বেঙ্গালুরু, 11 মে : দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ৷ প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন ৷ গড়ে 3,800 থেকে 4000 মানুষ মারা যাচ্ছেন প্রতিদিন ৷ কিন্তু এর থেকেও ভয়ঙ্কর যে তথ্য উঠে আসছে, তা হল কোনওরকম উপসর্গ নেই এমন করোনা রোগীরাও মারা যাচ্ছেন ৷ চলতি মাসে এমন কয়েকশো মৃত্য হয়েছে কর্নাটকে ৷
4 মে থেকে শুরু করে 8 মে ৷ এই পাঁচদিনের মধ্যে কর্নাটকে 2140 জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৷ তাঁদের মধ্যে 790 জনের শরীরে করোনার কোনও উপসর্গই ছিল না ৷ প্রায় 37 শতাংশ এই ধরনের উপসর্গহীন করোনা রোগী কর্নাটকে মারা গিয়েছেন পাঁচদিনের মধ্যে ৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই মিউট্যান্ট ভাইরাস অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ৷ ছড়াচ্ছেও খুব দ্রুত ৷ করোনার এই মিউট্যান্ট ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে দানা বাঁধে ৷ এমনকি অনেকসময় আরটিপিসিআর পরীক্ষাতেও এটি ধরা পড়ে না ৷ সেইসব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সিটি স্ক্যানের মাধ্যমেই সংক্রমণ ধরা পড়ে ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যতক্ষণে সিটি স্ক্যান হয়ে সংক্রমণ ধরা পড়ছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে ৷
এই ধরনের উপসর্গহীন সংক্রমণ আরও বেশি ভয়ঙ্কর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ কারণ, যিনি সংক্রমিত হচ্ছেন, তিনি জানেনও না যে তাঁর শরীরে করোনা বাসা বেঁধেছে ৷ নিজের অজান্তেই বাকিদেরও সংক্রমিত করে ফেলছেন তিনি ৷ আরটিপিসিআর পরীক্ষাতেও এই ধরনের ক্ষেত্রে রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে ৷ ফলে চিকিৎসকের থেকে কোনওরকম পরামর্শও নিচ্ছেন না সেই ব্যক্তি ৷ আর কিছুদিনের মধ্যেই করোনা তাঁর ফুসফুসে এমনভাবে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে, যে তাঁর মৃত্যু হচ্ছে ৷ কর্নাটকে 5 দিনের মধ্যে 790 জন উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু সেই আতঙ্কটাকেই আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে ৷
আরও পড়ুন : লকডাউন-কার্ফুতে ঘরবন্দি মানুষ, করোনাকে হারাতে মরিয়া দেশ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গহীনরা শুরুর দিকে বুঝতেই পারছেন না যে তাঁরা করোনায় আক্রান্ত ৷ পরে যখন বুঝতে পারছেন, তখন ফুসফুসে সংক্রমণ এতটাই বেড়ে যাচ্ছে যে সোজা আইসিইউতে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করতে হচ্ছে ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এতটা দেরি হয়ে যাচ্ছে, যে রোগীদের আর বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না ৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপসর্গ যতই তুচ্ছ হোক না কেন, কোনওভাবেই অবহেলা করা চলবে না ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট ছোট উপসর্গগুলিকে মানুষ এড়িয়ে যাচ্ছেন ৷ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলছেন না ৷ এই ধরনের অবহেলা প্রাণঘাতী হতে পারে ৷
প্রশ্ন উঠছে যখন কোনও উপসর্গই দেখা যাচ্ছে না, পরীক্ষা করালেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে, তখন এই ধরনের রোগীরা কী করবেন ? কখন তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন ?
- নিজেকে সতর্ক থাকতে হবে ৷ যখনই মনে করবেন, আপনি কোনও করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন, সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করান ৷
- নিঃশ্বাস নিতে কোনওরকম সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ৷
- নিয়মিতভাবে শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করুন ৷ অক্সিজেনের মাত্রা 94-এর নিচে নেমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ৷
- নিয়মিত সময় অন্তর ফুসফুসের পরীক্ষা করান ৷
- যাঁরা ধুমপান করেন, তাঁদের আরও বেশি করে সতর্ক থাকা দরকার ৷
- একেবারে ছোট ছোট উপসর্গগুলিও যদি অনুভব করেন সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ৷
আরও পড়ুন : গঙ্গায় ভাসছে মৃতদেহ...আর আপনার চোখে গোলাপি চশমা, মোদিকে আক্রমণ রাহুলের
অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেও আবার করোনা পরীক্ষা করার জন্য বলেন ৷ অথবা ফুসফুসের পরীক্ষা করার জন্য বলেন ৷ কারণ, করোনার এই মিউট্যান্ট ভাইরাস ফুসফুসকে বিকল করে দিচ্ছে ৷ কর্নাটকে 5 দিনে 790 জন উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু এই কঠিন পরিস্থিতিটাকে আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে ৷ শুধু কর্নাটকই নয়, দিল্লি, মহারাষ্ট্র থেকেও একই ধরনের খবর আসছে, যেখানে মৃতদের শরীরে কোনওরকম উপসর্গ ছিল না ৷ ৷
সতর্ক থাকুন ৷ এটাই এখন সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ ৷