জামালপুর, 5 জুলাই: উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার পরে এবার বর্ধমানের জামালপুর । পার্টি অফিসে ডাকা সালিশি সভায় না যাওয়ায় বাড়িতে ঢুকে এক বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলেকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে । মারধরের পাশাপাশি খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে । পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে ওই দম্পতি নিজেদের বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন ।
পার্টি অফিসে ডাকা সালিশি সভায় না যাওয়ায় আক্রান্ত সংখ্যালঘু পরিবার, কাঠগড়ায় তৃণমূল (ইটিভি ভারত) বিষয়টি নিয়ে জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি বলে নির্যাতিত পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে । যদিও পুলিশের দাবি, পরিবারটি থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ করতে আসেনি । পরে ওই পরিবার মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে । তৃণমূলের তরফে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের চকদিঘি পঞ্চায়েতের কুবাজপুর এলাকায় বসবাস করে এক সংখ্যালঘু পরিবার ৷ ওই পরিবারের ছেলে 2018 সালে গলসির খানা এলাকার একটি মেয়েকে বিয়ে করেন ৷ পারিবারিক অশান্তির জেরে ছেলেটির স্ত্রীর বাড়ির লোক খোরপোষের মামলা করে । আবার জামালপুর চকদিঘি এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের আজাদ রহমানের অফিসে বিচার করতে বলে ।
সেই জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ওই ছেলেটিকে পার্টি অফিসে ডেকে পাঠানো হয় । তিনি যাননি ৷ অভিযোগ, তাঁরা সেখানে যেতে না চাওয়ায় তাঁদের বাড়িতে প্রায় 30-35 জন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী যান । তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছেলেটিকে মাটিতে ফেলে বুকে-গলায় পা দিয়ে পেটাতে থাকে । ছেলেকে বাঁচাতে তাঁর বৃদ্ধা মা ও বাবা তৃণমূল কর্মীদের কাছে অনুরোধ করেন ৷ তখন তাঁরা ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে মারধর শুরু করেন ।
বৃদ্ধাকে মারধরের পাশাপাশি শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ । এদিকে তাঁদের চিৎকারের শব্দ শুনে আশেপাশের কেউ জামালপুর থানার পুলিশকে খবর দেয় । পুলিশ এসে ওই পরিবারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় । এরপর পরিবারটি জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । পরে পরিবারটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ।
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের ভয়ে আজ তারা গ্রাম ছাড়া । ছেলেটির বৃদ্ধা মায়ের বক্তব্য, ‘‘আমার থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানা অভিযোগ নেয়নি । উলটে আমরা বাড়ি ফিরতে পারছি না । তৃণমূলের নেতারা বলেছে বাড়িতে ফিরলে তারা প্রাণে মেরে ফেলবে । আমার বাড়িতে গরু-ছাগল হাঁস মুরগি সব কী হল, জানি না । জমিতে আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে । জানি না কিভাবে বাড়ি ফিরব ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের কাছে আমরা বলেছিলাম যেহেতু আদালতে মামলা চলছে, তাই আমরা সেখানে যা ফয়সালা হবে সেটা মেনে নেব । ওরা বলে বিচার আমরা করব । কিন্তু পার্টি অফিসে আমরা যেতে না চাওয়ায় ওরা বাড়িতে ঢুকে ছেলেকে মারধর করতে থাকে । ওরা প্রায় 30-35 জন ছিল । ভিতরে কয়েকজন মিলে ছেলেকে মাটিতে ফেলে লাথি ঘুষি মেরে পেটাচ্ছিল । আমি আর আমার স্বামী তাকে বাঁচাতে গেলে আমাদের মারধর করা হয় । আমরা মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি । জানি না বিচার পাব কি না ।’’
যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শেখ আজাদ রহমান । তিনি বলেন, ‘‘পরিবারটিকে চিনি । তাদের একটা পারিবারিক মামলা চলছে । আমরা কোনও সালিশি সভা ডাকিনি । কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি । আমাদের মিথ্যে ফাঁসানো হচ্ছে ।’’ পুলিশ সুপার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ।