই সঙ্গে আমাদের সার্বিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও বজায় রাখা হচ্ছে । জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির মোকাবিলাই এখন অগ্রাধিকার ।

প্রশ্ন : ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভারতের তালিকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ার ফলে, বহু ভারতীয় পড়ুয়া বিভিন্ন শহরে অথবা কোনও থাকার জায়গা ছাড়াই আটকে পড়েছেন । ভারতে থাকা ই-ইউ নাগরিক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ কি বাড়ানো হচ্ছে?

উত্তর : হ্যাঁ, আমরা সেটা করছি । প্রত্যেক সদস্য দেশ এটা করছে । আমরাও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে সাহায্যের চেষ্টা করছি । আমরা সবাই ঝুঝি, যে আমরা একসঙ্গে এই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, এবং সময়ের চাহিদা মেনে আমাদের যথেষ্ট নমনীয় হতে হবে । ভারতে থাকা ইউরোপীয়রা হোন, বা ইউরোপে থাকা ভারতীয়রা আমরা স্পষ্ট ধারণা নিয়ে এব্যাপারে কাজ করছি ।

প্রশ্ন : আপনি কী মনে করেন, যে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়াই মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ের সবথেকে ভালো পদ্ধতি? সামাজিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কি কোনও সমাধান সূত্র দিতে পারে?

উত্তর : আমি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ নই । কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব থেকে ভালো বিজ্ঞানভিত্তিক দক্ষতার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা যাই করি না কেন, সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই করার চেষ্টা করছি ।

প্রশ্ন : কোরোনার জেরে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সরকারগুলিকে কী ধরণের প্যাকেজ দিতে হবে?

উত্তর : গবেষণা ও ভ্যাকসিনের জন্য আমরা 140 মিলিয়ন ইউরোর ব্যবস্থা করেছি । আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও 400 মিলিয়ন ইউরো দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছি, যাতে আমরা সবাই একসঙ্গে এই ভাইরাসকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছি । এই পরিস্থিতির জেরে অর্থনৈতিক প্রভাব, যা সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুতর হয়ে দাঁড়াতে পারে, তার মোকাবিলাতেও আমরা সচেষ্ট । আমরা এর মধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি । বাজার একটাই, আমরা নতুন বাজেটের মাধ্যমে নতুন বিধিলাগু এবং নমনীয়তা, স্থায়িত্ব ও বৃদ্ধি আনতে চাইছি । সব কিছুরই লক্ষ্য এই ভাইরাসকে প্রতিহত করা । এই পরিস্থিতিতে যেটা করার সেটা করতেই হবে । আমরা নতুন এবং সৃজনশীল সমাধান নিয়ে তৈরি আছি ।

প্রশ্ন : সার্ক সম্মেলন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মতো জি-20-র অনলাইন লিঙ্কের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি । বহুপাক্ষিকতার মাধ্যমেই কি বিশ্বজুড়ে রোগমুক্তির পথ মিলতে পারে?

উত্তর : এটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদির সময়োপযোগী উদ্যোগের প্রশংসা করি । এখন আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির গুরুত্ব সবথেকে বেশি উপলব্ধি করছি। আরও ভালোভাবে সহযোগিতা করতে আমরা সমস্ত পদ্ধতির আশ্রয় নেব, এবং এই আতঙ্কের মোকাবিলায় সংযুক্ত পদক্ষেপ খুঁজবো ।

প্রশ্ন : এতগুলি দেশে যেখানে লকডাউন, সেখানে জি 7, জি 20-তে যে প্রস্তাবগুলি দেওয়া হবে, তা কি দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব?

উত্তর : সমস্ত দেশ এই পরিস্থিতিকে অত্যান্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে, আর সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো যে পদ্ধতি সামনে আসছে, তা গ্রহণ করতে আমরা তৈরি । এখন বহুপাক্ষিক স্তরে মতামতের তুলনা করা জরুরি, যাতে আমরা অনান্য দেশের অভিজ্ঞতা এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও শিখতে পারি ।

প্রশ্ন : কোরোনা ভাইরাস রুখতে হাই লেভেল টেস্টিং এবং সঠিক রিপোর্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে কতটা প্রয়োজনীয়?

