তারাপীঠ, 7 জুলাই: সারাদেশে এমনকী বিদেশেও যখন রথে চড়ছেন জগন্নাথ সেইদিন রথের চাকা গড়াল তারাপীঠেও ৷ তবে তারাপীঠের রথ ব্যতিক্রম ৷ এই রথে জগন্নাথ মূর্তি ওঠে না, পরিবর্তে রথে চড়েন মা তারা ৷ আর সেই রথযাত্রা দেখতে রবিবার উপচে পড়ল ভক্তদের ভিড় ৷
রথে চড়ে তারাপীঠে ঘুরলেন মা তারা (ইটিভি ভারত) প্রতি বছরের মতো রীতি মেনে এদিনও গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে রথে চড়ে তারাপীঠে ঘুরলেন মা তারা ৷ কারণ তারাপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা তারা। তারা মায়ের ভক্ত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ তারাপীঠে রথের প্রচলন করেছিলেন বলে লোকশ্রুতি প্রচলিত আছে ৷ এদিন সেই পিতলের রথেই মা তারাকে বসিয়ে ঘোরানো হল ৷ পবিত্র রথযাত্রায় রথে নেই, জগন্নাথ, বলভদ্র বা সুভদ্রা ৷
প্রতি বছরের মতো মা তারার রথযাত্রা দেখতে উপচে পড়েছে ভিড়। বহু মানুষ তাঁদের পরিবারের মঙ্গল কামনার জন্য হাজার হাজার ভক্তদের মধ্যে মণ্ডা, মিঠাই বিতরণ করেন। তারাপীঠের রথযাত্রায় কয়েক হাজার ভক্ত হাজির হয়েছিলেন ৷ ধুমধাম সহকারে ঘুরল রথের চাকাও ৷ কলকাতার ইসকনের রথ, হুগলির মাহেশ ও মহিষাদলেও প্রাচীন রথযাত্রায় সব রথেই বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ রথে চড়ে মাসির বাড়ি যান ৷ সেটাই স্বাভাবিক রীতি ৷ ব্যতিক্রম শুধু তারাপীঠের রথ ৷ এখানে রথে করে মা তারাকে ঘুরিয়ে ফের মন্দিরেই নিয়ে আসা হয় ৷
তারাপীঠের রথযাত্রা ঠিক কবে শুরু হয়েছিল, তার দিনক্ষণ কেউ জানে না ৷ তবে মন্দিরের সেবাইত প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বইয়ে উল্লেখ আছে, তারাপীঠের বিখ্যাত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ তারাপীঠে রথের প্রচলন করেছিলেন ৷ মা তারার জন্য তৈরি করা হয়েছিল একটি পিতলের রথ ৷ সেই রথে করেই আজও পরিক্রমা করেন মা তারা ৷ মা তারার রথের জন্য রথ ঘরও তৈরি করা হয়েছিল ৷ যুক্তফ্রন্টের আমলে ওই রথ ঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায় ৷ সারা বছর ওই রথ ঘরেই পিতলের রথ রাখা হয় ৷
সেই বহু প্রাচীন রীতি মেনে এদিন বিকেলে মা তারাকে ওই রথে বসিয়ে ঘোরানো হল তারাপীঠে। বেলা তিনটে নাগাদ মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করে রথে বসানো হয় ৷ তারপরই হাজার হাজার মায়ের ভক্ত রথের দড়ি টান দেয় ৷ তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, "রথ কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা আর বলা সম্ভব নয়। রীতি মেনে প্রতি বছরের মতো আজ মা তারাকে রথে চেপে তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করানো হয়েছে ৷ সন্ধ্যা আরতির আগে ফের মূল মন্দিরে বিগ্রহকে বসানো হয় ৷"
রথ থেকেই ভক্তদের উদ্দেশে প্যাঁড়া, বাতাসা, মণ্ডা বিতরণ করা হয়। কথিত আছে, এই প্রসাদ গ্রহণ করলে পুনর্জন্ম হয় না। সেই বিশ্বাসে প্রতি বছরের মতো এবারও হাজার হাজার ভক্ত ভিড় জমেছিল তারাপীঠে ৷