আমতলা, 10 অগস্ট: দীর্ঘমেয়াদি বিচার প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী নন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় ৷ শনিবার সন্ধ্যায় আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক খুনের ঘটনায় তাঁর মতামত স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ ৷ এদিন তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, "এমন আইন আনা উচিত, যাতে খুনি-ধর্ষকদের 7 দিনের মাথায় এনকাউন্টার করে মারা যাবে ৷"
আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ইটিভি ভারত) পাশাপাশি হাসপাতালে সাধারণ মানুষের অবাধ বিচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ ৷ তিনি বলেন, "বিশেষ করে এই হাসপাতালগুলিতে রাত 9-10টার পর এই অবাধ যাতায়াত, এর উপর নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে ৷ কেন একটি হাসপাতালে রাত্রি 9-10টার পর যে পারবে ঢুকবে ? এরও একটা মেকানিজম থাকা উচিত ৷" বিজেপির সিবিআই তদন্তের দাবির সমালোচনা করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতা ৷ তিনি বলেন, "সিবিআই তদন্ত হলে কি মেয়েটা আবার ফিরে আসবে ? কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে যে এই ঘটনা আর ঘটবে না ?"
শুক্রবার সকালে আরজি কর হাসপাতালের চারতলায় সেমিনার হল থেকে তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার হয় ৷ তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে এক সিভিক ভলান্টিয়ার ৷ এই মৃত্যুতে হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷ হাসপাতালে সাধারণ মানুষের অবাধ বিচরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ৷ রাজ্যের চিকিৎসক, ডাক্তারি-পড়ুয়ারা এনিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন ৷ শনিবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হাসপাতালে কর্মবিরতির ডাক দেয় কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা ৷
এই বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "এই ঘটনা অত্যন্ত নারকীয় ৷ 24 ঘণ্টার মধ্যে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ কিন্তু এই সব খুনি এবং ধর্ষকদের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই ৷" এই ধরনের অপরাধীদের দ্রুত সাজা দেওয়ার পক্ষে মত দেন অভিষেক ৷ সেই সাজার জন্য সংসদে কঠোর আইন প্রণয়নের কথা উত্থাপন করেন দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড ৷ খুনি ও ধর্ষকদের সাত দিনের মধ্যে এনকাউন্টার করে মারা উচিত বলে জানান ।
ধর্ষণকাণ্ডে বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রিতার বিরোধিতা করেছেন অভিষেক ৷ তাঁর সাফ কথা, "এ সমস্ত ঘটনা যারা ঘটায় তাদের সমাজে থাকার অধিকার নেই ৷ আপনারা মনে করেন, যারা এই ঘটনা ঘটাল তার বেঁচে থাকার অধিকার আছে ?" সাংসদের প্রশ্ন, "কোনও ঘটনা না ঘটলে আমাদের ঘুম ভাঙে না ৷ এ ধরনের ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই আইন আনা হয় না কেন ? চাইলেই আনা যায় ৷ যারা ক্ষমতায় আছে, তারা এই বিল আনুক ৷ আইনসভায় অর্ডিন্যান্স আনুক ৷ আইন সংশোধনী আনুন ৷ যাতে সাতদিনে ধর্ষকদের বিচার করা যায় ৷ তৃণমূল সেই বিলকে সমর্থন করবে ৷ কংগ্রেস ও সিপিএমেরও উচিত সেই বিলকে সমর্থন করা ৷"
দীর্ঘমেয়াদি বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে অভিষেক বলেন, "কেন 5-7 বছর ধরে ট্রায়াল চলবে ?বিজেপির উচিত তাদের নেতৃত্বকে বলা, সংসদে যাতে অধ্যাদেশ আনা হয়। এই ধরনের ঘটনায় সাত দিনে বিচার শেষ করতে হবে, এই অধ্যাদেশ আনুক ৷ ছ’মাস পরে তা বিল আকারে আসুক ৷ তা আনলে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম সবার উচিত সেই বিলকে সমর্থন করা ৷"
তাঁর বক্তব্য, পারিপার্শ্বিক প্রমাণ থাকলে দ্রুত বিচার করা উচিত ৷ না হলে অপরাধীকে জেলে খাওয়াতে-পরাতে যে বিপুল খরচ হবে, তা দিয়ে অনেক গরিব মানুষের উন্নয়নের কাজ করা যাবে ৷ এই প্রসঙ্গেই আজমল কাসভের উদাহরণ টানেন অভিষেক ৷ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের বক্তব্য, "ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে গুলি করে মানুষ মারছে, তার পরেও কেন বিচারে বিলম্ব ?"