উত্তর : আমরা একটা খোলা ও স্বচ্ছ্ব সমাজ তৈরি করার চেষ্টা করেছি । সংকট মোকাবিলায় আমাদের পদক্ষেপ থেকেই এটা স্পষ্ট । আলাদাভাবে সদস্য দেশগুলি এই পরিস্থিতির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সামনে রাখছে, আর ইউরোপিয়ান কমিশনও একই কাজ করছে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে । যদি আপনি সংকট কমাতে চান, তাহলে আপনি সংখ্যা ও তথ্যের বিপুল ভাণ্ডার পেতে পারেন ।

প্রশ্ন : প্যানডেমিকের জেরে দিল্লির ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসের দৈনন্দিন কাজকর্ম কীভাবে বদলেছে? কী ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন আপনারা?

উত্তর : আমরা ভারত সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে চলার চেষ্টা করছি । সামাজিক দূরত্ব, হাত পরিস্কার করা, যাতায়াত এড়ানোর মতো বিষয়কে আমরা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি । আমরা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক যাতায়াত সীমাবদ্ধ করেছি, বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছি । কখনও কখনও আমাদের কোনও প্রতিনিধিদলকে বা আপনাদের নাগরিকদের সহায়তা করতে আমাদের যাতায়াতের বন্দোবস্ত করতে হয় । বহু ইউরোপীয়কে ঘরে ফিরতে হবে, ঠিক যেভাবে বহু ভারতীয়কে ইউরোপ থেকে ফিরতে হবে । আমরা বেশ বড়সড় সংখ্যায় ইউরোপীয় নাগরিকদের কথা বলছি ।

প্রশ্ন - এই মহামারীকে কেন্দ্র করে চিনা নাগরিক বা উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দা এবং অনান্য বিদেশিদের বর্ণবিদ্বেষমূলক হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে । আপনার কী প্রতিক্রিয়া?

উত্তর : এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে । এই ভাইরাস কোনও দেশের সীমানা দেখে না । আমরা সবাই এই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি । সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যের প্রয়োজন আগের থেকে অনেক বেশি । আমাদের একসঙ্গে কাজ করে মানবিক সহমর্মিতা বজায় রাখতেই হবে । তাই তো মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বলা হচ্ছে, দেশের সীমান্তের কথা নয় ।

দিল্লি, 31 মার্চ : কোরোনা ভাইরাসের জেরে যে অর্থনৈতিক সংকটের দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তার প্রস্তাবে গুরুত্ব দিচ্ছে ইউরোপের 27 টি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট-ইউরোপীয় ইউনিয়ন । COVID-19-এ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছিল চিনে ৷ এবার সেই চিনকে মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ছাপিয়েগেছে ইট্যালি ৷ ইট্যালি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেছে, যাতে তারা বিশেষ তহবিল ব্যবহার করে, এই কোরোনার জেরে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করে ।

দিল্লিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত উগো অ্যাস্তুতো মনে করেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক লকডাউন । সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত জানিয়েছেন, COVID-19 এর ভ্যাকসিন দ্রুত খুঁজে পাওয়াটা জরুরি ৷ এই মুহূর্তে একসঙ্গে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে প্রয়োজন সঠিক তথ্য ও স্বচ্ছ্বতার । যাঁরা নিজের নিজের দেশে ফিরতে পারেনি, তাঁদের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলি নমনীয়ভাবে কাজ করছে বলেও আশ্বাস দেন তিনি । কোরোনার প্রেক্ষিতে কয়েকজনের উপর বর্ণবিদ্বেষী হামলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মানুষকে এই মুহূর্তে সহমর্মিতা বজায় রাখতেই হবে । উগো অ্যাস্তুতো জানান করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল খোলামেলা এবং সঠিক তথ্য ৷

প্রশ্ন - ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই মুহূর্তে কতটা ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে?

