মেদিনীপুর, 22 জুন: হিন্দি 'নায়ক' সিনেমায় একদিনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন এক সাধারণ নাগরিক ৷ 'এমএলএ ফাটাকেষ্ট' ছবিতেও একদিনের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন এক নাগরিক ৷ তেমনই বাস্তবে একদিনের বিচারক হওয়ার সুযোগ পেলেন প্রথম বর্ষের ছাত্রী মৌসুমী মুর্মু ৷
একদিনের জন্য বিচারক হলেন মৌসুমী মুর্মু (ইটিভি ভারত) শনিবার লোক আদালতে বিচারকের আসনে বসলেন নার্সিং-এর ছাত্রী মৌসুমী ৷ অনগ্রসর শ্রেণির এই একদিনের বিচারক শুনলেন বিমা সম্পর্কিত মামলা ৷ বিচারকের ভূমিকায় দিলেন রায়ও ৷ মৌসুমীর জীবনও যেন আরেক সিনেমা ৷ শৈশবে বাবা-মা ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন ৷ এরপর সরকারি হোমে বড় হয়েছেন তিনি ৷ সেখান থেকে এখন তিনি নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন ৷
ইটিভি ভারতকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিচারক মৌসুমী বলেন, "কোর্ট থেকে চিঠি আসার পর কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ৷ কিন্তু স্যারেদের তত্ত্বাবধানে এবং আশ্বাসে শেষ পর্যন্ত আমি লোক আদালতের বিচারকের ভূমিকা পালন করেছি ৷ ভীষণ ভালো লাগছে ৷ অনেকের অভাব-অভিযোগ শুনেছি ৷ বিচারও করেছি ৷ এই পাওনা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওনা ৷" একদিনের বিচারক অবসর যাপনে গান শুনতে পছন্দ করেন বলে জানালেন ৷ ভবিষ্যতে অবশ্য নার্সিং স্টাফ হওয়ার ইচ্ছে হয়েছে ৷
ডিএলএসএস সেক্রেটারি দিব্যেন্দু নাথ বলেন, "আমাদের কাজই হল পিছিয়ে পড়া দরিদ্র এবং বিভিন্নভাবে বঞ্চিত মানুষদের সামনে তুলে আনা। সেই প্রচেষ্টায় আমরা মৌসুমী মুর্মুকে বিচারকের আসনে বসিয়েছিলাম। তিনি বিভিন্ন মামলা শুনেছেন এবং তার রায় দিয়েছেন । এই ধরনের মানুষজন যত সমাজের কাজে এগিয়ে আসবেন, তত সমাজের পক্ষে মঙ্গল হবে। এদিন মোট 14 হাজার মামলা উঠেছিল লোক আদালতে ৷ যার বেশিরভাগটাই সমাধান হয়েছে।"
জানা গিয়েছে, মা-বাবা পরিত্যক্ত মৌসুমী পাঁচ বছর বয়স থেকেই হোমেই জীবন যাপন কাটান ৷ বর্তমানে তিনি নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন ৷ এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলা আদালতে ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিস অথরিটি (DLSA)-র তরফে বসেছিল দ্বিতীয় লোক আদালত। স্থানীয় মানুষজন যাঁদের টাকা দিয়ে মামলা চালানোর সামর্থ্য নেই, তাঁদের মামলাগুলি এদিন দেখা দেখা হয়েছে ৷ প্রায় 14 হাজার মামলা উপস্থাপিত হয় এই লোক আদালতে ৷ তাতেই বিচারকের ভূমিকায় দেখা যায় মৌসুমী মুর্মুকে।
কে এই মৌসুমী মুর্মু ? জানা যায়, যখন তাঁর পাঁচ বছর বয়স তখন মা-বাবা কৃষ্ণনগরের একটি পরিত্যক্ত জায়গায় রেখে দিয়ে আসেন ৷ ওখানকার পুলিশ মারফত মৌসুমীর ঠাঁই হয় হোমে ৷ দীর্ঘ সাত বছর হোমে থাকা এবং লড়াই করার পর 12 বছরে মেদিনীপুর হোমে চলে আসেন বদলি হয়ে। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকের পর নার্সিং ফার্স্ট ইয়ারে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন । এরই মধ্যে অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত মৌসুমী মুর্মু হঠাৎ-ই চিঠি পান মেদিনীপুর জেলা আদালত থেকে। লোক আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের ডাক পান তিনি ৷