পাকা সেতুর দাবিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা বয়কট পড়ুয়াদের শাসন (উত্তর 24 পরগনা), 1 ফেব্রুয়ারি: প্রতিশ্রুতি থাকলেও শুরু হয়নি বেহাল সেতু সংস্কারের কাজ ৷ তাই, প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে পথে নেমে এবার সরাসরি পরীক্ষা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একাংশ ! বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার শাসনের শিমুলগাছি এলাকার । পড়ুয়াদের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে প্রশাসনিক মহলে।
প্রশাসনের তরফে পরীক্ষা বয়কটের রাস্তা থেকে সরে আসার আবেদন জানানো হলেও আন্দোলনকারী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে নারাজ ! তাদের স্পষ্ট দাবি, সেতু পাকা করা না হলে তারা জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসবে না। তাতে বছর নষ্ট হলেও 'কুছ পরোয়া নেহি' !"এমনকী আন্দোলনে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থী এও বলছে,"মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে জীবন !"
বারাসত 2 নম্বর ব্লকের ফলতি-বেলিয়াঘাটা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নোয়াই খালের উপর কাঠের এই সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে । বেহাল এই সেতুটি শিমুলগাছি এবং কিরীষপুর গ্রামকে বিভক্ত করেছে । এছাড়া আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রাম নির্ভরশীল এই কাঠের সেতুটির উপর । ভাঙাচোরা এই সেতুটি দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামবাসীরা যাতায়াত করে আসছেন বেশ কয়েকবছর ধরে । এর জেরে মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোটখাটো নানান দুর্ঘটনা । অথচ, জরাজীর্ণ এই সেতু সংস্কারে কোনও হেলদোল নেই প্রশাসনের ।
অভিযোগ, বারবার বলা সত্ত্বেও কোনও কর্ণপাত করেননি প্রশাসনের আধিকারিকরা । সেই কারণে পাকা সেতুর দাবিতে প্রায় একমাস আগে টাকি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীদের একাংশ । তখন শাসন থানার আইসি ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের প্রতিশ্রুতি দেন, সাতদিনের মধ্যে বেহাল সেতু সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে । প্রতিশ্রুতি মতো সেই সময় আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন গ্রামবাসীরা ।
তারপর কেটে গিয়েছে 25 দিনেরও বেশি সময় ! কথা মতো পাকা সেতুর কাজ শুরু না হওয়ায় বৃহস্পতিবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে শাসনের শিমুলগাছি-সহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের । প্ল্যাকার্ড হাতে শুরু হয় বিক্ষোভ । সেই বিক্ষোভে অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে সামিল হয় গ্রামেরই বেশ কয়েকজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । প্রায় ঘণ্টা দুয়েকেরও বেশি সময় ধরে চলল এই বিক্ষোভ কর্মসূচি ।
এদিকে, রাত পোহালেই শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা । তার আগে পাকা সেতুর দাবিতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, নিঃসন্দেহে আন্দোলনকে অন্য মাত্রা দিয়েছে । এই বিষয়ে বিজয় রায় নামে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বক্তব্য,"বেহাল সেতু দিয়ে নিত্য যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের । মাঝেমধ্যে ঘটছে ছোটোখাটো দুর্ঘটনাও । তা সত্ত্বেও হুঁশ ফিরছে না প্রশাসনের । আমরা চাই, অবিলম্বে পাকা সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হোক । নইলে বয়কট করব জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা ।"
একই সুর শোনা গিয়েছে সুলতানা বেগম নামে অপর এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর গলায় । তার কথায়,"সাতদিনের মধ্যে পাকা সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রশাসন । অথচ কিছুই হয়নি । আমাদের পাকা সেতু চাই-ই ! তা না হলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসব না । একবছর নষ্ট হলে হোক । মাধ্যমিক পরীক্ষার চেয়েও জীবন আগে আমাদের ।"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে বারাসত 2 নম্বর ব্লকের বিডিও শেখর সাই বলেন,"বিষয়টি শুনেছি । গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা হয়েছে । ইতিমধ্যে সেতুর বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরের তৎপরতা শুরু হয়েছে । আশা করা যায়, শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ করব, বয়কটের পথে না হেঁটে তারা জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসুক।"
আরও পড়ুন :
- বাঁশের একটি সাঁকোয় ব্যালান্সের খেলা, পাকা সেতুর দাবিতে সোচ্চার চৌবেড়িয়ার বাসিন্দারা
- 10 বছর ধরে অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে ব্রিজ তৈরির কাজ, ঝুঁকির পারাপার স্থানীয়দের
- সরকারি সাহায্য নেই, নিজেদের টাকায় কৃষ্ণা নদীর উপর সেতু তৈরি করলেন কৃষকরা