পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কলকাতায় প্রথম ডাবল ইঞ্জিনের ট্রাম ! পাঁচ দশক আগের হাওড়ার স্মৃতি ফিরবে মহানগরে - TWO SIDED SINGLE TRAM IN KOLKATA

ময়দানের পথ ধরে একে বেঁকে চলবে এক বগি, দুই ইঞ্জিনের ট্রাম। বর্তমানে দু'টি ট্রামকে এইভাবে তৈরি করা হচ্ছে নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোতে।

TWO SIDED SINGLE TRAM IN KOLKATA
এই ধরনের ট্রাম রাজপথে আগেও চলেছে (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 4, 2025, 8:27 AM IST

কলকাতা, 4 ফেব্রুয়ারি: আবারও রাজপথে দেখা যাবে দু'মুখো ট্রাম। মহানগরের রাস্তা থেকে ট্রাম তুলে দেওয়া নিয়ে প্রচুর শব্দ ব্যয় হয়ে চলেছে। যত মত তত পথ। তবে 'TO BE OR NOT TO BE' এই বিতর্কের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়াতে প্রস্তুত দু'ইঞ্জিনের ট্রাম। জানা গিয়েছে, ময়দানের পথ ধরে একে বেঁকে চলবে এক বগি, দুই ইঞ্জিনের ট্রাম।

এই ডাবল ইঞ্জিনের ট্রাম এক সময় চলত হাওড়া শিবপুরের 40 নম্বর রুটে ৷ এই ট্রাম ডিপোতে ট্রাম ঘোরানোর পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ট্রামের একটি বগির দু'দিকে দু'টো ইঞ্জিন ছিল ৷ ডিপোতে পৌঁছানো এবং সেখান থেকে রওনা হওয়ার সময় বগির দু'দিকের দু'টো আলাদা ইঞ্জিন ব্যবহার করতেন চালক ৷

আগের দুই ইঞ্জিনের ট্রামগুলি (ইটিভি ভারত)

একদিকে যখন ট্রামের অস্তিত্ব নিয়ে চলছে বিস্তর টানাপোড়েন তখনই নোনাপুকুরের আশেপাশে দেখা গেল দু'ইঞ্জিনের ট্রাম। নতুন প্রজন্মের কাজে বিষয়টি বেশ নতুন হলেও এই ধরনের ট্রাম কিন্তু রাজপথে আগেও চলেছে। একটা লম্বা সময় ধরে নিয়মিত পরিষেবা দিয়েছে।

আগের দুই ইঞ্জিনের ট্রামগুলি (ইটিভি ভারত)

দু'মুখো ট্রাম

ট্রামের ইতিহাসের স্মরণীয় দিয়ে হেঁটে বেশকিছু পিছনের দিকে চলে গেলে দেখা যায়, 1907 সাল নাগাদ হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটি কলকাতার ট্রাম কোম্পানিকে ট্রাম লাইন পাতার অনুমতি দেয়। হাওড়ার ট্রাম লাইন উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত ছিল। উত্তরে দু'টি ট্রাম লাইন ছিল ৷ একটি ছিল হাওড়া ব্রিজ থেকে সালকিয়া বাঁধাঘাট রোড পর্যন্ত এবং অপরটি ছিল ঘুসুড়ি রোড পর্যন্ত। আর একটি ছিল পূর্ব গোলাবাড়ি রোড পর্যন্ত। পাশাপাশি, দক্ষিণের ট্রাম লাইন ছিল হাওড়া ব্রিজ থেকে বাকল্যান্ড ব্রিজের ওপর দিয়ে হাওড়া কোর্ট ও ময়দানের দিক দিয়ে কেওড়াপাড়া ঘাট পর্যন্ত। এটি ছিল শিবপুর রুটের ট্রাম লাইন।

দুই ইঞ্জিনের ট্রাম (নিজস্ব ছবি)

দুই ইঞ্জিনের ট্রামের সমাপ্তি

শিবপুরের 40 নম্বর রুটের ট্রামগুলি দুমুখো ছিল। মাঝে একটি বগি এবং দু'দিকে ইঞ্জিন। যেহেতু শিবপুর ট্রাম ডিপোতে ট্রাম ঘোরাবার পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না, পাশাপাশি ওই ডিপোতে লুপ লাইন ছিল না তাই দু'দিকেই চালকের কেবিন ছিল। চালক ডিপোতে পৌঁছে আবার সেখান থেকে রওনা হওয়ার সময় কেবিন পরিবর্তন করে নিতেন। তবে 1971 সালে হাওড়ায় ট্রাম পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিরতরে অবসর নেয় দুই ইঞ্জিনের ট্রামগুলিও ৷

দু'মুখো ট্রাম ফের চলবে

পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য ধর্মতলা থেকে ময়দান আবার ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত যে হেরিটেজ রুটে ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা করছে সেই রুটে দুই ইঞ্জিনের ট্রাম চালানো হবে। তাই বর্তমানে দু'টি ট্রামকে এইভাবে তৈরি করা হচ্ছে নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোতে। তবে এখনও অনেকটাই কাজ বাকি।

  • ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দ্বীপ দাস জানিয়েছেন, একটি ট্রামকে নোনাপুকুরে প্রায় 5 মাস ধরে দুই ইঞ্জিনের ট্রামে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে। প্রথমে WBTC ময়দানে একটি ট্রামের লুপ (লুপের মাধ্যমে লাইন পরিবর্তন করে ট্রাম) তৈরি করার কথা ছিল। কিন্তু যেহেতু ওটা সেনার জমি তাই জানা যায়, সেনার তরফে লুপ তৈরির অনুমতি মেলেনি। তারপরেই দু'দিকে ইঞ্জিন বসানো ট্রাম তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়।
  • তিনি আরও বলেন, "কলকাতায় বহু ট্রাম রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই যেসব রুট ট্রাম বন্ধ হয়ে গিয়েছে এসব রুট দিয়ে যদি দুই ইঞ্জিনের ট্রাম চালানো যায় তাহলে অনেকটা সুবিধা হবে।"
  • আর এক ট্রাম প্রেমী এবং সংগঠনের সদস্য সাগ্নিক গুপ্ত জানিয়েছেন, নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোতে 252/1 নম্বর ট্রামটিকে দুই ইঞ্জিনের ট্রামে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে। এই ট্রামটি গড়িয়াহাটে 25 নম্বর রুটে চলত। বর্তমানে নয় নয় করে দু'টি রুটে ট্রাম চলছে। অথচ প্রায় 200 উপর ট্রাম পড়ে রয়েছে যেগুলি ঝড়-জল-রোদে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷ সেগুলির প্রতি সরকারের অবহেলার শেষ নেই ৷ তড়িঘড়ি দুই ইঞ্জিনের ট্রাম তৈরির যুক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ট্রাম প্রেমীরা।

শুধুমাত্র জয় রাইডের জন্য ছোট একটি হেরিটেজ রুটে চালানো হতে পারে এই দুই ইঞ্জিনের ট্রাম। তারপর শহরবাসীর আনন্দের কোটা ফুরিয়ে গেলে আবারও একদিন হয়তো যাত্রীর অভাবে ডিপোতেই দাঁড়িয়ে থাকবে দু'মুখো এই ট্রামগুলি। তাই মহানগরের রাস্তায় ট্রামের ভবিষ্যত কী তা সময় বলবে। তবে ঐতিহ্যবাহী ট্রাম এবার রূপ বদলে মহানগরের রাস্তায় আসতে চলেছে।

ABOUT THE AUTHOR

...view details