ভাগলপুর, 3 অগস্ট: ঘটনাটি ঘটেছিল 1986 সালের 10 জুন রাতে ৷ তোলাবাজির অভিযোগে মামলা হয় পাঁচ পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে ৷ 37 বছর পর সেই মামলার নিষ্পত্তি হল ৷ প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পেলেন অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশকর্মী ৷
বেগুসরাই জেলায় প্রচুর পুলিশ পোস্ট । অফিসার-সহ পাঁচজন করে পুলিশকর্মী সেখানে যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন । এরই মধ্যে, কোনও একজন পুলিশ সুপারকে জানান যে, প্রত্যেক গাড়ির চালকের থেকে তোলা তুলছেন পুলিশকর্মীরা ৷ খবর পেয়ে এসপি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, গাড়ির চালকদের থেকে বেআইনি ভাবে তোলা তুলছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা ৷ তাঁরা চালকের থেকে দুই টাকা করে ঘুষ নিচ্ছেন ৷ তাঁদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন এসপি ।
37 বছর পর মুক্তি পেলেন পুলিশকর্মীরা: এর পর সেখানকার সব পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে মুফাসসিল থানায় মামলা হয় । বিষয়টি নিম্ন আদালত পর্যন্ত পৌঁছয় । এরপর একাধিকবার মামলার শুনানি হয়েছে ৷ অবশেষে 37 বছর পর পাঁচ পুলিশকর্মীকে বেকসুর খালাস করা হল । আদালত যে পুলিশকর্মীদের মুক্তি দিয়েছে তাঁরা হলেন, রামরতন শর্মা, কৈলাশ শর্মা, জ্ঞানী শঙ্কর, যুগেশ্বর মাহত এবং রাম বলক রাই ।
ভিজিল্যান্স কোর্টে মামলা চলছিল: ভাগলপুরের ভিজিল্যান্স কোর্টের বিশেষ জজের এডিজে 5-এর আদালত সবাইকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে । সরকার পক্ষের আইনজীবী আদালতে এমন কোনও প্রমাণ পেশ করতে পারেননি, যাতে অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণিত হয় । এই অবস্থায় প্রমাণের অভাবে আদালত সবাইকে বেকসুর খালাস করে দেয় ।
পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির মামলা: বেগুসরাইয়ের তৎকালীন সিটি সার্কেল ইন্সপেক্টর সরযূ বৈঠা তোলাবাজির বিষয়ে তাঁর বক্তব্যের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন । বৈঠা তাঁর বিবৃতিতে বলেছিলেন যে, তিনি যখন লাখো পেট্রল পাম্পের কাছে পৌঁছন, তখন তৎকালীন বেগুসরাইয়ের এসপি অরবিন্দ ভার্মা বলেন যে, লাখো পোস্টে নিযুক্ত অফিসার ও পুলিশকর্মীরা যানবাহন থেকে তোলা তুলছেন । এসপি ওই পোস্টে গিয়ে তদন্ত করতে বলেন ।
আরও পড়ুন: পুলিশ কমিশনারের নাম করে তোলাবাজি বিধাননগরে
দুই টাকা তোলা নেওয়ার অভিযোগ: এর পরই বেগুসরাইয়ের তৎকালীন এসপি অরবিন্দ ভার্মা পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ট্রাক থামিয়ে তাতে উঠে পড়েন । একটি দুই টাকার নোটে সই করে খালাসিকে দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ পোস্টে তাঁর থেকে তোলা চাওয়া হলে সেই টাকাটিই যেন দেওয়া হয় ৷ ট্রাকটি পোস্টে পৌঁছলে সেখানে থাকা পুলিশকর্মী গেট খুলে দেন । এর পরে খালাসি ট্রাক থেকে নেমে সেখানে উপস্থিত পুলিশকর্মীর হাতে দুই টাকার নোট তুলে দেন । পুলিশকর্মী নোটটা পকেটে রাখেন । ফিরে এসে খালাসি পুরো বিষয়টি এসপিকে জানান ।
এসপি টাকায় সই করেছিলেন: এর পরে বেগুসরাইয়ের তৎকালীন এসপি অরবিন্দ ভার্মা এবং ট্রাকে থাকা অন্যান্য অফিসাররা ট্রাক থেকে নেমে পোস্টে থাকা পুলিশকর্মীদের তল্লাশি করেন । একজনের পকেটে একটি দুই টাকার নোট পাওয়া যায়, যেটিতে তৎকালীন বেগুসরাই এসপি অরবিন্দ ভার্মার স্বাক্ষর ছিল । এছাড়াও আরও কিছু নোট বেরিয়ে আসে ৷
ভাগলপুর আদালতে মামলা চলছিল: 1832 সালে মুঙ্গের জেলা ভাগলপুর থেকে আলাদা হয় । এরপর অনেক দিন ভাগলপুর মুঙ্গের জেলার কমিশনারেটের আওতায় ছিল । পরে মুঙ্গেরকে ভাগলপুর থেকে আলাদা করে একটি স্বাধীন কমিশনারেট করা হয় । বেগুসরাইকেও মুঙ্গের থেকে বের করে 1972 সালের 2 অক্টোবর একটি জেলা করা হয় । এই কারণে ভাগলপুর আদালতে এই মামলাটি এতদিন ধরে চলছিল ।