কলকাতা, 14 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচি ৷ স্বাধীনতা দিবসের সন্ধিক্ষণে বুধবার রাতে কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যস্ত জায়গাগুলিতে মেয়েরা জমায়েত করে এই কর্মসূচি পালন করবে ৷ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া পোস্ট থেকে তেমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে ৷ মেয়েদের এই রাত দখলের কর্মসূচিতে নিজে একজন বাবা ও দাদু হিসাবে এবার যোগ দিতে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় ৷ এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে সে কথা জানিয়েছেন তিনি ৷ তবে তাঁর এই পদক্ষেপে কৌশল দেখছে বিজেপি ৷
সুখেন্দুশেখর রায় পোস্টে জানিয়েছেন, যেহেতু তিনিও মেয়ের বাবা এবং নাতনির দাদু, তাই লক্ষ লক্ষ বাঙালি প্রতিবাদীর তিনিও একজন । আর সে কারণেই তিনি মেয়েদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেবেন । কেবল এখানেই থামেননি তিনি ৷ আরও একধাপ এগিয়ে সরাসরি তৃণমূল সাংসদ লিখেছেন,"আমাদের এ বিষয়ে সরব হতে হবে । মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসা অনেক হয়েছে । চলুন সংঘবদ্ধ হয়ে এর প্রতিরোধ করি ।" আর তাঁর এই ঘোষণাতেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তৃণমূল সাংসদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ কি স্বতঃস্ফূর্ত নাকি সবটাই কৌশল !
পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলের অন্তরে এই প্রশ্নও ঘোরাফেরা করছে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদের এই বক্তব্য কি দল অনুমোদন করে ? নাকি ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই দলীয় অনুশাসনের বাইরে গিয়ে তাঁর এই প্রতিবাদ । কারণ ভুলে গেলে চলবে না তিনি শুধু দলের একজন সাংসদ নন সুখেন্দুশেখর রায় অন্যতম সম্পাদক, জাতীয় মুখপাত্রদের মধ্যেও একজন । সেই জায়গা থেকে তাঁর এই অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
একইসঙ্গে এটাও জানা প্রয়োজন, নাতনির দাদু বা মেয়ের বাবা হিসেবে তাঁর এই বক্তব্য দলীয় অনুশাসনের ঊর্ধ্বে ওঠে কি না । তৃণমূল কংগ্রেসের এক শীর্ষ স্থানীয় নেতার কথায়, "আমার জানা নেই এখনও পর্যন্ত সুখেন্দুশেখর রায় এই বক্তব্য দলীয় অনুমোদন নিয়ে দিয়েছেন কি না । তবে যেখানে দলনেত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার নিন্দা করেছেন, যেখানে দলনেত্রী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অর্থাৎ ফাঁসি চান, এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে এই ঘটনার কঠোর নিন্দা করেছেন, সেখান থেকে ভাবনা চিন্তা করেই নিশ্চয়ই উনি (সুখেন্দুশেখর রায়) এসব বলেছেন ।"
তবে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি অবশ্য সুখেন্দুশেখর রায়ের এই বক্তব্যে বিশেষ কৌশল খুঁজে পাচ্ছে । সুখেন্দুশেখর রায়ের এই পোস্ট তুলে ধরে বিজেপির আইটি সেলের নেতা অমিত মালব্য সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "প্রথমে অপর্ণা সেন এবার সুখেন্দুশেখর রায় । মমতার পুরনো কৌশল, আন্দোলনে সামিল হয়ে সেই আন্দোলনের দখল নেওয়া ।"
এর পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসকে সাপের সঙ্গে তুলনা করে তিনি লিখেছেন, "আরজি কর হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ুয়ার ধর্ষণ এবং খুনে যাঁরা বিচার চাইছেন তাঁরা তৃণমূল নেতাদের এই আন্দোলনের কাছেও ঘেঁসতে দেবেন না । তাঁরা আসলে সাপ ।"
প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে । এই কর্মসূচিতে সরাসরি রাজনীতি করেন তৃণমূল কংগ্রেসের এমন মহিলাদের একাংশেরও সমর্থন রয়েছে । কিন্তু সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শাসকদলের সাংসদের বক্তব্য এবং তারপর বিজেপির তা নিয়ে পালটা বক্তব্যে সরগরম রাজ্য রাজনীতি ।