মালদা, 7 জানুয়ারি:কিছুদিন ধরেই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ৷ মঙ্গলবার স্বামীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের দিন বোমা ফাটালেন নিহত তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকার ৷ সাফ জানালেন, এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি অবশ্যই রয়েছে ৷ প্রতিটি মানুষ জানে, কে বা কারা এর পিছনে রয়েছে ৷ স্বামীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের কাজকর্ম মিটলেই তিনি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সব কথা জানাবেন ৷
সোমবার চৈতালির সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ৷ তিনি বেরিয়ে যেতেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তৃণমূল নেতার স্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "আমি বারবার বলছি, এটা কোনও ছোটখাটো ঘটনা নয় ৷ যারা এই ঘটনায় জড়িত, প্রতিদিন তাদের কাউকে না কাউকে ধরা হচ্ছে ৷ কিন্তু এর পিছনে আসল মাথা যারা, তাদের ধরার যথাযথ ব্যবস্থা যেন করা হয় ৷ দিদি যেন সেই ব্যবস্থা করেন ৷ চন্দ্রিমাদিকেও সেটা জানালাম ৷’’
শ্রাদ্ধের দিন বিস্ফোরক অভিযোগ দুলাল সরকারের স্ত্রীর (ইটিভি ভারত) তাঁর কথায়, "আমি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করি ৷ দলের মহিলা সংগঠনের জেলা সভানেত্রী হিসাবে কয়েক বছর কাজ করেছি ৷ চন্দ্রিমাদি সেই সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী ৷ আমাদের সম্পর্কটা শুধু দলীয় নয়, পারিবারিকও ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই তিনি আজ এখানে এসেছিলেন ৷ তাঁর যা জানার, তা জেনে গেলেন ৷ এখানকার কাজ শেষ হলে আমিও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব ৷"
চৈতালি ঘোষ সরকারের বক্তব্য, "পুলিশ তাদের মতো তদন্ত করছে ৷ আমি আর আমার ছেলে আসল দোষীর শাস্তির অপেক্ষায় রয়েছি ৷ এর পিছনে দলীয় স্বার্থের সংঘাতও থাকতে পারে ৷ হয়তো অনেকে ভেবেছিল, তারা রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে ৷ দুলাল সরকার হয়তো রাজনৈতিকভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এমন একটা জায়গায় আছে, যেখানে তারা পৌঁছোতে পারবে না ৷ সেটাই তাদের হিংসার কারণ ৷ তাদের লোভ আর ক্ষমতার অসম্ভব চাহিদা ৷ তা থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে ৷ তবে একজন নয়, আমার ধারণা, একাধিক মানুষ এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ৷"
তাঁর সংযোজন, "সম্প্রতি দুলাল সরকারকে চেয়ারম্যান করার কথা চলছিল ৷ মালদার মানুষ জানে, কে বা কারা এই চক্রান্তের মূল মাথা ৷ দিনের আলোর মতো সেটা পরিষ্কার ৷ তবে আমি কারও নাম বলতে চাই না ৷ আমরা চাই, পুলিশের মাধ্যমেই তাদের নাম সামনে আসুক ৷ রাজনীতি করতে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই ৷ কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে এই পর্যায়ে পৌঁছোতে পারে, তা কখনও কল্পনা করিনি ৷ এভাবে একজনকে নৃশংসভাবে খুন করা মানা যায় না ৷ পুলিশের কাছে আমার আবেদন, আসল দোষীরা যেন লুকোতে না পারে ৷ কোনও প্রলোভন বা চাপ যেন তদন্তে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় ৷ আমার কাছে থাকা তথ্য আমি দিদিকে জানাব ৷"
চৈতালির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, "উনি মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানাবেন বলেছেন ৷ ভালোই তো ৷ মুখ্যমন্ত্রী ভালো করে দেখুন ৷ উনি যদি ভেবে থাকেন, তাঁর স্বামী চেয়ারম্যান হতো, তাই তাঁকে মেরে দেওয়া হয়েছে, সেটা ওঁর ব্যাপার ৷ এনিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই ৷ আমি নিজেই তো মুখ্যমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ অ্যাকশন নিতে বলেছি ৷ তিনি সেটা নিয়েছেন ৷ আমি সবার আগে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, দোষীরা যাতে ধরা পড়ে ৷ তার অ্যাকশনও হয়েছে ৷"
এদিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুল রহিম বকসির বক্তব্য, "বাবলাদা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন ৷ কোনও সাধারণ মানুষ ছিলেন না ৷ তিনি এই জেলায় দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ৷ দলের জেলা সভাপতি ছিলেন, পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন, ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর ছিলেন ৷ মালদা জেলার অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন ৷ দলের যে কোনও পদে বসার মতো যোগ্যতা তাঁর ছিল ৷ দল মনে করলে যে কোনও জায়গায় তাঁকে রাখতে পারত ৷"
তাঁর কথায়, "কেন তাঁকে খুন করা হল, তদন্ত শেষ না হলে আমরা বলতে পারছি না ৷ এর সঙ্গে যারাই যুক্ত থাকুক না কেন, তাদের শাস্তি হবে ৷ পুলিশকে দ্রুত তদন্ত শেষ করতে হবে ৷ মূল আসামীকে বের করতে হবে ৷ পুলিশ ব্যবস্থা না নিতে পারলে তৃণমূলের কর্মীরা রাস্তায় নেমে তার শাস্তির ব্যবস্থা করবে ৷ বাবলাদাকে চেয়ারম্যান করা হতো কি না, সেটা আমি বলতে পারব না ৷ সেটা দিদি বলতে পারবেন ৷ তবে তাঁর সবরকম পদ পাওয়ার যোগ্যতা ছিল ৷"