ETV Bharat / bharat

Independence Special: ঔপনিবেশিক শক্তির ত্রাস ছিলেন কর্নাটকের বীরাঙ্গনা রানিরা

ঔপনিবেশিক শক্তিকে প্রতিরোধ করে ইতিহাসের পাতায় আজও অমর হয়ে রয়েছেন কর্নাটকের কিত্তুর ও উল্লালের দুই রানি ৷ গোটা দেশকে উদ্বুদ্ধ করেছিল চেন্নাম্মা (Kittur Rani Chennamma) ও আব্বাক্কার (Abbakka Mahadevi) লড়াই ৷

75-years-of-independence-karnatakas-valiant-queen Kittur Rani Chennamma and Abbakka Mahadevi-who-terrorized-colonial-powers
ঔপনিবেশিক শক্তির ত্রাস ছিলেন কর্নাটকের বীরাঙ্গনা রানিরা
author img

By

Published : Nov 13, 2021, 6:06 AM IST

হায়দরাবাদ, 13 নভেম্বর : শুধু পুরুষেরাই নন, ঔপনিবেশিক শক্তিকে প্রতিহত করতে তীব্র প্রতিরোধ চালিয়েছেন এ দেশের মহিলারাও ৷ তাঁরাও ভারতের মাটিতে ইউরোপীয় শক্তির ঘাঁটি গেঁড়ে বসার রাজনৈতিক স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন ৷ স্বাধীনতার 75 বছর উদযাপনে (75 Years of Independence) দু'জন বীরাঙ্গনা রানিকে স্মরণ করা যাক, যাঁরা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ৷

উত্তর কর্নাটকে কিত্তুর রানি চেন্নাম্মা (Kittur Rani Chennamma) বহু মানুষের অনুপ্রেরণা ৷ প্রতি বছর 23 অক্টোবর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে চেন্নাম্মার প্রথম জয়কে পালন করেন বেলাগাভী ও তাঁর সংলগ্ন এলাকার মানুষেরা ৷ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ধারওয়াড়ের কালেক্টর জন ঠাকরে চেন্নাম্মাকে গুরুত্ব না-দিয়ে তাঁর কিত্তুর কেল্লার সম্পদ লুঠ করার চেষ্টা চালিয়েছিল ৷ রানির লেফটেন্যান্ট আমাতুর বালাপ্পার হাতে মৃত্যু হয় অনেক জনের ৷ চেন্নাম্মার জেনারেল সঙ্গোল্লি রায়ান্না ও বালাপ্পার হাতে চূর্ণ হয় কোম্পানির সেনা ৷

1778 সালে বেলাগাভী জেলার কাকাতিতে জন্ম হয় কিত্তুর রানি চেন্নাম্মার ৷ 15 বছর বয়সে কিত্তুরের রাজা মল্লাসার্যর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ৷ তির-ধনুক চালানো, তলোয়ারের লড়াই, ঘোড়া চালানোয় সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি ৷ 1816 সালে রাজা মল্লাসার্যের মৃত্যু হয় এবং তাঁর ও তাঁর বড়রানি রুদ্রাম্মার ছেলে সিংহাসনে উপনীত হন ৷ তবে কোনও বংশধর দেওয়ার আগেই 1824 সালে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ রাজ্য শাসনের দায়িত্ব এসে পড়ে চেন্নাম্মার উপর ৷

বংশধর না-থাকার সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিত্তুরের উপর ডকট্রিন অফ ল্যাপস আনলে 1824 সালে চেন্নাম্মা বংশধর হিসেবে দত্তক নেন শিবলিঙ্গাপ্পাকে ৷ তবে তাঁকে বংশধর হিসেবে মেনে নেননি রাজনৈতিক এজেন্ট জন ৷ তিনি চেন্নাম্মাকে তাঁর রাজ্যপাট ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য জোরজার শুরু করেন ৷ বম্বে প্রেসিডেন্সির কাছে নিজের আবেদন জানিয়েছিলেন চেন্নাম্মা ৷ তবে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয় ৷ এরপরই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি ৷

আরও পড়ুন: Independence Special : বালগঙ্গাধরের কলম ধার বাড়িয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধের

প্রথম আক্রমণে সাফল্য পেলেও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বন্দি হতে হয় রানি চেন্নাম্মাকে ৷ যদিও তাঁর সেনা বীর বিক্রমে লড়াই চালিয়েছিল ৷ কিত্তুর বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয় মাদ্রাজের গভর্নর জেনারেল থমাস মুনরোর ভাইপো তথা সাব-কালেক্টর মুনরোর ৷ চেন্নাম্মাকে বাইলহোঙ্গাল কেল্লায় বন্দি করে রাখা হয় ৷ 1829 সালে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ গেরিলা কৌশল নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জোর লড়াই চালান রানির জেনারেল সঙ্গোল্লি রায়ান্না ৷ যদিও তাঁকেও পরে বন্দি করা হয় ৷ রানির যে বছর মৃত্যু হয়েছিল, সেই বছরই রায়ান্নাকে ফাঁসি দেওয়া হয় ৷তবে আজও চেন্নাম্মার লড়াইকে বাঁচিয়ে রেখেছে কর্নাটক সরকার ৷ প্রতি বছর 22 থেকে 24 অক্টোবরের মধ্যে তাঁর জয়কে আজও উদযাপন করা হয় ৷

চেন্নাম্মা যেমন ছিলেন ব্রিটিশদের ত্রাস, তেমনই ভারতে প্রথম উপনিবেশ গড়ে তোলা পর্তুগিজদের কাছে দুঃস্বপ্ন ছিলেন উপকূলীয় কর্নাটকের এক মহিলা ৷ যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন, ততদিন তাঁর ভয়ে কাঁটা হয়ে ছিল পর্তুগিজরা ৷ আব্বাক্কা মহাদেবী (Abbakka Mahadevi)৷ তুলুনাড়ুর ম্যাঙ্গালোরের কাছে ছোট্ট রাজ্য উল্লালের শাসক ছিলেন তিনি ৷ মাতৃতান্ত্রিক উত্তরাধিকারের অনুসরণকারী চৌতাস বংশের ছিলেন আব্বাক্কা ৷ 1525 সালে উল্লালের রানি হন তিনি ৷

গোয়া দখল করার পর পর্তুগিজরা পশ্চিমি উপকূলের দিকে নজর দেয় এবং 1525 সালে তারা ম্যাঙ্গালোর দখল করে ৷ ম্যাঙ্গালোরের ঠিক পাশেই উল্লাল বন্দর আরবের সঙ্গে মশলার বাণিজ্যে খুবই উন্নত ছিল ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : অসহযোগ আন্দোলনের সন্ধিক্ষণে জন্ম, শতবর্ষ পরও বিপ্লবের প্রতীক জামিয়া মিলিয়া

এক মহিলা শাসিত ছোট রাজ্য দখল ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে কিছুই না, পর্তুগিজদের এই ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল ৷ দারুণ স্মার্ট মহিলা ছিলেন আব্বাক্কা ৷ তিনি দ্রুত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব স্থানীয় শাসকদের সঙ্গে ভুয়ো জোট তৈরি করে ফেলেন ৷ তাঁর সেনায় অন্তর্ভুক্ত হয় সব সম্প্রদায়ের মানুষ এবং তাঁর নৌসেনার অংশ ছিলেন স্থানীয় মোগাভীরা মৎস্যজীবী ও মুসলিম বিয়ারিসরা, যাঁরা জলপথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন ৷ শোনা যায়, অগ্নিবাণ প্রয়োগ করে পর্তুগিজ জলযানের প্রভূত ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন রানি আব্বাক্কা ৷

কালীকটের জামোরিনদের সঙ্গেও নকল জোট তৈরি করেছিলেন তিনি ৷ এর ফলে বহু বছর উপসাগরেই আটকে থাকতে হয় পর্তুগিজদের ৷ বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও পর্তুগিজদের প্রতি এতটুকু সমীহ দেখাননি আব্বাক্কা ৷ তাঁর কৌশলে বিরক্ত হয়ে 1555 সালে অ্যাডমিরাল ডোম আলভারো দা সিলভেইরার নেতৃত্বে নৌবাহিনী পাঠায় পর্তুগিজরা ৷ তবে নিজের কেল্লা ধরে রাখতে সক্ষম হন রানি ৷ 1557 সালে পর্তুগিজরা আবারও ম্যাঙ্গালোর আক্রমণ করে, তবে তার পরের এক দশকেও আব্বাক্কার উল্লালকে তারা নিজেদের দখলে নিতে পারেনি ৷

