কোচবিহার ও আসানসোল, 10 অগস্ট: আরজি কর ঘটনার পর একে একে সামনে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন হাসপাতালের সুরক্ষার বিষয় ৷ নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে মুখ খুলছেন চিকিৎসকরা ৷ রাত 11টার পর রোগীর সঙ্গে অনেক অসামাজিক লোক হাসপাতালে ঢুকে পড়ছে। গালিগালাজ করছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা ৷ যা নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পার্থপ্রতীম রায়ের কাছে অভিযোগও করেন কোচবিহার মেডিক্যালের মহিলা চিকিৎসকরা ।
রাতের জেলা হাসপাতালে ভয়ের পরিবেশ (ইটিভি ভারত) আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর শুক্রবার রাতে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। সেখানে মেডিক্যাল কলেজের আধিকারিকদের পাশাপাশি পুলিশ কর্তারাও ছিলেন। এরপর শনিবার হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন তিনি। ইমার্জেন্সিতে ডিউটিরত মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ওই চিকিৎসক বেশকিছু অভিযোগ তুলে ধরেন পার্থপ্রতীম রায়ের কাছে। তাঁর দাবি, অনেক সময়ই রোগীর সঙ্গে বহিরাগতরা ঢুকে পড়ে, যার জেরে সমস্যা হয়। পাশাপাশি রাতে মহিলা চিকিৎসকদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থারও দাবি করেছেন তিনি।
কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক শুভ্রা সরকার বুট বলেন, "রাত এগারোটার পর থেকেই অনেক রোগীর সঙ্গে মদ্যপ ব্যক্তি হাসপাতালে আসে। গালিগালাজ করে। আতঙ্কে থাকি। দিনদিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।" অপরদিকে রোগী কল্যান সমিতির চেয়ারম্যান পার্থপ্রতীম রায় বলেন, "অভিযোগ ঠিক নয়। ওনারা একটা দাবি রেখেছেন সিনিয়র চিকিৎসকদের জন্য আলাদা ঘরের। বিষয়টি দেখা হবে। তাছাড়া রাতের বেলা সিরিয়াস রোগীদের সাথে কিছু লোক ঢুকে পড়ে হাসপাতাল চত্বরে। এক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা হয়। আমরা সবটাই দেখব।"
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর এবার মুখ খুলছেন অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকরা। সরকারি হাসপাতালে কোনও নিরাপত্তাই নেই, এমন দাবিও তুলেছেন চিকিৎসকরা ৷ আসানসোল জেলা হাসপাতালে রাতের বেলায় ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ায় অবাঞ্ছিত মদ্যপ বহিরাগতরা ৷ মহিলা চিকিৎসকরা কার্যত নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কিত। রাতে কোনও নিরাপত্তাই থাকে না আসানসোল জেলা হাসপাতালে এমনও অভিযোগ সামনে এসেছে ৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়া কাজ করা সম্ভব নয়। আরজি করের ঘটনার পরেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসলেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাসকে ডেকে এই বৈঠকে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে চিকিৎসকরা প্রত্যেককেই দাবি জানিয়েছেন নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।
এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আসানসোল জেলা হাসপাতালের পক্ষ থেকে পুলিশ কমিশনার অফিসে খুব দ্রুত একটি আবেদন করা হবে পুলিশে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য। তার পাশাপাশি রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এই বিষয়টি উত্থাপিত করে ওই সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটককে বিষয়টি জানানো হবে। শনিবার আসানসোল জেলা হাসপাতাল চত্বরে কালো ব্যাজ পরে মৌন বিক্ষোভ দেখান চিকিৎসকরা। আরজি কর হাসপাতালে মৃত মহিলা চিকিৎসকের পরিবার যাতে সঠিক বিচার পান সেই দাবিও তোলেন তাঁরা। হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসক নিশা আগারওয়াল বলেন, "আমি একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। রাত্রে কারও প্রসব যন্ত্রণা উঠলে আমাকে একা ছুটে যেতে হয়। আমি দেখেছি ওয়ার্ডে 20 থেকে 25 জন মদ্যপ অবস্থায় বহিরাগতারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা কারও কথা শোনে না। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরাও তাদের আটকাতে পারে না। অল্পেই তারা অশান্তি বাধায়। বচসা জুড়ে দেয়। রাতের জেলা হাসপাতালে কোনও নিরাপত্তা নেই মহিলা স্বাস্থকর্মী, নার্স বা চিকিৎসকদের জন্য। আমরা অবিলম্বে নিরাপত্তা আরও জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি।"