বারাসত ও কলকাতা: একাকিত্বই এখন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা ৷ শুধু বার্ধক্যে নয়, এখন যে কোনও বয়সের মনকেই একাকিত্ব গ্রাস করছে ৷ যে যাঁর ছোট ছোট জগতে স্মার্ট ফোনে মুখ গুঁজে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব খোঁজায় ব্যস্ত ৷ ফলে বাস্তব দুনিয়ায় সকলে কমবেশি একাই থেকে যাচ্ছেন ৷ আর বয়স্কে মানুষজের জ্বালাটা আরও বেশি ৷ না তাঁরা ভার্চুয়াল বন্ধুত্বে অভ্যস্ত না বাস্তব দুনিয়ায় তাঁদের সঙ্গ দেওয়ার কেউ আছে ৷ ফলে ঘরের এককোণে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটানো ছাড়া, অসুস্থ হলে অসহায় চোখে সাহায্যের অপেক্ষা করা ছাড়া তাঁদের কাছে কোনও উপায় থাকে না ৷ এই সব মানুষদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাঁড়িয়ে দিচ্ছে 'অটম লিভস' ও 'সাথে আছি' নামের দুই সংস্থা ৷
'সাথে আছি' সংস্থার কর্মকর্তা দিব্যেন্দু রায় বলেন, "একসময় প্রবীণরা কোনও সমস্যায় পড়লে পাড়ার ছেলেরাই এগিয়ে আসত। কিন্তু, ফ্ল্যাট সংস্কৃতি এবং চাকরির সুবাদে সন্তানরা বাইরে থাকার কারণে তাঁদের বাবা-মায়েরা এখন একা হয়ে পড়ছেন। অসুস্থ হলে ডাক্তার কিংবা অন্য কোনও জরুরি পরিষেবার জন্য কাউকে ডাকবেন, সেটাও পাচ্ছেন না তাঁরা। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই নিঃসঙ্গ প্রবীণদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছি আমরা। যার উদ্দেশ্যই হল একাকীত্ব জীবন থেকে বয়স্কদের স্বস্তি দেওয়া।"
'অটম লিভস' ও 'সাথে আছি' সংস্থা (ইটিভি ভারত) অটম লিভসের দীপশিখা নিয়োগী বলেন, "আমাদের কোনও কিছুতেই না নেই ৷ আমাদের কেয়ার ম্যানেজাররা সুপারহিরো ৷ আমরা মেডিক্যাল ও নন-মেডিক্যাল পরিষেবা দিয়ে থাকি ৷ রাত 2টোর সময় যদি কেউ অসুস্থ হন তাহলেও আমরা ছুটে যাই ৷ আবার যদি কারও ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের কাজ করে দিতে হয় সেখানেও আমাদের কেয়ার ম্যানেজাররা রয়েছেন ৷" অটম লিভসের কো-ফাউন্ডার নীলাদ্রি জানান, আসলে কাজের জন্য ছেলে-মেয়েদের বাইরে যেতেই হয় ৷ তখন বাবা-মায়েরা ভীষণ একা হয়ে পড়েন ৷ অন্যদিকে, সন্তানরা চিন্তিত থাকেন বাবা-মায়েদের নিয়ে ৷ সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একটা যোগসূত্র তৈরি করে আমাদের অটম লিভস সংস্থা ৷
দীর্ঘ সময় ধরে 'সাথে আছি' সংস্থার পরিষেবা নিয়ে চলেছেন প্রাক্তন রেল কর্মী তপন কুমার বোস কিংবা 84 বছর বয়সী কৃষ্ণা সেনগুপ্ত ৷ তপন কুমার বলেন, "এই সংস্থার কাজকর্মে আমরা ভীষণ সন্তুষ্ট। ওঁরা প্রতিনিয়ত আমাদের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। কোনও কিছুর প্রয়োজন হলেই পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে পরিষেবা দেয়, তা এককথায় অকল্পনীয়। মাঝেমধ্যে বাড়িতে এসে আড্ডা তো দিয়েই থাকে। ওঁদের পাশে পেয়ে আমরা নিশ্চিত।"
সংঘমিত্রা চক্রবর্তীও দীর্ঘ সময় ধরে অটম লিভস পরিবারের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ৷ তিনি একজন সঙ্গীত শিল্পী ৷ তিনি কবিতার মাধ্যমে বলেন, "দিনান্তবেলায় শেষের ফসল নিলেম তরী-'পরে, এ পারে কৃষি হল সারা, যাব ও পারের ঘাটে... ঠিক তখনই পাশে এসে দাঁড়াল বেশ কিছু যুবক-যুবতী ৷ বাড়িয়ে দিল তাঁদের হাত ৷" বলা বাহুল্য, শক্ত সেই হাত ধরে আজ বেজায় ভাল আছেন সংঘমিত্রা চক্রবর্তী ।