এলাহাবাদ, 18 ফেব্রুয়ারি : পকসো অর্থাৎ প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স (Protection of Children from Sexual Offences) এই আইনটি কিশোর বা টিনএজারদের প্রেমের সম্পর্কে প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি ৷ দু’বছর আগে একটি 14 বছরের বালিকার সঙ্গে প্রণয় এবং বিয়ে করার মামলায় এমনটাই পর্যবেক্ষণ এলাহাবাদ হাইকোর্টের ৷ এই মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রাহুল চর্তুবেদীর সিঙ্গল বেঞ্চ অভিযুক্ত অতুল মিশ্রের জামিন মঞ্জুর করেছেন ৷
প্রসঙ্গত, বছর দু’য়েক আগে 14 বছরের এক নাবালিকার সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেন অতুল মিশ্র নামে এক তরুণ ৷ জানা গিয়েছে সেই সময় তিনিও নাবালক ছিলেন ৷ দু’বছর তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন ৷ বর্তমানে তাঁদের এক সন্তান রয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে প্রায় গত ছ’মাস আগে মেয়েটির পরিবার তাঁদের খোঁজ পায় এবং পুলিশের দ্বারস্থ হয় ৷ পুলিশ অতুল মিশ্রের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু করে ৷ সেই মামলায় অতুল এলাহাবাদ হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন ৷
সেই আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি রাহুল চতুর্বেদী পকসো আইন লাগু করা নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দেন ৷ সেই পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘‘কিশোর এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা পকসো আইনের শিকার হওয়ার ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে (Adolescents and young adults often fall victim to POCSO Act) ৷ আর আইনের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথা না ভেবে আইনের শাস্তিমূলক বিধান শুনিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ এটা এমন একটা সমস্যা, যা এই আদালতকে চিন্তায় ফেলেছে ৷’’
বিচারপতি আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও জানান, ‘‘পকসো আইনের বিষয়বস্তু এবং তার কারণ সংক্রান্ত বিবৃতি পড়লে দেখা যায়, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, 1950’র ভারতীয় সংবিধানের ধারা 15 অনুযায়ী, যৌন নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন এবং হয়রানি, পর্নগ্রাফির মতো অপরাধ থেকে বাচ্চাদের সুরক্ষিত করা এবং বাচ্চাদের অধিকার সংরক্ষণ করা ৷ তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিশোর এবং বালক-বালিকা, যাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে রয়েছে ৷ তাদের পরিবারে অভিযোগের ভিত্তিতে এই আইনে মামলা রুজু করা হয় ৷ আইনের পরিকল্পনায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, কখনই সীমিত ক্ষেত্রে বলবৎ করার উদ্দেশ্যে এটিকে আনা হয়নি ৷ যেখানে দুই কিশোর-কিশোর বা বালক-বালিকা প্রেমের সম্পর্কে রয়েছে ৷’’
আরও পড়ুন : Alapan Bandopadhyay : আলাপনের স্থানান্তর মামলা থেকে সরলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি, শুনানি 25 ফেব্রুয়ারি
ওই মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট অভিযুক্ত তরুণের জামিন মঞ্জুর করেছে ৷ তবে, আদালত তার রায়ে জানিয়েছে, ‘‘আইনের চোখে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটির মতামতের যে কোনও মূল্য নেই, তা সন্দেহের অতীত ৷ কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে মেয়েটি আবেদনকারীর সন্তানের জন্ম দিয়েছে এবং আদালতে তাঁর দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে যেতে অস্বীকার করেছে ৷ আর গত 4-5 মাস তাঁর সদ্যজাত সন্তানকে নিয়ে যে অমানবিক পরিস্থিতিতে সে প্রয়াগরাজের রাজকীয় বালগৃহে থেকেছে, তা খুবই কুরুণ এবং তার দুর্দশা বাড়িয়েছে ৷’’
পাশাপাশি ওই সরকারি হোমকে কিশোরীকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ৷ পাশাপাশি একটি সদ্যজাতকে তাঁর বাবা-মায়ের স্নেহ এবং ভালবাসা থেকে দূর করা হয়েছে, তা খুবই অমানবিক বলে উল্লেখ করেছে আদালত ৷