হরিণঘাটা, 29 জানুয়ারি: বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমই যেন সাজানো গোছানো ছাঁদনাতলা ৷ সেখানে বিয়েও হল ৷ মালাবদল থেকে সিঁদুরদান - বাদ যায়নি কিছুই ৷ লাল টুকটুকে বেনারসী শাড়ি পরে কনের সাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির বিভাগীয় প্রধান শিক্ষিকা পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁকে সিঁদুর পরিয়ে, মালাবদল করে শ্রেণিকক্ষেই বিয়ে করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র ! বিয়ের সাক্ষী অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা ৷
এমনই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে ৷ বিষয়টি খোঁজখবর করে জানা যায় যে, ঘটনাস্থল মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হরিণঘাটা ক্যাম্পাস । শুধু যে বিয়ের ছবি বা ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে তা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাইটিং প্যাডে দু'জন দু'জনকে স্বামী-স্ত্রীর স্বীকৃতিও দিয়েছেন লিখিতভাবে । রয়েছে সাক্ষীদের স্বাক্ষর ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে এমন ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে ৷ শোরগোল পড়ে গিয়েছে শিক্ষা মহলে ৷
নদিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপিকা ও ছাত্রের মালাবদল-সিঁদুরদান (নিজস্ব ভিডিয়ো) জানা যায়, দিন কয়েক আগে সোশাল মিডিয়ায় এক অধ্যাপিকা এবং এক ছাত্রের বিয়ে করার ছবি ও ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে । দেখা যায়, কলেজের শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই ওই শিক্ষিকা এক ছাত্রের সঙ্গে হিন্দু রীতি মেনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন । দু'জনের গলায় পরানো রজনীগন্ধা ও গোলাপের মালা ৷ অধ্যাপিকাকে সিঁদুর পরিয়ে দেন ছাত্র ৷ আর গোটা ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেন উপস্থিত অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা ৷ এরপরই জানা যায়, ওই ছবি হরিণঘাটার আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের । এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে ৷ ঘটনার নিন্দায় সরব হন নেটনাগরিকরা ৷
এই ঘটনা সামনে আসার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে যে, ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ এই তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষিকাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে । পাশাপাশি ওই ছাত্রকে সাসপেন্ড করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য তাপস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বিভাগীয় প্রধান ওই মহিলা অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে । কেন ক্লাসরুমে প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার সঙ্গে তিনি মালাবদল ও সিঁদুর দান করেছেন, তা তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে । পাশাপাশি তিনি এও বলেন যে, "প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন, এটা তাঁদের পাঠ্যক্রমে থাকা প্রজেক্টের অঙ্গ ।"
এ বিষয়ে অধ্যাপিকা পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি নাটকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও অংশগ্রহণ করার আবেদন জানিয়ে তাঁকে ইমেল পাঠিয়েছিল ছাত্ররা ৷ তিনি সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে নাটকে অভিনয় করার জন্যই শ্রেণিকক্ষে বিয়ের আসরের ভিডিয়ো রেকর্ড করার অনুমতি দিয়েছিলেন ৷ তাঁর কথায়, "এই ঘটনাকে ভুল ভাবে কর্তৃপক্ষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে ৷ আমাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে ৷ তবে আমার কাছে ছাত্রদের ইমেল ও অন্যান্য নথি আছে ৷ সেগুলি আমি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি ৷" এর পাশাপাশি ফেসবুকে এক ভিডিয়ো বার্তায় আত্মপক্ষ সমর্থনও করেছেন তিনি।
পরে এই নিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন ওই অধ্যাপিকা৷ তিনি বলেন, ‘‘ওটা একটা সাইকো ড্রামার ক্লিপ । আরও অনেক নাচ গানেরও ক্লিপ আছে । কারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে বেছে বেছে এই ভিডিয়ো ক্লিপটুকু ভাইরাল করল জানি না । তাঁরা এই অল্পবয়সি ছাত্রদের কথা ভাবেননি । ওদের কেরিয়ারের কথা ভাবেননি। আমি তো নিজের কেরিয়ারে এগিয়ে গিয়েছি । তাই নিজেকে নিয়ে ভাবি না । যাঁরা আমায় চেনেন, তাঁরা জানেন আমি গবেষণা-পাবলিকেশন এইসব নিয়ে থাকি। ছাত্রদের মোটিভেট করি । তাই এই ভিডিয়ো নিয়ে যে চর্চা চলছে তা দেখে অবাক হয়েছি ।’’