1568 সালে আবারও হামলা চালানো হয় এবং পর্তুগিজ জেনারেল জোয়াও পেইক্সোটোর নেতৃত্বে উল্লালে ঢুকে পড়ে তাদের বাহিনী ৷ তারা উল্লাল দখল করলেও রানি পালিয়ে যান ৷ কাছেরই একটি মসজিদে লুকিয়ে পড়েন তিনি এবং খুব দ্রুত তিনি সেখানেই বাহিনীকে একজোট করেন ৷ সেই রাতেই তিনি ফিরে আসেন এবং পর্তুগিজ জেনারেল পেইস্কোটোকে হত্যা করেন ৷ জীবন্ত অবস্থায় বন্দি করা হয় 70জন পর্তুগিজ সৈনিককে ৷ তাদের অ্যাডমিরাল মাসকারেনহাসেরও মৃত্যু হয় রানির হাতে ৷ পর্তুগিজদের তাড়া করে ম্যাঙ্গালোরছাড়া করেন রানি আব্বাক্কা ৷

ঔপনিবেশিক শক্তির ত্রাস ছিলেন কর্নাটকের বীরাঙ্গনা রানিরা

আরও পড়ুন : Independence Special : অবিভক্ত ভারতবর্ষের পুজো হয় কাশীর ভারত মাতা মন্দিরে

তার পরের বছরগুলিতে শক্তিবৃদ্ধি করে আশপাশের এলাকা দখল করলেও আব্বাক্কা ছিল পর্তুগিজদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথার কারণ ৷ যুদ্ধে তাঁকে পর্যুদস্ত করতে না-পেরে তাঁর পরিত্যক্ত স্বামীর সঙ্গে জোট বাঁধে পর্তুগিজরা ৷ 1570 সালে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে পরাজিত হন রানি ৷ তাঁকে বন্দি করা হলেও কারাগারে গিয়েও বিদ্রোহ চালিয়ে যান তিনি এবং লড়াই করতে করতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৷

উপকূলীয় কর্নাটকের কিংবদন্তি আব্বাক্কা ৷ সেখানকার জনপ্রিয় লোকশিল্প যক্ষগানার মাধ্যমে পরের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর অসীম সাহসের কাহিনি ৷ স্থানীয় প্রথাগত নৃত্যশৈলি দৈব কোলাতেও তাঁকে নিয়ে গান গাওয়া হয় ৷ তাঁকে সম্মান জানাতে হিন্দুস্থান শিপইয়ার্ডের তৈরি প্রথম ইনশোর পেট্রোল ভেসেলের নাম রানি আব্বাক্কা রেখেছে ভারতীয় নৌসেনা ৷ স্বাধীন ভারতের উপকূলে নজরদারি চালানো পাঁচটি জলযানের শ্রেণি হল রানি আব্বাক্কা ৷

হায়দরাবাদ, 13 নভেম্বর : শুধু পুরুষেরাই নন, ঔপনিবেশিক শক্তিকে প্রতিহত করতে তীব্র প্রতিরোধ চালিয়েছেন এ দেশের মহিলারাও ৷ তাঁরাও ভারতের মাটিতে ইউরোপীয় শক্তির ঘাঁটি গেঁড়ে বসার রাজনৈতিক স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন ৷ স্বাধীনতার 75 বছর উদযাপনে (75 Years of Independence) দু'জন বীরাঙ্গনা রানিকে স্মরণ করা যাক, যাঁরা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ৷

উত্তর কর্নাটকে কিত্তুর রানি চেন্নাম্মা (Kittur Rani Chennamma) বহু মানুষের অনুপ্রেরণা ৷ প্রতি বছর 23 অক্টোবর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে চেন্নাম্মার প্রথম জয়কে পালন করেন বেলাগাভী ও তাঁর সংলগ্ন এলাকার মানুষেরা ৷ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ধারওয়াড়ের কালেক্টর জন ঠাকরে চেন্নাম্মাকে গুরুত্ব না-দিয়ে তাঁর কিত্তুর কেল্লার সম্পদ লুঠ করার চেষ্টা চালিয়েছিল ৷ রানির লেফটেন্যান্ট আমাতুর বালাপ্পার হাতে মৃত্যু হয় অনেক জনের ৷ চেন্নাম্মার জেনারেল সঙ্গোল্লি রায়ান্না ও বালাপ্পার হাতে চূর্ণ হয় কোম্পানির সেনা ৷

