পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বন্ধ সমাবর্তন, নেই উপাচার্য-রেজিস্ট্রার; চরম দুর্দশায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় - NORTH BENGAL UNIVERSITY IN TROUBLE

7 বছর ধরে বন্ধ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ৷ উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার-সহ ফাঁকা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ ৷ বিপাকে পড়ুয়া থেকে অধ্যাপকরা ৷

North Bengal University faces major Trouble
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 5 hours ago

দার্জিলিং, 13 ডিসেম্বর: অতীতের রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের আবহে আটকে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া ৷ সম্প্রতি দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের প্রস্তাবিত উপাচার্যনিয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ সেই তালিকায় নেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ৷ বিধানসভা ও রাজভবনের টানাপোড়েনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের এই বিশ্ববিদ্যালয়। এমনই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের ৷

স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটির প্রস্তাব মতো নামের তালিকা রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তারপরেও স্থায়ী উপাচার্য পায়নি এই বিশ্ববিদ্যালয় ৷ এই অবস্থায় গত সাত বছর ধরে বন্ধ কনভোকেশন বা সমাবর্তন ৷ আড়াইশোর বেশি পড়ুয়াদের পিএইচডি কোর্স শেষ হলেও উপাচার্য না থাকায় মিলছে না সার্টিফিকেট ৷

দেশ-বিদেশ থেকে কাজের সুযোগ এলেও সার্টিফিকেট না মেলায় সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে রিসার্চ স্কলারদের ৷ উপাচার্য তো বটেই, ফাঁকা রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার, অ্যাকাউন্টস অফিসার-সহ একাধিক পদ ৷ সব দায়িত্ব একদিকে সামলে চলেছেন যুগ্ম রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত ও অতিরিক্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং ডিন অধ্যাপক মহেন্দ্রনাথ রায় ৷ এককথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্তরকম প্রশাসনিক কাজ থমকে রয়েছে ৷

ডিন অধ্যাপক মহেন্দ্রনাথ রায় বলেন, "উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার এসব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ ৷ এসব পদ খালি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ থমকে যায় ৷ আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে ৷ কারণ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কমিটির চেয়ারম্যান ৷ ফলে অন্যান্য পদেও কাউকে নিয়োগ করা যাচ্ছে না ৷ উপাচার্য না থাকায় পড়ুয়া, গবেষক তো বটেই, অধ্যাপকরাও সমস্যায় রয়েছেন ৷ তাই আমরা চাই দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ হোক ৷"

এর মধ্যে চলতি মাসেই কন্ট্রোলার অফ এগজামিনেশন বা পরীক্ষা নিয়ামক দেবাশিস দত্তেরও মেয়াদ শেষ হতে চলেছে ৷ ফলে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ না হলে একপ্রকার মুখ থুবড়েই পড়বে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ৷ কারণ পরীক্ষা নিয়ামক নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা 49 টি কলেজের স্নাতক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেওয়াই সম্ভব হবে না ৷

করোনাকালের আগে থেকে 2018 সাল থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বন্ধ ৷ তখন উপাচার্য ছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য ৷ পরে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তাকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ এখনও তিনি জেলে ৷ এরপর 2022 সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিন দফায় মোট ছ'মাসের জন্য উপাচার্য ছিলেন ওমপ্রকাশ মিশ্র ৷ আর তার সময়েই রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত চরমে পৌঁছয় ৷

2023 সালের মে মাস থেকে 2024 সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনজন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ শেষ অস্থায়ী উপাচার্য ছিলেন কেরল ক্যাডারের প্রাক্তন আইপিএস সিএম রবীন্দ্রন ৷ তিনি এক মাস হতে না হতেই উপাচার্যের পদ ছেড়ে চলে যান ৷ কয়েকটি সূত্রের দাবি, পূর্ণাঙ্গ বেতন না পাওয়ায় সংক্রান্ত কারণেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন। তারপর থেকে একপ্রকার অভিভাবকহীন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ৷

এই বিষয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার অয়ন মোহান্তি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা বলে বোঝানো যাবে না ৷ উপাচার্য না থাকায় সবরকম কাজ আটকে রয়েছে ৷ রিসার্চ স্কলারদের ভাতা, সমাবর্তন নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। কোনও কার্যকরী কমিটির বৈঠক হচ্ছে না ৷ শুধু উপাচার্য নয়, ফিনান্স অফিসার, রেজিস্ট্রারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে ৷ এভাবে চললে আমাদের রাস্তায় বসতে হবে ৷"

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমর বিশ্বাস বলেন, "কেন দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ হচ্ছেন না, সেটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন ৷ আর এবার যাঁকেই উপাচার্য করা হোক না কেন, তিনি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের মান আরও ভাল করার জন্য কাজ করেন ৷ উপাচার্য থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত বহু পদ খালি রয়েছে ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details