বসিরহাট, 16 মে: "সাংসদ হিসেবে কোনও উন্নয়ন করেননি নুসরত জাহান। ডেকেও কোনও দিন পাওয়া যায়নি তাঁকে।" একথা বিজেপি, সিপিএম কিংবা কোনও বিরোধী দলের নেতার কথা নয় ৷ দলের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে যিনি এই কথাগুলো বলছেন তিনি একজন শাসকদলেরই জনপ্রতিনিধি। হাড়োয়া বিধানসভার তৃণমূল নেতা একেএম ফারহাদ। এলাকায় তাঁর যথেষ্ট নামডাকও রয়েছে। নুসরত প্রসঙ্গে মুখ খুলতে গিয়ে কার্যত বিস্ফোরক দাবি করেছেন শাসক দলের এই নেতা। তাঁর কথায়, "কাজ করছেন মামা, আর নাম হচ্ছে ভাগ্নের। নুসরতের অবস্থা সেরকমই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গোটা রাজ্যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। আর তা নিয়ে কেউ যদি দাবি করে থাকে, আমি এই উন্নয়নের কাজ করেছি। অথচ জানতে পারল না কেউই। এটা হতে পারে না। তাই, যা হওয়ার তাই হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। এজন্য তাঁকে কুর্নিশ জানাই।"
বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে নুসরত জাহানকে এবারে আর প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়নি দলেরই একাংশ। এর কারণও ছিল যথেষ্ট। দলের সাংসদকে এলাকায় ঠিকমতো না-পাওয়া, বিপদে-আপদে সাধারণ মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে ব্যাক্তিগত পরিসরে তাঁর বেশি ব্যস্ত থাকা। এসব নিয়ে ভোটের আগে থেকেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছিল দলীয় নেতা, কর্মীদের মধ্যে। নুসরতকে ঘিরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ায় ফের তাঁকে প্রার্থী করার ঝুঁকি নেয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। পরিবর্তে বসিরহাটের ভূমিপুত্র তথা হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামকে প্রার্থী করা হয়েছে এই কেন্দ্র থেকে। তবে, আগেও বসিরহাট কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে জিতে সংসদে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে এখান থেকে নির্বাচনে লড়াইয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে হাজি নুরুলের। তাই, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বসিরহাট কেন্দ্রে এবারও শাসকদলের তুরুপের তাস হতে পারেন এই তৃণমূল নেতা।
তবে 2024 লোকসভা ভোটে না-থেকেও নুসরত যেন রয়ে গিয়েছেন বসিরহাট কেন্দ্রে। বিরোধী শিবির, বিশেষ করে পদ্ম নেতারা ভোটের আবহে সুযোগ পেলেই বিদায়ী সাংসদ নুসরতের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না। কিন্তু, বিরোধীরা সমালোচনা করবেন রাজনীতিতে এটাই স্বাভাবিক! শাসকদলের বিদায়ী সাংসদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করছেন তাঁর দলেরই বর্তমান জেলাপরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। যা সচরাচর দেখা যায় না ৷ সেটাই ঘটেছে নুসরতকে কেন্দ্র করে।
বিদায়ী সাংসদ নুসরত জাহান কী তাঁর সংসদীয় এলাকার মানুষ ঠিকমতো পেয়েছে কি না, সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে জেলাপরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ বলেন, "তাঁর দর্শনই পাওয়া যায়নি। যখনই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে কোনও বিষয়ে, যোগাযোগ করতে পারিনি আমরা। অথচ, অন্যান্যদের সঙ্গে এই তারকা সাংসদের দিব্যি যোগাযোগ ছিল। আর উন্নয়ন কী হয়েছে তা কখনও চোখে দেখিনি। উন্নয়ন যদি হত তাহলে তো আমরা দেখতে পেতাম। কারণ, আমি একজন জনপ্রতিনিধি। তৃণমূলের নিচুস্তরে কাজ করে থাকি। তাই, সেরকম কিছু হলে সবার নজরে পড়ত। ওনার (নুসরত) সঙ্গে কোনও মানুষেরই ঠিকমতো যোগাযোগ ছিল না।"