1778 সালে বেলাগাভী জেলার কাকাতিতে জন্ম হয় কিত্তুর রানি চেন্নাম্মার ৷ 15 বছর বয়সে কিত্তুরের রাজা মল্লাসার্যর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ৷ তির-ধনুক চালানো, তলোয়ারের লড়াই, ঘোড়া চালানোয় সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি ৷ 1816 সালে রাজা মল্লাসার্যের মৃত্যু হয় এবং তাঁর ও তাঁর বড়রানি রুদ্রাম্মার ছেলে সিংহাসনে উপনীত হন ৷ তবে কোনও বংশধর দেওয়ার আগেই 1824 সালে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ রাজ্য শাসনের দায়িত্ব এসে পড়ে চেন্নাম্মার উপর ৷

বংশধর না-থাকার সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিত্তুরের উপর ডকট্রিন অফ ল্যাপস আনলে 1824 সালে চেন্নাম্মা বংশধর হিসেবে দত্তক নেন শিবলিঙ্গাপ্পাকে ৷ তবে তাঁকে বংশধর হিসেবে মেনে নেননি রাজনৈতিক এজেন্ট জন ৷ তিনি চেন্নাম্মাকে তাঁর রাজ্যপাট ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য জোরজার শুরু করেন ৷ বম্বে প্রেসিডেন্সির কাছে নিজের আবেদন জানিয়েছিলেন চেন্নাম্মা ৷ তবে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয় ৷ এরপরই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি ৷

আরও পড়ুন: Independence Special : বালগঙ্গাধরের কলম ধার বাড়িয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধের

প্রথম আক্রমণে সাফল্য পেলেও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বন্দি হতে হয় রানি চেন্নাম্মাকে ৷ যদিও তাঁর সেনা বীর বিক্রমে লড়াই চালিয়েছিল ৷ কিত্তুর বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয় মাদ্রাজের গভর্নর জেনারেল থমাস মুনরোর ভাইপো তথা সাব-কালেক্টর মুনরোর ৷ চেন্নাম্মাকে বাইলহোঙ্গাল কেল্লায় বন্দি করে রাখা হয় ৷ 1829 সালে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ গেরিলা কৌশল নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জোর লড়াই চালান রানির জেনারেল সঙ্গোল্লি রায়ান্না ৷ যদিও তাঁকেও পরে বন্দি করা হয় ৷ রানির যে বছর মৃত্যু হয়েছিল, সেই বছরই রায়ান্নাকে ফাঁসি দেওয়া হয় ৷তবে আজও চেন্নাম্মার লড়াইকে বাঁচিয়ে রেখেছে কর্নাটক সরকার ৷ প্রতি বছর 22 থেকে 24 অক্টোবরের মধ্যে তাঁর জয়কে আজও উদযাপন করা হয় ৷

চেন্নাম্মা যেমন ছিলেন ব্রিটিশদের ত্রাস, তেমনই ভারতে প্রথম উপনিবেশ গড়ে তোলা পর্তুগিজদের কাছে দুঃস্বপ্ন ছিলেন উপকূলীয় কর্নাটকের এক মহিলা ৷ যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন, ততদিন তাঁর ভয়ে কাঁটা হয়ে ছিল পর্তুগিজরা ৷ আব্বাক্কা মহাদেবী (Abbakka Mahadevi)৷ তুলুনাড়ুর ম্যাঙ্গালোরের কাছে ছোট্ট রাজ্য উল্লালের শাসক ছিলেন তিনি ৷ মাতৃতান্ত্রিক উত্তরাধিকারের অনুসরণকারী চৌতাস বংশের ছিলেন আব্বাক্কা ৷ 1525 সালে উল্লালের রানি হন তিনি ৷

গোয়া দখল করার পর পর্তুগিজরা পশ্চিমি উপকূলের দিকে নজর দেয় এবং 1525 সালে তারা ম্যাঙ্গালোর দখল করে ৷ ম্যাঙ্গালোরের ঠিক পাশেই উল্লাল বন্দর আরবের সঙ্গে মশলার বাণিজ্যে খুবই উন্নত ছিল ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : অসহযোগ আন্দোলনের সন্ধিক্ষণে জন্ম, শতবর্ষ পরও বিপ্লবের প্রতীক জামিয়া মিলিয়া

