কলকাতা, 15 অক্টোবর: হয়তো একেই বলে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা ! যদিও ঘটনাটা কয়েকদিন আগের ৷ রাজ্যবাসী যখন আরজি কর নিয়ে আন্দোলন আর পুজো প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই ইতিহাস মুছে যেতে বসেছিল শহর কলকাতা থেকে। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী এবং বাস নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার উদ্যোগে।
নিশ্চয়ই এসব গোল গোল কথায় বুঝতে পারছেন না কী নিয়ে কথা বলছি ? আপনার জন্ম যদি আটের দশক বা তার আগে হয় তাহলে আপনি নিশ্চয়ই শহর কলকাতার বুকে ডাবল ডেকার বাস দেখেছেন। কলকাতার ঐতিহ্য বলে পরিচিত ট্রাম বা হলুদ ট্যাক্সির গুরুত্ব যতটা আছে এই ডাবল ডেকার বাসের গুরুত্ব খুব কম নয়। কিন্তু সেই সময় কলকাতার রাস্তায় যে ডাবল ডেকার বাস চলত, তা আজকের ছেলেমেয়েরা হয়তো জানেনই না। আর প্রবীণ বা মাঝবয়সি মানুষ যাঁরা দেখেছেন তাঁরাও অনেকেই ভুলে গিয়েছেন। সেটাই স্বাভাবিক। সেটাই কালের নিয়ম।
ফিরল শহরের শেষ ডাবল-ডেকার (ইটিভি ভারত) কিন্তু আমাদের রাজ্যে যাত্রী পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ডাবল ডেকার বাসের শেষ সংস্করণটি কোভিড কালের আগে পর্যন্তও চলত। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে শেষ বাসটিকে ইকোপার্ক থেকে আরবান ভিলেজ পর্যন্ত জয়-রাইডের জন্য ব্যবহার করা হত। আপনারা কেউ জানেন, কী আজ তার অবস্থা কী ?
সকলের অজান্তেই একরকম মৃত্যুমুখেই পতিত হতে চলেছিল বাংলার শেষ ডাবল ডেকার বাসটি। এমনকী কাটাইয়ের জন্য এই বাসটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল রবীন্দ্রভারতীর সামনে থাকা কাটাকলে। সেই সময়ই বাস নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন বাস-ও-পিডিয়ারের এক সদস্য সৌমজিৎ মিত্রের নজরে আসে এই বাসটি। তিনি বাসটির এই চরম পরিণতির খবর পেয়ে তাঁর সংস্থার জেনারেল সেক্রেটারি অঙ্কিত বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে বিষয়টি জানান এবং কিছু ছবি পাঠান। এই অঙ্কিতবাবুই শেষ পর্যন্ত পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তাঁকে অনুরোধ করেন রাজ্যের শেষ ডাবল ডেকার বাসটিকে এই চরম পরিণতি থেকে রক্ষা করতে। মন্ত্রী জানান, কলকাতার ইতিহাস হিসাবে সংরক্ষিত হতে পারে এমন একটি জিনিসকে এভাবে কাটাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে, তা তাঁর নজরে ছিল না। তিনি অঙ্কিতবাবুকে আশ্বাসও দেন যেভাবেই হোক কলকাতার ইতিহাসের স্বার্থে বাসটিকে সংরক্ষরণ করতেই হবে।
রবীন্দ্রভারতীর সামনে থাকা কাটাকলে ছিল বাসটি (ইটিভি ভারত) বাসটির ইতিহাস:জানা গিয়েছে, এই বাসটি তৈরি হয়েছে 1980 সালের অশোক লেল্যান্ড কোম্পানির হাত ধরেই। কলকাতার রাস্তায় দীর্ঘদিন সার্ভিস দেওয়ার পর এটি ইকোপার্কের ভিতরে জয়-রাইড হিসাবে ব্যবহার হত 2020 পর্যন্ত। তবে দুঃখের বিষয় হল কোভিড কালের পর বাসটি আর চলেনি, বরং সেটিকে রাখা হয়েছিল মানিকতলা বাস ডিপোতে। সেখান থেকেই এই বাসটিকে কাটাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। তারপরেই শুরু হয় বাসটিকে বাঁচানোর জন্য প্রচেষ্টা। জানা যায়, যখন এই উদ্যোগ চলছে তার মধ্যেই, বাসটি কাটাইয়ের জন্য বাইরে থেকে ভিতরেও নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ মুহূর্তে মন্ত্রীর ফোনে এই ঐতিহ্যবাহী বাসটি জীবন ফিরে পায়।
ডাবল ডেকার বাসটির বর্তমান অবস্থা:জানা গিয়েছে কাটাইয়ের থেকে উদ্ধার করে এখন সেটিকে নিয়ে আসা হয়েছে পাইকপাড়া বাস ডিপোতে। সেখানেই সংরক্ষণ করা হবে বাসটিকে। রাজ্য সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে আগামিদিনে এই বাসটিকে বাসের মিউজিয়াম হিসাবে ব্যবহার করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারও করা হবে। মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, "ইতিমধ্যেই বাসটি 35 বছর হয়ে গিয়েছে। এর দেহাংশ পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই দফতরের তরফ থেকে টেন্ডার করে সেই কারণে এটি কাটাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে ফোন আসার পর মনে হয় এই ঐতিহ্যবাহী বাসটির সংরক্ষণ প্রয়োজন। কলকাতা থেকে তো ধীরে ধীরে অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। অতীতের স্মৃতি হিসেবে যদি এটাকে সংরক্ষণ করা যায়। পরবর্তীতে আমার ভাবনায় রয়েছে এটিকে যদি মিউজিয়াম হিসাবে ব্যবহার করা যায়।"
পুরনো কলকাতা থেকে কালের নিয়মেই অনেক কিছু হারিয়ে গিয়েছে। সদিচ্ছা থাকলেও হয়তো সেগুলিকে শেষ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়নি। তবে এবার যাত্রী পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত শেষ ডাবল ডেকার বাসটি রক্ষা পেল মন্ত্রী আর ওই সেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে।