কলকাতা, 7 জুন: সালটা ছিল 2011 ৷ আরও একবার বামফ্রন্ট সরকার আসছে- সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফলাফলের দিনটা শুরু করেছিলেন বিমান বসু। বেলা গড়াতেই স্পষ্ট হয় বিপর্যয়ের ছবিটা। পরে ফলাফল বিশ্লেষণ করে মিলেছিল বিস্ফোরক তথ্য। মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল বুথস্তরের কর্মী ও নেতাদের। তার উপর ভিত্তি করেই আলিমুদ্দিনে অধিকাংশ জেলা কমিটি দিয়েছিলেন ভুল তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট। 14 বছর পরেও সেই ছবিটা বদলায়নি বিন্দুমাত্র।
আর তার জেরেই জনসমর্থন ঠিক কতটা সেই প্রশ্নে ভাববাদেই থেকে গিয়েছে গোটা দল। ভবিষ্যতে কোন পথে দল হাঁটবে তা ঠিক করতে পারছেন না তাবড় নেতারাও। চলতি ফলাফলের সেই প্রবণতা ঠেকাতেই এবার যুগপোযোগী পদক্ষেপ করার ভাবনা রাজ্য নেতৃত্বের। আওয়াজ উঠছে পেশাদার সংস্থার উপদেশ নেওয়ার।
রাজ্যের এক প্রবীণ সিপিএম নেতার কথায়, "লোকাল কমিটি ভেঙে এরিয়া কমিটি করা হয়েছিল কাজের স্বার্থে। তবে দল যে পথে চলছে তাতে বোঝা যাচ্ছে কর্মীদের চিন্তা ভাবনার বিকাশ হয়নি।" ওই নেতার আক্ষেপ, "পার্টির ক্লাস করানো হয় ৷ বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হয়। তবে এরপরও মানুষের চিন্তায় দাগ কাটতে পারছেন না কর্মীরা। তাঁরা মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ। এই পরিস্থিতি কীভাবে কাটিয়ে উঠব, সেটা আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার। পাশাপশি বড় বিষয় হল, কর্মীরা ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে অর্ধসত্য রিপোর্ট দিচ্ছেন নেতাদের ৷ সেটাও চিন্তার বিষয় ৷ "
সিপিএম সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতার একটি ওয়ার্ডে 23টি বুথের 5টি বুথে এজেন্ট বসলেও রিপোর্ট এসেছে 20টি বুথে এজেন্টরা বসতে পেরেছেন। পরে আসল সত্যিটা জানা যায়। শুধু তাই নয়, যাঁরা বুথ এজেন্ট হন তাঁরা বুথ কতটা রক্ষা করতে পেরেছেন সে বিষয় নিয়েও প্রশ্ন আছে। সিপিএমের দাবি, প্রতিটি বুথেই দুপুর গড়ালে ভুয়ো ভোট হয়েছে ৷ সিপিএমের এজেন্টরা সে সব বসে বসে দেখেছেন। কলকাতার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও এমনই বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট এসেছে ৷ এই অর্ধসত্য রিপোর্ট সিপিএমের চিন্তার কারণ ৷
আরেক নেতার কথায়, "অন্য রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে বা মানুষের মনে ছাপ ফেলতে আমাদের পেশাদার পরামর্শদাতা সংস্থা বা সমীক্ষা সংস্থার সাহায্য নিতেই হবে।" এই নেতার কথা থেকেই বোঝা যায়, সিপিএমের একাংশ প্রশান্ত কিশোরের মতো কাউকে চাইছে ৷ তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দল পেশাদার কাউকে কাজে লাগানোর খরচ কোথা থেকে জোগাড় করবে তা স্পষ্ট নয় ৷