কলকাতা, 17 জুলাই: দলের সাংগঠনিক বৈঠক থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্লোগান 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ'-এর উলটো সুর শোনা গেল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গলায়। বুধবার সায়েন্স সিটিতে বিজেপির পর্যালোচনা বৈঠকে শুভেন্দুর বক্তব্যের পালটা কটাক্ষ ছুড়ে দিল তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ জোড়াফুল শিবিরের স্পষ্ট দাবি, বিজেপি শুধুমাত্র হিন্দুদের একটি দল ৷
এদিন বিজেপির পর্যালোচনা বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, "সবকা সাথ সবকা বিকাশ বন্ধ কর। রাষ্ট্রবাদী মুসলিম চাই না। সংখ্যালঘু মোর্চা চাই না। যাঁরা আমাদের সঙ্গে, আমি বা আমরা তাঁদের সঙ্গে। ভোটের আগে অনেক বলেছি রাষ্ট্রবাদী মুসলিম কিন্তু আর নয়। যাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকবেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা থাকব।" রাজনৈতিক মহল শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যকে যথেষ্ট বিস্ফোরক বলেই মনে করছে। ঠিক তখন পালটা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। পরে অবশ্য এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, তাঁর মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে ৷ তাতে অবশ্য বিতর্ক থামছে না ৷
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ঋজু দত্ত এদিন সোশাল মিডিয়ায় শুভেন্দুর এই বক্তব্যের কটাক্ষ করে লিখেছেন, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে স্লোগানকে সামনে এনেছেন সেই 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ'-এর বিরোধিতা করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অনুমান করুন তিনি সম্ভবত নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর থেকেও অনেক উঁচুতে মনে করছেন। তার থেকেও বড় কথা উনি বলছেন, জো হামারে সাথ হাম উনকে সাথ অর্থাৎ যে আমার সঙ্গে থাকবে আমি তার সঙ্গে থাকব। বিজেপিতে সংখ্যালঘু মোর্চার দরকার নেই। এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিজেপি শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্য একটি দল ৷ এতে মুসলমানদের কোনও স্থান নেই।"
তৃণমূল নেতার আরও দাবি, বিরোধী দলনেতার এই বক্তব্য অসংবিধানিক শুধু নয়, জাতীয়তাবাদের বিরোধী। এদিন বিরোধী দলনেতার এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন দলের অন্যতম মুখপাত্র শান্তনু সেনও। তিনি বলেন, "একদিকে মানুষের রায়ে গোহারান হেরে গিয়েছে বিজেপি। সেই হারকে ওরা মেনে নিতে পারছে না। অন্যদিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হতে হতে তাদের কঙ্কালসার চেহারাটা সামনে চলে এসেছে। চরম হতাশা থেকেই তাদের মনের মধ্যে থাকা আসল কথাটা এবার বেরিয়ে পড়েছে।" তিনি আরও বলেন, "বিজেপি যে বারবার হিন্দু ধর্মে রাজনীতি করতে চায়, এক্ষেত্রে বিজেপি যে যারা তাদের পাশে থাকবে শুধু তাদের জন্যই উন্নয়ন করতে চায় ৷ সেটা মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির পার্থক্য।"
তিনি আরও বলেন, "নরেন্দ্র মোদি শুধু বিজেপির প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি এখন বলছে যারা তাদের পাশে থাকবে শুধুমাত্র তাদের জন্যই কাজ করবে ওরা ৷ বাকিদের জন্য কিছু করবে না।" শান্তনু সেনের কথায়, "দেশের মানুষ বিজেপির আসল চেহারাটা বুঝতে পেরে গিয়েছে। আর সে কারণেই লোকসভা নির্বাচনে তাদের বর্জন করেছে মানুষ। সে ক্ষেত্রে ইলেকশন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে পল্টুরাম নীতীশ কুমার আর সুবিধাবাদী চন্দ্রবাবু নাইডুকে নিয়ে একটা অস্থায়ী সরকার তৈরি করেছে। বাংলার মানুষ বিজেপির মুখোশ খুলে দিয়েছে। বাংলাতেও তারা চেষ্টা করেছিল কিন্তু বাংলার মানুষ তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। আগামী দিনে গোটা দেশেও তাদের মুখোশ খুলে পড়বে।"