এক মহিলা শাসিত ছোট রাজ্য দখল ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে কিছুই না, পর্তুগিজদের এই ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল ৷ দারুণ স্মার্ট মহিলা ছিলেন আব্বাক্কা ৷ তিনি দ্রুত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব স্থানীয় শাসকদের সঙ্গে ভুয়ো জোট তৈরি করে ফেলেন ৷ তাঁর সেনায় অন্তর্ভুক্ত হয় সব সম্প্রদায়ের মানুষ এবং তাঁর নৌসেনার অংশ ছিলেন স্থানীয় মোগাভীরা মৎস্যজীবী ও মুসলিম বিয়ারিসরা, যাঁরা জলপথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন ৷ শোনা যায়, অগ্নিবাণ প্রয়োগ করে পর্তুগিজ জলযানের প্রভূত ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন রানি আব্বাক্কা ৷

কালীকটের জামোরিনদের সঙ্গেও নকল জোট তৈরি করেছিলেন তিনি ৷ এর ফলে বহু বছর উপসাগরেই আটকে থাকতে হয় পর্তুগিজদের ৷ বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও পর্তুগিজদের প্রতি এতটুকু সমীহ দেখাননি আব্বাক্কা ৷ তাঁর কৌশলে বিরক্ত হয়ে 1555 সালে অ্যাডমিরাল ডোম আলভারো দা সিলভেইরার নেতৃত্বে নৌবাহিনী পাঠায় পর্তুগিজরা ৷ তবে নিজের কেল্লা ধরে রাখতে সক্ষম হন রানি ৷ 1557 সালে পর্তুগিজরা আবারও ম্যাঙ্গালোর আক্রমণ করে, তবে তার পরের এক দশকেও আব্বাক্কার উল্লালকে তারা নিজেদের দখলে নিতে পারেনি ৷

1568 সালে আবারও হামলা চালানো হয় এবং পর্তুগিজ জেনারেল জোয়াও পেইক্সোটোর নেতৃত্বে উল্লালে ঢুকে পড়ে তাদের বাহিনী ৷ তারা উল্লাল দখল করলেও রানি পালিয়ে যান ৷ কাছেরই একটি মসজিদে লুকিয়ে পড়েন তিনি এবং খুব দ্রুত তিনি সেখানেই বাহিনীকে একজোট করেন ৷ সেই রাতেই তিনি ফিরে আসেন এবং পর্তুগিজ জেনারেল পেইস্কোটোকে হত্যা করেন ৷ জীবন্ত অবস্থায় বন্দি করা হয় 70জন পর্তুগিজ সৈনিককে ৷ তাদের অ্যাডমিরাল মাসকারেনহাসেরও মৃত্যু হয় রানির হাতে ৷ পর্তুগিজদের তাড়া করে ম্যাঙ্গালোরছাড়া করেন রানি আব্বাক্কা ৷

ঔপনিবেশিক শক্তির ত্রাস ছিলেন কর্নাটকের বীরাঙ্গনা রানিরা

আরও পড়ুন : Independence Special : অবিভক্ত ভারতবর্ষের পুজো হয় কাশীর ভারত মাতা মন্দিরে

তার পরের বছরগুলিতে শক্তিবৃদ্ধি করে আশপাশের এলাকা দখল করলেও আব্বাক্কা ছিল পর্তুগিজদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথার কারণ ৷ যুদ্ধে তাঁকে পর্যুদস্ত করতে না-পেরে তাঁর পরিত্যক্ত স্বামীর সঙ্গে জোট বাঁধে পর্তুগিজরা ৷ 1570 সালে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে পরাজিত হন রানি ৷ তাঁকে বন্দি করা হলেও কারাগারে গিয়েও বিদ্রোহ চালিয়ে যান তিনি এবং লড়াই করতে করতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৷

উপকূলীয় কর্নাটকের কিংবদন্তি আব্বাক্কা ৷ সেখানকার জনপ্রিয় লোকশিল্প যক্ষগানার মাধ্যমে পরের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর অসীম সাহসের কাহিনি ৷ স্থানীয় প্রথাগত নৃত্যশৈলি দৈব কোলাতেও তাঁকে নিয়ে গান গাওয়া হয় ৷ তাঁকে সম্মান জানাতে হিন্দুস্থান শিপইয়ার্ডের তৈরি প্রথম ইনশোর পেট্রোল ভেসেলের নাম রানি আব্বাক্কা রেখেছে ভারতীয় নৌসেনা ৷ স্বাধীন ভারতের উপকূলে নজরদারি চালানো পাঁচটি জলযানের শ্রেণি হল রানি আব্বাক্কা ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.