বরানগর, 28 অক্টোবর: মহিলা সাংবাদিককে শ্লীলতাহানির অভিযোগে এবার সাসপেন্ড হওয়া সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যকে তলব করল বরানগর থানা । পুলিশের তলবে সাড়া দিয়ে সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ এক সঙ্গীর বাইকে করে বরানগর থানায় পৌঁছন তিনি । এরপর, সোজা তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের ঘরে ঢুকে যান তন্ময় ।
পুলিশ সূত্রে খবর, সেখানে দীর্ঘ সময় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । যদিও, থানায় প্রবেশ করার সময় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি । শুধু তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, "এখনও জিজ্ঞাসাবাদের পর্ব শেষ হয়নি । তাই এখনই কিছু বলব না । জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলেই যা বলার বলব ।"
বরানগর থানায় হাজিরা তন্ময় ভট্টাচার্যের (ইটিভি ভারত) শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত সিপিএমের এই সাসপেন্ড হওয়া নেতার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য দুটি ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে বরানগর থানার পুলিশ । এর আগে রবিবারও একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে । সেই জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি তিনি তাঁর দলকে জানিয়েও দিয়েছিলেন বলে খবর সিপিএম সূত্রে । রবিবারের পর ফের সোমবার তাঁকে তলব করল বরানগর থানা । ইতিমধ্যে ঘটনাটি নিয়ে তিনি আইনজীবীর পরামর্শও নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে তন্ময়ের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে ।
প্রসঙ্গত, রবিবার ফেসবুক লাইভ করে এক মহিলা সাংবাদিক অভিযোগ করেন, সেদিন সকালে তিনি সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার নিতে তাঁর বরানগরের বাড়িতে গিয়েছিলেন । সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় হঠাৎই ওই সিপিএম নেতা নাকি তাঁর কোলে বসে পড়েন । মহিলা স্পষ্টভাবে জানান, তিনি এসব পছন্দ করেন না ।
ওই সাংবাদিকের আরও অভিযোগ ছিল, বরাবরই নিজের মাত্রার বাইরে গিয়ে ইয়ার্কি-ঠাট্টা করেন তন্ময় ভট্টাচার্য । পছন্দ না হলেও বিষয়টাকে নিজের মতো করে এড়িয়ে যেতেন তিনি । তবে রবিবার এ নিয়ে মাত্রা ছাড়ানোয় তিনি ফেসবুক লাইভ করে তন্ময়ের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি এবং অভব্য আচরণের অভিযোগ আনেন । তাঁর এই অভিযোগ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সোশাল মিডিয়ায় । যার জেরে অস্বস্তিতে পড়তে হয় সিপিএমকেও ।
বরানগর থানায় তন্ময় ভট্টাচার্য (নিজস্ব ছবি) সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়কের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠতেই কড়া অবস্থান নেয় রাজ্য নেতৃত্ব । দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সাংবাদিক সম্মেলন করে তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন । তিনি বলেন, "এই ধরনের অভিযোগ শোনার জন্য দলে ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি রয়েছে । তার একটা পদ্ধতিও আছে । কিন্তু তার জন্য সময় লাগে । তাই তার আগেই আমরা তন্ময়কে সাসপেন্ড করছি । কত দিনের জন্য, সেটা দেখতে হবে । অভ্যন্তরীণ তদন্ত কত দিনে শেষ হবে তার উপরেই নির্ভর করছে । পরে তদন্ত কমিটি যে প্রস্তাব দেবে সেই প্রস্তাব মেনে পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে ।"
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয় বলে রবিবারই ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির ফোনে দাবি করেছিলেন সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য । তিনি ওই মহিলা সাংবাদিকের অভিযোগের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন । তন্ময় বলেন, "আমি স্তম্ভিত । বুঝেই উঠতে পারছি না, কেন আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আনা হল । তাছাড়া আমার বাড়ি থেকে থানার দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার । আমি যদি তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করে থাকি, তাহলে সে থানায় না গিয়ে কেন ফেসবুক লাইভ করতে গেল ? মেয়েটি আগেও 15 বার আমার ইন্টারভিউ নিয়েছে ! আমি যদি এত খারাপই হব, তাহলে সে আবার আমার ইন্টারভিউ নিতে এল কেন ?"
কুণাল ঘোষের পোস্ট (সোশাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত) এ দিকে, সিপিএমের অভ্যন্তরীণ কমিটির তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে সোমবার সেশাল মিডিয়ায় আবারও সরব হয়েছেন অভিযোগকারিণী । রাজনৈতিক পরিচয় দূরে সরিয়ে এ দিন এ নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর কথাও বলেন তিনি । অভিযোগকারিণী সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, "কোনও রাজনৈতিক দল কারও বিচার করতে পারে বলে আমি মনে করি না । তা হলে দেশজুড়ে সালিশি সভা করেই সব সমস্যার সমাধান করে দেওয়া যেত । আইন-আদালতের প্রয়োজন পড়ত না ।"
একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, "পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি । তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে আশা করি । এটা রাজনীতি করার সময় নয়, সমাজ সংস্কারের সময় । আশা করি, সবাই নিজের রাজনৈতিক পরিচয় সাইডে রেখে এর প্রতিবাদ করবেন ।"
অন্যদিকে, তন্ময়কে তো বটেই, এ নিয়ে সিপিএমকেও আক্রমণ করেছেন শাসক শিবিরের নেতারা । তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ তো একধাপ এগিয়ে তন্ময়ের গ্রেফতারি চেয়ে 'মানববন্ধন' হবে নাকি প্রশ্ন তুলে খোঁচা দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্বকে ।