রৎলাম (মধ্য়প্রদেশ) , 25 জুন: বিয়ে যেন এখানে শুধুই পুতুল খেলা...। মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে নামকরণের আগেই এই গ্রামের মেয়েদের বিয়ে ঠিক হয়ে যায় ৷ মেয়েদের সম্মত্তি না থাকলেও তা নিয়ে কেউ বিশেষ ভাবিত হয় না। জন্মের পরই নিজের নামের পাশে বসে যায় অন্য একজনের নাম ৷ যার জন্যে সে বড় হয়ে ওঠে ৷ আর 16 বছর হলেই বিয়ে করে চলে যেতে হয় সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে ৷
উনবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে মেয়েরা নিজের মর্জির মালিক ৷ চাকরি থেকে বিয়ে সবই হচ্ছে তাদের ইচ্ছানুসারে ৷ কিন্তু আমাদের এই দেশেই এমন কয়েকটি গ্রাম আছে যেখানে আজও মেয়েদের জন্মের আগেই তাদের বিয়ে ঠিক হয়ে যায় ৷ এই গ্রামগুলি মধ্যপ্রদেশের রৎলামের কাছে অবস্থিত ৷ গ্রামের বিলাসবহুল বাড়িগুলি দেখে অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই । মধ্যপ্রদেশের অন্য গ্রামের তুলনায় এখানে অনেক কিছুই আলাদা ।
আরও পড়ুন: গায়েহলুদ হলেও হল না সাতপাকে ঘোরা! ছাদনাতলায় এসে নাবালিকার বিয়ে রুখল প্রশাসন
এখানকার বেশিরভাগ মহিলাই যৌনকর্মী ৷ তাঁরা মেয়েদের জন্ম দেন ঠিকই কিন্তু নিজেদের সন্তানের উপরেই তাঁদের কোনও অধিকার থাকে না ৷ নিতে হয় না দায়িত্বও। মেয়ের সম্পূর্ণ 'অধিকার' অন্য কারও ৷ বিয়ে যাঁর সঙ্গে ঠিক হয় সব দায়িত্ব তাঁরই ৷ একজন নারীর মা হওয়া থেকে শুরু করে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া পর্যন্ত সংবিধানে প্রদত্ত সকল অধিকার এবং জন্মসূত্রে নাগরিক হিসেবে কন্যাকে প্রদত্ত অধিকারের কোনওটাই এখানে মানা হয় না । এই সমাজের নিজস্ব আইন আছে। এখানকার বাসিন্দাদের জীবন চলে সেই আজগুবি নিয়ম মেনে ৷
রৎলামের শেষ প্রান্তে অবস্থিত মাননখেদা গ্রামে রয়েছে প্রায় 1800টি বাড়ি। সেখানে বাঞ্চড়া সমাজের মানুষের বাস । রাজ্যসড়ক সংলগ্ন সব বাড়িই তাদের । এখানকার এক বাসিন্দা বলেন, "আমাদের সমাজে সব মেয়ের বিয়ে আগেই ঠিক করে ফেলা হয় । আমরা শুধু চাই এই মেয়েরা বিয়ের পর যেন একসঙ্গে থাকে ।" কোন বয়সে বিয়ে ঠিক করা হয় ? এ বিষয়ে তিনি বলেন, "অনেক সময় গর্ভে থাকাকালীন বিয়ে ঠিক হয়ে যায় । আবার জন্মের পরও ঠিক হয় ৷ এখনও মেয়েরা পড়াশোনা করছে এবং স্কুলে যাচ্ছে কিন্তু সতেরো বছর হলেই বিয়ে হয়ে যাবে।"
আরও পড়ুন: বিয়ের আগেই যুবতীকে অপহরণ, কোলে তুলে জোর করে সাত পাক দুষ্কৃতীর; ভাইরাল ভিডিয়ো
মন্দসৌর জেলার গুর্জার ওয়ার্দিয়া গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করলে অনেকেই অবাক হয়ে যান। পুরো গ্রাম অবশ্যই বাঞ্চড়া জাতিভুক্ত নয় । তবে গুর্জার ওয়ার্দিয়াতে তাদের শিবির রয়েছে । এখানে ভাইদের জীবিকাও চলে এই বোনদের কারণে । বাঞ্চড়া সম্প্রদায়ের পরিবারের মেয়েরা দেহ ব্যবসায় নেমে যে আয় হয় করে তা দিয়ে জমি কেনা হয়। প্রতিটি বাড়িতে তিন থেকে পাঁচ একর জমি রয়েছে। সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় স্থানীয় অর্থনীতি।