হায়দরাবাদ, 29 মে: বিরাট এক তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর প্রভাব ফেলেছে ৷ এমনই তথ্য উন্মোচন করেছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ৷ এ ক্ষেত্রে একটি বিশিষ্ট অনলাইন খুচরো বিক্রেতার ডেটাবেসকে নিশানা করা হয়েছে ৷ তাদের অগণিত গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এমনকি ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ-সহ নানা গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে ৷ এর ফল খুবই গুরুতর এবং সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে ৷ এই সাইবার অপরাধ লক্ষ লক্ষ মানুষের পরিচয় চুরি করে তাঁদের আর্থিক জালিয়াতির ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে ৷
তথ্য চুরি
একটি অত্যাধুনিক সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে তথ্য চুরি হওয়া শুরু হয়েছিল, যা খুচরো বিক্রেতার সুরক্ষা পরিকাঠামোর দুর্বলতাগুলিকে কাজে লাগিয়েছে ৷ হ্যাকাররা গ্রাহকের ডেটা রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা এনক্রিপশন প্রোটোকল এবং ফায়ারওয়ালগুলিকে বাইপাস করে ডেটাবেসে অননুমোদিত অ্যাক্সেস পেতে সক্ষম হয়েছিল । একবার এর ভিতরে ঢুকে তারা ব্যক্তিগত তথ্যের গুপ্তধন চুরি করে নিয়ে যায় । সাইবারসিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা ক্ষতির মূল্যায়নের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করছেন । একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, "এই তথ্য চুরির পরিমাণ অভূতপূর্ব ৷ হামলাকারীরা অবিশ্বাস্যভাবে দক্ষ ছিল এবং কোনও চিহ্নই তারা রেখে যায়নি, যার ফলে তাদের পরিচয় চিহ্নিত করাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে ।"
হামলার ফল
লক্ষ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের জন্য এই খবরটি দুঃস্বপ্নের থেকে কিছু কম নয় । চুরি হওয়া তথ্য অননুমোদিত লেনদেন পরিচালনা করতে, ঋণের জন্য আবেদন করতে বা সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে । এই অপরাধের শিকার হওয়ার ভয় স্পষ্ট এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ব্যক্তিদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন । বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, "কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপের জন্য আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ক্রেডিট রিপোর্টের দিকে নজর রাখুন ৷ অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং সতর্ক থাকুন ।"
একটি নতুন কেলেঙ্কারি: ফেডএক্স ক্যুরিয়ার জালিয়াতি
ডেটা চুরির এই ঘটনার মধ্যেই একটি নতুন সাইবার অপরাধ মাথাচাড়া দিয়েছে : ফেডএক্স ক্যুরিয়ার জালিয়াতি ৷ এই কেলেঙ্কারি মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই অসংখ্য মানুষ এই কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন । এক সন্ধ্যায় রবি নামে হায়দরাবাদের একজন সম্মানিত অধ্যাপক একটি ফোন পান, যা তাঁর জীবনকে বদলে দিতে পারত । অন্য প্রান্তে থাকা কণ্ঠ শান্ত কিন্তু দৃঢ় ছিল ৷ সে বলে, "মিস্টার রবি, 'কাস্টমস' থেকে বলছি । আমরা আপনার নামে একটি প্যাকেজ সনাক্ত করেছি যাতে মাদক ও অস্ত্র রয়েছে । এই ঘটনা সিবিআইয়ের সঙ্গে জড়িত এবং আপনি সহযোগিতা না করলে আপনাকে গ্রেফতার করা হবে ।"
রবি হতভম্ব হয়ে গেল । এমন প্যাকেজ তিনি কখনও পাঠানইনি । কিন্তু ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি রবির নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বিবরণ জানত, যার ফলে হুমকিটি খুব বাস্তব বলে মনে হয় । যা ঘটছে তা বুঝে ওঠার আগেই রবিরা কাছে আরেকটি কল - এটা ছিল একটি ভিডিয়ো কল । ইউনিফর্ম পরা একজন ব্যক্তি নিজেকে একজন সিবিআই অফিসার হিসাবে পরিচয় দেন, তিনি সেই গুরুতর অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন এবং তাঁর দাবির সপক্ষে প্রমাণ দিচে জাল নথি দেখান । এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রবি ৷ তিনি এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় জানানোর জন্য অনুরোধ করেন । ওই 'অফিসার' তখন সমাধানের উপায় হিসেবে বলেন, টাকা স্থানান্তর করাই একমাত্র উপায় ৷ গ্রেফতারি এড়াতে 99 লাখ টাকা পাঠাতে হবে । প্রচণ্ড চাপে ও আতঙ্কে রবি তাঁর কথা মেনে চলেন ৷ পরে বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন ।
প্রতারিতের পরিসংখ্যান
শুধু রবি নন, আরও এক অধ্যাপকের ক্ষতি হয়েছে 45 লক্ষ টাকা । হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ীর 80 লক্ষ টাকা প্রতারিত হয়েছে । স্ক্যামারদের কৌশল নির্মম এবং নিরলস । তারা তাদের শিকারদের ফোন করে, হুমকি দিয়ে এবং ম্যানিপুলেট করে চলেন যতক্ষণ না- তারা পছন্দসই পরিমাণে টাকা বের করে আনছেন । একটি বিশেষ যন্ত্রণাদায়ক ঘটনায় একজন মহিলাকে রাতভর স্কাইপ কলের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে বন্দি করা হয়েছিল । সকাল নাগাদ, সে প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে 60 লাখ টাকা ট্রান্সফার করেছে । তাকে প্রতারিত করা হয়েছে বুঝতে পেরে, তিনি অবিলম্বে 1930 কল সেন্টারে যোগাযোগ করেন, যার ফলে সাইবার সিকিউরিটি ব্যুরো তহবিল ফ্রিজ করে দেয় ।
প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই