দিল্লি, 17 এপ্রিল: প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা । পরিবারের থেকে নিজেদের দূরে রেখে এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে, রোগীদের খেয়াল রেখে চলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা । স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্ষা করতে এই বার এগিয়ে এলেন শহরেরই তিন যুবক । তাঁরা নিয়ে এলেন এক অভিনব ভাবনা ৷ আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পরিষেবা দিতে রোবট ব্যবহারের প্রস্তাব দিলেন তাঁরা । রাজ্য সরকারে কাছে ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত প্রস্তাবও দিয়েছেন তাঁরা । বার্ষিক প্রজেক্টের অঙ্গ হিসাবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই ছাত্ররা এক ‘ওয়াকিং রোবট’ তৈরি করেছেন । উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে এই রোবটদের চলতি পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম করে তুলে রাজ্যের মন্ত্রীর কাছে পরিবেশন করেছেন তাঁরা । বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রীও রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সচিব জয়েশ রঞ্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন ছাত্রদের এই প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে । এই পরিস্থিতিতে ওই তিন ছাত্র আশফাক, আবদুল বারি ও সলমন ‘ইনাডু’র সঙ্গে তাঁদের ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন ।
ভাবনার ভিত্তিঃ
কোরোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে গিয়ে বহু চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, এই বিষয়টি জানতে পেরেই ভাবনাটি তাঁদের মাথায় আসে । তাঁদের বার্ষিক প্রজেক্টের অঙ্গ হিসাবে তৈরি করা এই রোবটগুলির প্রযুক্তি আরও উন্নত করে চিকিৎসায় ব্যবহারের ভাবনাটিও আসে সেখান থেকেই । দেশের একাধিক মেট্রো সিটির বহু রেস্তরাঁয় রোবটের ব্যবহার হচ্ছে বহু দিন ধরে । এই বিষয়ে জানতে পেরে তিন বন্ধুর মাথায় আসে তাঁদের রোবটগুলিকে উন্নত করার ভাবনা । শহরেরই এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে গত বছরই স্নাতক হয়েছেন এই তিন যুবক । সেই সময় তাঁদের প্রজেক্টের অঙ্গ হিসাবে এই ‘ওয়াকিং রোবট’ তৈরির বিষয়টি তাঁদের মাথায় আসে । শহরের রেস্তরাঁয় ব্যবহৃত রোবটগুলি বিদেশ থেকে আমদানি করার জন্য দাম অনেকটাই বেশি । এই খরচ কমাতে ছাত্ররা এক অনন্য পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়েছেন । ছয় ইঞ্চির থার্মাকল ব্যবহার করে তাঁরা তৈরি করে ফেলেন এক নকশা । সরকারের থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলে সরকারের সাহায্যে আগামী আট দিনের মধ্যে তাঁরা অত্যন্ত কম খরচে এই রোবট তৈরির পরিকল্পনা করেছেন ।
এই রোবটের বিশেষত্ব কী?
কোরোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলে যে সব ওয়ার্ডে, সেখানে মানবহীন পরিষেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম এই রোবট । রোবটের সঙ্গে থাকা একটি ট্রে-তে রাখা থাকে ওষুধ, খাবার ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র । কিছু সময় অন্তর এই ওয়ার্ড জীবাণুমুক্ত করার কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই রোবটদের ।
এই রোবটগুলিকে চালনা করার জন্য প্রয়োজন ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ । স্রেফ মোবাইল দিয়েই এদের পরিচালনা করা সম্ভব । ওয়ার্ডে এক নাগাড়ে ঘুরে রোগীদের উপর নজর রাখতে পারে এই রোবট । এদের সঙ্গে লাগানো নজরদারি ক্যামেরার সাহায্যে চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীরা নিজেদের ঘরে বসেই রোগীদের উপর নজর রাখতে পারবেন । আবার আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা যে সব রোগী একাকীত্বে ভুগছেন, তাঁরা ইচ্ছা করলে এই রোবটদের সঙ্গে কথা বলতে, গান শুনতে বা খবর শুনতে পারবেন । আর এই সবই করা সম্ভব রোবটের সঙ্গে থাকা স্পিকারের সাহায্যে যা রোবটের নতুন নকশায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ওসমানিয়া হাসপাতালকে জীবাণুমুক্ত করাঃ
কোরোনা মোকাবিলায় ওসমানিয়া হাসপাতালে একটি জীবাণুমুক্তকরণ কক্ষ তৈরি করা হচ্ছে । স্বাস্থ্যকর্মীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ওসমানিয়া টিচিং হাসপাতালে সোমবার থেকে এই কক্ষ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে । চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, রোগীর আত্মীয় এবং অন্য কর্মীদের জন্য এই কক্ষ তৈরি করতে ব্যস্ত রয়েছেন চিকিৎসকরা ।