ইম্ফল, 8 অক্টোবর: পাঁচ মাস ধরে চলা মণিপুরের সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার । সে রাজ্যে হিংসার ঘটনায় এখন পর্যন্ত 180 জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছে ৷ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় 70 হাজার জনেরও বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৷ পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে পেশাদার কোর্সের পড়ুয়াদের পড়াশোনায় আঘাত এনেছে। পড়ুয়ারা শিক্ষার জন্য মণিপুর ছেড়ে অন্য রাজ্যমুখী হচ্ছে ৷ কুকি-জো ছাত্ররা পড়াশোনা করতে মণিপুর ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছে দক্ষিণ রাজ্যে ৷ সোশাল মিডিয়ার প্রায়ই সেই ছবি ভাইরাল হচ্ছে ।
তবে কিছু শিক্ষার্থী অবশ্য এই সংঘাতের মধ্যেও রয়ে গিয়েছে নিজ রাজ্যে। তাদের মধ্যে রয়েছে চিন-কুকি-জো-অধ্যুষিত চূড়াচাঁদপুর জেলা সদরে অবস্থিত সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজ্য দ্বারা পরিচালিত চূড়াচাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজের (সিএমসি) এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা ৷ এটিও সংঘর্ষের অন্যতম কেন্দ্র । মণিপুরে সংঘর্ষের কারণে কুকি-জো সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়া সমস্ত সিএমসি ছাত্র এবং কর্মচারীরা রাজ্য ছেড়ে ইম্ফলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল । ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (আন্ডারগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড) অনুমোদন নিয়ে রাজ্য সরকার এবং সিএমসি ম্যানেজমেন্ট তিনটি জায়গা থেকে নিয়মিত ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে তাদের ৷ সেগুলি হল, ইম্ফল পূর্ব জেলায় রাজ্য পরিচালিত জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (জেএনআইএমএস) কমপ্লেক্স, ইম্ফল পশ্চিমের টাকিয়েলপাটে স্টেট অ্যাকাডেমি অফ ট্রেনিং (স্যাট) এবং চূড়াচাঁদপুরে ।
আরও পড়ুন: মণিপুরে হিংসা জাতিগত নয়! মায়ানমার ও বাংলাদেশকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী
100 এমবিবিএস আসন-সহ সিএমসি গত বছরের 15 নভেম্বর তার প্রথম অ্যাকাডেমিক সেশন শুরু করেছিল । আরও 100 জন শিক্ষার্থী চলতি বছরের 1 সেপ্টেম্বর থেকে স্যাট কমপ্লেক্স ও টাকিয়েলপাটে তাদের ক্লাস শুরু করেছে । সিএমসি ডিরেক্টর অধ্যাপক এস. ইবয়াইমা সিং বলেন, "সংঘর্ষ শুরু হওয়ার প্রায় দুই মাস পর কলেজের প্রথম ব্যাচের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের 92 জন শিক্ষার্থী জেএনআইএমএস ক্যাম্পাসের মধ্যে বিডিএস কলেজে 19 জুলাই থেকে তাদের ক্লাস পুনরায় শুরু করেছে ৷ তবে ছ'জন চিন-কুকি-জো সম্প্রদায়ের একই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মীদের তত্বাবধানে চূড়াচাঁদপুরে মূল ক্যাম্পাস থেকে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে ।"
তিনি জানান, 92 জন সদ্য নির্বাচিত দ্বিতীয় ব্যাচের এমবিবিএস ছাত্রদের ক্লাস 1 সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্য সরকার প্রদত্ত একটি অস্থায়ী স্টাডি সেন্টার স্যাট টাকেল কমপ্লেক্সে শুরু হয়েছে ৷ একই ব্যাচের আটজন কুকি-জো ছাত্র সিএমসিতে রয়েছে ৷ এমবিবিএসের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষায় দেবে, যা মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে 9 অক্টোবর শুরু হতে চলেছে এবং পরের মাসে চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে । শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্যারিয়ার নষ্ট যাতে না হয় তাই এখন তিন জায়গা থেকে সুষ্ঠুভাবে ক্লাস চলছে ৷
আরও পড়ুন: সামাজিক মাধ্যমে অসঙ্গত মন্তব্য, অশান্ত মণিপুরে বরখাস্ত চিকিৎসক
প্রথম ব্যাচের ছাত্র উত্তরপ্রদেশের সাগর তাঁর দুর্দশার কথা তুলে ধরেন ৷ তিনি বলেন, "আমি জেএনআইএমএস কমপ্লেক্সের বাইরে ভাড়ায় থাকি । আমাকে প্রতি মাসে বিদ্যুতের বিল ছাড়াও ব5 হাজার টাকা গুমতে হচ্ছে । ভাড়ায় এখানে থাকা আমার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়ছে ৷ তাই আমি সরকারকে আমাদের জন্য একটি হোস্টেলের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি ।”
জেএনআইএমএস হোস্টেলে থাকা প্রথম ব্যাচের ছাত্রী রাজস্থানের পুনম গোথওয়াল বলেন, "সংকটের সময় আমার বাবা-মা, পরিবারের সদস্যরা আমাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন । 3 মে এবং তার পরদিন চূড়াচাঁদপুরে আমরা কাঁদানে গ্যাসের শেল ও বন্দুকের গুলির শব্দ শুনতে পাই। আমাদের হোস্টেলের কাছেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে । ভগবানের কৃপায় আমরা রক্ষা পেয়েছি । আমরা আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি । মণিপুরে চিরস্থায়ী শান্তি বজায় থাকুক ৷" উখরুল জেলার দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র খায়িংগাম ভারু বলেন, "কারফিউ এবং বন্ধের সময় আমরা কলেজে যেতে পারি না। এটা আমাদের অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারের একটা বড় ক্ষতি ৷"