মেদিনীপুর, 9 জুলাই: 61 জনের পর তালিকায় এল নাম ৷ সোমবারের পর কেউ আর অনাথ বলতে পারবে না তাকে ৷ নতুন মায়ের কোলে চেপে বার্সেলোনায় পাড়ি দেওয়ার পথে পশ্চিম মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর হোমের সাড়ে ছয় বছরের এক শিশু। সোমবার প্রশাসনের তরফ থেকে যাবতীয় সরকারি কাগজপত্র প্রস্তুত করে তাকে তুলে দেওয়া হল সিঙ্গল মাদার মেরিটক্সেল রোসিচ গিমেজের হাতে ৷
সিঙ্গল মাদারের হাত ধরে বার্সেলোনা পাড়ি বাংলার শিশুর (ইটিভি ভারত) বছর খানেক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল শিশুটিকে। মায়ার বাঁধা উপেক্ষা করে তাকে ফেলে রেখে গিয়েছিল তার পরিবার । পরে জিআরপি এবং পুলিশের তত্ত্বাবধানে চাইল্ড লাইনের মাধ্যমে শিশুটির ঠাঁই হয় হোমে। যদিও তার ছবি-সহ যাবতীয় তথ্য ছাপিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল চাইল্ড লাইন কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসন ৷ কিন্তু তাতেও সুবিধে হয়নি । মা-বাবর কোলে ফিরতে পারেনি সে ৷ তবে এবার উড়োজাহাজে চেপে নতুন দেশ আবিষ্কারের পালা একরত্তির।
উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর হোম থেকে দত্তক নেওয়া শিশুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে । ইতিমধ্যে মোট 62টি শিশু দত্তক নিয়েছে বিভিন্ন দেশের এবং রাজ্যের মানুষ । জেলা প্রশাসনের হাত ধরে সেই বাচ্চাগুলি নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেছে তাদের নতুন বাবা-মায়ের কোলে । কিছুদিন আগে বছর ছয়ের এই শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন দিয়েছিল হোম কর্তৃপক্ষ । সেই আবেদনের সূত্র ধরে স্পেনের বার্সেলোনা থেকে হাজির হন এক সিঙ্গল মাদার। মাতৃত্বের সাধ মেটাতে আপন করে নিলেন শিশুটিকে।
স্পেনের বার্সেলোনায় বসবাসকারী মেরিটক্সেল রোসিচ গিমেজ ওরফে চেরি একজন সিঙ্গল মাদার । বছর 47-এর এই মহিলা একটি কোম্পানির ডিরেক্টর পদে রয়েছেন । বহুদিন ধরে তিনি চেয়েছিলেন শিশু দত্তক নিতে । অবশেষে সমস্ত সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে সোমবার জেলাশাসকের সাহায্যে তাঁর দীর্ঘদিনের সাধপূরণ করলেন তিনি ।
এই বিষয়ে গিমেজ বলেন, "আমি একজন সিঙ্গল মাদার ৷ একটি কোম্পানিতে কর্মরত । একটা বাচ্চার প্রয়োজন ছিল ৷ সেই মতো আবেদন জানিয়েছিলাম । সেই আবেদনের ভিত্তিতে আজকে আমি বাচ্চাটাকে পেয়েছি । ওকে আমি পড়াশোনা শেখাব ৷ ওকে বড় করতে বড় ভূমিকা নেব আমি ।" এই প্রসঙ্গে, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদরী বলেন, "আমাদের হোমের মোট 62জন শিশু ইতিমধ্যে দেশের ভিন্ন রাজ্য এবং বিদেশে রওনা দিয়েছে । এখনও 8টি শিশু রয়েছে এই হোমে । এই বাচ্চাটি পাড়ি দিচ্ছে স্পেনে । আমরা ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।"