মুম্বই, 2 জুলাই: রবির বারবেলায় মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহানাটকে বিরোধীদের বেশ কয়েক গোল দিয়ে এগিয়ে গেল বিজেপি ? আচমকা অজিত পাওয়ারের 'বিদ্রোহ', এবং শরদ পাওয়ারদের ন্যূনতম ভাবনাচিন্তার সুযোগ না-দিয়ে যেভাবে তিনি প্রায় দু'ডজনের বেশি বিধায়ককে নিয়ে সরাসরি রাজভবনে পৌঁছে গেলেন, তাতে ওয়াকিবহলমহল অবশ্য বলছেন নাটকের এই তো সবে শুরু ৷ যার যবনিকাপাত সম্ভবত হতে চলেছে 2024-এর ভোটের ফলের পর ৷ তাৎপর্যপূর্ণভাবে যার ইঙ্গিত এদিনই দিয়েছেন খোদ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ৷ বিরোধীদের রীতিমতো তাচ্ছিল্যের সুরে কটাক্ষ করে তাঁর সাফ জবাব আগামী লোকসভা ভোটে পাঁচটি আসনের শিকেও ছিঁড়বে না এনসিপি'র কপালে ৷
অজিত পাওয়ারের দলত্যাগ মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন কোনও বিষয় নয় ৷ কারণ এই প্রথম নয়, এর আগেও অজিত বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন ৷ মিলেছিল উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদও ৷ তবে সেবারও অবশ্য বেশিদিন সেই সংসার টেকেনি ৷ দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সরকার থেকে হাত তুলে নিয়েছিলেন তিনি ৷ তাই এবারও অজিতের গৃহত্যাগে বিরোধীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ত না, যদি না সময়ের হিসাব তারা না কষতেন ৷ রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, অজিতের দলত্যাগের ফলে দুটি বিষয় এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে প্রবলভাবে ঘুরপাক খাবে ৷ প্রথমত, অজিত পাওয়ারের এনসিপি ত্যাগের সময় ৷ এক্ষেত্রে ওয়াকিবহল মহলের দাবি, যখন অজিত দল ছাড়ছেন, সেসময় বিজেপি বিরোধী সর্বভারতীয় জোটের প্রথম বৈঠক সাঙ্গ ৷ দ্বিতীয় বৈঠকে কার্যত পৌরহিত্যের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে শরদ পাওয়ারকে ৷ আর তার আগে যে ঝটকা অজিত পাওয়ার দিলেন কার্যত গোপনে তার জেরে সম্ভবত শরদ পাওয়ার যে চরম অপ্রস্তুতে পড়বেন বেঙ্গালুরুর আগামী বৈঠকে তাতে সন্দেহ নেই ৷
দ্বিতীয়ত, রাজ্যে বর্তমানে এনসিপির বিধায়কের সংখ্য়া ছিল 54 জন ৷ যার মধ্যে 40 জন বিধায়কই অজিত পাওয়ারের সঙ্গে দল ছেড়ে এনডিএ সরকারের অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন ৷ যার মধ্যে রয়েছেন ছগন ভুজবালের মতো নেতাও ৷ আর প্রশ্ন সেখানেই, তবে কী মহারাষ্ট্রে নিজের রাজ্যে এমনকী নিজের দলেই শরদ পাওয়ারের ভূমিকা খর্ব হতে শুরু করেছে ? আর যদি তা হয়, তবে সর্বভারতীয় জোটের ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা কতটা থাকবে ? একই সঙ্গে, যে ফল্গুধারার মতো বয়ে অজিত কার্যত গোটা এনসিপির পরিষদীয় দলকেই তুলে নিয়ে চলে গেলেন, তাও শরদ পাওয়ারের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর ৷ বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ শরদ ঘুণাক্ষরেও এত বড় অঘটনের আন্দাজ না পাওয়ার অর্থ রাজনীতিতে অন্তত নতুন অর্থ বহন করতে পারে ৷ তবে সেইসব প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য এই মুহূর্তে এনসিপির তরফে আসেনি ৷ মন্তব্য করতে চাননি কোনও বিরোধী দলের নেতৃত্বও ৷ তবে এর ফলে যে বিজেপি এবং এনডিএ গ্রুপের সদস্যরা উজ্জিবীত তা অবশ্য স্পষ্টতই তাঁরা স্বীকার করছেন ৷ এদিন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেন, "এখন আমাদের এক জন মুখ্যমন্ত্রী এবং দুই জন উপ-মুখ্যমন্ত্রী আছেন। ডবল ইঞ্জিন সরকার এখন ট্রিপল ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছে। মহারাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য আমি অজিত পাওয়ার এবং তাঁর নেতাদের স্বাগত জানাই। অজিত পাওয়ারের অভিজ্ঞতা মহারাষ্ট্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।"
আরও পড়ুন: ভাইপো'র হাতেই ভাঙল শরদের দল, 30 বিধায়ক নিয়ে বিজেপিতে অজিত; নিলেন শপথ
অন্যদিকে, বিজেপি এবং বিজেপি বিরোধী সবকটি রাজনৈতিক দলেরই পাখির চোখ আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচন ৷ সেদিক থেকেও বিজেপি যে এ রাজ্যের পাশাপাশি বিরোধীদের বেশ কিছুটা টেক্কা দিতে পারল তা একরকম হলফ করে বলা যায় ৷ রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, লোকসভা ভোটে এবার অনেক পুরনো জোটসঙ্গীই নেই বিজেপির সঙ্গে ৷ যারা আছেন, তাদেরও অবস্থা তথৈবচ ৷ এই মুহূর্তে একদিকে যেমন নয়া জোট সঙ্গীর সঙ্গলাভ বিজেপির পক্ষে একান্ত আবশ্যক, তেমনই বিরোধীদের মনোবল এবং ঐক্যে ফাটল ধরানোও একান্ত জরুরি ৷ আর সেই কাজটাই যে বিজেপি অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে করছে তা নিয়ে কোনও সংশয় প্রকাশ করছে না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ৷ এদিন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেন, "মন্ত্রিসভায় আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনার জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে। আমরা মহারাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে হয়েছি। তারা (বিরোধীরা) লোকসভা নির্বাচনে 4-5টি আসন গতবার পেয়েছিল, এবার তারা সেই সংখ্যক আসনও পাবে না ৷"