আগরতলা, 30 জুলাই : লোকসভা নির্বাচনের আগে হাতে রয়েছে কমবেশি তিন বছর ৷ তার আগেই ভোট রয়েছে ভারতের একাধিক রাজ্যে ৷ বাংলার খুব কাছেই রয়েছে এমনই এক রাজ্য ত্রিপুরা ৷ দীর্ঘ বাম জমানার অবসানের পর এখন যেখানে গেরুয়া শাসন চলছে ৷ পরের বিধানসভা নির্বাচন হবে 2023-এ ৷ তাই এখন থেকেই ত্রিপুরায় শক্তি বাড়াতে মরিয়া পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) বাংলা বিজয়ের হ্যাটট্রিকের রেশ গড়িয়েছে এখানেও ৷ শুরু হয়ে গিয়েছে অন্যান্য দল ছেড়ে নেতা, কর্মীদের তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক ৷ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই অন্তত 40 জন নানা মাপের নেতা তৃণমূলে যোগদান করেছেন ৷ তাঁদের মধ্যে কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েটের পাশাপাশি বিজেপির একাধিক পরিচিতও মুখও রয়েছে ৷ যদিও বিষয়টিকে আমল দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির ৷
আরও পড়ুন : I-PAC-Tripura : জামিনে মুক্ত 23 আইপ্যাক কর্মী, এবার ত্রিপুরাতেও খেলা হবে স্লোগান ডেরেক-ব্রাত্যর
আগামী সোমবারই ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য কমিটি ঘোষণা করা হবে ৷ দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee) ত্রিপুরায় পৌঁছনোর পর তাঁর উপস্থিতিতেই সেরে ফেলা হবে এই কর্মকাণ্ড ৷ প্রসঙ্গত, 2019 সালে কেন্দ্রে মোদি সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর বছরেই বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন সুবল ভৌমিক, প্রকাশ দাস, মহম্মদ ইদ্রিস মিঁয়া, তপন দত্ত, পান্না দেব, প্রেমতোষ দেবনাথ এবং বিকাশ দাস ৷ বাংলায় মমতার হ্য়াটট্রিকের পর সেই তাঁরাই এবার যোগ দিলেন ত্রিপুরা তৃণমূলে ৷
সুবল ভৌমিকের দাবি, তাঁদের এই পদক্ষেপে নাকি বেজায় ঘাবড়ে গিয়েছে রাজ্য়ের শাসকদল বিজেপি ৷ যে হোটেলে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে যোগদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়, তার বাইরে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ৷ এমনকী, সংশ্লিষ্ট হোটেল কর্তৃপক্ষকেও তৃণমূলের কোনও কর্মসূচির জন্য হোটেল ভাড়া না দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ৷
যদিও তৃণমূলের তরফে তোলা এই অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি ৷ পাল্টা, জাতীয় দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তারা ৷ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানকারী তথা বিজেপি বিধায়ক রতন চক্রবর্তীর দাবি, তৃণমূল আসলে জাতীয় দলের মর্যাদা টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ৷ সেই কারণেই ত্রিপুরা নিয়ে হঠাৎ এত মাতামাতি করছে তারা ৷ রতনের কথায়, ‘‘জাতীয় দলের স্বীকৃতি বাঁচাতে তৃণমূলকে অন্তত ছয় শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে হবে ৷ আর সেই কারণেই ত্রিপুরা নিয়ে উঠে-পড়ে লেগেছে তারা ৷’’
আরও পড়ুন : Biplab Kumar Deb : পুলিশ তার কাজ করেছে, আই-প্যাকের সদস্যদের আটক প্রসঙ্গে বিপ্লব
রতন চক্রবর্তীর দাবি, তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর সঙ্গে বেইমানি করেছে ৷ তিনি জানান, ত্রিপুরায় ভোটে লড়ার বিষয়ে তিনিই প্রথম তৃণমূল নেতৃত্বকে আহ্বান জানিয়েছিলেন ৷ সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত সুধীররঞ্জন মজুমদার ৷ নির্বাচনের ময়দানে তাঁর জয় নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছিল বলে অভিযোগ রতনের ৷ তাঁর মতে, ত্রিপুরার মাটিতে এভাবে রাজনীতি করা সম্ভব নয় ৷ তাই অন্য দল ভাঙিয়ে নেতা, কর্মীদের এনে আদতে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও লাভ হবে না বলেই মনে করেন তিনি ৷
প্রসঙ্গত, প্রথম দিকে ত্রিপুরা তৃণমূলে রতন চক্রবর্তীর আধিপত্য থাকলেও ছবিটা বদলাতে শুরু করে সুদীপ রায়বর্মন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর ৷ মুকুলু রায় ঘনিষ্ঠ সুদীপ দ্রুত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন ৷ এ নিয়ে রতন ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে সুদীপ গোষ্ঠীর বিরোধ চরম ওঠে ৷ মূলত, তার জেরেই তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রতন ৷