পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বীরভূমে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বলি 1, আহত 4 - TMC WORKER MURDERED IN BIRBHUM

খয়রাশোলে তৃণমূল কর্মীকে রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়, রাস্তাতেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷ অন্যিদকে, শান্তিনিকেতনের মমিনপুরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত 4।

TMC WORKER MURDERED IN BIRBHUM
পুলিশ বাহিনী মোতায়েন এলাকায় (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 22, 2025, 6:08 PM IST

খয়রাশোল, 22 ফেব্রুয়ারি: অনুব্রতর গড় বীরভূমে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মৃত্যু হল দলের এক কর্মীর ৷ রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় শেখ নিয়ামুলকে ৷ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। 11 ফেব্রুয়ারি কাঁকরতলায় তৃণমূল দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি হয়, সেই রেশ কাটতে না-কাটতেই ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত বীরভূমের খয়রাশোল। পাশাপাশি, শনিবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয় শান্তিনিকেতনের মমিনপুর গ্রামও ৷

খয়রাশোল ব্লকের বড়রা গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে ৷ উজ্জ্বল হক কাদেরী গোষ্ঠীর অনুগামীদের সঙ্গে স্বপন সেন গোষ্ঠীর অনুগামীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের ৷ গত 11 ফেব্রুয়ারি কাঁকরতলায় এই দুই গোষ্ঠীর আশ্রিত দুষ্কৃতীদের মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি হয় ৷ বোমায় পা-উড়েছিল তৃণমূল কর্মীর ৷ ফের এই দুই গোষ্ঠীর অনুগামীদের সংঘর্ষে মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর ৷ এদিনও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হাতাহাতি, মারামারি হয়।

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত বীরভূম (ইটিভি ভারত)

উজ্জ্বল হক কাদেরী গোষ্ঠীর অনুগামী হিসাবে পরিচিত শেখ নিয়ামুলকে রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ৷ গুরুত্বর জখম অবস্থায় তাঁকে প্রথমে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ অবস্থার অবনতি হলে দুর্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। রাস্তাতেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷ এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায় ৷ পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় ৷ জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের কাজের টেন্ডার-সহ বিভিন্ন বেআইনি কাজের টাকার ভাগকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের ৷

মমিনপুর গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চলে ইটবৃষ্টি (নিজস্ব ছবি)

মৃত শেখ নিয়ামুলের দাদা আক্রামুল শেখ বলেন, "আমার ভাই তৃণমূল করে ৷ কালো, দিলখুশ, মিলনরা মিলে আমার ভাইকে খুন করেছে ৷ এই নামগুলো পরিচিত এলাকায়। আমার ভাইয়ের খুনের বিচার চাই।"

প্রসঙ্গত, গরুপাচার ও আর্থিক তছরুপের মামলায় জামিন পেয়ে 2 বছর পর বীরভূমে ফিরেছেন অনুব্রত মণ্ডল। অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে তাঁরই যুযুধান হিসাবে পরিচিত ফায়জুল হক ওরফে কাজল শেখ জেলা পরিষদের সভাধিপতি হন ৷ দেখা যাচ্ছে, অনুব্রত ফেরার পর দলের রাশ নিজের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, বলে অভিযোগ ৷ কিন্তু, কাজল শেখও রাজনৈতিক জমি ছাড়তে নারাজ ৷ অনুব্রত ফিরতেই দিকে দিকে শুরু হয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, এমনটাও অভিযোগ উঠছে ৷ নানুর থেকে শুরু করে কাঁকরতলা, দুবরাজপুর, বোলপুর, ইলামবাজার, কাঁকরতলা, সাঁইথিয়া প্রভৃতি জায়গায় দলের কোন্দল সামনে আসছে ৷ যদিও, এই মর্মে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোনও শীর্ষ নেতা ৷

দু'পক্ষই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে (নিজস্ব ছবি)

অন্যদিকে, আজ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত অনুব্রত মণ্ডলের আরও এক গড়। শান্তিনিকেতন থানার রূপপুরের মমিনপুর গ্রামে চলে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ইটবৃষ্টি। ভাঙচুর করা হয় বাড়িঘর, বাইক, দোকান প্রভৃতি। চালানো হয় লুটপাট। ঘটনায় আহত হন দু'পক্ষের 4 জন। তাঁদের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দু'পক্ষের 10 জনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাকে কেন্দ্র উত্তেজনা থাকায় সিআই ও ওসির নেতৃত্বে পুলিশি টহল চলছে ৷

গ্রাম কার দখলে থাকবে, অর্থাৎ পঞ্চায়েত থেকে হওয়া রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণের রাশ কার হাতে থাকবে, টাকার বখরা কার ? মূলত এই নিয়েই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ৷ দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চলে ইটবৃষ্টি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাবু দাসের গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গ্রামের আরেকটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই চলে সংঘর্ষ। ইটের আঘাতে মাথা ফেটে জখম হন 4 জন ৷ এক পক্ষের 3 জন ও অন্য পক্ষের একজন ৷ সকলকেই বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দু'পক্ষের বাড়িতেই চলে ইটবৃষ্টি।

ভাঙচুর করা হয় বাড়ি ঘর, দোকান ঘর, বাইক ৷ এমনকী, লুটপাটও চালানো হয় ৷ ঘটনার পর থেকেই ব্যাপক উত্তেজনা গ্রামে ৷ গ্রামের মহিলারাও ইট ছোড়ায়, সংঘর্ষে অংশ নেন ৷ এই ঘটনায় দু'পক্ষেরই 10 জনকে আটক করেছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ ৷ দু'পক্ষই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ৷ তৃণমূল নেতা বাবু দাসের গোষ্ঠীর লোকজনের অভিযোগ, অপর গোষ্ঠী সিপিআইএমের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামের উন্নয়নের কাছে বাধা দিচ্ছে।

পালটা অপর গোষ্ঠীর অভিযোগ, তারা তৃণমূল-কংগ্রেসেরই সদস্য দীর্ঘদিন ধরে ৷ এটা তৃণমূলেরই গোষ্ঠী কোন্দল। তবে ঘটনায় উত্তেজনার পাশাপাশি আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। বোলপুরের সিআই ও শান্তিনিকেতন থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশি টহল চলছে। বাবু দাসের গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে হেনা খাতুন, হাসিনা বিবি বলেন, "বারবার গ্রামে ওরা অশান্তি করে ৷ ওরাই ইট ছুড়েছে ৷ আমরা সবাই তৃণমূল করি ৷ ওরা সিপিআইএম করে। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।"

অপর গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে নাহারা বিবি, সায়রা খাতুন বলেন, "ওরা এর আগেও গ্রামে অশান্তি করেছে। আমরা সবাই তৃণমূল করি, ওরাও তৃণমূল দল করে ৷ সব কিছু ভেঙে দিয়েছে ৷ আমাদের লোকেদের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে ৷ আতঙ্কে আছে সবাই।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details