COVID-19 ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে, এর মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক স্তরে একজোট হয়ে লড়ার দরকার । জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং আরও মৃত্যু এড়াতে, আমাদের দৃঢ়বদ্ধ হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে । ইউরোপে আমরা বেশ কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছি । সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া, লকডাউন সবই বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে করেছি । আমরা সমস্ত সদস্য দেশের মধ্যে COVID 19-এর সহযোগিতা বাড়িয়েছি, এবং শুরু করেছি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি দিয়ে । এই সংকটের জেরে অর্থনীতিতে যে সম্ভাব্য প্রভাব পড়বে, তার কথাও ভেবেছি আমরা । সমাজের উপর এই ভাইরাসের প্রভাব কমাতে এবং এর বিরুদ্ধে লড়তে আমরা পুরোদমে তৈরি । আমরা এই লড়াইে জিততে পারি । ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিজ্ঞানীরাও সেই চেষ্টা করছেন । সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমরা ভ্যাকসিন তৈরি রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য 140 মিলিয়ন ইউরো দিয়েছি । যত দ্রুত সম্ভব এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন খুঁজে পাওয়া জরুরি । আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ্বতা বজায় রেখে চলছি । ইউরোপিয়ান কমিশন-সহ বহু ওয়েবসাইটে সমস্ত সংখ্যা এবং সাম্প্রতিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে । আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যে খোলামেলা ও সঠিক তথ্য এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । স্থানীয় ও জাতীয় স্তর পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের কাজ করতে হবে, কারণ ভাইরাস কোনও সীমানা মানে না । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থ্যাগুলির সঙ্গে আমাদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে ।

প্রশ্ন : এই সময় সীমান্ত দিয়ে যে বাধাহীন যাতায়াত হয়েছে, তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কতটা ঝুঁকির মুখে? আগেই যে COVID-19 আক্রান্ত রোগীরা ঢুকেছেন, তাঁদের কি খুঁজে বার করে সনাক্ত করা সম্ভব?

উত্তর : আমরা এটা খতিয়ে দেখছি । লকডাউন আরও প্রভাবশালী হচ্ছে । আমরা সবাই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি । জনস্বাস্থ্যে এই আতঙ্ক কাটাতে আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তৈরি । আমরা এরমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ বিশদে মেনে চলছি । স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে । আমরা যথেষ্ট কঠিন সিদ্ধান্তগুলি নিচ্ছি, যা এইসময় প্রয়োজন । একই সঙ্গে আমাদের সার্বিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও বজায় রাখা হচ্ছে । জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির মোকাবিলাই এখন অগ্রাধিকার ।

প্রশ্ন : ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভারতের তালিকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ার ফলে, বহু ভারতীয় পড়ুয়া বিভিন্ন শহরে অথবা কোনও থাকার জায়গা ছাড়াই আটকে পড়েছেন । ভারতে থাকা ই-ইউ নাগরিক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ কি বাড়ানো হচ্ছে?

উত্তর : হ্যাঁ, আমরা সেটা করছি । প্রত্যেক সদস্য দেশ এটা করছে । আমরাও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে সাহায্যের চেষ্টা করছি । আমরা সবাই ঝুঝি, যে আমরা একসঙ্গে এই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, এবং সময়ের চাহিদা মেনে আমাদের যথেষ্ট নমনীয় হতে হবে । ভারতে থাকা ইউরোপীয়রা হোন, বা ইউরোপে থাকা ভারতীয়রা আমরা স্পষ্ট ধারণা নিয়ে এব্যাপারে কাজ করছি ।

প্রশ্ন : আপনি কী মনে করেন, যে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়াই মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ের সবথেকে ভালো পদ্ধতি? সামাজিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কি কোনও সমাধান সূত্র দিতে পারে?

উত্তর : আমি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ নই । কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব থেকে ভালো বিজ্ঞানভিত্তিক দক্ষতার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা যাই করি না কেন, সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই করার চেষ্টা করছি ।

প্রশ্ন : কোরোনার জেরে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সরকারগুলিকে কী ধরণের প্যাকেজ দিতে হবে?

উত্তর : গবেষণা ও ভ্যাকসিনের জন্য আমরা 140 মিলিয়ন ইউরোর ব্যবস্থা করেছি । আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও 400 মিলিয়ন ইউরো দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছি, যাতে আমরা সবাই একসঙ্গে এই ভাইরাসকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছি । এই পরিস্থিতির জেরে অর্থনৈতিক প্রভাব, যা সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুতর হয়ে দাঁড়াতে পারে, তার মোকাবিলাতেও আমরা সচেষ্ট । আমরা এর মধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি । বাজার একটাই, আমরা নতুন বাজেটের মাধ্যমে নতুন বিধিলাগু এবং নমনীয়তা, স্থায়িত্ব ও বৃদ্ধি আনতে চাইছি । সব কিছুরই লক্ষ্য এই ভাইরাসকে প্রতিহত করা । এই পরিস্থিতিতে যেটা করার সেটা করতেই হবে । আমরা নতুন এবং সৃজনশীল সমাধান নিয়ে তৈরি আছি ।

প্রশ্ন : সার্ক সম্মেলন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মতো জি-20-র অনলাইন লিঙ্কের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি । বহুপাক্ষিকতার মাধ্যমেই কি বিশ্বজুড়ে রোগমুক্তির পথ মিলতে পারে?

উত্তর : এটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদির সময়োপযোগী উদ্যোগের প্রশংসা করি । এখন আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির গুরুত্ব সবথেকে বেশি উপলব্ধি করছি। আরও ভালোভাবে সহযোগিতা করতে আমরা সমস্ত পদ্ধতির আশ্রয় নেব, এবং এই আতঙ্কের মোকাবিলায় সংযুক্ত পদক্ষেপ খুঁজবো ।

প্রশ্ন : এতগুলি দেশে যেখানে লকডাউন, সেখানে জি 7, জি 20-তে যে প্রস্তাবগুলি দেওয়া হবে, তা কি দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব?

উত্তর : সমস্ত দেশ এই পরিস্থিতিকে অত্যান্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে, আর সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো যে পদ্ধতি সামনে আসছে, তা গ্রহণ করতে আমরা তৈরি । এখন বহুপাক্ষিক স্তরে মতামতের তুলনা করা জরুরি, যাতে আমরা অনান্য দেশের অভিজ্ঞতা এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও শিখতে পারি ।

প্রশ্ন : কোরোনা ভাইরাস রুখতে হাই লেভেল টেস্টিং এবং সঠিক রিপোর্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে কতটা প্রয়োজনীয়?

উত্তর : আমরা একটা খোলা ও স্বচ্ছ্ব সমাজ তৈরি করার চেষ্টা করেছি । সংকট মোকাবিলায় আমাদের পদক্ষেপ থেকেই এটা স্পষ্ট । আলাদাভাবে সদস্য দেশগুলি এই পরিস্থিতির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সামনে রাখছে, আর ইউরোপিয়ান কমিশনও একই কাজ করছে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে । যদি আপনি সংকট কমাতে চান, তাহলে আপনি সংখ্যা ও তথ্যের বিপুল ভাণ্ডার পেতে পারেন ।

প্রশ্ন : প্যানডেমিকের জেরে দিল্লির ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসের দৈনন্দিন কাজকর্ম কীভাবে বদলেছে? কী ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন আপনারা?

উত্তর : আমরা ভারত সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে চলার চেষ্টা করছি । সামাজিক দূরত্ব, হাত পরিস্কার করা, যাতায়াত এড়ানোর মতো বিষয়কে আমরা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি । আমরা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক যাতায়াত সীমাবদ্ধ করেছি, বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছি । কখনও কখনও আমাদের কোনও প্রতিনিধিদলকে বা আপনাদের নাগরিকদের সহায়তা করতে আমাদের যাতায়াতের বন্দোবস্ত করতে হয় । বহু ইউরোপীয়কে ঘরে ফিরতে হবে, ঠিক যেভাবে বহু ভারতীয়কে ইউরোপ থেকে ফিরতে হবে । আমরা বেশ বড়সড় সংখ্যায় ইউরোপীয় নাগরিকদের কথা বলছি ।

প্রশ্ন - এই মহামারীকে কেন্দ্র করে চিনা নাগরিক বা উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দা এবং অনান্য বিদেশিদের বর্ণবিদ্বেষমূলক হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে । আপনার কী প্রতিক্রিয়া?

উত্তর : এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে । এই ভাইরাস কোনও দেশের সীমানা দেখে না । আমরা সবাই এই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি । সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যের প্রয়োজন আগের থেকে অনেক বেশি । আমাদের একসঙ্গে কাজ করে মানবিক সহমর্মিতা বজায় রাখতেই হবে । তাই তো মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বলা হচ্ছে, দেশের সীমান্তের কথা নয় ।

Last Updated : Mar 31, 2020, 11:05 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.